somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জারকাবি হত্যাকাণ্ড - ১ : ইরাকে আমেরিকান অভিযানের নতুন পর্যায়

০১ লা জুলাই, ২০০৬ সকাল ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবু আল জারকাবি। ইরাকের আল কায়েদা নেটওয়াের্কর প্রধান। গত ৭ জুন বাকুবায় আমেরিকান এক প্লেন হামলায় প্রথমে গুরুতর আহত ও পরে নিহত হন। আর এজন্য আমেরিকা ব্যয় করেছে পাক্কা তিনটি বছর। আমেরিকা ও তাদের মিডিয়ার দৃষ্টিতে জারকাবি একজন পুরোদস্তুর সন্ত্রাসী। সে হিসেবেই পশ্চিমি গণমাধ্যমে তাকে চিহ্নিত এবং তার হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমেরিকার নিউজউইক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ্#145;জারকাবির মৃত্যু : ইরাকে আমেরিকান

অভিযানের নতুন পর্যায়্#146; নিবন্ধে এ দৃষ্টিভঙ্গিই প্রতিফলিত হয়েছে। তবে এতে রুদ্ধশ্বাস বর্ণনায় তুলে ধরা হয়েছে জারকাবি-বধ চিত্র। তার আগের তিন বছরের পটভূমি ও হত্যাকাণ্ড পরবর্তী প্রতিক্রিয়াও উঠে এসেছে লেখা ও গ্রাফিক্সে। আবার এ জারকাবিই ছিলেন ইরাকিদের কাছে একজন গেরিলা যোদ্ধা। দখলদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা। রক্তে-মাংসে গড়া জারকাবি নামের এ মানুষটির দ্বিমুখী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার জন্য একই সঙ্গে প্রকাশ করা হচ্ছে জারকাবির সাতকাহন। এটি এবং জারকাবি হত্যা পরবর্তী ইরাক পরিস্থিতি থাকছে আগামীকাল শনিবারের ফোকাসে। আমেরিকানরা নিশ্চিত হয়ে নিতে চাইছিল যে এবার তারা সঠিক ব্যক্তিটিকেই হত্যা করতে পেরেছে। এবার ইউএস কমান্ডাররা নিশ্চিত ছিলেন, বাগদাদের ৩০ মাইল উত্তরের একটা নিরাপদ বাড়িতে অবস্থান করছেন তাদের বহুল প্রাির্থত জারকাবি। তার আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে দেখা করতে সেখানে গেছেন তিনি। এরপর একটা ঋ-১৬ঈ প্লেন সেটার ওপর ৫০০ পাউন্ড ওজনের একটা বোমা ফেললো। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য একই ওজনের আরো একটা বোমা ফেলা হলো। তার মধ্যে একটায় ব্যবহূত হয় লেসার বিম, অন্যটায় স্যাটেলাইট প্রযুক্তি। এখন সেই নিরাপদ বাড়িটির চিহ্নমাত্র নেই। পুরোটা জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তার ধ্বংসাবশেষ। নানান আর্বজনা আর প্রচণ্ড তাপে বেঁকে যাওয়া কিছু ধাতব খণ্ড। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে পাওয়া গেছে দুজন পুরুষ, দুজন মহিলা আর একটি ছোট মেয়ের মৃতদেহ। ইরাকি এবং আমেরিকান যৌথবাহিনী যখন তাকে খুঁজে পায়, তখনো জারকাবি বেঁচে ছিলেন। কোনোমতে শ্বাস-প্রশ্বাস চলছিল তার। একটা স্ট্রেচারে শোয়া ছিলেন। হয়তো মনে মনে শেষ প্রার্থনা করছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমেরিকানরা মৃতদেহটাকে খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখে। একটা সবুজ রঙের টাট্টু বা উল্কি এবং পুরনো কিছু ক্ষতচিহ্ন আবিষ্কারের দিকেই নিবদ্ধ ছিল তাদের দৃষ্টি। জারকাবিকে ধরার জন্য যে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছিল, সেই দলটির নেতা লে. জেনারেল স্ট্যানলি ম্যাকক্রিস্টাল স্বয়ং সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কালো রঙের পোশাকে আবৃত রক্তাক্ত দেহটাকে তিনি গভীরভাবে দেখছিলেন। প্রাির্থত এসব চিহ্ন ছাড়া আর বেশি কিছু দেখারও ছিল না তাদের। সেখান থেকে পাওয়া যায় কিছু অস্ত্র, মেয়েদের একটা স্ল!