somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Paulo Coelho এর adultery (পরকীয়া)

০২ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১৮)

ছেলেমেয়েদের সবসময় চোখে চোখে রাখতে হচ্ছিল,নাড়াচাড়া করে কোন কাঁচের জিনিষপত্র ভেঙ্গে না ফেলে,তখন খেসারত দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।অবশ্য ঘোরাফেরা করে তাদের অন্ততঃজানার সূযোগ হচ্ছে,ভিডিও খেলার বাইরেও আরেকটা পৃথিবী আছে।
বাচ্চাদের একজন টিনের ক্লাউন যার চোখ মুখ নাড়াচাড়া করে কথা বলে হাতে নিয়ে বললো, ‘মা কিনে দিবে নাকি’?আমার স্বামী জানে পুতুল খেলাটা বাড়ী যাওয়া পর্যন্ত তারপর শেষ,একপাশে জঞ্জাল হয়ে পড়ে থাকবে।তাই বুঝিয়ে বললো,ও গুলো অনেক পুরোনো জিনিষ,পরে ওদেরকে নতুন কিছু একটা কিনে দিবে।ঠিক সে সময় তাদের চোখ পড়লো মার্বেলের দিকে,একসময় বাড়ীর পেছনে খুব মার্বেল খেলতো ওরা,পুতুল পর্ব শেষ।

আমার চোখে পড়লো,একটা পেইন্টিং,বিছানায় শুয়ে আছে একটা নগ্ন মেয়ে আর তার দিকে পেছন ফিরিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একজন দেবদূত।দোকানদারকে দাম জিজ্ঞাসা করলাম,

দাম বলার আগে লোকটা বললো,ওটা স্থানীয় কোন এক অজানা শিল্পীর আঁকা একটা নকল ছবি।আমার স্বামী দূর থেকে সবকিছু দেখছিল,লোকটাকে ধন্যবাদ দিয়ে সরে যাওয়ার আগে,
দেখলাম সে ছবিটার দাম দিয়ে দিল।
প্রশ্ন করলাম তাকে,এটা কি ঠিক হলো?
‘ছবিটার পেছনে গ্রীসের পৌরানিক একটা গল্প আছে,বাড়ী ফিরে বলবো’।
আমি আবার স্বামীর প্রেমে মাতাল হতে চাই।এমন না যে আমি স্বামীকে ভালবাসি না-আমি ওকে সব সময় ভালবাসতাম,ওকে সব সময় ভালবাসবো-তবে কেন জানি সে ভালবাসায় এখন একটু স্যাতস্যাতে ভাব,জীবনটা যেন ভেজা শ্যাওলায় আঁটকে আছে,বড় একঘেয়ে।
ভালবাসা যুদ্ধ করতে পারে,তবে কামনার জন্যে যুদ্ধ হলে মৃত্যু হয় ভালবাসার।

একটা দূরুহ যন্ত্রনার মধ্যে সময় কাটাচ্ছি,এটা তো আমার জানাই,জেকবের সাথে এই সম্পর্কের কোন ভবিষ্যত নাই,তবু সন্দেহ নাই,নতুনত্বের এ জোয়ার নতুন করছে আমাকেও মূহুর্তে মূহুর্তে।যে মানুষটার সাথে সাজানো জীবন,তাকে পেছনে ফেলে,আমি ভেসে যাচ্ছি অন্যদিকে।

যারা বলে, ‘ভালবাসাই সব কিছুর সমাধান’,তারা জানে ওটা সম্পূর্ন বানোয়াট,শুধুই একটা কথার কথা।ওটা কোন সময়ই সমাধান ছিল না আর হবেও না।আসলে সমস্যাটা এই যে মানুষ বই এ যা পড়ে,সিনেমায় যেটা দেখে সেটা বিশ্বাস করে আগাতে চায় জীবনে।হাত ধরা গোধূলির পথটা,সোনালী সূর্যাস্তের গান,আর মাতাল হয়ে সমুদ্র ছোঁয়া হোটেলে শরীর নিয়ে খেলা ওটা ছবিতে,গল্পেই মানায়।আমার স্বামীর সাথে ভেসে যাওয়ার নীল আকাশের গল্পের কোনটাই বাদ পড়েনি,তবে এখন জানি ভালবাসার ঐ মায়াজালের বয়স বড় জোর একটা না হয় দুটো বছর।

তারপর স্বপ্নের পর্ব ছেড়ে আসে বিয়ে,আরম্ভ হয় ঘর সাজানোর খেলা,কি হবে দেয়ালের রং,
ছেলেমেয়েদের ঘরের পরিকল্পনা,একসময় একা একা সোফায় বসে শ্যাম্পেনের গ্লাসে চুমুক দেয়া-ঠিক আমার এই জীবনের গল্প।সন্তানের জন্মের বছর দুই পরে,ঘরগুলো আর ঘর থাকে না,অনেক কিছুই কেনা হয় তবে সেটা শুধু লোকজনকে দেখানোর জন্যে,একসময় ধুলা মুছে রেখে দেয়া হয় সামনের প্রজন্মের পুরোনো বাজারে বিক্রি করার জন্যে।

