somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ুন সাহিত্যে প্রবেশঃ মুগ্ধ স্মৃতিচারণ

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি । কোনো এক ছুটিতে গিয়েছি নানাবাড়ি । বেশ কিছুদিন পর আমাকে পেয়ে নানা-নানি, মামা-খালা মিলে এমন হুলস্থুল লাগালো সেটা আর বলার মত না । সবাই মিলে অনেক মজা হচ্ছিল । আমিও হৈ-হুল্লোড়ে মেতে আছি,সময় যে কিভাবে কেটে যাচ্ছে টেরই পাচ্ছিনা ।
নানা বিএএফ শাহীন কলেজের একজন শিক্ষক হওয়ায় নানার বাসা তখন বি এফ শাহীন কলেজ এর কোয়ার্টারে । কোয়ার্টারের বক্স টাইপের বাসার এক কোনার দিকে আমার একমাত্র খালা থাকেন একা একা । খালা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী । পড়াশোনার সুবিধার্থে তার রুমটা একটু আড়ালের দিকে ছিল ।
যাই হোক, খেলছিলাম লুকোচুরি । লুকানোর জন্য খালার রুমের টেবিল এর নিচ টাকেই আমি বেছে নিলাম । সেখানে গিয়ে টেবিলের নিচে ঢুকে যখন নিজেকে "থিফ অফ বাগদাদ" এর মত মনে হচ্ছে ঠিক এরকম একটা সময় আমি আমার বাম পাশে একটা বই দেখলাম, এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে । উলটে দেখলাম । মলাটটা সবুজাভ, বইয়ের নাম "সে ও নর্তকী" । লেখক "হুমায়ুন আহমেদ" ।
কিছুদিন আগেই মুহম্মদ জাফর ইকবালের "যারা বায়োবট","টুকি ও ঝায়ের প্রায় দুঃসাহসিক অভিযান" পড়ে তখন মস্তিষ্কের সৃজনী অংশের রক্ত গরম হয়ে আছে । এই বইটি দেখে গরম রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকল ।

লুকোচুরি খেলার কথা ভুলে আমি তখন বইটা পড়া শুরু করলাম । গল্পের কাহিনী হল - একটা মেয়ে এক আর্টিস্টের সাথে ঘটনাচক্রে পরিচিত হয়ে প্রেমে পরে গিয়েছে । সেই আর্টিস্টের আবার একটি বাচ্চাও আছে । তো আর্টিস্ট মেয়েটার জন্মদিনে তাকে তার নগ্ন একটা পেইন্টিং উপহার দেয় - অত্যন্ত লোমহর্ষক ব্যাপার ।
টান টান উত্তেজনার মাঝে বইটি পড়ে প্রায় অর্ধেকের মত শেষ করেছি এমন সময় খালামনির গলা শুনতে পেলাম ।

তুমি কি পড় ? দেখি ?

আমি বইটা বের করে দেখালাম । খালামনি ছো মেরে বইটা আমার হাত থেকে নিয়ে নিল ।
বলল , খবরদার ! এই বইয়ে আর হাত দিবেনা । এইটা বড়দের, তোমার পড়ার নাহ !
বইটাকে খালা আলমারির উপরে রেখে দিল যাতে আমি ধরতে না পারি । তখন তো হাইট ৩ ফিট হবে সাকুল্যে ।

মনটা খারাপ হয়ে গেল । কাহিনী পড়ে আচ করতে পারছিলাম যে এইটা "বড়দের" বই, তাই বলে পড়া থামিয়ে দেব - এটা মোটেই মেনে নেয়া যায়না । এই বই আমাকে পড়তেই হবে যেভাবেই হোক ।
যাইহোক, রাত্রে বেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ল, আমি তখন চুপি চুপি একটা চেয়ার নিয়ে আলমারি থেকে বইটা নিচে নামিয়ে ফেললাম ।

ড্রয়িংরুমে নিয়ে পড়া শুরু করলাম । কিন্তু কিছুক্ষন পরে কোত্থেকে জানি আম্মু এসে বলল , এতরাতে কি কর ?
আমি ততক্ষনে বুঝে গিয়েছি যে ওই বই "বড়" মানুষ দেখলেই লুকোতে হবে । সুতরাং আমি বই লুকিয়ে আম্মুকে ভগিচগি বুঝিয়ে লাইট অফ করে দিলাম ।
আম্মু যাওয়ার পর আমি আর রিস্ক না নিয়ে ডিরেক্ট বাথরুমে গিয়ে বই এর বাকি অংশ পড়ে শেষ করলাম ।

পরেরদিন সকালে খালার রুমের বুকশেলফ ঘাটতে গিয়েছিলাম এরকম বই আরো পাওয়া যায় নাকি দেখতে । গিয়ে দেখি তালা মারা । হতাশ হয়ে ফিরে এসেছিলাম । পরে রাতের বেলা খালা আমাকে ডেকে একটা বই দেয় , আর বলে সেটা নাকি আমার পড়ার মত বই । নাম "একি কান্ড !" । লেখক "হুমায়ুন আহমেদ" । এবার আর কোনো লুকোচুরি নেই । একনাগাড়ে বসে পড়ে শেষ করলাম বইটা ।
পরপর ওই বই দুটো পড়ে আমি কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম । ঘোর কাটতে বেশ কিছুদিন সময় লেগেছিল । নানাবাড়িতে যতদিন ছিলাম ততদিনই আমার মধ্য সেই ঘোরলাগা ভাবটা কাজ করেছে । অদ্ভুত এক ঘোরলাগার মধ্য দিয়ে আমি পরিচিত হয়েছিলাম এক নতুন জগতের সাথে । হুমায়ুন সাহিত্য - যে জগতের নাম । হুমায়ুন আহমেদ যে জগতের স্রষ্টা ।

সেই স্রষ্টা আজ নেই । কিন্তু অদ্ভুতভাবে জগত ঠিকই টিকে আছে । আর টিকে থাকবে বহুদিন । অমর একুশে বইমেলা শুরু হয়েছে , আর আমি এই "বাজারি" "সস্তা অপন্যাস লেখা" মানুষটাকে মিস করা শুরু করেছি ।

যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন স্যার ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×