somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোয়েন্দা গল্পঃ ব্যাংক ডাকাতি

০২ রা আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত সাড়ে চারটা নাগাদ চারদিকে খবর হওয়া শুরু করলো। বিষয়টা শুরু হল অনেকটা নিউক্লিয়ার ফিউশনের মত। প্রথমে একজন প্রহরীর ঘুম ভাঙ্গা থেকে শুরু, মাথাটা একটু পরিস্কার করে নিয়ে অল্পক্ষণেই সে বুঝে নেয় ঘটনা। তার সাথের আর কয়েকজন এদিক ওদিক অজ্ঞান হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। নগেন চন্দের নানাবিধ নেশা হজম করার সুখ্যাতি অথবা কুখ্যাতি যেটাই বলা হোক, তা আছে ভালোই। তার চেয়ে বেশী ভাঙ্গের নাড়ু খেয়ে কেউ কালীপূজার রাতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। যে অজানা প্রভাবে তার সহপ্রহরীরা অচেতন হয়ে পড়ে আছে, তা বেশিক্ষন কাবু করে রাখতে পারেনা তাকে। তবে মাথা পুরোপুরি ঘুরছে নগেন চন্দের।

অবিশ্বাস্য ঘটনা, ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে! তার ডিউটি ছিল যশোর সোনালী ব্যাংকের কর্পোরেট ভবনের ভল্টে। এই জেলা শহরের সবগুলো ব্যাংকের অতিরিক্ত অর্থ জমা হয় দিন শেষে এই ভল্টে। আজ ছিল বছরের হিসাব সমাপনী, পাঁচশো কোটি টাকার উপরে ছিল আজকে ভল্টে। সব ব্যাংকের সব শাখা তাদের পার্টির কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে ক্লোজিঙ্গের আমানত বেশী দেখানোর জন্য। আজকে ভল্ট ছিল কানায় কানায় ভর্তি। এই পরিমান টাকা এখানে থাকার কথা না, দুই একদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকে চলে যাবে। কিন্তু সেই ভল্টের অর্ধেক ফাঁকা! ভরা জোয়ারে জাল ফেলে লুটে নিয়ে গেছে ব্যাংক ডাকাতের দল।

নগেন চন্দ কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইল বের করে থানায় ফোন দেয়, এখন ডিউটি অফিসার ওসি জব্বার গাজী। বদরাগী হিসেবে হিসেবে খুব নামডাক, বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পরে ফোন ধরে,
- স্যার, আমি নগেন। সোনালী ব্যাংক থেকে বলছি! ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেসে স্যার! এইখানে সর্বনাশ হয়ে গেসে স্যার, আপনারা সব জলদি আইসা পড়েন!
ঘুম ঘুম রাগী কন্ঠে জব্বার ওসি বলে,
- কি সব আবোল তাবোল বলছিস নগেন, কিছু খেয়েছিস নাকি? ডিউটির মধ্যে এসব কিন্তু একদম পছন্দ না আমার!
শেষের দিকে বলা যায় হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন জব্বার ওসি।

ওপাশ থেকে নগেন চন্দের কন্ঠে আন্তরিক আতঙ্ক অনুভব করতে পেরে অল্পক্ষনেই ঘুম ছুটে যায় জব্বার ওসির, সর্বনাশ! ব্যাংক ডাকাতি! চিন্তা করা যায়!

আধা ঘন্টার মধ্যে ব্যাংক কম্পাউন্ডের মধ্যে কিলবিল করতে থাকে পুলিশ আর বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যেরা। ব্যাংকের ঊর্ধতন কর্মকরতারা পথে। ডিসি, এসপি থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর জেলা পর্যায়ের সব মাথাকেই জাগানো হয়েছে, চোখ মুছতে মুছতে রওনা হয়েছেন সবাই।

সাথে সাথেই ঠিক কত টাকা লুট হয়েছে বোঝা না গেলেও জেলা থেকে বের হওয়ার সবকটি হাইওয়েতে ব্যারিকেড পড়ে গেছে, ভল্ট থেকে যে পরিমান টাকা সরানো হয়েছে তাতে মিনিমাম একটা ট্রাক লাগবার কথা। ভল্ট থেকে টাকা বের করতে পারলেও বাংলাদেশে এত টাকা সরানোর কোন উপায় নেই। একটু পরে সকাল হয়ে যাবে। পথে মাঠে ঘাটে ছড়িয়ে পড়বে সাধারন মানুষ। ওদের চোখ এড়িয়ে কারও পক্ষে তখন এই টাকা হজম করা সম্ভব না।


কিছুক্ষনের মধ্যেই ব্যাংক থেকে জানানো হল লুট হওয়া টাকার পরিমান একশো কোটি! সব টাকা ট্রাঙ্কের মধ্যে করে সিল করা ছিল। প্রায় পঞ্চাশটা ট্রাঙ্ক নিয়ে গেছে,পুরো অপারেশনে সময় লেগেছে এক ঘণ্টারও কম। ভল্ট পাহারায় ছিল সব মিলিয়ে ১৫ জনের মত পুলিশের একটা দল। নগেন চন্দ ছাড়া সবাইকে পাওয়া গেছে অচেতন। প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে কোনো গ্যাস ব্যবহার করে সবাইকে অচেতন করে ফেলা হয়েছে। ভল্টের দেয়াল কাটার মত অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল ডাকাত দলের সাথে। আর সব কিছু মিলিয়ে বলতে হবে এটা ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক ডাকাতি।


নিখুঁত পরিকল্পনা, প্রত্যেকটা মিনিটের হিসেব করা ছিলো, অত্যন্ত দক্ষতার সাথে লুট করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের পেশাদারি কাজ, কোথাও কোনো দূর্বলতা পাওয়া যাচ্ছেনা। ব্যাংকের সার্কেল জিএম কলিম আলী সহ হোমরাচোমরা সবাই বসে আছেন। ফুল এসি ছাড়া, কিন্তু কারও চেহারা দেখে মনে হচ্ছেনা কেউ ঠান্ডা হাওয়ার পরশ পাচ্ছেন। কলিম আলি তো কুলকুল ঘেমে যাচ্ছেন, ওনার মাঝেই মাঝেই মনে হচ্ছে এইটা আসলে একটা দুঃস্বপ্ন! ঘুম ভাঙ্গলে দেখবেন নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে আছেন। ডিসি ফজলুল হক ক্রমাগত ফোনে কথা বলছেন। তার জী স্যার, জী স্যার, বলা থেকে বোঝা যায় বেশ উপর মহলে কথা বলছেন।


ধুপ করে গেট খুলে গেল, স্থানীয় সাংসদ প্রবেশ করলেন প্রথমে। পাঁচ মিনিট পরেই এনএসআই এর ডিরেক্টর হাফিজ ঢালী প্রবেশ করলেন। হাফিজ ঢালীকে দেখা মাত্র কর্নেল হামিদ উঠে এক স্যালুট দিয়ে দিল। সামরিক বেসামরিক গোয়েন্দা জগতে বাংলাদেশে এমন কেউ নেই যে হাফিজ ঢালীকে চেনে না, সম্মান করেনা। যদিও সাধারন মানুষের মধ্যে তাকে কেউ চেনেনা। এই যে তাকে সাধারন কেউ চেনে না, এটাও তার একটা কৃতিত্ব, বিখ্যাত হয়ে গেলে গোয়েন্দাদের ব্যবসার লাল বাতি জ্বলে যায় দ্রুত! হাফিজ ঢালীকে এই রাতে ঘটনার এক ঘন্টার মধ্যে পাওয়া সম্ভব ছিল না। জেলার নতুন নিয়োগ প্রাপ্তদের একটা ট্রেইনিং এ তিনি এসেছিলেন, সকালের ফ্লাইটে তার ঢাকা চলে যাওয়ার কথা। ব্যাংক ডাকাতির খবর পেয়ে চলে এসেছেন।


