somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিক্সিং এবং আশরাফুলঃ ফাঁদ নাকি স্খলন ?

৩১ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক বাঙালি তরুণের অভিষেক ম্যাচ । শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে । বিপক্ষ দলে আছেন মুরালিধরন , চামিন্দা ভাসের মতন বাঘা বাঘা বোলার । তরুণের বয়স মাত্র ১৬ । একে তো "মিনোজ" বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় , তার ওপর অভিষেক ম্যাচ । যেকোনও পাকা জুয়াড়ি এই নিয়ে বাজি ধরতে রাজি হবেন যে তরুন ২০ রানের মধ্যেই সাজঘরে ফিরবেন ।

তরুন কত করেছিল জানেন ?

১১৬ ।

মুরালি , ভাস দের বেধরক পিটিয়ে করা সেই ১১৬ রানই এখনও পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকে সবচে কম বয়সে করা সেঞ্চুরী হয়ে আছে ।

আর তরুণের নাম আশরাফুল ।





২০০৫ । কার্ডিফ । ট্রাই নেশন সিরিজে বাংলাদেশ বনাম অস্টেলিয়ার খেলা চলছে । কমেন্ট্রিবক্সে ইতিহাসের বিরলতম এক দৃশ্যর অবতারনা হল । এক কমেন্টেটর আরেক কমেন্টরের মাথায় ফাইল দিয়ে বাতাস করছেন , আর সেই কমেন্টেটর ঘামতে ঘামতে সুরা কালাম পড়ছেন !

জানি বলে দেয়া লাগবেনা যে বাতাস খাওয়া কমেন্টেটরের নাম আতাহার আলি খান ।


অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি যে এরকম অবস্থাই হয়েছিল ।

সেই অবস্থাটুকু বানানোর মুল কারিগর কে ?

মোহাম্মদ আশরাফুল ।


২০০৬ । চট্টগ্রাম , প্রতিপক্ষ ভারত । জহির খান , হরভাজন দের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ তখন থর থর করে কাপছে । এমন সময় এক দেবদুত হাজির হলেন । ভুল হল । এমন সময় এক দেবদূত একজন মানুষের উপর ভর করলেন । সেই মানুষটি জহির - ভজন দের স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে খেললেন ১৫৮ রানের এক মহাকাব্যিক ইনিংস ।

জানেন তো মানুষটি কে ?

মোহাম্মদ আশরাফুল ।


২০০৭ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ । প্রতিপক্ষ দক্ষিন আফ্রিকা । এই ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে জয় তো দূরে থাক , ন্যুন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাটুকুও করতে পারেনি । তাই এই ম্যাচ নিয়ে বাঙালির প্রত্যাশার পারদ ছিল নিচের দিকেই । কিন্তু এই বাংলাদেশের ২২ বছর বয়স্ক এক যুবকের হিসেবনিকেশ ছিল আলাদা । ক্রিজে নামলেন যখন তখন দলের ৪ উইকেট নেই । অধিনায়ক সুমনকে নিয়ে গড়ে তুললেন এক ধীরগতির জুটি । আস্তে আস্তে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন । দক্ষিন আফ্রিকার পোলক , আন্দ্রে নেলদের পাড়ার বোলার বানিয়ে খেলতে লাগোলেন অসাধারন সব শট । ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে তার খেলা এক শট তো পরিচিতিই পেয়ে গেল তার নামে । দুর্ভাগ্য তার , আউট হলেন ওই শটেই । সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১৩ রান দূরে থাকতে ।

জানেন তো এই যুবকটি কে ছিলেন ?

মোহাম্মদ আশরাফুল ।




এই সেই লোক , যার ব্যাটের দিকে একসময় ১৬ কোটি বাঙালি তাকিয়ে থাকত - কিছু একটা দেখবে বলে । একটা প্রবাদই চালু হয়ে গিয়েছিল , "আশরাফুল ভালো খেললে বাংলাদেশ জিতে । " সাকিব-তামিম পুর্ব যুগে যিনি বাংলাদেশের সবচে বড় তারকা । তার সমালোচকরাও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে কার্ডিফে করা তার অসাধারন সেঞ্চুরিই ওই সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আনে লাইমলাইটে । মিনোজ প্রবাদ ঘোচাতে ।

এই লোকের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে স্পট ফিক্সিং এর অভিযোগ , যা তিনি নাকি স্বীকারও করেছেন ।


জানিনা কতটুকু কি সত্য , কিন্তু উৎপল শুভ্রর লেখার হুবহু খানিকটা তুলে দিচ্ছি ।

২০০৪ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নিজেদের শততম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ হারিয়েছিল ভারতকে। পুরো দেশকে উৎসবে মাতিয়ে তোলা ওই দিনটিতেই আশরাফুলের গায়ে লাগে কলঙ্কের প্রথম ছিটা। ‘স্পট ফিক্সার’ হিসেবে আশরাফুলের অভিষেক এই ম্যাচেই। ম্যাচের আগের দিন টিম হোটেলেই জাভেদ নামে ভারতীয় এক বাজিকরের সঙ্গে আশরাফুলকে পরিচয় করিয়ে দেন খালেদ মাহমুদ, খালেদ মাসুদ ও মোহাম্মদ রফিক। সেখানেই জানানো হয় করণীয়—প্রথম ১৫ ওভারে কমপক্ষে ৬০ রান করতে হবে। সেটি বাংলাদেশ করেও ফেলে, যাতে এক চার ও দুই ছয়ে আশরাফুলের ৪১ বলে ২৮ রানের বড় ভূমিকা ছিল। এ জন্য আশরাফুল পান সাড়ে চার লাখ টাকা।