বিয়ের বছর তিনের মধ্যেই একজন জানে,আরেকজনের চাওয়া পাওয়ার গল্পের রাজ্যের সীমানা।এমন কি বন্ধুবান্ধবদের খাবারের আসরও একঘেয়ে হয়ে যায়,সেই পুরোনো গল্পের চর্বিতচর্বন,জেনেও অবাক হওয়ার ভান করতে হয়,না হয় বোকার মত হাসতে হয় অযথাই।যৌনসঙ্গম তখন আর আনন্দ থাকে না,একটা কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়,উদ্দামতা,
সাগরের উচ্ছাস ছেড়ে হয় ছোট্ট একটা ঘোলাটে জলের নালা।যৌনপর্বের সাথে দেখা সাক্ষাৎও কমতে থাকে,সপ্তাহে কবার থেকে হয়,একবার,দু সপ্তাহে একবার,দু মাসে…।মেয়েরা যখন আলাপ করে স্বামীর অসহনীয় চাওয়া নিয়ে,একেবারেই বানোয়াট একটা গল্প,সাজানো মিথ্যা কথা।যদিও সবাই জানে সত্যিটা,তবে গল্প বলার দেশে কেইবা পেছনে থাকতে চায়।

কখনও কোন এক সূযোগে আসে পরকীয়া প্রেমের বাতাস।পূর্ঞ্জজন্ম হয়,সর্ম্পক নিয়ে আলাপ আলোচনা-সেটা কি আর থামে,উচ্ছাসের স্রোতের নতুন এক দ্বীপ!-কথা হয় প্রেমিককে নিয়ে আর প্রেমিকের কামনার জোয়ারের গল্পকথা।সূযোগের অভাবের-কামনায় হারানো হস্তমৈথুনের জগতের মেয়েদের ভেসে যেতে অসুবিধা হয়,প্রথম এগিয়ে আসা চুমুটায়।দামী কাপড়চোপড় পরে নতুন করে পুরোনো হতে চায় তারা,ফিরে যেতে চায় ঝাঝানো আলোর রাজ্যে-ফেলে আসা ষোল বছরের মেয়েটার স্বপ্নের দেশে।

একঘেয়েমী জীবনটাকে ঘেরাও করে-স্বামী বেশীর ভাগ সময় কাটায় অফিসে আর বৌরা দরকারের চেয়ে বেশী ছেলেমেয়েদের নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।আমরা দুজনে ঐ সময়টায় আঁটকে আছি-আর আমি যে কোন ভাবে এখান থেকে বেরোতে চাই।এখানে আমি কোথায়?শুধু ভালবাসা নিয়ে জীবন কাটানো যায় না-আমাকে নতুন করে আমার স্বামীর প্রেমে পড়তে হবে,আমার চাই শরীর আনন্দ।ভালবাসা শুধু একটা অনুভূতি না-ওটা একটা শিল্পচর্চা,শুধু আবেগ না ওটাতে দরকার অনেক পরিশ্রম।

ঠিক বুঝলাম না,ঐ ছবিটাতে দেবদূত কেন মুখ ঘুরিয়ে নগ্ন মেয়েটাকে অবজ্ঞা করে চলে যাচ্ছে?
‘ওটা কোন দেবদূত না,ওটা গ্রীক প্রেমের দেবতা এরোস(কিউপিড),আর বিছানায় শুয়ে থাকা মেয়েটা আর কেউ না মানবী সাইকি।সাইকি আর কিউপিডের প্রেমের টানাপোড়েনের গল্প,ভালবাসার এক অন্যন্য রুপ ’।
একটা মদের বোতল খুলে দুটা গ্লাসে মদ ঢেলে নিলাম,স্বামী পেইন্টিংটা ফায়ারপ্লেসের উপরের তাকে রাখলো-যদিও ওটা ঠিক একটা আর্দশ জায়গা না,তবে ফায়ারপ্লেসে আজকাল কেইবা
আগুন জ্বালায়।