খুব দ্রুত পরিস্থিতির একটা ব্রিফিং নিয়ে নিলেন হাফিজ ঢালী। সব শুনে সাংসদ, ডিসি আর ব্যাংকের জিএম কে বললেন
- স্যার, আপনারা আপনাদের দপ্তরে থাকলেই চলবে। আমরা এই সব চোর ডাকাত ধরার প্রফেশনাল, ডাকাতি যারা করেছে ওরাও প্রফেশনাল। শুধু শুধু কষ্ট করে এখানে থাকবার দরকার নেই আপনাদের। আপনাদের কোন সাহায্য লাগলে আমরা চেয়ে নেব।

অন্যরা বুঝলেও মাননীয় সাংসদের মুখ হা হয়ে গেল, এই রকম ফিল্মি একটা ব্যাপার, তিনি লাঠি ঘোরাবেন সবার উপর, আর তাকে কিনা বলা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে। রাগে ফেটে পড়ার উপক্রম করলেন তিনি।

- স্যার, আপনাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে না, আমরা পেশাদারি ভাবে কাজটা পরিচালনা করতে চাচ্ছি। আপনার কোন সাহায্য দরকার হলে আমরা চেয়ে নেব। আর সকালেই আপনার কাছে আমরা আপডেট পাঠাচ্ছি!

সাথে সাথে একটা ফোন পেয়ে নাম্বার দেখে ধরলেন হাফিজ, ফোনটা পেয়েই একটা সাইডে চলে আসলেন, শুধু জী ম্যাডাম, জী ম্যডাম টুকুই সবাই শুনতে পারলেন।
ফোন রেখে বললেন,
- আমার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ফোন। ম্যাডাম খুব অস্থির হয়ে গেছেন, বলেছেন ব্যক্তিগত যে কোন সহযোগিতা উনি নিজে আমাকে করার জন্য প্রস্তুত।

মাননীয় সাংসদ আর এক মুহূর্ত দেরী করলেন না, রাগের বিন্দুমাত্র আভাস আর নেই তাঁর চেহারায়। তাঁর সাথে দুই সাঙ্গ ও পাঙ্গ নিয়ে দ্রুত বের হয়ে গেলেন। যাওয়ার আগে হাফিজের হাত ধরে বললেন,
- আপনার যে কোন সহযোগিতার জন্য আমাকে বলবেন, প্লীজ! আমি আপনার আশাপাশেই থাকব! আর প্লীজ, ম্যাডামকে আমার কথা বলবেন যে আমি আপনার সাথেই আছি!
- অবশ্যই, অবশ্যই, আমি ম্যাডামকে বলবো আপনার কথা!

হাফিজের সাথে আসা তরুন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইকবালের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে ততক্ষনে,
- স্যার, আপনাকে প্রধানমন্ত্রী ফোন দিয়েছিলেন?
তার থেকে চোখ বড় করে হাফিজ ফিসফিস করে বললেন,
- আরে গাধা, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন দিতে যাবে কেন? তোমার ভাবী ফোন দিয়েছিল! ম্যাডাম বলতে সব দলই অজ্ঞান!
ইকবাল তার স্যারের কাছ থেকে প্রায়ই গাধা সম্বোধন শুনে থাকে। এইটা নিয়ে এখন আর অবশ্য তার মনে কোন দুঃখ নেই। এইমাত্র কেমন মুহুর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নিলেন।

অপারেশনের নিয়ন্ত্রণ মোটামুটি হাফিজের হাতে চলে এসেছে। তিনি ব্রিফিং শুরু করলেন,
- আমি এই রুমে ঢোকার আগে সংক্ষিপ্ত একটা অনুসন্ধান চালিয়েছি। বিস্ময়কর একটা কাজ! খুবই দক্ষতার সাথে কাজটা করা হয়েছে। পকেট থেকে ছোট গ্রেনেডের মত বের করলেন। দেখুন এটা আমি পেয়েছি, কোন সন্দেহ নেই খুঁজলে আরও কয়েকটা পাওয়া যাবে। এই গ্যাস বম্ব দিয়েই সবাইকেই অচেতন করা হয়েছে।
যে পরিমান টাকা লুট করা হয়েছে তা হজম করা এক অর্থে খুবই কঠিন। সব রাস্তাতেই নিশ্চয় ব্যারিকেড পড়ে গেছে এতোক্ষনে?
পুলিশ সুপার বললেন,
- আশপাশের সবকটি থানায় খবর চলে গেছে। চেকিং ছাড়া কোন গাড়ি কিছু নিয়েই যেন বের না হতে পারে এই নির্দেশ দেওয়া হয়ে গেছে। মুশকিল হল এখান থেকে সবজি, মাছ সহ পণ্যবাহী প্রচুর ট্রাক যায় ঢাকার দিকে। এর সবগুলোই ছাড়ে রাতে। এখন সব ট্রাক চেক করতে বেশ সময় আর ফোর্স দরকার।
- এখন থেকে দুইঘন্টা সময় ধরলে লুট হওয়া টাকা ১০০ কিমি বৃত্তের মধ্যেই আছে। চলুন আমরা এই ব্যাসার্ধের একটা বৃত্ত এঁকে ফেলি।
বগলের ভেতর থেকে গোল করে গোটানো কাগজটা মেলে ধরতে বোঝা গেল ওটা একটা ম্যাপ। পরের কিছু সময়ের মধ্যে নিখুঁতভাবে চারপাশের সবগুলো রাস্তা, সম্ভাব্য ট্রানজিট রুট ধরে একটা চিরুনী অভিযানের পরিকল্পনা করে ফেললেন, পুলিশ সুপার আর র‍্যাব প্রধানের সাথে। খুঁটিনাটি নির্দেশ দিয়ে চলে আসলেন ভল্টের দিকে। ওখানে ডিবি পুলিশের একটা দল অনুসন্ধান চালাচ্ছে। সম্ভাব্য যে কোন সূত্রের জন্য অনুসন্ধান করছে। ওখানে যে রিপোর্ট পেলেন সেটা হল অক্সি এসিটিলিনের শিখা দিয়ে গলিয়ে ফেলা হয়েছে ভল্টের পুরু ইস্পাতের দরজা। দশ থেকে পনের জনের প্রশিক্ষিত একটা দল প্রয়োজন এইভাবে ইস্পাত কেটে ট্রাঙ্ক ট্রাঙ্ক টাকা লুট করার জন্য।


