somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা ...... .... ১ আগস্ট ২০১৫........

১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৩১ জুলাই ২০১৫
ছোট মামার বাসায় সবার মিলাদের দাওয়াত ছিলো। বাসার সবাই গেছে। আমি পরে গিয়েছিলাম কারন আমার অন্য আরেকটা প্রোগ্রাম ছিলো। সেটা শেষ করে মামার বাসায় যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো। মামা সেদিন তার বাসায় থেকে যেতে বললেন। পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি দিনটা মোটামুটি শুকনাই আছে, আগের রাতে খুব বৃষ্টি হয়ে গেছে। যেই প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম সেখানেও ছাতা নিয়ে যেতে হয়েছিলো।

ভাবলাম মামার বাসা থেকে দুপুরে খেয়ে বাসায় ফিরবো বিকালের দিকে। কোন কাজ নেই বাসায়, তাড়াও নেই কোন। ১০টা -১১টার দিকেই তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। ১২টা-১টা নাগাদ মামির কথায় গ্রামে কল করি... কেউ ধরে নাহ। এদিকে মামির মধ্যে কেমন একটা উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে। এর কারন একটু আগে ছোট মামা কল করে বলেছে সবাই ব্যাগ গুছাও, বাড়ি যাওয়া লাগবে।

আমি বাসায় ফোন করলাম। বাসাতেও আব্বা ফোন করে আম্মাকে বলল ব্যাগ গুছাতে বাড়ি যেতে হবে। সাধারণত এমনভাবে বাড়ি যাওয়া হয় কারো মৃত্যুর সংবাদে। বড় মামা বাড়িতে আছেন আর বেশ কিছু দিন থেকেই তিনি অসুস্থ্য। নানা রকম রোগ... হার্ট, কিডনি ফেইলিওর, ডায়াবেটিস... ...

আমি তখন মামার বাসায় শুনে ফোনেই কিছু ধমক হজম করতে হলো বাবার কাছ থেকে... ... আর তখনও জানি না কেনো হঠৎ করে বাড়ি যেতে হচ্ছে... ... বড় মামার অবস্থা ভালো না শুধু এতটুকু কথা থেকে বুঝতে পারছি। কিন্তু ততক্ষণে আমরা জানি না যে মামা আর নেই... ...

বৃষ্টি দিয়েই রওনা হয়ে বাসায় আসলাম। দ্রুত আমার ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। কোন রকম কয়েকটা জামা কাপড় নিয়ে নিলাম। আব্বা বাসায় আসার পরে আমরা রওনা হলাম আবার ছোট মামার বাসায়। সেখানে যেয়েই আম্মা আর মামার কান্না শুরু হয়ে গেলো। বুঝতে আর বাকি রইলো না কিছু।

প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আশে এমন সময়ে মাইক্রো করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই আমরা সবাই। আমাদের আগে আরো একটা মাইক্রোতে করে খালারা রওনা হয়ে গেছে...

ঢাকার জ্যাম পেরিয়ে ঢাকা থেকে বের হতে হতে প্রায় আটটা বেজে গেছে... ... তার উপরে আবার যেই মাইক্রো করে আমরা যাচ্ছিলাম তার চাকা পাংচার হয়ে গেলো। চাকা বদলাতে আবার পাংচার চাকা সারাতে রাস্তায় থামতে হল। এদিকে বাড়ি থেকেও নানা জনের মাধ্যমে আলাদা আলাদা করে প্রতি মুহূর্তের খবর আসতে থাকলো। আমিও পাচ্ছিলাম সেই খবর একজনের মাধ্যমে। বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় রাত ১২টা। তারপর আবার গত দুই একদিন আর সারা দিনের বৃষ্টিতে গ্রামের রাস্তাঘাট কাদায় কদাকার... ... গাড়ি থেকে নেমে আমরা যে যার মত করে জুতা খুলে হাতে নিলাম, পরনের কাপড় গুটিয়ে নিলাম... ... কাদার রাস্তা বাসের সাঁকো সব পার হয়ে বাড়ি পৌঁছলাম। বাড়ির পরিবেশ আর অন্য সময়ের মত নয়। এতো রাতে কখনও বাড়ি গেলে আমাদের এগিয়ে নেবার জন্য কেউ আসাতো নাহ, আবার বাড়ির ভেতরেও এত মানুষজন থাকতো নাহ। কিন্তু বাড়ি ভর্তি মানুষ থাকলেও কেমন যেন একটা থমথমে ভাব সবার মধ্যে।