ি@@!47796 সুট; যেটা সম্ভবত জারকাবির স্ত্রীর ছিল। এছাড়া ২ মে তারিখের নিউজউইক পত্রিকার আরবি সংস্করণের একটা কপি (যেটায় ইরাককে নিয়ে ্#145;নো এক্সিট্#146; নামে কভারস্টোরি করা হয়েছিল)। কাছেই পাওয়া যায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের একটা ছবি। জারকাবির মৃত্যু আমেরিকানদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা ্#145;ওয়ার অন টেরর্#146; বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে একটা টাির্নং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। জারকাবি যেদিন মারা যান সেদিনই আমেরিকান সেনাবাহিনীর একটা বিশেষ দল ইরাকের ১৭টি স্থানে হানা দেয় এবং তার পরদিন হানা দেয় আরো ৩৯টি স্থানে। এসব অভিযানে মোট ২৫ জন আল কায়েদা সন্দেহভাজন নিহত হয়। একজন সামরিক মুখপাত্র দাবি করেন যে জারকাবির গড়ে তোলা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক সম্পির্কত তথ্যের ্#146;গুপ্ত ভাণ্ডার্#146;-এর সন্ধান তারা পেয়েছেন। বিজয় উল্লাসের প্রকাশ ঘটেছে সঙ্গে সঙ্গেই। জারকাবির ফোলা, কালশিটে পড়া মৃত চেহারার ছবি ছাপিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছে ট্যাবলয়েড নিউ ইয়র্ক পোস্ট। তার সঙ্গে একটা ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনও ছাপা হয়। যেটায় জারকাবি বলছেন, ্#146; েবহেশতের কুমারীরা তোমরা প্রস্তুত হও, আমি এসে পড়েছি।্#146; তবে এটা কেউই মনে করছেন না যে এর ফলে ইরাকে বিদ্রোহীরা একেবারে উধাও হয়ে যাবে। এমনকি তাদের কর্মকাণ্ড কমে আসার সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ। বরং জারকাবির পরিণতি নতুনভাবে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে ইরাকে স্থায়ী গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে দেয়াই ছিল জারকাবির উদ্দেশ্য। এর ফলে মর্গগুলো প্রতিদিনই লাশে পরিপূর্ণ থাকতো। মৃতদের অনেককে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এতো সব হত্যা আর রক্তপাত বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে মনে হয় অনেক দেরি হয়ে গেছে। জারকাবির মৃত্যুকে আমেরিকানদের সামরিক দক্ষতার মডেল হিসেবে গণ্য করা যায়। তবে এ প্রশ্নটিও ফেলে দেয়ার মতো নয় যে, এ কাজটি করতে তাদের তিন বছর সময় কেন লাগলো। ২০০৩ সালে আমেরিকার ইরাক দখলের পর যেদিন থেকে আবু মুসাব আল জারকাবি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একটা ত্রাস হয়ে উদিত হলেন, সেদিন থেকেই তাকে ধরতে একটা ্#145;এলিট টিম্#146; গঠন করা হয়। এই এলিট টিমে ছিল সেরাদের সেরারা। তাদের মধ্যে রয়েছে ডেল্টা ফোের্সর সদস্য, নেভি সিল টিম সিক্স, আির্ম রেঞ্জারস এবং অন্যান্য অতি দক্ষ স্পেশাল অপারেটররা। তাদেরকে সহায়তা করার জন্য ছিল গোয়েন্দা স্যাটেলাইট আর কোড ভাঙতে সক্ষম