somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তরের চিঠি পৃষ্ঠা ৫৬

১৬ ই মে, ২০০৯ রাত ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ববর্তী অংশ এখানে
===============================
পাকসেনাদের অত্যাধুনিক চায়নিজ এলএমজির ব্রাশফায়ার-এর মধ্যেই আমরা আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস ও অবিচল সাহস নিয়ে রাশিয়ান থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, এলএমজি, এসএমজি আর খিছু গ্রেনেড আর গোলা বারুদ নিয়ে বীরত্বের সাথে মোকাবিলা করে যচ্ছি। আমরা ছিলাম আধা ঘুমন্ত, ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ ও অপ্রস্তুত। এ অবস্থায় যে যার অবস্থান থেকে অতি সতর্ক ও ধৈয্যের সাথে অত্যাধুনিক নানা অস্ত্রে সজ্জিত ও উচ্চ প্রশিক্ষিত পাক সেনাদের মোকাবিলা করছি। কিন্তু জানো মা, আমাদের উভয় পক্ষের বৃষ্টির মতো গোলগগুলির মাঝে দৌড়াদৌড়ির কারণে বাড়িওয়ালা তোফায়েলউদ্দিন, তার শ্বাশুড়ি, তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে আমাদের এক বীর সহযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী ঘটনাস্থলেই শহীদ হলেন এবং আরেক সহযোদ্ধা মমিন চরম আহত ও মুমূর্ষ ও অজ্ঞান অবস্থায় বহরমপুরের এই হাসপাতালে আমার চোকের সামনেই মৃত্যুর কোমল স্পর্শে মিশে গেল চিরদিনের মতো। মা, মুমিন আমাকে বড় কষ্ট দিয়ে চিরদিনের মতো চলে গেল!! আমার সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে সমান্য কিছু কথা হয়েছিল। কিন্তু এখানে সে একটি কথাও বলল না। ওয়াজেদ ও মমিনকে হারিয়ে আমি বড়ই কষ্ট পেয়েছি মা। সবচেয়ে মর্মান্তিক এই যে ওয়জেদ ছিল বাবা-মার একমাত্র সন্তান। দেশ স্বাধীন হবে ঠিকই কিন্তু ওয়াজেদ মমিনদের সেই স্বাধীন দেশে কোনদিনই খুঁজে পাওয়া যাবে না। জানো মা, আল্লাহর কী লীলা খেলা! তোফায়েলউদ্দিন ভাই-এর চার মাসের একটি ছেলে কি অলৌকিক ভাবে বেঁচে গিয়েছিল সেদিনের যুদ্ধে। উভয় পক্ষের ব্রাশফায়ারের মধ্যে পড়ে তার পরিবারের সবাই মারা গেল ঠিকই কিন্তু চার মাসের নিষ্পাপ অবুঝ শিশুটি লেপ-কম্বলের নিচে থাকায় কোন এলএমজির গুলি তাকে স্পর্শ করেনি। মা, তুমি আমার জন্য দোয়া করো। আমি যেন সুস্থ হয়ে আবার স্বধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে ও দেশকে শত্রুমুক্ত করতে পারি।মা, তোফয়েলউদ্দিনের চার মাসের শিশু মুক্তিকে কে লালন-পালন করবে? কে বুকের দুধ খাওয়াবে? তার বাড়ির চাকরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজের মতো অবস্থা হলো তোফায়েলউদ্দিন ভাই-এর, শহীদ হলো ওয়াজেদ, মমিন আর আহত হলাম আমরা করজন। মা আর লিখতে পারছি না। চিঠিটা সবধানে পড়বে। যদি বেঁচে থাকি, দেখা হবে ইনশাল্লাহ।
ইতি
তোমার রণঙ্গণে যোদ্ধা সন্তান
রহিম/বহরমপুর হাসপাতাল ভারত

================================
চিঠি লেখকঃ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম। তাঁর বর্তমান ঠিকানাঃ ৪২ টাইগার রোড, ওয়র্ড-৩, নওদাপাড়া, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া।
চিঠি প্রাপকঃ মা মেহেরুন্নেসা। মুক্তিযোদ্ধার পিতার নাম হারান মণ্ডল।
চিঠিটি পাঠিয়েছেনঃ লেখক নিজেই।
=================================
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×