পূর্ববর্তী অংশ এখানে
===============================
পাকসেনাদের অত্যাধুনিক চায়নিজ এলএমজির ব্রাশফায়ার-এর মধ্যেই আমরা আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস ও অবিচল সাহস নিয়ে রাশিয়ান থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, এলএমজি, এসএমজি আর খিছু গ্রেনেড আর গোলা বারুদ নিয়ে বীরত্বের সাথে মোকাবিলা করে যচ্ছি। আমরা ছিলাম আধা ঘুমন্ত, ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ ও অপ্রস্তুত। এ অবস্থায় যে যার অবস্থান থেকে অতি সতর্ক ও ধৈয্যের সাথে অত্যাধুনিক নানা অস্ত্রে সজ্জিত ও উচ্চ প্রশিক্ষিত পাক সেনাদের মোকাবিলা করছি। কিন্তু জানো মা, আমাদের উভয় পক্ষের বৃষ্টির মতো গোলগগুলির মাঝে দৌড়াদৌড়ির কারণে বাড়িওয়ালা তোফায়েলউদ্দিন, তার শ্বাশুড়ি, তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে আমাদের এক বীর সহযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী ঘটনাস্থলেই শহীদ হলেন এবং আরেক সহযোদ্ধা মমিন চরম আহত ও মুমূর্ষ ও অজ্ঞান অবস্থায় বহরমপুরের এই হাসপাতালে আমার চোকের সামনেই মৃত্যুর কোমল স্পর্শে মিশে গেল চিরদিনের মতো। মা, মুমিন আমাকে বড় কষ্ট দিয়ে চিরদিনের মতো চলে গেল!! আমার সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে সমান্য কিছু কথা হয়েছিল। কিন্তু এখানে সে একটি কথাও বলল না। ওয়াজেদ ও মমিনকে হারিয়ে আমি বড়ই কষ্ট পেয়েছি মা। সবচেয়ে মর্মান্তিক এই যে ওয়জেদ ছিল বাবা-মার একমাত্র সন্তান। দেশ স্বাধীন হবে ঠিকই কিন্তু ওয়াজেদ মমিনদের সেই স্বাধীন দেশে কোনদিনই খুঁজে পাওয়া যাবে না। জানো মা, আল্লাহর কী লীলা খেলা! তোফায়েলউদ্দিন ভাই-এর চার মাসের একটি ছেলে কি অলৌকিক ভাবে বেঁচে গিয়েছিল সেদিনের যুদ্ধে। উভয় পক্ষের ব্রাশফায়ারের মধ্যে পড়ে তার পরিবারের সবাই মারা গেল ঠিকই কিন্তু চার মাসের নিষ্পাপ অবুঝ শিশুটি লেপ-কম্বলের নিচে থাকায় কোন এলএমজির গুলি তাকে স্পর্শ করেনি। মা, তুমি আমার জন্য দোয়া করো। আমি যেন সুস্থ হয়ে আবার স্বধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে ও দেশকে শত্রুমুক্ত করতে পারি।মা, তোফয়েলউদ্দিনের চার মাসের শিশু মুক্তিকে কে লালন-পালন করবে? কে বুকের দুধ খাওয়াবে? তার বাড়ির চাকরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজের মতো অবস্থা হলো তোফায়েলউদ্দিন ভাই-এর, শহীদ হলো ওয়াজেদ, মমিন আর আহত হলাম আমরা করজন। মা আর লিখতে পারছি না। চিঠিটা সবধানে পড়বে। যদি বেঁচে থাকি, দেখা হবে ইনশাল্লাহ।
ইতি
তোমার রণঙ্গণে যোদ্ধা সন্তান
রহিম/বহরমপুর হাসপাতাল ভারত
================================
চিঠি লেখকঃ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম। তাঁর বর্তমান ঠিকানাঃ ৪২ টাইগার রোড, ওয়র্ড-৩, নওদাপাড়া, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া।
চিঠি প্রাপকঃ মা মেহেরুন্নেসা। মুক্তিযোদ্ধার পিতার নাম হারান মণ্ডল।
চিঠিটি পাঠিয়েছেনঃ লেখক নিজেই।
=================================