বিশেষ কম্পিউটার। জারকাবির কিছু কিছু কাজ তাদের অহরহ বিভ্রান্ত করেছে। গত মে মাসে পেন্টাগন জারকাবির যে ভিডিও চিত্রটি রিলিজ করে, সেখানে গালভির্ত দাড়ি থাকা সত্ত্বেও তাকে অনেকটা শিশুদের মতোই মনে হচ্ছিল। তার পরনে ছিল কালো পোশাক। তার এক পাশ থেকে উঁকি দিচ্ছে একটা হোয়াইট স্নিকার চকোলেট। চিত্রটিতে দেখানো হয়, আমেরিকান অটোমেটিক মেশিনগান থেকে গুলি ছুড়তে জারকাবির অসুবিধা হচ্ছে। আল কায়েদার মুখপাত্র হিসেবে তিনি বারবার আমেরিকানদের সামনে উপস্থিত হয়েছেন। আবু মুসাব আল জারকাবি ছিলেন কিংবদন্তির মতো। বলা হয়ে থাকে তিনি নারীর ছদ্মবেশ নিয়ে এবং প্রচুর সহচর নিয়ে চলাফেলা করতেন। যদিও এর কোনোটাই সত্যি নয়। প্রথমদিকে বলা হতো তিনি প্যালেস্টিনিয়ান ছিলেন না। জর্ডানি ছিলেন তিনি। বলা হতো তার পা একটা। না, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তার দুটো পা-ই বহাল ছিল। বলা হতো তিনি বিন লাদেন এবং সাদ্দাম হোসেনের মধ্যকার যোগসূত্র ছিলেন। সেটাও ঠিক নয়। জারকাবির জন্ম জর্ডানের জারকা নামের এক নোংরা শহরে। তার নামের উত্পত্তি জারকা থেকে। কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না বলে ৮০-র দশকের শেষদিকে আফগানিস্তানে চলে যান জারকাবি দখলদার রুশ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য। কিন্তু পৌঁছতে দেরি করে ফেলায় তার সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তবে কাবুলের কমিউনিস্ট সমির্থত সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে, সে সময় তিনি ভালো যোদ্ধা হিসেবে নাম করেছিলেন। বর্তমানে পাক-আফগান সীমান্তে অবস্থানরত তালেবান কমান্ডার হেমাত নিউজউইককে বলেন, জারকাবি একেক সময় উধাও হয়ে যেতেন এবং কখনো কখনো টানা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত গা ঢাকা দিয়ে থাকতেন। সহযোদ্ধারা যখন ভাবতে শুরু করতো তিনি মারা গেছেন, তখনই নানান দুঃসাহসী অভিযানের কাহিনী নিয়ে হাজির হতেন তিনি। হেমাত অতীতের সেসব স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, জারকাবি হেভি মেশিনগান চালাতে পছন্দ করতেন। পাহাড়ের ওপর থেকে উপত্যকায় ঘুরে বেড়ানো কমিউনিস্ট সৈন্যদের লক্ষ্য বলে গুলি করতেন। মাথার ওপর দিয়ে প্লেন গেলেও গুলি করতেন জারকাবি। হেমাত বলেন, ্#145;তবে আমি কখনো ভাবিনি তিনি একদিন এতো গুরুত্বপূর্ণ একজন হয়ে উঠবেন।্#146; ৯০-এর দশকের প্রথমদিকে জর্ডানে ফিরে গিয়েছিলেন জারকাবি কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্ররে অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয় তাকে। কারাগারে থাকার সময় সেটাকে নিজের স্কুল বানিয়ে নেন জারকাবি। বিধর্মীদের প্রতি প্রবল ঘৃণা ছিল তার। শিয়াদের প্রতি ছিল চরম বিরক্তি। তিনি মনে করতেন, শিয়ারা ইসলামের প্রকৃত পথ ছেড়ে ভুল পথে চলেছে। সে দশকের শেষদিকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি পান আবু মুসাব আল জারকাবি। মুক্তি পেয়ে আফগানিস্তানে ফিরে যান। সেখানে আল কায়েদার শিবিরে সামরিক ট্রেনিং নেন তিনি, কিন্তু ওসামা বিন লাদেনের প্রতি অনুগত থাকার শপথ কখনো নেননি। বরং