ওখান থেকে ইকবালকে নিয়ে থানার দিকে চললেন হাফিজ। সচরাচর গাড়ী ইকবাল চালায়। কিন্তু কোন অপারেশন থাকলে গাড়ি হাফিজ নিজে চালান। একটা বিষয় ইকবাল খেয়াল করে বেশ অবাক হয়েছে। সাধারনত শান্তিপূর্ন সময়ে হাফিজ কেমন গম্ভীর, বদমেজাজী থাকেন। কিন্তু কোন ঘটনা ঘটলে বেশ ফুরফুরে চনমনে দেখায়, মাঝে মাঝে বেশ রসিকতাও করেন। কিন্তু আজ হাফিজকে বেশ গম্ভীর দেখাচ্ছে। নিজে থেকেই বলে উঠলেন
- কিছু জিনিস নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছি। সাধারন আর যে কোন ডাকাতি হলে ওর জন্য পুলিশ আর জনতা যথেষ্ট। আমাদের অতিঘন জনসংখ্যার কিছু কুফলের একটা সুফল হইতেসে এখানে এতো বড় ঘটনা চুপচাপ হজম করা কঠিন। তুমি গ্রেনেডটা খেয়াল করেছ? ওতে কিন্তু প্রস্তুতকারী কোন দেশের নাম নেই। আমার নেড়েচেড়ে তো মনে হল দেশেই তৈরী। তার মানে তুমি বুঝতে পারছ? আমাদের দেশে কারা বানাচ্ছে? কেন বানাচ্ছে?


থানায় পৌঁছে গেল ওরা ততক্ষণে। ওসি জব্বার গাজী তখন পুরো সচেতন। উত্তেজনায় এমাথা ওমাথা পায়চারী করছে। হাফিজ গিয়ে জব্বার ওসির সাথে বসলেন। শহরে যত ইনফর্মার, টিকটিকি আছে সবাইকে মাঠে নামানোর জন্য। ওরা ছড়িয়ে পড়বে শহরের আনাচে কানাচে। এতো বড় একটা অপারেশনে স্থানীয় কিছু যোগাযোগ থাকবেই। সেটার সন্ধান পাওয়ার জন্য এই ইনফরমাদের উপরে কেউ নেই।

থানা থেকে বের হয়ে হাফিজ বললেন,
- চল, এক চক্কর এমপি সাহেবের সাথেও দেখা করে আসি। তার এলাকায় এতো বড় দাঁও মেরে দিল কেউ, তার নেটওয়ার্কে তো কিছু খবর আটকা পড়ার কথা।

এমপি সাহেবের সাথে দেখা করে বের হওয়ার সময় ভোরের আলো ফোঁটা শুরু করেছে। রাস্তায় অল্প অল্প মানুষ দেখা যাচ্ছে। দিনগুলো যেমন তেমন হোক, প্রত্যেকটা ভোর কেমন রহস্যময় পবিত্র! হঠাৎ ইকবাল বলে উঠলো,
- স্যার, গাড়ি থামান!
ঘ্যাচ করে ব্রেক কষলেন হাফিজ। গেট খুলে হুড়মুড় নেমে গেল ইকবাল। হাফিজ উঁকি দিয়ে দেখলেন ট্রাউজার কেডস পড়া এক যুবককে থামিয়েছে ইকবাল। রাস্তায় দৌড়ে মাত্র ক্রস করছিল সেই যুবক। গাড়ি থেকে নামতে নামতে দেখলেন ইকবাল সেই যুবকের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে! ঘটনা দেখে হতাশ হলেন হাফিজ। বরং কোন একটা ক্লু পেয়ে যদি ইকবাল যুবকের দিকে রিভলবার তাক করতো তাতেও না হয় একটা আশার কিছু থাকতো!

দুইজন মিলে বত্রিশ বত্রিশ চৌষট্টিটা দাঁত বের করে এগিয়ে আসে তার দিকে, ইকবাল পরিচয় করিয়ে দেয়,
- স্যার, আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু রাশেদ। একই রুমে ছিলাম আমরা। সেই গনরুম থেকে সংগ্রামী জীবন শুরু করে শেষ মাস্টারস পর্যন্ত! যাকে বলে প্রানের বন্ধু। তারপরে হুট করে কোথায় যে উধাও হয়ে গেল পাগলা, তারপর এই আবার দেখা। খুব ব্রিলিয়ান্ট ছেলে ছিল, গোয়েন্দাগিরি নিয়ে অশেষ উৎসাহ ছিল। ওর কাছ থেকেই শার্লক হোমস থেকে শুরু করে ফেলু মিত্তির সহ দেশী বিদেশী নানা গোয়েন্দাদের সাথে পরিচয় হয়েছে। আসলে ওরই হওয়া উচিত গোয়েন্দা, মাঝখানে আমি পরীক্ষায় পাস করে গোয়েন্দা হয়ে গেছি!
হাফিজ জিজ্ঞেস করলেন,
- আপনি এখন কি করেন?
- আমি একজন গোয়েন্দা, তবে পরীক্ষা পাশ করা সরকারী গোয়েন্দা না!
- বলিস কি রাশেদ, সত্যিই গোয়েন্দা হতে পেরেছিস জীবনে!

হাফিজ জিজ্ঞেস করলেন,
- কেমন ধরনের গোয়েন্দা আপনি? গল্প সিনেমার প্রাইভেট ডিটেকটিভ?
- আমি সত্য অনুসন্ধানকারী, রহস্য ছেনে আমি সত্য তুলে আনি!
- বাহ, বাহ, ভালো বলেছেন, লেখালিখি করেন নাকি?
- নাহ, আমার একটা ছোটখাট ল্যাব আছে। জানেন তো ইকবাল কেমিস্ট্রির ছাত্র, আমি ওর সাথেই ছিলাম। নিউটনও তো খুব বড় মাপের একজন গোয়েন্দা ছিল মানেন তো?
হা হা হা করে হেসে উঠলেন হাফিজ।
- চলো ব্যাংকের ওদিক দিয়ে ঘুরে আসি।

গাড়িতে সব ঘটনা ইকবালের কাছ থেকে শুনে ফেললো রাশেদ। শুনে তো রাশেদ উত্তেজনায় একদম অস্থির, সত্যিকারের একটা কেস! রাশেদ ফিসফিস করে ইকবালকে বলে,
- দোস্ত, তোদের তদন্তের সাথে আমাকে রাখা যায় না? সত্যিকারের অনুসন্ধান দেখতাম!
- স্যার তোকে পছন্দ করেছেন বলেই তো মনে হল। আমার সাথেই থাক। দেখা যাক কি হয়। তবে যত বড় ঘটনা, এতো টাকা নিয়ে পালাতে পারবেনা। ধরা পড়ে যাওয়া উচিত।

