somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগিং ও ব্লগারঃ বর্তমান বাংলার তীব্রতম কৌতুক

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"পাবলিক খায়" বলে আমাদের দেশে একটি থিওরি আছে । শিল্প-সাহিত্য থেকে শুরু করে খাবার-দাবার , যেকোনও বিষয়ে এই থিওরি প্রযোজ্য । তাই কোন একটা কাজ/প্রকল্প/উদ্যোগ শুরু করার আগে, কাজটি ভাল হবে কি না তার সাথে সাথে আমাদের ভাবতে হয় পাবলিক খাবে কি না ।

তো পাবলিক নামক বস্তুর রুচি আবার অনেক প্রগতিশীল । সেটি একেক সময় একেক জিনিস খায় । খুব ছোটবেলায় - যখন কেবল স্কুলে ভর্তি হয়েছি - তখন দেখতাম আমার কলেজ পড়ুয়া মামা তার বন্ধুদের নিয়ে ডেকসেটে গান শুনতে শুনতে সিগারেট খেত , আর পরিকল্পনা করত কিভাবে বিভিন্ন উপায়ে টাকা জমিয়ে একটা গিটার কেনা যায় । তাদের এই "জমানো" পরিকল্পনার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকত বাজারের টাকা মারা । তখন আমার বয়স একদমই কম , গিটার দিয়ে গান গাওয়া যায় মামা মারফত এইটুকু জানি কিন্তু "গিটার" নামটির মধ্যে যে "টারমিনেটর" সুলভ যান্ত্রিক ভাব আছে - তা একটি শিশুর মনস্তত্ত্বকে দোলা দেয়ার জন্য যথেস্ট ছিল । সুতরাং বাজারের টাকা মেরে মেরে আর অন্য যেভাবেই হোক , মামা যখন গিটার কিনে ফেললেন - তখন আমার উত্তেজনার অন্ত থাকল না । সেই গিটার নিয়ে কত কাহিনী ! নানা-নানীর ভয়ে সেটা বাসার কোথায় লুকিয়ে রাখা হবে সেটা নিয়ে চলতো আমার সাথে গোপন শলা পরামর্শ । ফান্টা আর স্লাইস এর বোতল খাইয়ে খাইয়ে মামা আমাকে ততদিনে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে গিটারের ব্যাপারটা গোপন , কাওকে বলা যাবে না । আমিও খুশি । প্রতিদিন ফান্টা-স্লাইস-মিরিন্ডার ডোজ পড়লে গিটার কেন , আমি আমার নামও ভুলে যাব । আমি ছোট হলেও মামা কেন যেন আমার কথা খুব মন দিয়ে শুনত । তাই আমি যখন বুদ্ধি দিলাম সারাদিন কাজ শেষে গিটারটা মামার খাটের নিচে রাখতে , মামা তখন সাথে সাথে রাজী হয়ে গেলো ।

অবশ্য পরেরদিন সকালে ঘর পরিস্কার করতে এসে নানী গিটারটা দেখার পরে যে ঘটনা ঘটেছিল - সেটি বলতে চাচ্ছি না ।

এরপরে খানিক বড় হলাম । বেশ ক'ক্লাস পার করে তখন আমি শিশু থেকে বালক বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছি । আমার মামাও তার তারুণ্য পেরিয়ে যৌবনে পা রেখেছেন । প্রথম যৌবনেই একজন প্রেমিকা জুটিয়ে ফেলেছেন । তো একদিন মামা ক্যামেরাওয়ালা একটি মোবাইল সেট কিনে গ্রামীনফোনের সংযোগ লাগিয়ে বাসায় নিয়ে আসলেন - তার ভাব দেখে কে ! মাটিতে পা ই পড়ে না । বলা দরকার , আমাদের বাসায় তখনো কোনও মাল্টিমিডিয়া সেট আসেনাই । তাই বাসার মোবাইল সেক্টরে প্রথম মাল্টিমিডিয়া যুগের সুচনাকারী হিসেবে মামা গর্ববোধ করতেই পারেন । সেই গর্ববোধ টাটকা থাকতে থাকতেই তিনি আরেকটি সেট কিনে বসলেন । সেটার আবার ক্যামেরা তো আছেই সাথে আবার ছবি এডিটও করা যায় । কি বিকট ব্যাপার ! সবকিছু এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল । গন্ডগোলটা তখন বাধল যখন মামা মোবাইলে ওয়ালপেপার ব্যাবহার করা শুরু করলেন । তিনি ওয়ালপেপার হিসেবে কি ধরনের ছবি ব্যাবহার করতেন তা আমি জানতাম না , কারন তিনি আমাকে তার মোবাইল ধরতেই দিতেন না - নষ্ট করে ফেলব এই ভয়ে ।

কিন্তু পরে বুঝে ছিলাম ওয়ালপেপার গুলো মনে হয় বিশেষ সুবিধার কিছু ছিল না - কারন নানা একদিন কোনও একটা দরকারে ওই মোবাইল দিয়ে কারও সাথে কথা বলে আর ফোন কাটার পরপরেই বজ্রপাত শুরু হয়ে যায় ঘরের মধ্যে ।

