বাংলাদেশ, ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১
মা,
তুমি আজ কোথায় জানি না। তোমার মতো শত শত ময়ের চোখের জল মুছে ফেলার জন্য বাংলার বুকে জন্ম নিয়েছে লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা। আমি যদি মরে যাই তুমি দুঃখ করোনা, মা।তোমার জান্য আমার যোদ্ধাজীবনের ডায়েরী রেখে গেলাম আর রেখে গেলাম লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা। তারা সবাই তোমার ছেলে। আজ হাসপাতালে শুয়ে তোমার স্নেহ মাখা মুখখানি বারবার মনে পড়ছে। আমার ডায়েরিটা তোমার হাতে গেলে তোমার সকল দুঃখ দুর হয়ে যাবে। দেখবে, তোমার ছেলে শত্রুকে পেছনে রেখে কোন দিন পালায়নি। যেদিন তুমি আমাকে বিদায় দিয়েছিলে আর বলেছিলে, শত্রু দেখে কোনদিন পেছনে আসিসনে, বাবা। তুমি বিশ্বাস করো মা, শত্রু দেখে আমি কোন দিন পালাইনি। শত্রুর বুলেট যেদিন আমার বুকের বাঁ দিকে বিঁধল সেদিনও তোমার কথা স্মরণে রেখেছিলাম। মা, আমার সবচেয়ে আনন্দ কোথায় জানো? আজ থেকে চারদিন পূর্বে একটি গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছি, হটাৎ বেদনাক্লিষ্ট একটি নারীকন্ঠ ভেসে এল। কালবিলম্ব না করে সেদিকে দৌড়ে গেলাম। একটা গুলি আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেল–আবার একটা। এবার এবার বুঝলাম শত্রুরা আমাকে লক্ষ্য করেই গুলি ছুড়ছে। তবুও আমি এগিয়ে চলছি। বাড়িটার পেছনে একটা বাঁশঝাড়ের আড়ালে পজিশন নিলাম। দেখলাম বিবস্ত্র একটি নারীর দেহ নিয়ে কয়েকজন পৈশাচিক খেলায় মেতে উঠেছে। আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না, মা। মনে পড়ে গেল বাংলার লক্ষ লক্ষ মায়ের কথা। শত্রুকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লাম। ওরাও অনবরত গুলিবর্ষণ শুরু করল। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে। জানতে পারলাম আমার গুলিতে পাঁচজন নরখাদক পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। দোয়া করো, মা। ভাল হয়ে যেন তোমার শত শত সন্তানের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নিতে পারি।
ইতি
তোমার ছেলে
=============================================
সংগ্রহঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র থেকে।
=============================================
চিঠি সংকলনের টেক্স্ট কন্টেন্ট প্রকল্পের অংশ হিসাবে প্রকাশিত
১৩ থেকে ৫০ পৃষ্ঠার চিঠির প্রথম পিডিএফ সংকলন ডাউনলোড করুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




