somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে বলে সে মুসলিম-জিভ ধরে টানো তার !! ! বেঈমান জানে শুধু জানটা বাঁচানো সার !

২২ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলমান জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে মহাবাহু আনোয়ার পাশার কথা মনে পরে গেলো।
মনে পরে গেলো বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা সেই বিখ্যাত কবিতাটি,
আজ থেকে ১৩ বছর আগে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে এক আলোচনা সভায় সবার অনুরোধে আবৃতি করেছিলাম আমার অনেক প্রিয় এই কবিতাটি।
মুসলমান জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে গতরাত্রে একাকি নিজের ঘরে বসে অনেক আবেগে আবৃতি করলাম এই "আনোয়ার পাশা" কবিতাটি, চিৎকার করে উঠলাম: যে বলে সে মুসলিম-জিভ ধরে টানো তার!


আপনাদের সাথে এখানে শেয়ার করলাম প্রিয় কবিতাটি ।

আনোয়ার
[স্থান-প্রহরী বেষ্টিত অন্ধকার কারাগৃহ, কনষ্ট্যান্টিনোপল্।
কাল-অমাবস্যার নিশীথ রাত্রি।]

চারিদেক নিস্তব্ধ নির্ব্বাক। সেই মৌনা নিশীথিনীকে ব্যথা দিতেছিল শুধু কাফ্রি-সান্ত্রীর পায়চারীর বিশ্রী খট্ খট্ শব্দ। ঐ জিন্দান খানায় মহাবাহু আনোয়ারের জাতীয় সৈন্যদলের সহকারী এক তরুণ সেনানী বন্দী। তাহার কুঞ্চিত দীর্ঘ কেশ, ডাগর চোখ, সুন্দর গঠন-সমস্ত কিছুতে যেন একটা ব্যথিত -বিদ্রোহের তিক্ত ক্রন্দন ছলছল করিতেছিল। তরুণ প্রদীপ্ত মুখমন্ডলে চিন্তার রেখাপাতে তাহাকে তাহার বয়স অপেক্ষা অনেকটা বেশী বয়স্ক বোধ হইতেছিল।
সেই দিনই ধামা-ধরা সরকারের কোর্ট-মার্শালের বিচারে নির্দ্ধারিত হইয়া গিয়াছে যে, পরদিন নিশিভোরে তরুণ সেনানীকে তোপের মুখে উড়াইয়া দেওয়া হইবে।
আজ হতভাগ্যের সেই মুক্তি-নিশীথ, জীবনের সেই শেষরাত্রি। তাহার হাতে, পায়ে, কটিদেশে, গর্দ্দানে উত্পীড়নের লৌহ-শৃঙ্খল| শৃঙ্খল-ভারাতুর তরুণ সেনানী স্বপ্নে তাহার ‘মা’কে দেখিতেছিল| সহসা চীৎকার করিয়া সে জাগিয়া উঠিল। তাহার পর চারিদিকে কাতর নয়নে একবার চাহিয়া দেখিল, কোথাও কেহ নাই| শুধু হিমানী -সিক্তবায়ু হা হা স্বরে কাঁদিয়া গেল, “হায় মাতৃহারা।”

স্বদেশবাসীর বিশ্বাসঘাতকতা স্মরণ করিয়া তরুণ সেনানী ব্যর্থ-রোষে নিজের বামবাহু নিজে দংশন করিয়া ক্ষত-বিক্ষত করিতে লাগিল। কারাগৃহের লৌহশলাকায় তাহার শৃঙ্খলিত দেহভার বারেবারে নিপাতিত হইয়া কারাগৃহ কাঁপাইয়া তুলিতেছিল।
এখন তাহার অস্ত্র-গুরু আনোয়ারকে মনে পড়িল। তরুণ বন্দী চীৎকার করিয়া উঠিল-“আনোয়ার!”




আনোয়ার! আনোয়ার!
দিলওয়ার তুমি, জোর তলওয়ার হানো, আর
নেস্ত্-ও-নাবুদ কর, মারো যত জানোয়ার!

আনোয়ার! আফসোস্!
বখতেরই সাফদোষ্,
রক্তেরও নাই ভাই আর সে যে তাপ জোশ,
ভেঙে গেছে শমশের-পড়ে আছে খাপ কোষ!
আনোয়ার! আফসোস্!

আনোয়ার! আনোয়ার!
সব যদি সুমসাম্, তুমি কেন কাঁদ আর?
দুনিয়াতে মুসলিম আজ পোষা জানোয়ার!

আনোয়ার! আর না!
দিল্ কাঁপে কার না?
তলওয়ারে তেজ নাই! তুচ্ছ স্মার্ণা
ঐ কাঁপে থরথর মদিনার দ্বার না?
আনোয়ার! আর না!

আনোয়ার! আনোয়ার!
বুক ফেড়ে আমাদের কলিজাটা টানো, আর
খুন কর-খুন কর ভীরু যত জানোয়ার!
আনোয়ার! জিঞ্জির-
পরা মোর খিঞ্জির?
শৃঙ্খলে বাজে-শোনো রোণা রিণ-ঝিণ্ কির,-
নিবু-নিবু ফোয়ারা বহ্নির ফিনকির!
গর্দ্দান জিঞ্জির!

আনোয়ার! আনোয়ার!
দুর্ব্বল এ গিদধড়ে কেন তড়পানো আর?
জোর্ওয়ার শের কই?-জোরবার জানোয়ার!
আনোয়ার! মুশকিল
জাগা কঞ্জুশ-দিল,
ঘিরে আসে দাবানল তবু নাই হুঁশ তিল!
ভাই আজ শয়তান ভাই-এ মারে ঘুষ কিল!
আনোয়ার! মুশকিল!

