somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Paulo Coelho এর adultery (পরকীয়া)

২৪ শে জুন, ২০২২ রাত ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(৮)

আমি বেশ ক্লান্ত,হাতদুটো আমার হাঁটুতে,শ্বাসপ্রশ্বাসের সুরটাও বেড়ে গেছে অনেক,না ঘুমানোর ক্লান্তি সারা শরীরে।আমার স্বামী তবুও বলে যাচ্ছে, “থামবে না,চেষ্টা করো অন্ততঃ আমার জন্যে,চেষ্টা করো অন্ততঃ তোমার ছেলেমেয়েদের জন্যে।তুমি শুধু দৌড়াচ্ছো না,শুধু ব্যায়াম করছো না,সাহস খুঁজর জন্যেছো তোমার মনে,তুমি জান যন্ত্রনারও শেষ আছে,যুদ্ধ করে যাও,মাঝপথে ক্ষান্ত দিও না”।

(কি বলতে চাচ্ছে আমার স্বামী,কি বলতে চাচ্ছে হতাশা ভঁরা কথায়,তবুও সে হাতধরে আমার উৎসাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছিল।যদিও আমি ক্লান্ত,তবে তার অনুরোধের কাকুতি মিনতি এড়াতে পারিনি,মিনিট দশেক দুজনে একসাথে দৌড়ালাম।রাস্তার পাশে ইলেকশনের বিলবোর্ড,একটাতে জেকব কোনিগ হাসি ভরা মুখে নিয়ে আমাকে দেখছে।

একটু জোরে জোরে দৌড়াচ্ছিলাম,একটু অবাক হয়ে স্বামীও যোগ দিল,দশ মিনিটের পথটা গেলাম আমরা মিনিট সাতেকে।অবাক হয়ে দেখছিলাম চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য,আলপসের বরফ ঢাকা ঝকঝকে মুখ,উড়ে যাওয়া শঙ্খচিলের দল-ছেলেমেয়েরা একই জায়গায় বসে আইসক্রিম খাচ্ছিল আর আইপ্যাডে ভিডিও গেম খেলে তাদের সময় কেটে গেছে।ভিডিও গেম,আইপ্যাড দূষিত করে দিল এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের।

স্বামী ছেলেমেয়েদের কাছে ছুটে গেল,আমিও গেলাম সাথে সাথে।সে হয়তো ভাবছিল তার কথায় উৎসাহিত হয়ে আমি তখন নতুন এক মানুষ।হয়তো সে ভাবছে তার কথায় এনডরফিনের(এক ধরণের হোরমোন,ব্রেন আর নার্ভাস সিষ্টেম থেকে যার উদ্ভব) স্রোত ছূটে যাচ্ছে আমার রক্তে,অনেকটা যৌন উত্তেজনার চরম সুখের পর্ব।কিন্ত এনডরফিন আমাকে তেমন কিছুই বদলে দেয়নি,আমার উৎসাহ সবকিছু ছেড়ে অন্য আকাশে নতুন অভিযানের চিন্তায়।কেন দেখা হলো এই মানুষটার সাথে যাকে বিয়ে করলাম,ভালই তো ছিলাম একা নিজের স্বাধীনতায়।

হয়তো সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেছি,কোন মানসিক হাসপাতালে যাওয়াই উচিত, অযথার চিন্তা আমাকে এলেমেলো করে দিচ্ছে।কিছুটা পথ হেঁটে যাচ্ছিলাম স্বপ্নের ঘোরে,মুক্তির স্বপ্ন ছেড়ে ছূটে যাচ্ছিলাম বাস্তবতায়,ফিরে গিয়ে নাইওনে দেখবো হয়তো কেউ নেই সেখানে,
সবাই চলে গেছে।

কিন্ত বসে আছে সবাই আমার জন্যে,আমি কারও জীবনের ভালবাসার সঙ্গি,কজনের মা। উন্মাদনায়,ঘেমে যাওয়া শরীরেই জড়িয়ে ধরলাম সবাইকে,মনের অনুভুতির জোয়ারে ভেসে গেছি আমি।নিজের জীবনের পথটা খুঁজে নেয়ার সূযোগ হয় না আমাদের,পথ খুঁজে নেয় আমাদের।আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের সুখ দুঃখের হিসেব করে কোন লাভ নেই,নিশ্চুপ সুরে সবকিছু মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটায় বুদ্ধিমানের কাজ)।

