somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিলিতিসের গান -Songs of Bilitis(অনুবাদ)ধারাবাহিক

১৫ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৯৪ সালে,গ্রীসের নামকরা কবি,সাপ্পোর সমসাময়িক,বিলিতিস নামের কোন এক কবির অনুবাদ হিসাবে,ফরাসী লেখক পিয়ের লুইসের অনুবাদ।বিরাট এক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে লেখাটা অনুরাগীদের মনে-খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ সালের এ ধরনের সর্ম্পূন লেখা খুঁজে পাওয়া ছিল অনেকটা অবিশ্বাস্য।আর প্রকাশ্য ভাবে সমকামিতা নিয়ে প্রকাশনা সেটা তো আরও অভাবনীয়।পরে অবশ্য জানা যায়-বিলিতিস বলে কোন কবির অস্তিত্বই ছিল না,ঐ সময়।ওটা আর কিছু না পিয়ের লুইসের তৈরী করা একটা অভাবনীয় ফেরেপবাজী।সাজানো হলেও, তবুওএক পুরুষের লেখা মেয়েদের সমকামিতা নিয়ে বেশ সাহসী এক প্রকাশনা,লেখার মর্যাদাটা আজও কমে যায়নি।

(১) একটা গাছ

গাছে উঠবো-তাই,ছুড়ে ফেললাম গায়ের কাপড়,নগ্ন উরুটা ছুয়ে ছিল বৃষ্টি ভেজা মসৃন বাকল,ছুঁড়ে ফেলা স্যান্ডালটাও আটকে ছিল গাছের ডালে।

বড্ড অসহ্য গরমটা আজ,না পেরে তাই গেলাম আরেকটু উঁচুতে-গাছের পাতার ছায়ায়,ছন্দের দোলায় দোলায় ফাঁক করা পা দুটো আমার খেলা করছিল আকাশের সাথে-লুকোনো শরীরটাও যেন হেসে যোগ দিল সেখানে।

বৃষ্টি হয়ে গেছে কিছুক্ষন আগে,কফোঁটা বৃষ্টি জল তখনও খেলায় মত্ত-আমার স্তনের এপাশ ওপাশ নিয়ে।গোড়ালীতে আটকে ছিল কটা শ্যাওলা,পায়ের তালুটাও লাল,বিধ্বস্ত ফুলের রক্তে।

ঝড়ো বাতাসের উন্মাদ ভালবাসার চুমুতে আনন্দে,নেচে উঠলো গাছটা-এ যে এক নতুন সুরের ডাক।বাতাসের দাপটে একসাথে জড়িয়ে নিলাম পা আমার দুটো-গুপ্ত রহস্য রাজ্য,লজ্জায় নত হয়ে খেলার আকাশ ছেড়ে-লুকালো,লোমের দেশে।



পুরোহিতের গান

হোক না সে যে কোন মানুষ-জানা দরকার তার দেবতার পূজোর গান-চায় যদি সে গ্রীষ্ম দেবতা ‘পান’এর আর্শীবাদ,বাতাস ছোটে যার মুহুর্তের আদেশে।

জলপাই গাছের ছায়ায় নীচে বসে আছে আমার ভেড়ারা-সেলেনিসের ভেড়াদের দলের সাথে।

ঘাসে শুয়ে ছিল সেলেনিস,ছুটে গেল চঞ্চল মেয়েটা হঠাৎ-ফড়িং আর ফুলের খোঁজে,না হয়,হয়তো বা,নদীর ঠান্ডা জলে কিছুটা সময় মুখটা ভিজিয়ে নিতে।

পড়ে থাকা ভেড়ার চুলগুলো তুলে নিলাম,চরকীর সুতার কাজে লাগবে।সময় কাটছিল না কেন জানি,অবাক হয়ে দেখছিলাম বাজপাখীটাকে-খেলায় খেলায় মত্ত,সে আকাশ ছেড়ে আকাশে।

ছায়া সরে গেছে তখন অন্যদিকে,দুধের মগ আর ফুলগুলো সরাতে হবে এখন,কেউ যদি চায় গ্রীষ্ম দেবতা পানের আর্শীবাদ,জানা দরকার তার পুজোর গান।