নিজের দল গড়ে তোলার জন্য একটি আলাদা শিবির স্থাপন করেন, যার লক্ষ্য ছিল জর্ডানের বাদশাহ হুসেনকে হত্যা করে একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ২০০১ সালে আমেরিকানরা যখন আফগানিস্তান আক্রমণ করে, তখন জারকাবি এবং তার অবশিষ্ট অনুসারীরা ইরান হয়ে উত্তর ইরাকে পালিয়ে যান এবং সেখানে সাদ্দাম হোসেনের মুঠোর বাইরের এক পার্বত্য অঞ্চলে একটি দলের সঙ্গে আনসার আল ইসলাম নামে একটি ক্যাম্প খোলেন। কয়েকটি মাির্কন গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করে জারকাবি এবং তার অনুসারীরা সেখানে ক্রুড কেমিকাল অস্ত্র নির্মাণ করছে। ২০০২ সালে পেন্টাগন সেখানে বোমা বর্ষণের সিদ্ধান্ত নিলে হোয়াইট হাউস তাতে বাধা দেয়। জারকাবিকে ধরার কাজে নিয়োজিত প্রাক্তন এক আমেরিকান গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ্#145;আমরা জানি সে ওখানে আছে, কিন্তু কিছু করতে পারছি না। আমাদেরকে বলা হয়েছে, তারা (পেন্টাগন) চায় না তাদের যুদ্ধ পরিকল্পনায় কোনোরকম বাধাবিঘ্ন ঘটুক। এর ফলে আমরা সত্যিকারের একটা সুযোগ হারালাম।্#146; বুশ প্রশাসন জারকাবিকে অন্যভাবে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকান সেক্রেটারি অফ স্টেট কলিন পাওয়েল মাির্কন হামলা অনুমোদনের জন্য জাতিসংঘে গিয়ে অভিযোগ করেন সাদ্দাম হোসেন জারকাবির নেতৃত্বে সে দেশে একটি ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। সে সময় তিনি জারকাবিকে ওসামা বিন লাদেন ও তার সংগঠন আল কায়দার অনুসারীদের মাঝের যোগসূত্র বা দালাল বলে আখ্যা দেন। আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করে যে, জারকাবি চিকিত্সা গ্রহণের জন্য বাগদাদ গিয়েছেন। তখন একটা খবর ব্যাপক প্রচার পায় যে আমেরিকান প্লেনের হামলায় জারকাবি এক পা হারিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছিল সেই কারণেই ২০০২ সালের কোনো এক সময় বাগদাদ যেতে হয় তাকে। কিন্তু সাদ্দামের প্রশাসন সে ব্যাপারে কিছু জানতো, তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত জারকাবি দুই পায়েই হাঁটতেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে জারকাবির কোনো আন্তরিকতা ছিল না। কারণ ২০০৩ সালের বসন্তে সাদ্দাম ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই জারকাবি ইরাকি প্রশাসনের শূন্যতা পূরণের চেষ্টায় উঠেপড়ে লেগেছিলেন। তার অনুসারীরা বাগদাদের জর্ডানিয়ান দূতাবাসের সামনে এক গাড়িবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং সেখানকার জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে হত্যা করার জন্য আত্মঘাতী মিশন পাঠানোর কৃতিত্ব দাবি করে। যার ফলে জাতিসংঘ সে সময়ে ইরাক থেকে তার মিশন গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এরপর জারকাবি শিশুদের হাতে বোমাসহ ক্যান্ডি বার তুলে দিয়ে মাির্কন সৈন্যদের বিরুদ্ধে বিশেষ ধরনের আত্মঘাতী হামলা শুরু করেন। এক শিরশ্ছেদের ঘটনার মধ্যে দিয়ে জারকাবির নাম খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায় এক মুখোশ পরা ব্যক্তি; ধারণা করা