ইলেকশনের দিন,রোববার বিকেলে খবর কাগজের পক্ষ থেকে আমি জেকবদের দলের হেডকোয়ার্টারে।ভোট দেয়ার শেষ সময় সন্ধ্যা ছটা হতে তখনও মিনিট পনের বাকী,ভাবলাম তবু আনন্দ উচ্ছাস শুরু হয়ে গেছে হয়তোবা।দেখলাম ঠিক তার কিছু উল্টোটা-প্রার্থীরা কেউই কোন আনুষ্ঠানিকতা করছে না,জেকব আর মারিয়া কোনিগের বাড়ীটা দেখা হবে না।

পৌঁছানোর আগে ভোট গননার সংখন আসছিল,৪৫% ভোটারের ভোট দেয়া, একটা ঐতিহাসিক ঘটনা।জেকবদের দলের একজন মহিলা সদস্য সবচেয়ে বেশী ভোট পেয়ে জিতেছে,জেকব তিন নম্বরে,একটা মন্ত্রীত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা আছে ভালই।

হলঘরটা সাজানো সবুজ বেলুন আর হলুদ কাগজের অলংকারে।লোকজন এর মাঝেই মদের বোতল নিয়ে আনন্দে ব্যাস্ত,মাঝে মাঝে হাত দিয়ে কেউ কেউ বিজয়ের সংকেত দেখাচ্ছে।ছবি তোলার লোকজন তখনও আসেনি,এমনিতে রোববার তার উপর আবহাওয়াটাও চমৎকার,
বাইরের কাটানোর জন্যে একেবারে খাসা।

জেকব আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে,অন্যদিকে ঘুরে দলের একজনকে খোঁজা আরম্ভ করলো।আমাকেও আমার কাজ করতে হবে,আর কিছু না হোক কিছুটা ভান তো করতেই হবে।রেকর্ডার,নোটবই,কলম বের করে প্রস্ততি পর্ব চললো আমার।নানান লোকজনের মন্তব্য চারপাশে,কেউ বলছে, “এবার ইম্রিগেশনের আইনটা পাশ করা যাবে”,কেউ বলছে, “ভোটারদের বুঝতে সময় লাগেনি,গত ইলেকশনের ভুলটা”।বিজয়ী জেকব মন্তব্য করলো, “মেয়েদের ভোট ছাড়া আমার জেতার কোন সম্ভাবনা ছিল না”।

একপাশে লেহমান ব্লু,স্থানীয় টিভি ষ্টেশনের সুন্দরী রিপোর্টার,উপস্থিত কর্মীদের সাক্ষাৎকারে ব্যাস্ত নিচ্ছিল-উত্তরগুলো একেবারেই সাজানো,দলের উপরতলার লোকজনের অনুমতিতে যতটুকে বলা সম্ভব।জেকব কোনিগের সাক্ষাতকারের সময় হলে,তার বক্তব্য শোনার জন্যে আমিও কিছুটা এগিয়ে গেলাম।একজন মহিলা পাশে এসে বললো,“আমি জেকবের বৌ,তোমার সমন্ধে আমাকে জেকব সবকিছুই বলেছে”।

এক অপূর্ব সুন্দরী মহিলা!সোনালী চুল,নীল সাগরের মত চোখ,গায়ে কালো সোয়েটার,কাধে একটা লাল সিল্কের স্কার্ফ।পোষাকটা দেখে মনে হলো,সম্ভবত প্যারিসের কোন নামকরা ডিজাইনারের তৈরী,অবাক হইনি,দেখে অবাক হওয়ার ভানও করিনি।

জেকব আমাকে নিয়ে,কি বললো?তার সাথে দেখা একটা সাক্ষাতকারে কদিন আগে,তার পরে দুপুরের খাবারে কিছুটা সময় কাটলো।জানি সাংবাদিকদের কোন সাক্ষাতকার নিয়ে মন্তব্য করাটা ঠিক না,তবে এটুকু বলতে পারি নিঃসন্দেহে জেকব বেশ সাহসী,আর অন্য কেউ হলে হয়তো ব্ল্যাকমেলের ঘটনাটা প্রকাশ করার সাহসই পেত না।