আনোয়ার! আনোয়ার!
বেইমান মোরা, নাই জান আধ-খানও আর!
কোথা খোঁজা মুসলিম? শুধু বুনো জানোয়ার!
আনোয়ার! সব শেষ!-
দেহে খুন অবশেষ!-
ঝুটা তেরি তল্ওয়ার ছিন্ লিয়া যব্ দেশ!
আওরত সব ছি ছি ক্রন্দন রব পেশ!!
আনোয়ার! সব শেষ!

আনোয়ার! আনোয়ার!
জনহীন এ বিয়াবানে মিছে পস্তানো আর!
আজো যারা বেঁচে আছে তারা ক্ষ্যাপা জানোয়ার!
আনোয়ার!-কেউ নাই!
হাতিয়ার?-সেও নাই!
দরিয়াও থমথম্ নাই তাতে ঢেউ ছাই!
জিঞ্জির গলে আজ বেদুঈন-দে’ও ভাই!
আনোয়ার! কেউ নাই!

আনোয়ার! আনোয়ার!
যে বলে সে মুসলিম-জিভ ধরে টানো তার!
বেইমান জানে শুধু জানটা বাঁচানো সার!
আনোয়ার! ধিক্কার!
কাঁধে ঝুলি ভিক্ষার-
তল্ওয়ারে শুরু যার স্বাধীনতা শিক্ষার!
যারা ছিল দুর্দ্দম আজ তারা দিকদার!
আনোয়ার! ধিক্কার!

আনোয়ার! আনোয়ার!
দুনিয়াটা খুনিয়ার, তবে কেন মানো আর
রুধিরের লোহু আঁখি!-শয়তানী জানো সার!
আনোয়ার! পঞ্জায়
বৃথা লোকে সমঝায়,
ব্যথাহত বিদ্রোহী দিল নাচে ঝঞ্ঝায়,
খুন-খৈগো তলওয়ার আজ শুধু রণ্ চায়,
আনোয়ার! পঞ্জায়!

আনোয়ার! আনোয়ার!
পাশা তুমি নাশা হও মুসলিম জানোয়ার,
ঘরে যত দুষমন, পরে কেন হানো মার?
আনোয়ার! এসো ভাই!
আজ সব শেষ-ও যাই!
ইসলামও ডুবে গেল, মুক্ত স্ব-দেশও নাই!
তেগ ত্যজি বরিয়াছি ভিখারীর বেশও তাই!
আনোয়ার! এসো ভাই!


সহসা কাফ্রী সান্ত্রীর ভীম চ্যালেঞ্জ্ প্রলয়-ডম্বরু-ধ্বনির মত হুঙ্কার দিয়া উঠিল “এয় নৌজওয়ান, হুঁশিয়ার!” অধীর ক্ষোভে তিক্তরোষে তরুণের দেহের রক্ত টগবগ্ করিয়া ফুটিয়া উঠিল। তাহার কটিদেশের, গর্দ্দানের, পায়ের শৃঙ্খল খান্ খান্ হইয়া টুটিয়া গেল, শুধু হাতের শৃঙ্খল টুটিল না। সে সিংহ শাবকের মত গর্জন করিয়া উঠিল-

এয়্ খোদা! এয়্ আলী! লাও মেরী তলওয়ার!

সহসা তাহার ক্লান্ত আঁখির চাওয়ায় তুরস্কের বন্দিনী মাতৃ-মূর্ত্তি ভাসিয়া উঠিল। ঐ মাতৃ-মূর্ত্তির পার্শ্বেই তাহার মায়েরও শৃঙ্খলিতা ভিখারিণী বেশ। তাঁদের দুজনেরই চোখের কোণে দুই বিন্দু করিয়া করুণ অশ্রু| অভিমানী পুত্র অন্য দিকে মুখ ফিরাইয়া লইয়া কাঁদিয়া উঠিল-।


ও কে? ও কে ছল আর?
না-মা, মরা জানকে এ মিছে তরসানো আর!
আনোয়ার!! আনোয়ার!!


(কাপুরুষ প্রহরীর ভীম প্রহরণ বিনিদ্র বন্দী তরুণ সেনানীর পৃষ্ঠের উপর পড়িল। অন্ধ কারাগারের বন্ধ রন্ধ্রে তাহারই আর্ত্ত প্রতিধ্বনি গুমরিয়া গুমরিয়া ফিরিতে লাগিল)


“আঃ আঃ আঃ!!"

আজ নিখিল বন্দীগৃহে ঐ মাতৃ-মুক্তি-কামী তরুণেই অতৃপ্ত কাঁদন ফরিয়াদ করিয়া ফিরিতেছে! যে দিন এ ক্রন্দন থামিবে, সেদিন সে কোন্ অচিন্ দেশে থাকিয়া গভীর তৃপ্তির হাসি হাসিবে জানি না! তখন হয়তো হারা-মা আমার আমায় “তারার পানে চেয়ে চেয়ে” ডাকিবেন! আমিও হয়তো আবার আসিব। মা কি আমায় তখন নূতন ডাকে ডাকিবেন? আমার প্রিয়জন কি আমায় নূতন বাহুর ডোরে বাঁধিবে? আমার চোখ জলে ভরিয়া উঠিতেছে, আর কেন যেন মনে হইতেছে,-"আসিবে সেদিন আসিবে।”

(কবি কাজী নজরুল ইসলাম)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×