ব্যাংকে পৌঁছে দেখা গেল অনুসন্ধানকারী টিমের কাজ মোটামুটি শেষ! ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা যেগুলো ছিল যেগুলো সবই খুবই মনোযোগ দিয়ে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। কোন ফুটেজ পাওয়া গেলো না।
হাফিজ কন্ট্রোল রুমের দিকে চলে গেলেন। ডাকাতির প্রায় ছয় ঘন্টা হতে চলল, এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি চোখে পড়ছেনা।
রাশেদ আর ইকবাল গেল ভল্টরুম পরিদর্শনে। ওখানে গিয়ে পরবর্তী এক ঘন্টা খুব মনোযোগ দিয়ে কেটে ফেলা গেট সহ টাকার ট্রাঙ্ক, তার সাইজ, ওজন ইত্যাদি খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষন করা শুরু করলো রাশেদ। অপরাধস্থল পুঙ্খানুপুঙ্খ তল্লাশির ট্রেনিং আছে ইকবালের, কিন্তু রাশেদ এতোটাই সহজাত দক্ষতা নিয়ে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা এবং নোট নেওয়া শুরু করলো, যে ইকবাল হাত গুটিয়ে রাশেদের কাজ মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকলো। মর্নিং ওয়াকে বের হলেও সাথে ঢাউস একটা মোবাইল সাথে ছিল রাশেদের, সেইটা বের করে কাকে যেন কি সব আনতে বলে। ইকবাল আগ্রহী জিজ্ঞেস করে,
- কাকে কি আনতে দিলি রে?
মুচকি হেসে রাশেদ জবাব দেয়,
- আসলেই দেখতে পারবি। ওর নাম হচ্ছে রকি। আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট। আমার একটা গোয়েন্দা-প্যাক আছে। ব্যাক প্যাক আর কি। ওর মধ্যে ক্যামেরা, হাতের ছাপ নেওয়ার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব কিছুই আছে।
- বলিস কি? তুই তো পুরোপুরি সিরিয়াস! গোয়েন্দাগিরিতে তুই তো বেশ আটঘাট বেঁধেই নেমেছিস? এতদিন শার্লক হোমস , ফেলুদা, ব্যোমকেশদের মত ফ্রী ল্যান্সার গোয়েন্দাদের শুধু গল্প মুভিতেই দেখে আসছি, তুই তো আমাদের বাস্তবের ফেলু মিত্তির হতে যাচ্ছিস রে, বয়ঃপ্রাপ্ত কিশোর পাশাও বলা যায়।
- আরে সেই তিন গোয়েন্দার কথা বলছিস? কিশোর, মুসা, রবিন, মাঝে মাঝে জিনা!
- হে হে, তুই নাকি স্কুলে থাকে জিনার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলি? তোর নাকি কেমন কেমন করতো? কিশোর পাশাকে খুব হিংসা লাগতো?
হা হা করে হেসে ওঠে দুইজন। পুরনো খুব ভালো বন্ধুদের সাথে বহুদিন পরে দেখা হলে এই একটা মজার জিনিস হয়। জীবনের কোন মজার ঘটনা নিজে ভুলে বসে আছি কিন্তু দেখা যায় সেই বন্ধুর ঠিক মনে আছে।
এর মধ্যেই ফোন বেজে উঠলো রাশেদের, দেখে বলে - রকি চলে আসছে, ওকে নিশ্চয় ঢুকতে দেবে না, তুই চল আমার সাথে, ওকে নিয়ে আসি।


বাইরে এসে রকিকে দেখে তো চমকে গেল ইকবাল। ১২- ১৩ বছরের কিশোর, শ্যামলা থেকেও কালো বলতে হবে। শরীর থেকে এখনও গ্রামের গন্ধ মুছে যায়নি। রাখালের বেশেও যেমন, ভবঘুরে টোকাই এর চরিত্রেও খুব মানিয়ে যাওয়ার মত। এখন কাঁধে বেশ বড়সড় একটা ব্যাগ ঝোলানো। বোঝা গেল যে এইটাই রাশেদের গোয়েন্দা-প্যাক।


- এই হচ্ছে রকি? একে পাইছিস কই? কে হয় তোর?
- ও আমার কে হয় এটা তোকে আমি আগেই বলেছি। আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট। গোয়েন্দাগিরিতে আমাকে সহযোগিতা করে। ও যে কোন জায়গায় মিশে যেতে পারে, অবাধ ওর গতি। ছোট বলে বড় মানুষেরা ওকে পাত্তা দেয়না তেমন। আড়ি পাতা থেকে শুরু করে পিছু নেওয়াতে ওর জুরি মেলা ভার। আমার সাথে দেখা ট্রেনে। কুষ্টিয়া মেলায় যাওয়ার সময়। পুরো মেলার সময়টা ও আমার সাথেই ছিল। আসার সময় আর আমার পিছু ছাড়তে চাইল না। আমিও ওর গল্প শুনে আর ছাড়তে পারলাম না। ও ট্রেইনে ট্রেইনে ঘুরে বেড়াতো। খাবার পেলে খায়, না পেলে খায়না। বাড়িতে সৎ মা। বাবাও তেমন দেখেনা, বাড়িতে খুব অভাব। এই বয়সেই পিচ্চি পুরো বোহেমিয়ান হয়ে গিয়েছিল।


ক্যামেরা বের করে ছবি নেওয়া শুরু করে রাশেদ। অসংখ্য ছবি তোলে। বেশ কয়েকটা ছোট কৌটা বের করে, কিছু জায়গা থেকে বালি, সিগারেটের ছাই থেকে শুরু করে ছোটখাট নানাকিছু এখান সেখান থেকে নিয়ে কৌটায় ভরে। ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস বের করে কয়েকজায়গায় উবু হয়ে, কোথাও হাঁটু গেড়ে, কোথাও সটান শুয়ে পড়ে নমুনা সংগ্রহ অভিযান ও পর্যবেক্ষণ চলতে থাকে।

ইকবাল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
- তোর তো কোন প্রফেশনাল ট্রেইনিং নাই, তুই এতকিছু শিখলি জানলি কোত্থেকে?
- নানা রকম বই পড়ে, আর এখন গুগল মামা আছে না, আগে যে জিনিসটা জানা মহা দুরূহ ব্যাপার ছিল, সাধারন একটা তথ্য জানতে নানা কাঠ খড় পোরাতে হত সেইটা হয়ে গেছে কয়েক মিনিটের ব্যাপার। গুগল দ্য গ্রেট! গোয়েন্দাগিরি এখন অনেক সহজ!
- তা তুই তোর গুগল মামাকে বল না সার্চ দিয়ে লুট হওয়া টাকাগুলো এখন কোথায় আছে বলে দিতে! টাকার বস্তা উদ্ধার করে বাড়িতে গিয়ে একটা ঘুম দেই।

রাশেদ ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস দিয়ে একটা ট্রাঙ্কের হাতল পরীক্ষা করছিলো। এই কথার আর কোন জবাব দেয়না। পরে নাক উঠিয়ে বলে,
- গ্লাভস পরে ছিল সবাই, আঙ্গুলের ছাপ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অসাধারণ একটা অপারেশন। ডাকাতরা পুরো ওস্তাদ লোক কোনো সন্দেহ নেই, সেইরকম অছা কাজ করেছে। কোন জাল জালিয়াতি চুরি চামারির মধ্যে নাই, রাতের অন্ধকারে ভল্ট ফাঁকা করে দিয়েছে!