দেখলাম মারিয়ান,না মাদাম কোনিগ যে ভাবেই ডাকা হোক না,বেশ উৎসুক আমার মন্তব্য শোনার জন্যে,যা যা সে বললো আমাকে,তার চেয়ে জানা অনেক বেশী।ইচ্ছে হচ্ছিল জানার জেকব কি তাকে বললো আমাদের পার্ক ডে ইয়াক্স-ভাইভসের দেখা হওয়ার পর্ব নিয়ে?তাকে সবকিছু বলাটা কি ঠিক হবে?না সেটা হয়তো হবে চরম বোকামী।

লেহমান ব্লু এর সাথে জেকবের সাক্ষাতকার আরম্ভ হয়ে গেছে,দেখে মনে হলো না ঐ সাক্ষাতকার শোনার আগ্রহ খুব একটা আছে জেকবের বৌ এর,হয়তো তার জানা ছিল সম্পুর্ন বক্তব্য।জেকবের গায়ে নীল সার্ট,ধুসর রং এর টাই,নিঃসন্দেহে বৌ এর পচ্ছন্দ করা।হাতে একটা ঘড়ি,সুইজারল্যান্ডের নেতার হাতে ঘড়ি না থাকাটা তো একেবারেই বেমানান হবে।

জেকবের বৌকে জিজ্ঞাসা করলাম,তার বলার কিছু আছে নাকি।জেকবের বৌ বেশ মজার একটা উত্তর দিল,জেনেভা ইউনিভার্সিটির দর্শনের অধ্যাপক হিসাবে অবশ্যই তার অনেক কিছু বলার আছে,তবে এক রাজনীতিবিদের বৌ কোন কিছু বলাটা মানানসই।তার কথাবার্তায় একটু উগ্রতা,একটু খোঁচানোর ভাব ছিল,তবে ওটাই স্বাভাবিক।

কিছুটা ভনিতা করেই বললাম,তার সহিষ্ণুতার প্রশংসা না করে পারা যায় না,স্বামীর পরকীয়া প্রেমের কথা জেনেও কোন হৈচৈ না করে,মানসিক ভাবে তাকে সাহায্য করে গেছে ভালবাসার,সংসারের খাতিরে।

“ওটা নিয়ে হৈচৈ করার কি আছে,দুজন বয়স্ক নারী পুরুষ শরীরের খেলায় মেতে ছিল কটা দিন,ওখানে ভালবাসার কোন নামগন্ধ ছিল না”।

মারিয়ান কি আমাকে কটাক্ষ করে কিছু বলতে চাচ্ছে?তার নীল চোখের গভীরে তেমন একটা কিছু খুঁজে পেলাম না,এটুকু দেখলাম,মহিলা খুব একটা মেকআপ করে না,অবশ্য দরকারও নেই ও ধরণের সুন্দরী এক মহিলার।

“অনেকেই জানে না,জেকব আমার পরামর্শেই ইলেকশনের ঠিক আগে আগে সাংবাদিক সম্মেলনে পরকীয়া প্রেমের কথাটা বিস্তারিত জানায়।কিছুদিনের মধ্যেই সবাই ভুলে যাবে তার পরকীয়া প্রেমের গল্প,তবে কেউ ভুলে যাবে না তার সাহসের কথা,যে ভাবে বিদেশীদের নোংরামীর রহস্য সে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরলো।সবাই মনে রাখবে একজন সাহসী মানুষটাকে,যে নিজের সংসার জীবনের শান্তি উপেক্ষা করতে দ্বিধা করেনি,দেশ আর জাতির স্বার্থে”।

মারিয়ান হাসতে হাসতে বললো,যদিও কথাগুলো সে গোপনীয় অনেক কথাই বলছে,তবে সেটা প্রকাশ করার অনুমতি দিচ্ছে না।আমি বললাম সাংবাদিকতার নিয়ম হিসাবে কোন কিছু প্রকাশ করার অনুমতি না দেয়ার ইচ্ছা থাকলে,সেটা আগেভাগে বলাটাই নিয়ম,সাংবাদিকরা সেটাতে রাজী হতে পারে,না ও হতে পারে।কোন কিছু বলার পর সেটার সম্মতি,অসম্মতির ব্যাপারটা,অনেকটা যেন ঝরে যাওয়া গাছের পাতা ভেসে গেছে নদীর স্রোতে,ভেসে যাওয়া গাছের পাতা হারায় প্রতিরোধের ক্ষমতা।