এরপরে আরও বছর দশেক পার হয়েছে । বহুদিন ধরে বহুরকম হুজুগ আর "পাবলিকের খানা" দেখছি । কিন্তু ২০১৩ এর গনজাগরনের পর "ব্লগিং" নামক ব্যাপারটি নিয়ে যেরকম শুরু হয়েছে তার কোনও তুলনা নাই ।

আমি ২০১১ থেকে আমারব্লগ এর রেগুলার পাঠক । কোনও একাউন্ট নাই , কিন্তু পাঠক । বিভিন্ন ব্লগপোস্ট পড়ি , বোঝার চেষ্টা করি , মাঝে মাঝে মনে দ্বিধা জাগে , পরক্ষনেই তা পরিষ্কার হয় । আস্তে আস্তে আমি বাংলা ব্লগস্ফিয়ারকে ভালবাসতে শুরু করলাম । নিজের লেখার সীমাবদ্ধতার কারনেই হোক আর পড়াশোনার চাপেই হোক , নিজে ব্লগিং এর কথা ভাবিনি কখনো । কিন্তু পরবর্তীতে ২০১২ সালে এসে Maruf ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে তারই অনুপ্রেরনায় সাহস করে একটা একাউন্ট খুললাম আমারব্লগে । এরপরে টুকটাক লেখার চেষ্টা করি , অন্যদের লেখায় মন্তব্য করি । ভাল লাগে । সময় কেটে যায় । চিন্তাধারা বিকশিত হয় ।

একটা সময় এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হল ।পড়াশোনার চাপে অনলাইন থেকে নিজেকে বেশ গুটিয়ে নিলাম (যদিও কোথাও চান্স পাইনাই ) । তারপর ভর্তিপরিক্ষার পর আবার টুকটাক শুরু করলাম ।


২০১৩ আসল । যুদ্ধাপরাধীদের রায় দেয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে । ফেব্রুয়ারিতে কাদের মোল্লাকে যখন ফাসির বদলে যাবজ্জীবন দেয়া হল , তখনই BOAN এর পক্ষ থেকে ৫ই ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিবাদ ডাকা হয় , পরবর্তীতে যা গণজাগরণ নামে ইতিহাসের পাতায় ঠাই করে নেয় ।

এর পরে শুরু হল "পাবলিক খায়" খেলা । গণজাগরণ এবং ব্লগার - দুটি বিষয় যেহেতু ওতপ্রোতভাবে জড়িত - সেহেতু নিজেকে ব্লগার প্রমাণের জন্য আপামর জনগন উঠে পড়ে ব্যাস্ত হয়ে গেল । "Emo BOY Arko" নামের যে ছেলেকে কোনোদিন চাইনিজ ফন্টে ইংলিশ ছাড়া লিখতেই দেখা যায়নি - সেও রাতারাতি অভ্র নামিয়ে বাংলা লেখা শুরু করে নিজেকে ব্লগার দাবি করে বসলো । নিজের Work Tab টিতে শো করতে লাগলো "ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট" । "ছাগু" টার্মটির সাথে কোনও পুর্বপরিচয় না থাকলেও তার ওয়ার্কপ্রজেক্ট এ শো করে "ছাগু পুন্দানো" !

প্রজন্ম ব্লগ , আমার ব্লগ - প্রতিটা ব্লগের নতুন আইডীর সংখ্যা বাংলালিঙ্ক দরে বাড়তে লাগল । ব্লগ যেহেতু খুলেছি - কিছু না লিখলে চলে ? এদের ব্লগপোস্টের নমুনা,

" হাই ব্লগারজ ! আম নিউ ইন ব্লগ ! গুড মর্নিং ! :D "

এরকম অবস্থার মাঝে ব্লগে আজকাল রীতিমত "পোস্ট জ্যাম" লেগে থাকা স্টার্ট হল । প্রিয় ব্লগারদের লেখা পড়া যায়না ভিড়ের মধ্যে । কোনও লেখা প্রকাশিত হওয়ার ৩ মিনিটের মাথাতেই প্রথম পাতা থেকে হাওয়া ।

তারপরেও জিনিসটা ভাল ছিল । গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে চে গুয়েভারার টি শার্ট পড়ে সিসা বারে গিয়ে হুক্কা টানার চেয়ে ব্লগিং করা অনেক ভাল । মুক্তচিন্তার প্লাটফর্ম হল ব্লগ । তাই ব্লগে লোক বাড়লে দেশেরই লাভ ।

কিন্তু মাননীয় সরকার কি করলেন এর মধ্যে ? নিরীহ ব্লগারদের বিরুদ্ধে ধর্মবিদ্দেসের অভিযোগ তুলে তাদের ধরে রিমান্ডে নেয়া স্টার্ট করলো । চমৎকার ভাবে তৈরি হওয়া একটি প্ল্যাটফর্মকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিলেন তারা । প্রোফাইল ইনফো চেইঞ্জ করা তরুনদের নাম আবারো " emO bOy" হয়ে গেলো । তাদের স্ট্যাটাসে বাংলার পরিবর্তে আবারও চাইনিজ ফন্টে ইংলিশ দেখা যেতে লাগলো ।

সত্যি সেলুকাস ! কি বিচিত্র এই দেশ , কি বিচিত্র এই দেশের মানুষ !
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×