মায়ের অনুমতি

আমার মা শরীর পরিষ্কার করে দেয় অন্ধকারে,পোশাকটা পরায় সূর্যের আলোয়,খোঁপা বেঁধে দেয় বাতির আলোতেঃযাই যদি কখনও কোথাও চাঁদের আলোয়,অর্ন্তবাসটাও মা বেঁধে দেয় হাজারো গিট দিয়ে।

বলে দেয় মা, ‘শোন,খেলা করবে শুধু কুমারী মেয়েদের সাথে,নাচতে চাইলে খুঁজে নিও ছোট ছেলেদের,তাকাবে না কখনও জানালার বাইরে।আর হ্যা,আলাপ করবে না ছেলেদের নিয়ে,শুনবে না বিধবার উপদেশ কখনও,কোথাও’।

‘মনে রেখ,কোন এক গোধুলির আলো আধারী লুকোচুরিতে,আসবে রাজকুমার ঘোড়ার পিঠে,বাজবে বাশী,থাকবে ঢোলের নাচন বাদন’।

‘ঐ সন্ধ্যায় তুমি যখন চলে যাবে বিলিতিস,রেখে যেও তিনটা তিতা করলা আমার জন্যে।একটা সকাল খুঁজে নিতে আমার,বিকাল হারাবে আরেকটায়,সবচেয়ে যেটা তিতা বেশী সেটা তোমার অনুষ্ঠানের দিনটার’।


নগ্ন পায়ে

আমার লম্বা চুল,ছড়ানো নিতম্ব জুড়ে,ছোট্ট একটা টুপি মাথায়,সাদা উলের ফ্রকটা গায়ে,সূর্যের চুমুর অত্যাচারে আমার সুন্দর পা দুটোও- বাতামী এখন।

থাকতাম যদি কোন শহরে,হয়তো থাকতো গায়ে সোনালী জরি কাজ করা ফ্রক, পায়ে রুপার জুতো… নগ্ন পা দুটো আমার এখন-পরে আছে ধূলোর জুতো শুধু।

সোফিস!শোন ছোট্ট মেয়েটা,নিয়ে চলো আমাকে ঐ নদীর ধারে,পা দুটো আমার ধুয়ে দিও তোমার হাতে,পারলে জলপাই মেশানো ফুলের সুবাস মাখিয়ে দিও বারবার সেখানে।

আজকে তুমি ক্রীতদাস আমার,শুনবে কথা শুধু-থাকবে না কোন অভিযোগ তোমার,যা যা বলবো করে যাবে শুধু কোন কথা ছাড়া আর।দিনের শেষে না হয় দেব,কিছু মসুর বাগান থেকে…দিও তোমার মাকে।



বুড়ো মানুষটা আর পরীর দল

একজন বুড়ো মানুষ আজও থাকে ঐ পাহাড়টায়।পরীদের রুপের আলো দেখে দেখে চোখের আলোটাও হারানো তার,যা আনন্দ আছে এখন,আছে-সেটা শুধু স্মৃতির কনায়।

বুড়ো বলে, ‘হ্যা,এমন কোন পরী নেই যাকে দেখেনি,আমি।হেলোসাইকরিয়া,কি লিমানথিস,আলো হয়ে দাঁড়িয়েছিল সবাই ফাইসোর সবুজ পুকুরটার ধারে। পুকুরের জল মাতাল হয়ে খেলায় খেলায় ছুটছিল,তাদের পা ছাড়িয়ে কোমরে।

বাঁকা রাজহাঁসের মত কাঁধ তাদের,লুকোনো চুলে।ঝকঝকে পরিষ্কার নখ যেন ফড়িং এর পাখাটা।স্তন এক নীল পদ্মের বৃত্ত-স্বর্গ ছোঁয়া রুপ সাজানো যেখানে।

আঙ্গুল দিয়ে পানিতে বিলি কেটে কেটে তুলে আনছিল তারা লম্বা ডাঁটাসহ পদ্মফুল-অজানা কাদামাটি থেকে।পা দুটোর ফাঁকে লুকোনো,ছোট্ট একটা বৃত্ত, ধীরে ধীরে ফুটে উঠছিল কলি থেকে ফুলে …’।