“আমার বিশ্বাস,তুমি নিশ্চয় এই আলাপ আলোচনা নিয়ে কোথাও কিছু লিখবে না,তুমি জেকবের কোন ক্ষতি চাও না,এটা আমি জানি”।পাঁচ মিনিটও হয়নি আমাদের কথাবার্তার,এর মধ্যেই টানাপোড়েন আরম্ভ হয়ে গেছে,কিছুটা অপ্রস্তত হয়ে বললাম,মন্তব্যগুলো উদ্ধৃতি করার কোন ইচ্ছা নাই আমার।মারিয়ান বললো,অন্য কেউ হলে সে প্রথমেই বলে দিত,কোথাও ব্যাবহার না করার জন্যে,আর সাংবাদিকদের সাথে কি ভাবে সর্তক হয়ে কথা সেটা সে ভাল করেই জানে।জেকবের অসুখী সংসার জীবনের টানাপোড়েন,কিছুটা বুঝতে পারলাম।

মারিয়ান চোখ সরিয়ে নেয়নি তখনও,আমি সাংবাদিকতার মুখোশটা পরে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম নির্বাচনের ব্যাপারে তার আর কিছু বলার আছে নাকি।প্রশ্ন করলাম বিজয় উপলক্ষে তাদের বাড়ীতে কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে নাকি?
“অবশ্যই না!ও সবে অনেক ঝামেলা ঝঞ্জাট,আর তা ছাড়া সাধারণত অনুষ্ঠান হয় ইলেকশনের আগে ভোট জোগাড় করার জন্যে”।
নিজেকে আমাকে আবার মনে হলো এক নির্বোধ,আরেকটা প্রশ্ন করা দরকার তবুও।
জেকব কি সুখী?
প্রশ্নটা করেই বুঝতে পারলাম,কোন এক বিশেষ জায়গায় সেটা নাড়া দিলো মারিয়ানকে।
মাদাম কোনিগ আড়চোখে তাকিয়ে উত্তর দিল,সুখী,অবশ্যই সে সুখী,আর সুখী না হওয়ার কোন কারণ আছে নাকি”?

এই মহিলাকে বাহবা না দিয়ে উপায় নাই,আলোচনা থেমে গেল,আমার ডাক পড়লো বিজয়ীদের সাথে আলাপ করে দেয়ার পর্বে।আরেকদিন কথা হবে বলে,গেলাম সহকারীদের সাথে বিজয়ীদের সাথে দেখা সাক্ষাতে।একটা কার্ড মাদাম কোনিগকে দিয়ে বললাম,কোন কিছু আলাপ আলোচনা করার ইচ্ছা হলে যেন জানায়।

লোকজনের ভিড় দেখে সরে যাচ্ছিলাম,মাদাম কোনিগ হাত ধরে পাশের ইলেকশ্ন কর্মীকে ডেকে বললো, “আমাদের বন্ধু প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী আর দৃঢ়মনা,খুব সহজেই যে কোন দুরুহ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারে,কিন্ত আমার কাছে কেন জানি খুব দুর্বল হয়।একজন ভাল সাংবাদিক তবে অস্থির হয়ে যায়,কে কি ভাবছে এটা নিয়ে।এটা তো জানাই মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বেশ প্রখর সম্পর্কের ব্যাপারে,বিশেষ করে সেটা যখন তাদের ব্যাক্তিগত জীবনে সমস্যা টেনে আনে,একাকীত্ব একটা বিরাট অসুস্থতা”।

এ ব্যাপারে আমি একমত,কোন আবেগ ছাড়াই আমি উত্তর দিলাম।বিজয়ীদের সাথে দেখা করার জন্যে মারিয়ানের সহকর্মী বেশ অসহিষ্ণু হয়ে গেছে, “ঐ মহিলা যা ভাবছে,তার সেই আশা কোনদিন পূর্ন হবে না”,বলে বক্তব্য শেষ করলো মাদাম কোনিগ।
আমি হাতটি ছাড়িয়ে সরে গেলাম,আর কোন কথা না বলে মাদাম কোনিগ অন্য কোথাও চলে গেল।

সোমবার সকালে জেকবকে কবার ফোন করলাম,ফোন ধরলো না জেকব,নাম্বারটা মুছে দিলাম,জেকবও হয়তো আমার নামটা রাখেনি ফোনে।তবে কেন জানি ক্ষান্ত এক সহকর্মীর ফোনে ফোন করার পর,সাথে সাথে জেকব উত্তর দিল,‘তোমার সাথে আমার দেখা করা দরকার’।