ভল্টের কোনায় সাদামত চিকচিক করতে দেখে জিনিসটা তুলে নেয় রাশেদ, আলোয় এনে দেখে বেশ মোটা ধরনের পলিথিনের প্যাকেট। বেশ বড়, একটু খুটিয়ে দেখলে বোঝা যায় এয়ারটাইট করা যায়।
- ইকবাল, তোর কি মনে হয়? এরকম একটা পলিথিন এর ব্যাগ ভল্টে পড়ে থাকার কি মানে থাকতে পারে?
- তার আগে বল আদৌ কোন মানে থাকতে পারে কি? ডাকাতের দল টাকা ট্রাঙ্কে করে হোক আর থলিতে করে হোক, লুঙ্গিতে করে হোক আর গামছায় করে হোক, টাকা নিয়ে গেছে এটাই বড় কথা। এখন কথা হল টাকা উদ্ধার করতে হবে।
- ধীরে বৎস ধীরে, এতো অস্থির হচ্ছিস কেন? পলিথিন ব্যাগটা খুব উন্নতমানের এবং বস্তা না থেকে পলিথিন থাকলো কেন এইটা নিয়ে ভাবা উচিত। খুব ছোট ছোট জিনিসের মধ্যেই কিন্তু বড় বড় তথ্য লুকানো থাকে! চল অন্য রুমগুলোও ঘুরে দেখি। ভল্টরুম পরেই বড় একটা হল
রুম। এখানেই বেশির ভাগ ডিউটিরত পুলিশ অবস্থান করছিল এবং এখানেই তাদেরকেই অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। বেশিরভাগ পুলিশের এখনও জ্ঞান ফিরে আসেনি। সাথে ছোট একটা রুম, কেন্টিন কাম রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চা বানানোর চুলা সরঞ্জামাদি আছে। পানির ফিল্টার আছে।

ব্যাগ থেকে ছোট একটা জার বের করে ফিলটারের কিছু পানির নমুনা নেয় রাশেদ। তারপরে কয়েক ফোঁটা পানি জিভে লাগিয়ে টেস্ট করে দেখে। ওর কর্মকান্ড দেখে বেশ অবাক হয় ইকবাল । অনেক সময় হয়ে গেছে। গল্পের গোয়েন্দাদের মত এতো নাটকীয় দীর্ঘ অনুসন্ধানে ইকবাল ধৈর্য হারা হতে শুরু করে। ইকবাল পছন্দ করে অ্যাকশান। মটরসাইকেল বা গাড়ি নিয়ে, কিছু না থাকুক দৌড়ে ধাওয়া করে অপরাধী ধরতে হবে, অপরাধীর হাতে পিস্তল, ঢায় ঢায় করে গুলি ছুরছে, কুছ পরোয়া নেই। কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা এই হাটু গেড়ে অনুসন্ধানে ওর ধৈর্য্য নেই।



- পানিটা একটা সন্দেহজনক ব্যাপার। একবার পরীক্ষা করে দেখা দরকার। শুধু গ্যাস বম্বের উপরে ভরসা নাও করতে পারে। এই সময়ে হাফিজ বের হয়ে আসলেন। সবার মোটামুটি ধারনা ছিল রাস্তাঘাট ঠিকমতো ব্যারিকেড করতে পারলে সকালেই একটা খবর হয়ে যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন খবর পাওয়া গেলনা। ওদেরকে জিজ্ঞেস করলেন,
- তোমাদের কি খবর? কি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তোমরা আবিস্কার করলে? আরে এই পিচ্চি কে?
- স্যার, ও আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট রকি। তাল গাছের মাথা থেকে দিঘির জলে ডুব, যে কোন কাজ ও করে ফেলতে পারে অনায়াসে।
- গোয়েন্দাগিরি কি আর পোলাপাইনের কাজ!

রাশেদ বলল,
- একটা ছোট জিনিস পরীক্ষা করে দেখব। রকি, এই সামনের মোড়ে চায়ের দোকানের পাশে কয়েকটা কুকুরের বাচ্চা খেলা করতে দেখেছিস না, একটাকে ধরে নিয়ে আসতে পারবি?
এক গাল হেসে রকি বলে উঠল,
- কেন পারুম না, এক্ষুনি নিয়ে আসছি।
রকেটের গতিতে রকি বের হয়ে গেল।
হাতে ধরে রাখা পলিথিনের ব্যাগটা হাফিজের সামনে তুলে ধরে রাশেদ বলল,
- এই পলিথিনের প্যাকেটটা আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে। খুবই উন্নতমানের পলিথিন, মুখ বন্ধ করে ফেলা যায়, এয়ারটাইট হয়ে যায়।
হাফিজ হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলেন পলিথিনটা। এরই মধ্যে রকি এসে হাজির। কোলে একটা কুকুরের বাচ্চা কুঁই কুঁই করছে। ফিল্টারের পানি একটা ছোট্ট মগে নিয়ে কুকুরের মুখে সামান্য ঢেলে দেয় রাশেদ। রকিকে বলে ছেড়ে দিতে। মজার একটা জিনিস দেখা গেল। প্রথম এক দুই মিনিট কিছুই হচ্ছে না মনে হল, রকির চারপাশে কুঁই কুঁই করে দুই চক্কর দিল কুকুরের ছানা। তারপর লম্বা একটা হাই তুলে ঘুম!
-অ্যা, তাহলে পানিতেও কাহিনী! – হাফিজ বিস্ময়ে চিৎকার করে বলেন।
- উস্তাদ, মইরা যাইব নাকি? রকি আশঙ্কায় চিৎকার করে ওঠে।
- আরে না, কিছুক্ষন ঘুমিয়ে থাকবে। বাচ্চাটাকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে আয়।