শুরুটা দেখুন । তাকে বলা হয়েছে ১৫ ওভারের মধ্যে ৬০ করতে হবে । অর্থাৎ বাংলাদেশের পক্ষে যাইয় এমন একটি কাজ । তো একটা ১৯ বছরের ছেলের মাথায় কতটুকুই বা ধরে যে এটা কি হচ্ছে ? সে তো সরল মনেই ওই কাজটি করে ৪ লাখ টাকা তুলে নিবে । তার কাছে তো এটা অনেকটা ম্যান অব দা ম্যাচের টাকার মত ।

সেই তো শুরু । এরপরেও দেখুন খালেদ মাসুদ প্রসঙ্গ এরপর আর আসেনি। তবে খালেদ মাহমুদ ও মোহাম্মদ রফিক এসেছেন বারবার। ২০০৯ সালে খালেদ মাহমুদ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সহকারী কোচ নির্বাচিত হন। সে বছরই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে ফেরার পর মাহমুদ সুনীল ভাটিয়া নামে এক ভারতীয় বাজিকরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন আশরাফুলকে। মাহমুদের বাসায় এই পরিচয় পর্বে মোহাম্মদ রফিকও উপস্থিত ছিলেন। সুনীল ভাটিয়া নামটি পাঠকের পরিচিত লাগতে পারে। কদিন আগে শ্রীশান্ত-কাণ্ডে ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন এই সুনীল। সুনীলের চাওয়া ছিল ‘খুব সামান্য’। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে লাঞ্চের পর নির্দিষ্ট তিন ওভারে ৬ রান করতে হবে। সেটি প্রথম ইনিংসে না দ্বিতীয় ইনিংসে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে দুই ইনিংসেই লাঞ্চের আগে আউট হয়ে যাওয়ায় আশরাফুল ‘কাজ’টা করতে সক্ষম হননি।


এই সেই খালেদ মাহমুদ-রফিকই আবার তাকে পরিচয় করিয়ে দেন এদের সাথে । দলের এত সিনিয়র "চাচা" আর রফিক ভাইয়ের কাছ থেকে খারাপ কিছু নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করবেন না আশরাফুল । তাদের কোলে পিঠেই তো তিনি মানুষ ! আর আগেও তো একবার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে , সেটি তো খারাপ কিছুই ছিল না । তাই দোষ কি কটা টাকা এক্সট্রা পেলে এমনই ভাবনা ছিল হয়তো আশরাফুলের ।



তাছাড়া আশরাফুল নিজেই বলেছেন , তিনি "উর্ধতন" কর্তৃপক্ষের চাপেই বিপিএল ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন । আর আসলেই সেটা ভাবার বিষয় । ম্যাচ ফিক্সিং আর স্পট ফিক্সিং এক জিনিস না । স্পট ফিক্সিং হয়তো দু-তিনটে রান কিংবা কয়েকটা নো বলের বিষয় , কিন্তু ম্যাচ ফিক্সিং সম্পুর্ন আলাদা । পুরো দলের কিংবা দলের ওপরের লেভেল থেকে সমঝোতা না থাকলে সেটি অসম্ভব । সুষ্ঠু তদন্ত দরকার ।

আর ভারতে যখন হঠাত করে শ্রীশান্ত এর কেলেঙ্কারিতে ভারতীয় ক্রিকেট আর আইপিএল এর ভবিষ্যৎ টালমাটাল তখনই হঠাত করে সেখানে বাংলাদেশী ক্রিকেটারের জড়িত থাকার কথা আর এর পরেই আশরাফুলের এসব খবর সামনে চলে আসা কিসের আলামত ? বাংলাদেশের সাথে ভারতের "ক্রিকেটীয়" সম্পর্কও বিশেষ ভাল নয় । পাশের দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা আমাদের এখনও পর্যন্ত কোনও সিরিজ খেলার ইনভাইটেশন দেয়নি । তাহলে ?

আমি আশরাফুলকে ডিফেন্ড করছিনা । কিন্তু আইসিএল থেকে যখন কোটিপাচেক টাকার অফার এসেছিল তখন কিন্তু এই রফিকই ওখানে গিয়েছিলেন । আশরাফুল যান নাই । তাই খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এরকম ব্যাপারে জড়াবেন আশরাফুল - এটা আমি বিশ্বাস করিনা । অবশ্যই কোন ভুল্ হচ্ছে । বড় কোন ভুল ।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×