বেশ শান্ত সুরেই জেকব উত্তর দিল, “আমি খুবই ব্যাস্ত,ফোন করে জানাব কবে দেখা হবে। ফোনটা কি,তোমার”?
না,এক বন্ধুর,আমার ফোনে উত্তর দিচ্ছিলে না,তাই এ ভাবে চেষ্টা করলাম।হাল্কা একটা হাসির শব্দ পেলাম,ওর চারপাশে নিশ্চয় তখন অনেক লোকজন।

এমন হতে পারে,আমাদের পার্ক পর্বের ছবি তুলে তোমাকে কেউ ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছে।আমি তো সব দোষ তোমার কাঁধে চাপিয়ে দিব,জেকব,যারা তোমাকে নির্বাচিত করেছ,ভেবেছিল পরকীয়া প্রেমের ব্যাপারটা সেটা একবারেই শেষ হয়ে গেছে,বড়ই নিরাস হবে তারা।যদিও তুমি নির্বাচিত,তবে কোন মন্ত্রীত্বের আশা ছেড়ে দিতে পার।

“তোমার শরীর,মাথা ঠিক আছে তো”?

বেশ ভাল আছি,টেক্সট করে জানাবে কোথায়,কবে দেখা হচ্ছে।

(ভাল আছি?কেন ভাল থাকবো না,আমার হতাশ জীবনে কিছু একটা নিয়ে ব্যাস্ত থাকার সুযোগ পেলাম।রাতগুলো আর কাটাতে হবে না নানান পাগলামি চিন্তায়।আমি জানি আমি কি চাই,আমার একজন শত্রু দরকার,যাকে ধ্বংস করবো আমি।

একজন পুরুষ চাই আমার,যাকে নিয়ে আমি খেলা করতে পারি।
নাই বা থাকলো ভালবাসা,তবে কি যায় আসে?আমার ভালবাসার পাত্র কে হবে সেটা আমার পচ্ছন্দের ব্যাপার,হউক না সেটা একতরফা।মেনে নিচ্ছি ভালবাসার জগতটা অন্যকিছু,তবু আমি এ গর্ত খোঁড়ায় ক্ষান্ত দিতে নারাজ,কোথাও না কোথাও লুকোনো নোংরা জলের শেষে নিশ্চয় আছে স্বচ্ছ জলের জোয়ার।

মনটা বেশ হাল্কা হয়ে ছিল,আসলেই তো আমি যে কাউকে ভালবাসতে পারি,কারও বাঁধা দেয়ার,কারও বলার কিছু নাই।আমার প্রেমেও তো অনেকেই পাগল ছিল,যাদের জন্যে আমার কোন অনুভুতি ছিল না,তারা অহরহ উপহারও দিতো কথায় কথায়,একটু আশায়।

আশা হারায়নি কেউ,ক্ষীন হলেও আশার আলো লুকিয়ে ছিল তাদের মনে,আশার স্রোতে ভেসে গিয়ে চেষ্টা চালিয়ে গেছে তারা।তাদের চেষ্টা সাথে আমার চেষ্টার পার্থক্য কোথায়?এই একতরফা ভালবাসার ব্যাপারটা অনেকটা একটা দূর্গম অভিযান।পাওয়ায় আনন্দ আছে,তবে হতাশা লুকোনো চারপাশে-বিরাট একটা দাগও কাটে মনের খাতায়।তবে আমি যে মানুষটা সারা জীবন কোন ঝুঁকি না নিয়ে হিসেবে করে এগিয়ে গেছে,তার কাছে এ ধরণের এমন একটা ঝুঁকি নেয়াটা বিরাট একটা ধাক্কা।তবে মনের চাওয়াগুলোকে আর আঁটকে রাখতে চাই না,এটাই আমার মুক্তির উপায়।