-স্যার, আমি যতটুকু শুনলাম, বেশীরভাগ পুলিশেরই এখনও জ্ঞান ফেরেনি। ডাকাতির খবর প্রথম দিল কে?
- একজন পুলিশ কনস্টেবল, এইখানেই ডিইটি ছিলো। রাত সাড়ে চারটার সময় সে থানায় ফোন দিয়ে প্রথম ডাকাতির খবর জানায়। নগেন চন্দ নাম। দাঁড়াও, ওকে ডাকার ব্যবস্থা করছি।
নগেন চন্দকে হাজির করা হল। তার বয়ান মতে,
- স্যার, আমি তো একা একটু বসে ছিলাম পাসের ছোট ঘরে। হঠাৎ করে নাকে একটা মিষ্টি গন্ধ আসলো, বেশ ভালো লাগছিলো। তারপরে আর আমার কিছু মনে নেই। ঘুম ভাংলে দেখি আমি চেয়ারেই বসে ঘুমায়ে পড়সি। ডিউটিতে আমার এরকম কখনও হয়না। তারপরে গার্ড রুমে গিয়ে দেখি সবকডা চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে। ভল্ট কাটা, ট্রাঙ্ক অর্ধেক নাই! স্যার, ওই জিনিস দেইখে তো আমার মথা নষ্ট হয়ে গেল, আমি সময় নষ্ট না করে দৌড়ে গিয়ে থানায় ফোন দিলাম। স্যার আমিই সবার আগে জানাইসি স্যার, আমি না থাকলে সকাল হলেও খোঁজ হত না স্যার।
নগেন চন্দকে থামিয়ে হাফিজ প্রশ্ন করে,
- বুঝলাম, তোমার সাথের আর সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকল, কিন্তু তোমার জ্ঞান এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসলো কিভাবে? সারা রাত ছিলে, তুমি এখানকার পানি খাওনি? তোমারও তো এখন অজ্ঞান থাকার কথা!
নগেন থতমত খেয়ে চুপ করে থাকে, কিছু একটা বলতে যাবে মনে হয়, কিন্তু কিছু একটার সঙ্কোচে আবার থেমে যায়।
হাফিজ মেঘ স্বরে গর্জন করে ওঠেন,
- ঝেড়ে কাশো নগেন, সব কথা না বললে তুমি বিরাট বিপদে পড়ে যাবে। খুব পরিস্কার যে এই ডাকাতিতে ভেতরের কিছু লোক অবশ্যই জড়িত আছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তোমাকে দিয়ে শুরু করতে হবে দেখছি।
- স্যার, আর বলবেন না স্যার। আমি এদের কারও সাথে জড়িত না, আমি এই দুনিয়ায় কার সাথেই জড়িত নেই, আমি কোনদিন কখনও কোথাও জড়িত ছিলাম না!
নগেন একদম হাউমাউ করে ওঠে।
- তাহলে সব কথা ঠিকঠাক বলে ফেল। তুমি কিছু একটা লুকাচ্ছো এটা খুব পরিস্কার।
একটু কাঁচুমাচু করে নগেন মুখ খোলে,
- স্যার, আমার কোন দোষ ছিলোনা। ডিঊটিতে এইগুলো আমি কখনো করিনা। আসলে আমার শালা আসলো গ্রাম থেকে দুপুরে। পাট বেচছে আজকে, পকেটে দুই চার পয়সা ছিল আর কি। আমরা দুইজন এক বোতল নিয়ে বসেছিলাম সন্ধ্যায়। তা ওসব শেষ করা কি আর ওর কম্ম। ও আমি ছাড়া বোতল শেষ হয়না। তা যাবার যময় বোতলটা আমাকে দিয়ে বলল,- জেঠু, তোমার তো নাইট ডিউটি, চুক চুক করে তুমি খেয়ে ফেলো জেঠু, আর খেলে আমি আর বাড়ি ফিরতে পারবোনা। আমি বললাম, যা যা, এইটা নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবেনা।
- তার মানে তুমি পাশের ঘরে বসে চুক চুক করে পান করছিলে, পানি খাওনি?
- আজ্ঞে না স্যার, পানি মিশিয়ে আমি খাইনা, পানি মেশালে ধক কমে যায় কিনা!
ইকবাল আর রাশেদ অন্যদিকে ফিরে খুক খুক করে হেসে ফেলে। হাফিজ চোখ গরম করে বুঝতে পারছেন না কি বলবেন, নগেন ডিউটিতে থাকা অবস্থায় নির্জলা মদ খাচ্ছিল, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আবার এই অপরাধের জন্যই সে অজ্ঞান হয়ে এখন হাসপাতালে পড়ে নেই। এক ঘন্টার মধ্যে খবর হইসে ডাকাতির।
- স্যার আপনার পায়ে পড়ি, আপনি জব্বার ওসিকে বলে দেবেন না প্লিচ, আমাকে মেরেই ফেলবে।
- কেন জব্বার ওসি কি মদ খেলে মেরে ফেলে নাকি?
আবার একটু কাঁচুমাচু করে নগেন আসল কথা বলেই ফেলে,
- স্যার, বিষয়টা আসলে সেরকম না, ওনাকে না দিয়ে খাচ্ছিলাম তো, জানতে পারলে খুব রাগ করবে।
এইবার ওদের সাথে হাফিজ নিজেও হেসে ওঠেন,
- এদের নিয়ে আমি কি করব বলো? নগেন, তুমি এখন যাও। তোমাকে আবার লাগলে ডাকবো।

- সার, আমার কথাটা প্লিচ কাউকে বলে দেপেন না!
কাতর অনুরোধ জানিয়ে টিংটিঙ্গে শরীর দোলাতে দোলাতে চলে যায় নগেন।

হাফিজ পকেট থেকে গ্রেনেড সাইজের বস্তুটা বের করে বললেন,
- এইটা একটা স্মোক বম্বের মত মনে হয়, বেশ কয়েকটা পাওয়া গেছে আশেপাশে।
হাতে নিয়ে খুব মনোযোগের সাথে গ্রেনেডটা খেয়াল করে রাশেদ। তারপর বলে ওঠে,
- স্যার, এইটা তো মনে হয় আমাদের দেশে তৈরি।
- ঠিক এই জিনিসটাই আমিও ভাবছিলাম। আরে, বেশ বুঝদার ছেলে তো তুমি। রাজধানী আর ছারপোকার ঠ্যাং মুখস্ত করে পরীক্ষা পাশ করা ইকবালদের মত ঠুট গোয়েন্দা নও!
ইকবাল বিষয়টা হাসিমুখেই নেয়। নিজের সামর্থের দৌড় সম্পর্কে তার বেশ ভালোই ধারনা আছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই রাশেদের সাথে এক রকমের গুরু শিষ্যের সম্পর্ক ছিলো। রাশেদের প্রশংসা শুনে তার বেশ ভালোই লাগলো।
- চলুন, আশপাশটা একটা চক্কর দিয়ে আস যাক। রাশেদ প্রস্তাব জানায়।
- তোমরা যাও,আমি কন্ট্রোলরুমের ওদিকে গেলাম। এখন প্রতিটা মিনিটই গুরুত্বপূর্ন। উপর মহলে একদম মৌচাকে ঢিল অবস্থা। সামনে নির্বাচন। ডাকাতেরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে গেলে খবর আছে। পাবলিক ভোট কোন দিক দিয়ে দেবে কিচ্ছু বলা যায়না।


ব্যাঙ্কভবনের চারিদিকে চক্কর দেওয়া শুরু করে রাশেদ, ইকবাল আর রকি। চারপাশের বিল্ডিংগুলো খেয়াল করতে থাকে। বেশিরভাগই দোকান, অফিস ঘর। ইকবাল রাশেদের দৃষ্টি খেয়াল করে বলে,
- তুই যা ভাবছিস সেটা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। টাকা লুট করে আশেপাশে রেখে দেবে?
- আমি হলে কিন্তু তাই দিতাম। সারি সারি ট্রাক চেক করে, রাস্তাঘাট ব্লক করে কিচ্ছু পাওয়া যাবেনা।
- অত শিওর হোস না।
- দেখা যাক।

হাঁটতে হাঁটতে পেছন দিক দিয়ে ওরা একটা ছোটখাট পুকুর অথবা বলা যায় বড়সড় একটা ডোবার পাশে এসে দাঁড়ায়। এটা আগে বড়, খান্দানি একখানা পুকুর ছিলো এই পাড়ার। কিন্তু এখন একপাশ প্রায় বুজে আসছে ময়লা আবর্জনা ফেলতে ফেলতে।
- ইকবাল খেয়াল করেছিস, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন প্রত্যেকটা পাড়ায় অন্তত একটা করে পুকুর ছিল, তখন কেউ কিন্তু ময়লা ফেলতো না। পুকুরগুলো মেরে ফেলতো না। স্কুলে থাকতে এই পুকুরে আমি কয়েকবার গোসল করেছি! এখন ভাবলেই দুঃখ লাগে এর দূরবস্থা দেখে।