নানা বাড়িতে আমার দুই মামা থাকে। আলাদা আলাদা দুই ঘর। আর নানুর ঘর আলাদা যদিও নানু বেঁচে নেই। নানু যে কয়দিন বেঁচে ছিলেন নানু বাড়ি গেলেই সবার আগে নানুর ঘরে যাওয়া হত, নানু ঘরে থাক বা না থাক... ... তেমনি নানুর পরে বড় মামা ঘরের ক্ষেত্রেও একি হল। বাড়ি গেলে সবসময় আমাকে যে ঘরে পেতাম তা না, তার পরেও প্রথম দেখা হলে হাত মেলাতো তার পর জড়িয়ে ধরত। তাই বাড়ি গেলে আগে বড় মামার ঘরে যাওয়াটা অলিখিত নিয়ম হয়েছিলো। এবারি প্রথম মনে হয় নিয়ম ভাঙতে হল। বড় মামার ঘরের পাশ দিয়ে কলঘরের দিকে গেলাম, হাত পা ধুবার জন্য। আর যাবার সময় দেখলাম বড়মামার যেই ঘর সেই ঘরের মেঝেতে সাদা কাপড়ে মুড়ে মামাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। কেমন যেন করে উঠলো পুরা শরীরে... ... ...। মামা আর কোনদিন বাড়ি আসলে দেখা করবে না, জড়িয়ে ধরবে নাহ... ... নিজে থেকে আমার জন্য খাবারের আয়োজন করবে নাহ...... কোন খোঁজ খবর করবে নাহ... ... হাত পা ধুয়েও বড় মামার ঘরের দিকে আমি যেতে পারছিলাম নাহ। মানুষের সামনে কান্নাকাটি আমার মধ্যে কেন জানি হয়ে উঠে না।

বারবার একটা কথা মনে হতে থাকলো... ... "বড়দের গায়ে ছোটদের পা লাগাইতে হয় নাহ, আল্লাহ গুনাহ দেয়।" এই ব্যাপারটা আমাকে এই মামা'ই শিখিয়েছিলেন। খুব ছোট কালের কথা। মামা আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছেন। মামার আশে পাশে থেকে দুষ্টামি করে যাচ্ছি মামা কিছু বলছেন নাহ। হঠাৎ একবার মামা কোলে নিতে চাইতেই আমি আমি পাশের খাটে লাফ দিয়ে পড়ে যাই। আবার কোলে নিতে গেলে পা দিয়ে লাথি দেই মামাকে। তখন মামা প্রথমে একটু রাগ করলেও পরে আদর করেই এটা বুঝিয়ে ছিলেন।

মেঝো মামার ঘরের দিকে গেলাম। বড় মামার ঘরে কান্নাকাটি হচ্ছে। কেমন জানি ভালো লাগছিলো নাহ। অন্যঘরের দিকে চলে আসতে লাগলাম আর বার বার কিছু কথা মনে হতে লাগলো... বাড়ি গেলে রাতে মামার সাথে মাঝে মাঝে খালের পাড়ে যেতাম, টুকটাক মাছ পাওয়া যায় কিনা তার জন্য। সেই সব কথা মনে হতে লাগলো আর মনে পড়তে লাগলো......... "বড়দের গায়ে ছোটদের পা লাগাইতে হয় নাহ, আল্লাহ গুনাহ দেয়।"
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×