মাস ছয়েক আগে একটা ওয়াশিং মেশিন কিনে,এটা ওটা বদলাতে গিয়ে পুরো লন্ড্রী রুমটাই বদলে গেছে,এমনই হলো শেষে রান্নাঘরের চেয়ে লন্ড্রী রুমটাই অনেক ঝকঝকে তকতকে হয়ে গেল।শেষে রান্নাঘরের অনেক কিছুই বদলাতে হলো,বসার,শোবার ঘরটাও কেমন জানি বেমানান মনে হচ্ছিল,সে গুলোও নতুন করে সাজানো গোছানো হলো,বদলে গেল সম্পুর্ন বাড়ীটাই।আমি চাইনা,ও ধরণের কিছু একটা ঘটুক আমার জীবনে,চাইনা এই ছোটখাট একটা কিছু তছনছ করে দিক আমার জীবনটা।
মাদাম কোনিগ বা মারিয়ান যেটাই বলা যায় নিয়ে কিছুটা মাথা ঘামানো আরম্ভ করলাম।
তার বাবা মা ছিল বেশ প্রতিপত্তিশালি,নামকরা ওষুধ কোম্পানীর বড় অংশের মালিক,তার চেহারাটাও আড়ম্বরে সাজানো ভঁরা,শালিনতার একটা ছবি।আমি জগিং এর পোষাক পরে নাইওনে বেড়াতে যাই,ভারসাছির পোষাক পরা মারিয়ানের নাইট ক্লাবে যাওয়া আমাকে অপচ্ছন্দ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

মারিয়ানকে বলা যায় জেনেভা আর আশেপাশের নামকরা মহিলাদের একজন,শুধু প্রচুর টাকার মালিক না,স্বামী ক্ষমতাশালী উঠতি রাজনীতিবিদ,আবার নিজেও জেনেভা ইউনিভার্সিটির দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক।

“অবসরপ্রাপ্ত মানুষের দুর্বলতা,মানসিক ব্যাধি” নিয়ে জেনেভা ইউনিভার্সিটির একটা বই ও আছে তার।একটা নামকরা পত্রিকা লেস রেকন্ট্রেস তার বেশ কটা লেখাও বেরিয়েছে,
যেখানে এডোর্নো আর পিয়াজেটের মত লেখকদের লেখা থাকে।ফ্রেঞ্চ উইকিপেডিয়াতে তাকে নিয়ে লেখা, “ফরাসী ভাষী নাসিং হোম সমস্যার বিশেষজ্ঞ”।

মানুষ হওয়ার যন্ত্রনা তার জানা আছে,এমনই যে তার স্বামীর পরকীয়া প্রেমের স্বীকারোক্তিও তাকে খুব একটা বিচলিত করেনি।তার দক্ষতার প্রশংসা না করে পারা যায় না,একটা খবরের কাগজে নিজের পরিচয় গোপন করে,স্বামীর ব্ল্যাকমেলের কথা প্রকাশ করে জট খোলা খুব একটা সহজ কথা না।

কি ভাবে পরিকল্পনা করে ব্ল্যাকমেল,পরকীয়া প্রেমের কাহিনী বদলে রাজনীতির দুর্নীতির বিরুদ্ধে একাত্মতার ছবি তৈরী করা খুব একটা সহজ না।বেশ দূরদর্শী মহিলা,এখনও বাচ্চাকাচ্চা নেয়নি,সবকিছু পরিকল্পনা করে আগানো।রাজনীতি,জীবননীতি টানাহেচড়ার মাঝরাতে বাচ্চার কান্নায় বিরক্ত,অস্থির হতে চায়নি,পাড়াপড়শীরা যেন অভিযোগ করার সূযোগ না পায়,ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করার বাইরের সব কিছু ফেলে তাদের দিকে মন দেয়াটা অনেক বেশী প্রয়োজনীয়।

এটা বলা যায় মারিয়ানের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় বেশ প্রখর,আমাকে বিপদ মনে করার কোন কারণ খুঁজে পাই নি।ও তো বাইরের কোন দেশ থেকে আসা শ্রমিক না,বিদেশী কূটনীতিবিদের বৌ না,উচ্চপদস্থ কুটনীতিবিদের রক্ষিতাও না,জেনেভায় আসা বাইরের কোন ব্যাবসায়ী না,তার ভয় পাওয়ার কি কারণই বা থাকতে পারে?রাতে একা ফাঁকা দেয়ালে চোখ রেখে সময় কাঁটাতে হয় না,এমনও না যে পয়সা দিয়ে পুরুষের সঙ্গ খুজতে হয়,না মারিয়ানকে কোন বিশেষ একটা ছবিতে সাজানো যায় না।