হয় জারকাবি স্বয়ং, বড় এক ছোরা দিয়ে নিক বার্গ নামের এক মাির্কন ঠিকাদারকে জবাই করছেন। নিহতের পরনে ছিল গুয়ানতানামো বে-র মাির্কন বন্দী শিবিরে আটকদেরকে যে ড্রেস পরতে দেয়া হয় সেই কমলা রঙের জাম্পসুট। নিক বার্গসহ আরো একজনের শিরশ্ছেদের দৃশ্য সংবলিত সেই ভিডিও টেপ ইরাকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হয় এবং ইন্টারনেটের সাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর জারকাবি ইওরোপের র্যাডিকাল মুসলমানদের কাছে রাতারাতি নায়ক হয়ে যান। জারকাবিরও সুখ্যাতি করে ২০০৫ সালের ৭ জুলাই লন্ডনের সাবওয়েতে বোমা বিস্ফোরণকারীরা। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে উগ্রপন্থী মুসলমানদের ইরাকে জড়ো করে তার জিহাদে অন্তর্ভুক্ত করতে থাকেন এবং তাদের দিয়ে আমেরিকান ও ইরাকি সৈন্য এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ চালাতে শুরু করেন। তার অনুসারীরা বেশিরভাগই ছিল প্রায় অশিক্ষিত আরব। কিন্তু বহু ভাষাবিদ রিটা কাতজ; যার প্রাইভেট ঝওঞঊ ইনস্টিটিউট তাদের ওয়েবসাইট মনিটর করে, তার জন্য অল্প দিনের মধ্যে যথেষ্ট শিক্ষিত এবং মাির্জত হয়ে ওঠে তারা। পরে জারকাবি তার সংগঠন জিহাদকে বিন লাদেনের আল কায়দার সঙ্গে একীভূত করেন। অন্যদিকে আমেরিকানরা জারকাবিকে ধরার চেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যেতে থাকে। যে দলটি তাকে ধরার চেষ্টায় ছিল, সেটি দফায় দফায় নাম পরিবর্তন করতে থাকে। এরকম একটা দলের নাম ছিল টাস্কফোর্স ১৪৫। কিন্তু দলটির পরিচয় ব্যাপকভাবে জানাজানি হয়ে গেলে সেটিকে বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। সেরা আমেরিকান কমান্ডোদের নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্স জারকাবির ব্যাপারে কোথাও কোনো সূত্র পাওয়া যায় কি না তার খোঁজে ইরাকের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে থাকে। মার্চ মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক রিপোের্ট জানা যায়, টাস্কফোর্স ৬-২৬ নামের একটি আমেরিকান এলিট স্পেশাল অপারেশনস ইউনিট সাদ্দাম হোসেনের পুরনো এক টর্চার চেম্বার খুঁজে বের করে সেটাকে নিজেদের ইন্টারোগেশন সেলে রূপান্তরিত করে সেটার নাম রাখে ব্ল্যাক রুম। যার দেয়ালে ঝোলানো প্ল্যাকাের্ড লেখা আছে : নো ব্লাড, নো ফাউল। টাইমসের রিপোের্ট বলা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদকারীরা সেখানে জারকাবির খবর বের করার জন্য বন্দীদের চোখে মুখে থুথু মারে অথবা তাদের রাইফেলের কুদো দিয়ে পেটায়। ফজুল্লার বাইরে জারকাবিকে একবার প্রায় ধরেই ফেলেছিল ইরাকিরা, কিন্তু চিনতে না পারায় আধা ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়। পরে একবার আমেরিকানরা তার ড্রাইভারকে ধরে ফেলে এবং তার ল্যাপটপ আটকে করে, কিন্তু জারকাবি যেভাবে হোক পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ভাবতে অস্বাভাবিক লাগে সুপার সোলজারদের নিয়ে গঠিত ডেল্টা ফোের্সর মতো বাহিনী, যাদের একাধিক মিশন ইম্পসিবল ধরনের সাফল্য নিয়ে ছ্
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×