দুইজন পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে দুইটা সিগারেট ধরায়। ইকবাল আনমনা কিছু একটা ভাবছে, রাশেদ এদিক ওদিক ওর সন্ধানী দৃষ্টি চালিয়ে যেতে থাকে। শহরের এই অংশটা অপেক্ষাকৃত নির্জন, পুকুরের ওপাশে বস্তি মত। শহরের ডোম সম্প্রদায়ের বাস ওখানে। মানুষজন বেশি একটা আসেনা এইদিকে। পুকুরের এই পাড়ে মার্কেট, দোকান থেকে নিয়মিত বিরতিতে ময়লা ফেলা হয়, কিছুদিনের মধ্যেই পুকুরটাকে মাটি বুজিয়ে মেরে ফেলার প্রচেষ্টা সফল হবে।

পুকুর পাড়ে কিছু একটা দেখে হঠাৎ খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে রাশেদ। চোখ দুটো জ্বলজ্বল করতে থাকে। ওকে দেখে ইকবাল জিজ্ঞেস করে ওঠে,
- কিরে তোকে এত উত্তেজিত দেখাচ্ছে কেন? কিছু পেলি নাকি?
ইকবালও খুব মনোযোগ দিয়ে পাড় ঘেঁসে দেখতে থাকে। কিন্তু তেমন কিছুই পায়না।
- কি দেখে তুই এত উত্তেজিত হয়ে পড়লি রে, আমি তো সব কিছু খুব স্বাভাবিক দেখছি।

- তোর কিছু বোঝা লাগবেনা। হাফিজ স্যারকে ডেকে নিয়ে আয়, বল বিরাট বড় একটা মাছ ধরা হবে! আর পুকুর পাড়ের সবুজ ঘাসের ইঞ্চি দুএক পানি উঠে গেছে কেন এটা ভাবতে ভাবতে যা।

ইকবাল পুরোপুরি বিভ্রান্ত। এই ব্যস্ততার মধ্যে হাফিজ স্যারকে শুধু শুধু ডেকে আনলে নির্ঘাৎ রাগ করবেন, হাস্যকর একটা পরিস্থিতির না তৈরী হয়! অন্য দিকে রাশেদের সিরিয়াস ও উত্তেজিত ভঙ্গী দেখে বুঝতে পারে যে ঘটনা গুরুত্ব দিতে হবে।

এরই মাঝে ইকবালের ফোন বেজে ওঠে, হাফিজ ঢালী স্বয়ং ফোন দিয়েছেন,
- ইকবাল, তুমি কোথায়? এখান থেকে ষাট কিলো পূবে ভাঙ্গা ঘাটের কাছে এক ট্রাকে এক ট্রাঙ্ক লুটের টাকা উদ্ধার হইসে। এর উল্টোদিকে সাতক্ষীরার সুন্দরবনের কাছে উদ্ধার হইসে এক ট্রাঙ্ক। এক্ষনি এসে পড়। টিম ভাগ হয়ে ছুটতে হবে।

সব শুনে যেন রাশেদ খুব হতাশ হয়ে গেল,
- টাকা সব উদ্ধার হয়ে গিয়েছে?
- না, দুইজায়গায় মাত্র দুই ট্রাঙ্ক। বাকি টাকার খোঁজে ঐ অঞ্চলগুলো সব চষে ফেলতে হবে।
- আচ্ছা, তুই বের হওয়ার সময় স্যারকে নিয়ে একবার ঘুরে যা। সময় নষ্ট হবেনা।

ইকবাল ঘুরে রওনা দেয় হাফিজ ঢালীকে ডাকতে। এদিকে রাশেদ রকির হাতে টাকা দিয়ে কিছু একটা আনার কথা বলে দেয়।

হাফিজ কে নিয়ে ইকবাল হাজির হয়ে দেখে রকি একটা গোল শক্তিশালী চুম্বক নিয়ে এসেছে। রাশেদ ঐ চুম্বকের সাথে শক্ত সুতা বেঁধে ফেলে। ওরা পৌছালে বলে,-
- এই যে, আমার মাছ ধরার ছিপ, কপাল ভালো থাকলে সবথেকে দামি মাছটা আমরা এই ডোবাতে ধরতে যাচ্ছি!
- কি যা তা বকছিস রাশেদ? তোর কথার মাথামুন্ডু তো কিছুই আমি বুঝতে পারছিনা। হাতে একদম সময় নেই।

- ধীরে বন্ধু, ধীরে। একটু অপেক্ষা কর। আমি খুব বেশী সময় নেবো না।

চুম্বক বেঁধে পাড়ের ধার ঘেঁসেই পানির মধ্যে ছুঁড়ে মারে রাশেদ, এখন তেমন একটা পানিও নেই, কয়েক ফুট নিচেই মাটি পেয়ে যায়। উত্তেজনায় রাশেদের হাত কাঁপছে। সত্যিকার অর্থে কি হতে যাচ্ছে সেইটা রাশেদ ছাড়া কেউ আসলে জানেও না।

এইবার সুতোটা ধরে টানতে থাকে রাশেদ,
- দেখা যাক বড় মাছ টোপ খেল কিনা!
হাল্কা ভাবে সুতোটা টেনে দেখে, আটকে গেছে সুতো, আর আসছেনা! রাশেদ লাফাতে লাফাতে হাফিজের হাতে সূতো ধরিয়ে দিয়ে বলে,
- মাছ ধরা পড়েছে স্যার! বিশাল দামী মাছ! পুরো এক ঝাঁক কালবাউশ, পেট ভর্তি ডিম!
ততক্ষনে হাফিজ ঘটনা অনেকখানি অনুমান করে ফেলেছেন
- অ্যা, বল কি? এই কাজ হয়েছে? তুমি বলতে চাচ্ছো ট্রাঙ্কের ইস্পাতে চুম্বক আটকে গেছে!
ততক্ষনে চিকন একটা দড়ি আর একটা চাকু রকির হাতে ধরিয়ে কিছু কথা বলে রাশেদ। রকি মাথা নেড়ে খালি গায়ে দড়ি হাতে পানিতে নেমে এক ডুব দিল।
- আপনার কালবাউশ স্বচক্ষে দেখার ব্যবস্থা করছি।
প্রায় এক মিনিট পর ভুস করে মাথা ভেসে ওঠে রকির। লম্বা একটা দম নিয়ে বলে
- উস্তাদ, টান দেন।
- ইকবাল আয় হাত লাগা, স্যার আপনিও আসুন। এতো বড় মাছ আমি একা টেনে তুলতে পারবনা।

তিনজনে মিলে টানার ফলে এগুতে থাকে সুতা, পলিথিনে মোড়ান কালো ট্রাঙ্কের এক কোনা ভেসে ওঠে পানির কিনার দিয়ে। আর বেশী ব্যাখ্যার কিছু নেই। টাকাভর্তি ট্রাঙ্ক পলিথিন প্যাকেটে মুড়ে এই পুকুর কাম ডোবায় ডুবিয়ে রেখে গেছে ডাকাতের দল।

চোখ পুরো ছানাবড়া হয়ে গেল হাফিজের। ফোন কানে দিয়ে পুরো ফোর্স পুকুর ঘাটে আসার নির্দেশ দিলেন তিনি।

তারপরে সবই রুটিন মাফিক ঘটনা । বেশ কিছু পুলিশ জোয়ান পানিতে নেমে গেছে। ফায়ার ব্রিগেডের ডুবুরিরাও হাজির। একে একে পলিথিনে এয়ারটাইট করা কালো ট্রাঙ্ক গুলো তুলে আনা হল। পঞ্চাশটা ট্রাঙ্ক লুট হয়েছিল। এখানে সব মিলিয়ে পাওয়া গেল চল্লিশটা।

