বাংলাদেশের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবির উপর আস্হা হারিয়েছি অনেক আগেই,
কারো মিষ্টি কথাই আজ আর বিশ্বাস করা যায় না, সন্দেহ হয়, ভয় হয় ।
মু. জাফর ইকবাল ছোট বেলা থেকেই আমার প্রিয় লেখক ছিলেন, গণিত আন্দোলন, শিক্ষানীতি বাচানোর আন্দোলনে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ, তিনি ছিলেন যুব সমাজের আদর্শ।
কিন্তু একটা সময় এসে লক্ষ্য করলাম তার অনেক ( অনেক নয় কিছু) লেখাই বিদেশী না না অখ্যাত-বিখ্যাত লেখা দ্বারা গভীর ভাবে অনুপ্রানিত, আর একটা দুটো লেখা একটু বেশীই যেন অনুপ্রানিত ( কেন যেন অনুকৃত শব্দটি লিখতে ইচ্ছে করছে না)। এমনটা হতেই পারে, তবে এক্ষেত্রে যা থেকে তিনি অনুপ্রানিত হয়েছেন সেটা উল্লেখ করে দিলে হয়তো আমরা এতটা ধাক্কা খেতাম না । আমার দৃষ্টিতে অন্তত এতে তার কৃতিত্ব বা জনপ্রিয়তা লেশমাত্র কমতো না ।
কিন্তু তার লেখনি - বিষয় বস্তুর গভীরতা ইত্যাদি দিক বিচারে তিনি আমার দৃষ্টিতে এদেশের সর্বকালের সেরা সাহিত্যিকদের মাঝে একজন।
বিগত সরকারের না না অপসিদ্ধান্ত - কুকর্মের বিরূদ্ধ তিনি ছিলেন সব সময় সোচ্চার, দেশের নানা সংকটময় সময়ে তার দিকে আমরা তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু সরকার বদলের সাথে তিনিও কেমন যেন বদলে গেলেন,
তিনি জানেন কিনা জানি না , ব্যাপারটা আমাকে বেশ কষ্ট দিয়েছে।
এটা ঠিক এ সরকার নানা দিকদিয়ে তাকে সঠিক ভাবে মূল্যায়িত করেছে,
এদেশের বোবা শিক্ষানীতির সংস্কার করতে চেয়েছিলেন তিনি, সরকার তাকে সে সুযোগ কিছুটা হলেও দিয়েছে, তাই হয়তো তার নানাবিধ সীমাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে যার ফলাফল এই স্তব্ধতা, কিন্তু তাকে মনে রাখতে হবে তিনি এমন একজন মানুষ যাকে দেশের তরুণ রা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতো ( আজো করতে চায়)।
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম গুলোর প্রায় সবগুলোই সরকারী-বিরোধীদলীয় আর নানা ক্ষমতাবানগোষ্ঠীর মদদ প্রাপ্ত, তারা বোঝে কী না জানি না ,তবে দেশের মানুষ ভালোই বোঝে, তাই তাদের সব কথাই যে বিশ্বাসযোগ্য হবে এমনটা তারা আশা করে না। ব্লগ হয়ে উঠছে আমাদের বিকল্প মিডিয়া, শেষ আশ্রয়স্থল। স্বাধীনতা থাকলেই যে তার যথেচ্ছ ব্যবহার করতে হবে সেটা কিন্তু নয়।
ইতিপূর্বে এদেশের অনেক রাজনীতিবিদ আর তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নানা কীর্তি (পড়ুন কুকীর্তি) ইন্টারনেটে এসেছে , যেহেতু তাদের এই অনিয়ম-দূর্নীতি জনগনের প্রদত্ত অবস্হানের সুযোগে তারা করেছে, তাদের ব্যাপারে জানার অধিকার আমাদের আছে । এগুলো ঠেকাতে সারাদেশে নেট , ফেসবুক , ইউটিউব ইত্যাদি বন্ধ করার মত বিরল ঘটনা ও ঘটেছে।
অতিসম্প্রতি জাফর ইকবাল সাহেবের মেয়ের ছবি নিয়ে যা করা হয়েছে তা আমার দৃষ্টিতে ব্লগে আমাদের স্বাধীনতার ভীষণ অপব্যবহার। ব্লগীয় নীতিমালার ভয়াবহ স্খলন। তিনি মুক্ত বুদ্ধি চর্চা আর বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে উচ্চকন্ঠ, কিন্তু তার পরিবারের একজনের এমনতর জীবনযাত্রা অনেকের মাঝেই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কিন্তু কাজটা শুধু লেখালেখির মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেই ভালো হত, ব্যক্তিগত ছবি এভাবে শেয়ার করাটা শাস্তি যোগ্য অপরাধ, ফেসবুকে ছবিগুলো উন্মুক্ত ছিলো ভালো কথা, কিন্তু ইচ্ছামত যেখানে-সেখানে শেয়ার করার জন্য কি???
প্রসংগত, কিছুদিন আগে "জাগো" ফাউন্ডেশনের নানা বিতর্কিত ছবি ব্লগে শেয়ার করা হয় , তার কথা আলাদা, তারা পথশিশুদের নামে অনেকের কাছ থেকে টাকা তুলেছে , যারা এর সদস্য হয়েছেন সবাই টাকা দিয়েছেন , বহু
মানুষ অর্থ সাহায্য করেছেন , তাই জাগো কিন্তু "দায়বদ্ধতা"র আওতায় পড়ে গেছে। তারা বিতর্কিত এসব বিষয়টি সহজেই সমাধান করে ফেলতে পারতো যাদের বিরূদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের বিচার করে, বহিষ্কার করে, তাদের কর্মকান্ডের পরিষ্কার হিসেব অন-লাইনে দিয়ে, তারা সেটা না করে প্রতিবাদকারীদের মামলার ভয় দেখাচ্ছে, তারা বুঝতে পারছে না এটা তে তাদের প্রতিষ্ঠানেরই বিপদ ডেকে আনছে তারা। মানুষ আর কখনও তাদের বিশ্বাস করবে না , এটাকে সবাই বড়লোকের ছেলেপুলেদের খামখেয়ালীপনা হিসেবেই দেখবে।
আসুন আমরা সবাই বাকস্বাধীনতার যথোপযুক্ত ব্যবহার করি।