somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি , রাসেল , রাজীব খান এবং ঈশ্বর

২৭ শে মে, ২০১৩ সকাল ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক বরাবরই খারাপ । খুব খারাপ না । কিন্তু খারাপ । গল্প উপন্যাসের সৎ মা'দের মত আমার মা প্লেটে মুরগীর রান না তুলে দিয়ে ঝোল তুলে দিয়েই দায়িত্ব সারতে চান । এটাই খারাপ সম্পর্ক হওয়ার প্রধান কারন না । আমি রাতে ঘুমাই আমাদের বাসার স্টোররুমে । অথচ ভাইয়া আর আপু শোয়ার পরও বাসায় দুটি বেডরুম খালি পড়ে থাকে । একটিতে আমার বাবা ঘুমাত , আরেকটি গেস্টরুম হিসেবে ব্যবহার করা হয় । এমন না যে বাসায় সবসময় গেস্ট এসে ভরেই থাকে । আরেকটি গুরুত্বপুর্ন কথা বলতে ভুলে গিয়েছি । আমার বাবা নেই । মারা গেছেন । আমার বয়স যখন ৭ , তখনকার ঘটনা এটা । এক রাতে আমার খুব ইচ্ছে হল আমি আইসক্রিম খাবো । যেন তেন আইসক্রিম না । মাচো । বাবাকে মাচোর কথা বলতে বলতে পাগল বানিয়ে দিলাম । বাবা বিরক্ত হয়ে শেষমেশ মাচো আনতে গেলেন ।

ঘন্টাখানেক পর বাবা ফিরলেন । কিন্তু লাশ হয়ে । বাস এক্সিডেন্ট । সেই থেকে মা আমাকে দেখতে পারেনা । মার ধারনা হয়েছে বাবার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী । আমি যদি আইসক্রিম খেতে না চাইতাম তাহলে বাবাও মারা যেতেন না । তাই নিজের পেটের সন্তান হওয়ার পরেও আমাকে তিনি থাকতে দেন স্টোররুমে । বাসাইয় দুরের মেহমান , মানে মার অফিসের কলিগ বা এইটাইপ কেউ আসলে আমাকে তিনি বাসার "কাজের ছেলে" হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন । আমার বড় বোন আর ভাইয়া যখন ঈদে নতুন নতুন কাপড় পড়ে ডাইনিং টেবিলে বসে সেমাই-পায়েশ খায় , আমি তখন স্টোররুমে বসে রুবি খালার সাথে ডাল-রুটি খাই । রুবি খালা আমাদের বাসায় কাজ করেন ।

____________________________________________________________________

এই পর্যন্ত লিখেই রাসেল থেমে গেল । মেজাজ গরম লাগছে । মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার অতি প্রিয় একজন লেখক । তার "আমি তপু" বইটি পড়ে সে বাথরুমে গিয়ে একঘন্টা ধরে কেঁদেছে । বাথরুমে গিয়ে , কারন ছেলে মানুষ বলে সে সবার সামনে কাঁদতে পারেনা । কিন্তু তাই বলে "আমি তপু" এর কাহিনী ফটোকপি হয়ে তার কলম দিয়ে বের হচ্ছে এটা কিছুতেই মানা যায়না । অন্য কিছু করতে হবে । স্কুলের ম্যাগাজিনের জন্য লেখা দেয়ার লাস্ট ডেট কালকেই । ভাবতে হবে । প্রচুর ভাবতে হবে ।

আরাম করে ভাবার জন্য পা টিপে টিপে বারান্দায় গেল রাসেল । বাবার ইজিচেয়ার এখানেই রাখা । সুমন বলে ইজিচেয়ারে দোল খেতে খেতে ভাবলে নাকি ক্রিয়েটিভিটি বাড়ে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি এভাবেই গীতাঞ্জলি লিখেছেন ।

ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে দোল খেতে খেতে প্রায় ঘুম এসে গেল রাসেলের । কিন্তু ক্রিয়েটিভিটি তো একই আছে মনে হচ্ছে । মাথায় আরেকটা ভাবনা উঁকি দিয়ে গেল তার । পাশের ক্যাবিনেটে বাবার সিগারেটের প্যাকেট রাখা থাকে । সিগারেট হবে নাকি একটা ? হুমায়ুন আহমেদ নামে যে একজন "বড়দের" লেখক আছেন উনি নাকি রোজ ৫০ টা করে সিগারেট খান । এতে নাকি মাথায় গল্পের প্লট আসে । এটা গুজব নয় মোটেই । তার এক বন্ধু আছে , শোভন । ওর আপন মামা নাকি শাওন এর এক ফ্রেন্ডের ছোটভাই । অতএব সোর্স রিলায়েবল । একটা সিগারেট খেয়ে দেখা যেতে পারে । রাসেল ক্যাবিনেটের পাল্লা খুলল ।


_________________________________________________________________

গল্প জগাখিচুড়ি পাকিয়ে যাচ্ছে । রাজীব খান অত্যন্ত হতাশ বোধ করছেন । আজকে জানুয়ারির ১৫ তারিখ । সামনের বইমেলার জন্য এই উপন্যাসটি লেখা অত্যন্ত জরূরী । অথচ এই নিয়ে প্রায় পঞ্চাশ বারের মত নতুন কাগজ নিয়ে বসলেন । প্রতিবারই একই জায়গায় গিয়ে আটকে যাচ্ছেন । এটাই কি রাইটার্স ব্লক ? হলে হবে । ব্লক কাটাতে যা করা দরকার করা লাগবে । আপাতত তার চরিত্র রাসেলের মত একটা সিগারেট ধরাতে হবে ।

বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে হঠাত করে রাজীব খান বুকের বামপাশে চাপা ব্যাথা অনুভব করলেন । সেই ব্যাথা আর চাপা থাকল না । বাড়তে লাগল । রাজীব খানের হাত থেকে জলন্ত সিগারেট পড়ে গেল । পাপোশের ওপর ।


_____________________________________________________________

এই পর্যন্ত এসে ঈশ্বর মুচকি হাসলেন । জীবন নামক উপন্যাসের লেখকের চিন্তাধারা অত্যন্ত জটিল ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৩ সকাল ৭:১২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×