সেনাটোলা
২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
প্রিয়তম স্বামী,
সালাম নিয়ো এবং ভালোবাসা। জাহান ভাই-এর হাতে একটা চিঠি পাঠিয়েছ। চিঠিটা পড়ে বেশ কিছুদিন পর ছিঁড়ে ফেলেছি রাজাকারদের ভয়ে। কারণ রাজাকাররা ২৪ ঘণ্টা আমাদের বাড়ি পাহারা দিচ্ছে–তোমাকে ধরার জন্য। তোমার দ্বিতীয় সন্তানের বয়স যখন ৬ দিন, তখন তোমার চিঠিটা পাই। তুমি লিখেছিলে আমি বেঁচে থাকি তোমার গর্ব তোমার স্বামী। বাংলাদেশকে ছিনিয়ে আনব। আমি ছুটোছুটি করতে থাকি। প্রচণ্ড কষ্ট বোঝাতে পারব না। আমি যেদিন তোমাদের বাড়ি থেকে আমার বাবার বাড়ি আসি, সেদিন ছিল ১৪ই জুলাই। সেদিন তুমি বাড়িতে ছিলে না। বুঝেছিলাম তুমি অস্থির আছ এবং বেশ কয়েক মাস ধরে লুকিয়ে থাকছ এবং অস্থিরতার মধ্যে থাকছ। কিন্তু আমাকে কিছু বলো না। বুঝতে পারতাম তুমি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছ। আমার বাবার বাড়িতে আসার কয়দিন পর বাবুর জন্ম হলো, ২১শে জুলাই। আশা করেছিলাম তুমি আসবে। তার বদলে এল চিঠি। আগামীকাল আমি শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ তোমাদের বাড়ি যাব। রাজাকারদের অত্যাচারে। জাহান ভাই-য়ের মাধ্যমে খবর পেতাম। তুমি বেঁচে আছ। ওখানে খবর পাব কীভঅবে? তাই লিখছি।
তোমার আড়াই বছরের বড় ছেলে সবসময় পতাকা হাতে নিয়ে জয় বাংলা বলতে থাকে আর রাজাকাররা ধমক দেয়। আব্বা ছেলের মুখ চেপে ধরে, ছেলে ছটফট করতে থাকে, বলে ননু, আমাকে ছেড়ে দাও এবং বলে বাংলাদেশ জয় হোক। রাজাকাররা আব্বাকে বলে, তোমার জামাই তোমার বাড়িতে আসে, তোমাকো ধরিয়ে দিব। তোমার বাড়ি পুড়িয়ে দিব। এই সমস্ত কারণে আব্বাকে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, দেশ স্বাধীন করে ফিরে এসো সুস্থ দেহে।
ইতি
তোমার কদবানু আলেয়া
===============================================
চিঠি লেখকঃ কদবানু আলেয়া। মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী।
চিঠিপ্রাপকঃ মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক।
চিঠিটি পাঠিয়েছেনঃ এবিএম কাইসার রেজা, সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, কুমারখালী ডিগ্রি কলেজ, কুমারখালী, কুষ্টিয়া। তিনি আবদুর রাজ্জাকের ছেলে।
===============================================
চিঠি সংকলনের টেক্স্ট কন্টেন্ট প্রকল্পের অংশ হিসাবে প্রকাশিত

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