গান

তরতা-তরতি,কি করছো,তুমি ওখানে?... সুতা কাটছি আর চরকি ঘুরাচ্ছি আমি মাইলেসিয়ানদের …হায়!হায়!আস না,নাচি সবাই আমরা একসাথে।-মনটা আমার খুবই খারাপ,খুবই খারাপ মনটা আমার আজ।

তরতা-তরতি,কি করছো,তুমি ওখানে?-বাঁশ কেটে বানাবো সৎকারের বাশীটা-হায়!হায়!বলো আমাকে,কি হলো কখন?বলবো না আমি,না আমি বলবো না তোমাকে।

তরতা-তরতি,কি করছো,তুমি ওখানে?...জলপাই থেকে তেল করছি,এক মানুষের শেষকৃত্যের জন্যে…হায়!হায়!কে মারা গেছে,কে হারালো তার মায়াবী মন?...কি ভাবে তুমি প্রশ্ন করলে?একটুও দ্বিধা হয়নি তোমার, পারলে তুমি ও ভাবে অযথা প্রশ্ন করতে?

তরতা-তরতি,কি করছো,তুমি ওখানে?...ও সমুদ্রে পড়ে গেছে…হায়!হায়!আর হ্যা বলো,কেমন লাগলো তোমার আমাকে?...তার সাদা ঘোড়ায় ছুটে যাওয়া।তার সাদা ঘোড়ার পেছনে…।


অজানা পথিক

দরজার সামনে বসে ছিলাম একা সন্ধ্যায়,সুপুরুষ এক যুবক হেঁটে গেল হঠাৎ আমার সামনে।চোখাচোখি হলো,আর আমি হেঁটে গেলাম অন্যদিকে।কারনটা কি-প্রশ্ন ছিল তার,উত্তর দেই নি আমি আর।

আসতো সে যদি আমার কাছে।গালটা কেটে দিতাম তার=দেয়ালের পাশের কোদালটায়,আরেকটা পা যদি আগাতো সে…।

পেছনে সরে গিয়ে মুচকি একটু হাসলো লোকটা,আর হাতে চুমু দিয়ে বললো, ‘এ চুমুটা শুধু তোমার জন্যে’।চীৎকার করে কেঁদে উঠলাম আমি,ছুটে এসে জিজ্ঞাসা করলো মা, ‘কি হলো,কি হলো,তোমার’?

দুশ্চিন্তায় ভঁরা চোখেমুখ মার,কোন বিছার(বৃশ্চিকের)কামড় নাকি।চীৎকার করে বললাম আমি,‘ লোকটা আমাকে চুমু খেল,মা’।মা আদর করে কাছে টেনে নিয়ে –আমাকে চুমু খেল আবার।


জেগে উঠা


দিনের আলো ছড়িয়ে গেছে চারপাশে।অনেক আগেই ঘুম থেকে ওঠা উচিত ছিল,আমার।তবে সকালের ঘুমটা সবসময়ই বেশ একটু আরামের,আর বিছানার আয়েসটা আরও কিছুটা আটকে রাখে।কিছু না করে শুধু চুপচাপ শুয়ে থাকতে চাই আমি।

খুব শীগগরীই আস্তাবলের দিকে যাব,ছাগলদের জন্য ঘাস আর ফুল নিয়ে,কূয়া থেকে আনবো মশকে পানি,ছাগলদের জন্যে-সাথে সাথে কিছুটা আমার জন্যেও।

ছাগলগুলোকে খুঁটিতে বেঁধে গরম দুধ ছেকা(দোহন) আরম্ভ করলাম,ছাগলের বাচ্চাদের আপত্তি যদি না থাকে,তবে আমিও একসাথে চুষবো দুধের বোঁটাগুলো।

আমালথিয়া,ছাগল দেবীর দুধে বেড়ে ওঠা স্বগের রাজা জুস এর,আমালথিয়া কি আপত্তি করে নি-জুসের কাছে তার স্তনের বোঁটা চোষায়?আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে,এখন।না এখনও না।সূর্যটা কেন যে তাড়াতাড়ি দেখা দিল আকাশে আজ আর মা তো ঘুম থেকে ওঠেনি এখনও।



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ২:৩১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×