এদিকে রাশেদ আর রকিকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে ইকবাল, হাফিজ, পুলিশ সুপার, জিএম কলিম সহ কয়েকজন।
- এই যে দুইটা ট্রাঙ্ক পাওয়া গেল তা পুরোপুরি একটা ডাইভারসন। আমরা একটা ট্রাঙ্ক ওইদিকে পেয়ে ভাববো ডাকাতেরা ওইদিকেই লুটের মাল গায়েব করেছে, সব ফোর্স, মনোযোগ আমরা ঐ জঙ্গলের দিকে দেব, আর সেই ফাঁকে এখান থেকে পুকুরে জাল ফেলে জিইয়ে রাখা ডিম ভর্তি কালবাউশ নিয়ে উড়ে যাবে ডাকাতের দল!
- স্যার, আমি নিশ্চিত, নিয়মিত বিরতিতে আরও কয়েকটা ট্রাঙ্ক ঐ অঞ্চলে আপনার উদ্ধার করতে থাকবেন!
আরেকবার বুকে জড়িয়ে ধরলেন হাফিজ রাশেদ কে, এর মাঝে কয়েক দফা জড়িয়ে ধরেছেন হাফিজ।
- ওয়েল ডান মাই বয়, কি বলে তোমার প্রশংসা করবো বুঝতে পারছিনা। তুমি কি করে এই পানির মধ্যে ট্রাঙ্ক লুকিয়ে রাখার বিষয়টা আঁচ করতে পারলে?

- প্রথম থেকেই যেটা খটকা লাগলো যে ডাকাতির পরিকল্পনা খুব নিখুঁত ভাবে করা হয়েছে। আমরা যেটা খুব সহজে বুঝতে পারছি সেটা ডাকাতদেরও বোঝার কথা যে ট্রাঙ্ক ভর্তি টাকা নিয়ে হাইওয়ে রাস্তা দিয়ে কোথাও পালানো কি পরিমান অসম্ভব। তাহলে ওদের একটা প্ল্যান আছে অন্যকিছু, টাকা নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রথমে পলিথিনের এতো উন্নত প্যাকেট দেখে খটকা লাগে, সম্ভাব্য ঘটনার কথা ভাবতে থাকি। তবে পুকুরপাড়ে গিয়ে ঘটনা আঁচ করতে পারাটা আমাদের গুডলাক, আর ডাকাতদের ব্যাডলাক। এতক্ষনে সবার একদিকে সাতক্ষীরা সুন্দরবন আর অন্যদিকে রাজবাড়িতে দুইটা ট্রাঙ্ক নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করার কথা। যাই হোক, পানিতে যেটা খটকা লাগলো যে পাড়ের সবুজ ঘাস দুই ইঞ্চি মত পানিতে ডুবে আছে। এখন বর্ষা কাল না, এই ডোবার সাথে বড় কোন ড্রেইন এর সংযোগও নেই। তাহলে পানি উপচে ঘাস ঘাস ছাপিয়ে গেল কিভাবে? পাড়ের মাটি একটু খুটিয়ে দেখে খেয়াল করলাম অনেক পায়ের ছাপ, ভারী পায়ের আনাগোনায় মাটি কেমন দেবে আছে। সাধারনত এদিকে মানুষজন বেশ কম আসে। সাথে পলিথিনের বিষয়টা মিলিয়ে নিয়ে দেখলাম সব খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। ভল্ট থেকে ট্রাঙ্ক বের করার সময়ই পলিথিনে আটকে এয়ারটাইট করে ফেলা হয়েছে, চল্লিশটা নিয়ে ফেলা হয়েছে এই ডোবার মধ্যে, বাকি দশটা ট্রাঙ্ক ওরা নানাগ্রুপে ভাগ হয়ে বের করে নিয়ে গেছে।

ততক্ষনে সাংবাদিক ক্যামেরার হুলুস্থুল লেগে গেছে, নগেন চন্দ ব্যাপক উৎসাহের সাথে পোজ দিয়ে ছবি তুলছে। সে দাবী করার চেষ্টা করছে যে সে অজ্ঞান না থেকে রাত থাকতেই ডাকাতির খবর পৌঁছাতে পেরেছে বলেই যেন পানির মধ্যে থেকে টাকা উদ্ধার করা গেল। এসপি, ডিসি, র‍্যাব প্রধান এরা অসম্ভব ব্যস্ত, টিভি ক্যামেরা সব তাঁদের চারিদিকে।

রাশেদ আর রকি কে নিয়ে একটু নিরালায় চলে আসছেন হাফিজ। রাশেদ নিজে চায় না যে তার কথা পত্রিকা মিডিয়ায় আসুক, জনসাধারনের মাঝে ওর পরিচিতি আসুক। তাহলে ভবিষ্যত গোয়েন্দাগিরি বড় কঠিন হয়ে যাবে। গোয়েন্দাদের সেলিব্রিটি হলে চলেনা!

অল্পক্ষনের মধ্যেই রাশেদ রকিকে নিয়ে বিদায় নেবার অনুমতি চায় হাফিজের কাছে। সকাল বেলা মর্নিং ওয়াক করে বের হয়েছে, এখনও নাস্তা পানি কিছু হয়নি। আর রাশেদের বাসায় নাকি খুব জরুরী কাজ।
- ইয়ে স্যার, বিষয়টা আসলে কাকে বলবো, আমি এখন গোয়েন্দাগিরিতে প্রফেশনাল। আমার বিলটা কাকে দেব?
-সাবাশ, ইয়াংম্যান! এই পেশাদারিত্বই তো চাই। আমাদের মাঝে এই পেশাদারিত্বের খুব অভাব। তোমার বিল নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবেনা, আমি দায়িত্ব নিচ্ছি। আর সাথে কিছু পুরস্কার এর ব্যবস্থা হবে এটা তুমি নিশ্চিত থাকো। আমি আজকেই ম্যাডামের সাথে কথা বলার চেষ্টা করবো।
ইকবাল এতক্ষণ চুপ করেই ছিল। এবার আর পারেনা,
- স্যার, আপনার ম্যাডাম নাকি সবার ম্যাডাম?
হো হো করে হেসে উঠলেন হাফিক। নির্ভার হাসি প্রান খোলা হাসি।

- আপাতত বিদায়। ইকবাল, কতবছর পরে তোর সাথে এরকম দেখা হয়ে গেল! আবার নিশ্চয় দেখা হবে!

এই বলে রকির হাত ধরে রাস্তায় নেমে পড়ে রাশেদ।




********************************************************************** # একটা গোয়েন্দা গল্প লেখার চেষ্টা করলাম! লিখে মাঝপথে আসার পরে বেশ কয়েকবার আফসোস করেছি কেন এই লেখা শুরু করতে গেলাম! প্রথম কারন লিখতে লিখতে অতিকায় সাইজের একটা লেখা দাঁড়ায়ে গেল, এতো বেশী লেখালেখি আলসেমি লাগে বলে কবিতা লিখে আরাম পাই। আর এই গল্পটা লিখতে গিয়ে আমার একটা খুব বড় শিক্ষা হইলো,
- গোয়েন্দা গল্প শুরু করাটা যত সহজ, ঠিকঠাক শেষ করাটা তত কঠিন!

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৮
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×