শিরোনামটা মনে হয় চাঁদরাত হলে ভালো হত। কিন্তু আমি তা দেবো না কারন এটা ঈদের ই রাত। যদি মাগরিবের পর আগত দিনটাকে আমরা কদরের রাত বলতে পারি তাহলে গতকাল সন্ধ্যার পরে আজ সকাল পর্যন্ত সময়টাকে ঈদের রাত বলতে সমস্যা কোথায়? আর যদি ইংরেজি ক্যালেন্ডার নিয়ে টানাটানি করি এখানে তাহলেও সমটা রাত ১২টার পরে অর্থাৎ ঈদের রাত।
যাক সে কথা। অফিস থেকে ফিরছিলাম। অফিসের ড্রপ নামিয়ে দেয় নির্দিষ্ট জায়গায়। সেখান থেকে কোনদিন হেঁটে কোনদিন রিক্সায় বাসায় ফিরতে হয়। গতকালও ফিরছিলাম। হেঁটেই। গাড়ি থেকে নেমেই দেখি বেশকিছু ছেলে একটা প্যান্ডেলের মতন বানিয়ে খুব জোরে গান ছেড়ে উদ্দাম তালে তালে নাচছে। সারা মাস রোজা রেখেছে কি রাখে নাই তার নাই খবর কিন্তু এখন যেই নাচ তা দেখে মনে হল ঈদ কেন আমাদের জন্য আশে না। যার নিজের প্রয়োজনে, পরিবারে প্রয়োজনে লেখা পড়ার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করতে হয়। জানি বাবা বলবেন কেন কাজ করি, কিন্তু না করে আসলে থাকা যায় ন। পরিবারের অবস্থা দেখে ইচ্ছা হয় না নিজেকে চাপিয়ে রাখতে মা'এর হিসাব খাতায়। যাই হোক সেখানে কয়েকজন রিক্সাওয়ালা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলো। তাঁরা যাবে নাকি জানতে চাইলেই মনে হল খুব অন্যায় আবদার করে ফেলেছি। (মামা বাড়ির আপদার পাইসোস !! সারা দিন রিক্সা চালাইয়া এখন তামশা দেখতাচি, তোর লাইগা কি তাও পারুম না?)
যাক আবার হাঁটা শুরু করলাম। একা একা। কিছুদূর হেঁটে গেলে বাজার পড়বে। আজ যেহেতু ঈদের রাত জানি অন্যদিনগুলোর মতন আজ রাস্তা খালি থাকবে না। অথচ অন্যদিন যখন এই একি রাস্তা দিয়ে হেঁটে বা রিক্সায় বাসায় ফিরি তখন মনে হয় জনমানবহীন কোন টানেল দিয়ে যাচ্ছি। আর বৃষ্টির রাতগুলি? থাক সে কথা।
কাল ঈদ, রাস্তায় মানুষ থাকবে, রিক্সা পাওয়া যাবে এই ভাবতে ভাবতে হাঁটছি। সামনে একটা কবরস্থান পড়বে এখন। আল্লাহ'র রহমতে জায়গাটা নিয়ে আমার কাছে এখনও কোন ভীতিকর কিছু হয় নি। কিন্তু যখন কাছে চলে আসলাম তখন একটা জিনিস মনের ভেতর উঁকি দিতে লাগল।
কাল ঈদ। কত আনন্দ ফুর্তি করছি আমরা এই রাতে। পিছনে গান বাজছে আর তা মিলিয়ে যাবার আগেই সামনের গানের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এই কবরস্থানে যারা চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন? তারা কি আজ আমাদের দেখছে না?
শুনেছি রমজানের শুরুতেই নাকি কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়। এই সময়ে কবরবাসীরা আরামে, শান্তিতে থাকেন, আবার ঈদের নামাজের পরেই নাকি তাদের সেই শান্তির দিন শেষ হয়ে যায়। আর কয়েকটা ঘন্টা পরেই আমরা পৃথিবীবাসিরা ঈদের নামায পড়ে বাসায় ফিরবো আর তখনি কবরবাসীদের শান্তি দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ কি বিচিত্র ভাবে দুনিয়ার নিয়ম তৈরি করেছেন। এদিকে একদল বিজাতীয় উদ্ভট গানে নেচে চলেছে আর আরেকদিকে মাটির নিচের বাসিন্দারা তাদের শান্তির দিনের সমাপ্তির দুঃখে হয়তো মুষড়ে আছে।
সত্যিই কষ্টদায়ক। হাঁটতে হাঁটতে আমার মৃত আত্নীয় স্বজনদের কথা মনে পড়ছিলো। যারা আমাকে অনেক স্নেহ করতেন, আদর করতেন।
আল্লাহ্ যেন তাদের মাফ করে দেন। সকল মৃতের জন্য কবরের জীবণ শান্তিময় করে দেন। একদিন আমাদেরও সেখানে যেতে হবে। মিশে যেতে হবে মাটির সাথে।
আশা করি সকলের ঈদ খুব আনন্দে কেটেছে। আমার দিনটাও খুব আনন্দে কেটেছে। আল্লাহ আমাকে আরো একটা দিন বেঁচে থাকার সুযোগ দিয়েছেন। পার্থিব আনন্দের মাঝে এর থেকে আর আনন্দের আর কীইবা থাকতে পারে?
ঈদ মোবারাক