আজকাল ঘুমটা ভালই হচ্ছে।হয়তো সপ্তাহের শেষে জেকবের সাথে দেখা হবে ভেবে,অন্ততঃ জেকব তো তাই বললো,তার সাহস হবে না কথা বদলানোর।সোমবার যখন তার সাথে কথা হলো,কেন জানি বেশ ভঁয়ে ভঁয়ে কথা বলছিল সে।
আমার স্বামীর ধারণা শনিবারে নাইওনে বেড়ানোর পর আমার মনের মোড়টা বদলে গেছে,এটা সে বুঝতে পারেনি যে এখন আমি জানি,সমস্যাটা কোথায়ঃ

অনুভুতি,আবেগের অভাব মনে,মনের ঝড়ো বাতাসটা খুঁজছে নতুন কিছু,মনের চোখটা আটকে আছে চারপাশের জগতে,যা একসময় মনে হতো,সম্ভাবনায় উছলে পড়া একটা পৃথিবী,
এখন মনে হয় যেন শূন্যতায় ভঁরা।কিন্ত কেন?এটা হয়তো আমাদের গুহার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শেখা,সমাজের জন্যে নিজের সুখের বিসর্জন।

সেটা কি ঠিক,একটা মিথ্যা আত্মবিশ্বাসে জীবনটা কাটানো,একাত্মতা তোমাকে দিতে পারে অনেক কিছুই,কিন্ত তবুও তুমি একা।কেউ নেই তোমার যন্ত্রনায়,কান্নায়,যদিও অন্যের আস্থার কাঁধ,একটু মনোবল জোগায়,তবে ওটুকুই আর কিছু নেই।

আমার মন জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে ঝড়ো বাতাস,ঢেউ এর দোলা,ভেলায় চড়ে উত্তাল আবহাওয়ায় ছুটে যাচ্ছি নতুন এক দেশে।পৌছাবো কি না কে জানে,নাকি হারিয়ে যাব এই স্রোতের দোলায়,ফিরে যাওয়ার উপায় তো আর নেই।পৌছাতে আমাকে হবেই,জীবনে কম ওঠানামা হয়নি,কেন পারবো না?মনের খাতায় একটা লিষ্ট করে রাখছি যাতে সবকিছু ভুলে না যাই এ স্রোতের ওঠানামায়।

ছেলেমেয়েদের সাথে খেলাধুলা করে সময় কাটাবো।

ছেলেমেয়েদের গল্প শোনাবো,উপদেশ থাকবে গল্পে শুধু ছেলেমেয়েদের না আমার উপকারের জন্যেও।

আকাশের দিকে তাকিয়ে সান্তনা খোঁজার কোন মানে হয় না।

ঝর্নার পানি খেলে অনেক উপকার হয়,অনেক খনিজ পদার্থ আছে,যা নতুন চেতনার জোয়ার আনে মনে।

রান্না নিয়ে ব্যাস্ত থাকলে মন্দ হয় না।কেন জানি মনে হয় রান্নাবান্নাও একটা শিল্প যা অন্যান্য যে কোন শিল্পপ্রথাকে ছাড়িয়ে যায়।শুধু পাঁচটা ইন্দ্রিয় না,সেটা ছাপিয়ে যায় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ে,নিঃসন্দেহে মনের ভাল একটা খোরাক।

কথাগুলো লিখতে লিখতে অনেক কিছুই খুঁজে পেলাম!আজকাল কোন কারণে রেগে উঠলে সেটা লিখে রাখি,পরে সেটা পড়লে দেখে মনে হয় রেগে যাওয়ার ওটা কোন কারণ হতে পারে না।

হাসি ভঁরা মুখ,থাক না কান্না ভঁরা মন,ওটাই সবচেয়ে কষ্টকর লিষ্টের পাতায়।
বৌদ্ধ ধর্মে বলে সাজানো হাসি নিজেকে ঠকানো,সেটা একেবারেই অর্থহীন।

একবার না দিনে দুবার করে গোসল,পানিতে মেশানো ব্লিচ শুধু শরীরের ময়লাটা ধুয়ে নেয় না,সাথে সাথে মনটাকেও পবিত্র করে রাখে।

এজন্যেই যে আমার মন নতুন একটা অভিযানে খুঁজে পেল,কারও একজনের মন জয় করা দরকার আমার।আমি খাঁচায় আটকে রাখা একটা বাঘ আক্রমন ছাড়া যার বেরোনোর কোন উপায় নাই আর।

০০০০০০০
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২২ রাত ৩:৫৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×