somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তরের চিঠি (পৃষ্ঠা ৮১ ও ৮২)

১৬ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৭ই অক্টোবর ১৯৭১ ইং
চৌডালা, গোমস্তাপুর

শ্রদ্ধেয় বড় ভাই,
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক
আস্‌সালামু আলাইকুম
সমাচার এই যে, ১৯৭১ সালের কাল রাত্রি ২৬শে মার্চ বর্বর হানাদার বাহিনী পাঞ্জাবিরা তার সাথে আলবদর রাজাকার সিএফ যোথভাবে নিরীহ বাঙালীর ওপর নারকীয় গণহত্যা শুরু করে এবং বেশি শিক্ষিত লোকদের উপর বেশি জুলুম শুরু করে। তাই আপনি আমাদের মাঝে বেশি শিক্ষিত, অর্থাৎ এমএ পাস ও কলেজের অধ্যাপক। তাই বাড়ির সমস্ত পরিবার, অর্থাৎ আব্বা-আম্মা, চাচা, ভাই-বোন সকলেই মন স্থির করলাম, আপনাকে এই চৌডালার মাটিতে বাঁচানো সম্ভব নয়। তাই আপনাকে অনুরোধ করলাম, আমাদের ভাগ্যে যা আছে তা-ই হবে, আপনি চলে যান মুক্তিযুদ্ধে। আপনার যাওয়ার মন ছিল না। তবু আপনাকে মুক্তিযুদ্ধে যেতে হলো। আপনি বললেন, মরলে সবাই একসঙ্গে মরব। আমি বাড়িতেই থাকব। তবুও আপনাকে অনুরোধ করে মুক্তিযুদ্ধে পাঠালাম। আপনি আমাদের সকলের কথা মেনে নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে গেলেন। আমরা এতখানি বুঝতে পারিনি যে আপনি যাওয়ায় আমাদের উপর এত জুলুম-অত্যাচার হবে। যখন পাঞ্জাবীর দোসর রাজাকারেরা শুনল অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে, তখন তারা সুযোগ পেল, তারপর পাঁচজন রাজাকার বাড়িতে এসে অন্যায় জুলুম শুরু করল। যদি জানে বাঁচতে চাস, তবে একটা খাসি এবং দুই মণ চাল দে এবং ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা দে। আমরা পিকনিক করব। তখন সঙ্গে সঙ্গে আব্বা ও চাচা খাসি-চাল-টাকা দিয়ে সেদিনের মতো বিদায় দিলেন। তার পর থেকেই দুই-চার দিন অন্তর অন্তর টাকা-পয়সা, চাল-ডাল নিয়ে যায়। তখন মেজো ভাই থাকতে না পেরে, আমাকে বলল, ফজলুর রহমান, তুই রাজাকারে যোগদান কর, না হলে আর জান বাচঁবে না। তখন আমি বললাম এখন রাজাকারে যোগদান করলে তারা আমাদেরকে আরও সন্দেহ করবে। আমাদের উপর আরও জুলুম শুরু হবে। ভাগ্যে য আছে তা-ই হবে, আমি যোগদান করলাম না। আল্লাহর উপর ভরসা করে দিন কাটাতে লাগলাম। তারপর বড় বাগানের সমস্ত বাবলা গাছ কেটে তারা মরিচা বানাতে শুরু করল।আপনি তো জানেন প্রায় ১০০ গাছ ছিল। কিছুই বলতে পারিনি। এবং বাগানেই আমাদের ইটের ভাটা ছিল, সে ভাটার ইটে মরিচা ধরেছে। বাদবাকি ইট লুটপাট করে বিক্রি করে দিয়েছে, এখন পর্যন্ত কিছুই বালার সাহস পাইনি। এই ভাবে তাদের মন জোগাই আর দিন যায়। তারপর অক্টোবর মাস হতে তারা গ্রমের প্রায় ১০ জন নিরীহ লোককে ধরে নিয়ে গিয়ে রহনপুরে পাঞ্জাবিদের ক্যাম্পে বন্দী করে রাখে। তিনদিন পর পাঞ্জাবিরা রাত্রিবেলায় চোখ বেঁধে গুলি করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তার দু-তিন দিন পর পাঞ্জাবিরা গোমস্তাপুরে সমস্ত হিন্দুদের ধরে নিয়ে নদীর ধারে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। তারপর রাজাকার পাঞ্জাবিরা কাসিয়াবাড়ী বোয়ালিয়া অপারেশন করে। সেখানে তারা এমন গণহত্যা চালায় যে নদী দিয়ে শত শত লাশ আমরা ভেসে যেতে দেখেছি। আর কী লিখব, এই করুণ কহিনী লিখে শেষ করা যাবে না। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন আমরা আল্লাহর রহমতে কোনোরকমে জানে বাঁচতে পারি। আমাদের মনে প্রবাল আশা যে (…) হবে। আপনাকে আল্লাহর হাতে সঁপে দিয়েছি। মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজি হয়ে ফিরে আসবেন। এই দোয়া রাখি। ত্রুটি মার্জনীয়।

ইতি
আপনার ছোট ভাই
ফজলুর রহমান

==============================================
চিঠি লেখকঃ ফজলুর রহমান, গ্রামঃ হাউসনগর, পোঃ চৌডালা, জেলাঃ রাজশাহী। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাকের ছোট ভাই।

চিঠি প্রাপকঃ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি তখন ৭ নম্বর সেক্টরের অধীন ভোলাহাট এলাকায় যুদ্ধরত ছিলেন।

চিঠিটি পাঠিয়েছেনঃ এবিএম কাইসার রেজা, সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, কুমারকালী, কুষ্টিয়া। তিনি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।
==============================================
চিঠি সংকলনের টেক্স্ট কন্টেন্ট প্রকল্পের অংশ হিসাবে প্রকাশিত

একাত্তরের চিঠি সংকলনের টেক্স্ট কন্টেন্ট প্রকল্পের আপডেট

১৩‌ থেকে ৫০ পৃষ্ঠার চিঠির প্রথম পিডিএফ সংকলন ডাউনলোড করুন এখান থেকে
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×