পূর্ববর্তী অংশ এখানে
================================
খাইয়েছিলেন। একটু বিশ্রাম নিয়ে রাত তিনটায় ওই পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণ করব। কিন্তু বাড়িওয়ালার এক চাকর ওই পাকসেনার ক্যাম্পে রাত এগারটার দিকে আমাদের অবস্থানের কথা জানিয়ে আসে।আমি, লতিফ ভাই, আবদুল্লাহ, ওয়াজেদ, মমিন ও কাশেম সহ আরও অনেকেই এলএমজি, থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি দেয়ালের সঙ্গে খাড়া করে ঘুমিয়ে গেছি। একজন পাহারায় আছে। রাত একটার দিকে একদল পাকসেনা অতর্কিতে ওই বাড়িতে প্রবেশ করতেই আমাদের পাহারাদার জিজ্ঞেস করে, কে? উত্তরে উর্দুতে বলে “তোদের জোম হ্যায়।” বলেই তাকে গুলি করে।এরপর আমাদের দুটো রুমকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ শুরু হলো। আমাদের রুমের দরজাটা ব্রাশফায়ারে ঝাঁঝড়া করে দিল। এক পর্যায়ে একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করলো, বিস্ফোরিত হয়ে আমি সহ কয়েকজন রক্তাক্ত জখম হলাম। আমার তলপেটে, দুই উরু ও পায়ে মোট আটটি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়ে যখন মৃত্যুর কাছাকাছি, তখন পেছনের জানালার কথা মনে পড়ল। রাইফেলের বাট দিয়ে জানালার চারটি শিক ভেঙে ঘরের পেছনের গোবরের পাংগোছের মাইটিলে রক্তাক্ত শরীর নিয়ে ধপাস করে পড়ে মনে হলো, আমি যেন গোবরের মধ্যে আটকে যচ্ছি। প্রচণ্ড শীত, অবিরাম রক্তক্ষরণ, বৃষ্টির ন্যায় গোলা বর্ষণ আর অন্ধকার ভুতুড়ে পরিবেশে আমি কোনমতে হামাগুড়ি দিয়ে একটি পুকুরের ঢালুতে ঢেলকলমি আর দাঁতছোলা গাছের ঘন ঝোপের মধ্যে আশ্রয় নিলাম। এরপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। সকাল দশটার দিকে কয়েকজন লোক আমাকে খুঁজে পায়। এরপর কলার ভেলাতে করে হাইলি নদী ও তারপর নৌকায় শিকারপুর। সেখনান থেকে বহরমপুর হাসপাতালে আসার একদিন পর আমার জ্ঞান ফেরে। মা, আমার প্রাক্তন সৈনিক বন্ধু ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে শিয়ালকোট সেক্টরের বীর সেনানী সুবেদার মেজর আব্দুল লতিফ আমার অজ্ঞান রক্তক্ত দেহকে কাঁধে করে কাদা ও পানির মধ্যে কয়েক মাইল হেঁটে নিয়ে এসেছিল। বন্ধু লতিফের ঋণ আমি কোনদিন কিছু দিয়েও পরিশোধ করতে পারব না। জানো মা, আমার তলপেট ও দুই উরু হতে মোট পাঁচটি স্প্লিন্টার ডাক্তারগণ অপারেশন করে বের করেছেন। বাকি তিনটি এখনো আমার শরীরে বিদ্ধ আছে। ডক্তার বলেছেন এই তিনটি মাংসের সাথে হজম হয়ে যাবে।মা! তুমি তো চাতক পাখির মতো চেয়ে থাক আমার একটি চিঠি বা সংবাদের জন্য। কিন্ত এত মর্মান্তিক ও লোমহর্ষক কথা কীভাবে প্রকাশ করে তোমাকে জানাব তা ভেবে পাচ্ছি না। জানো মা, আমাদের আশ্রয়দাতা তোফায়েলউদ্দিন ভাই-এর পুরা পরিবার কীভাবে চোখের পলকে নিঃশেষ হয়ে গেল। ....পরের অংশ এখানে
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০০৯ রাত ১:৫৩