সে আরম্ভ করলোঃ
‘অনেক অনেক দিন আগেকার কথা,এক সুন্দরী রাজকুমারী ছিল,যার রুপে মুগ্ধ ছিল সবাই,তার সৌন্দর্যের কথা পৌছালো দেবী ভেনাসের কানে যখন সাইকিকে অনেকেই ভেনাসের সাথে তুলনা করা আরম্ভ করলো।তবে কেউ সাহস করে তাকে বিয়ের কথা বলেনি।রাজা শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে এপোলো দেবতার স্মরনাপন্ন হলো,আর এপোলো দেবতা আদেশ দিল রাজকুমারী সাইকিকে শোকের পোষাকে পাহাড়ের উপরে রেখে আসতে,দিন শেষ হওয়ার আগে এক সাপের দেবতা এসে তাকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে।এপোলোর তার মা দেবী ভেনাসের কথামত সাইকিকে শাস্তি দেয়ার জন্যে প্রস্তত ছিল।রাজা এপোলোর কথামত সাইকিকে পাহাড়ের রেখে আসলো,সাইকি শীতে জড়সড় হয়ে বসে ছিল হবু স্বামীর জন্যে,তবে কেউ ছিল না কোথাও,শেষে একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।এপোলো সাইকির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে শাস্তির দেয়ার কথা ভুলে সাইকিকে নিয়ে গেল তার প্রাসাদে।ঘুম ভেঙ্গে সাইকি দেখলো সে এক প্রাসাদে,প্রাচুর্যতায় ভঁরা সেই প্রাসাদ,কোন কিছুর অভাব ছিল না সাইকির,
প্রাসাদের কর্ত্রী সাইকি,রানী।প্রতি রাতেই তার স্বামী এসে তার সাথে সঙ্গম করে চলে যেত,তার স্বামীর একটাই সর্ত ছিল,কোন কিছু্তেই সাইকির কোন বাধ্য বাধকতা নেই,শুধু সাইকি কোন সময় যেন তার মুখটা দেখার চেষ্টা না করে’।

গল্পটা জানা ছিল আমার,কিন্ত স্বামীকে থামানোর কোন ইচ্ছাও ছিল না,কোন।

‘কুমারী সাইকি সুখে ভালই সময় কাটাচ্ছিল।সাইকির আয়েস,আনন্দের কোন অভাব ছিল না, আর অজান্তেই সে তখন অজানা স্বামীর প্রেমে পাগল।তবে মাঝে মাঝে তার মনে হতো তার স্বামী হয়তো একটা ভয়ংকর সাপ,হয়তো কোনদিন তাকে মেরে ফেলবে।আর তার বোনদের প্ররোচনায়,কৌতুহল দমন না করতে পেরে,একদিন সকালের আলো অন্ধকারে সাইকি বাতি জ্বেলে শুয়ে থাকা স্বামীকে দেখার চেষ্টা করছিল।আর এরোসের সৌন্দর্যে হতবাক হয়ে গেল সাইকি,হাতে ধরা গরম বাতির তেলে চামড়া পুড়ে ঘুম ভেঙ্গে গেল এরোসের(কিউপিডের),
যন্ত্রণায় রেগে সে চলে গেল,শুধু শারীরিক না মানসিক যন্ত্রনাও,প্রেমের মানবী ছোট্ট একটা অনুরোধ রাখতে সক্ষম হয়নি।ভালবাসার মানুষটাকে ফিরে পাওয়ার জন্যে সাইকি এরোসের মা আফ্রোদাইতির দেয়া অসম্ভব কিছু কাজ করতেও পিছু পা হলো না।এখানে বলার অপেক্ষা রাখে না,সাইকির শ্বাশুড়ী-সাইকির রুপে এত বেশী ঈর্ষানিত ছিল,সাইকি বিপদে ঠেলে দিতে একটুও দ্বিধা করেনি।আফ্রোদাইতির দেয়া কাজের মধ্যে একটা কাজ ছিল,একটা বাক্স খোলা-বাক্সটা খোলার সাথে সাথে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়লো,সাইকি’।
গল্পটার শেষটা শোনার জন্যে বেশ বিচলিত,তখন আমি।
‘এমন না যে এরোস সাইকিকে ভুলে গেছে,তার মন চাইছিল সাইকির কাছে ছুটে যেতে,তার দুঃখ হচ্ছিল হয়তো সাইকির সাথে অযথা অত রুঢ় ব্যাবহার না করলেও পারতো।
আফ্রোদাইতির দেয়া চির ঘুমের দেশের কুয়াশায় আচ্ছন্ন সাইকিকে,প্রাসাদে ঢুকে তার তীরের খোঁচায় জাগালো এরোস,“তোমার অযথার কৌতুহল তোমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছিল।অযথার বেশী কৌতুহল আর কিছু না ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়”,এরোস বললো।
ভালবাসার মনের বাঁধন নষ্ট হয় না অনেক ঝড় ঝাঁপটায়,দেবী ভেনাসের হাত থেকে সাইকিকে রক্ষা করার জন্যে,এরোস সাইকিকে নিয়ে ছুটে গেল দেবতাদের রাজা জুসের কাছে,অনুরোধ করলো দেবতাদের রাজা যেন আর্শীবাদ করে তাদের ভালবাসা চিরন্তন হয়ে থাকে।জুস মুগ্ধ হয়ে অনেক যুক্তি যুদ্ধ করে আফ্রোদাইতির(ভেনাস)অনুমোদন নিয়ে আর্শিবাদ করলো তাদের,সে দিন থেকে এরোস আর সাইকি প্রেমের বাঁধনে বাঁধা চিরদিনের জন্যে’।

গ্লাসে আরও একটু মদ ঢাললাম,একসময় স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চয়তা খুঁজছিলাম।
‘যারা সব কিছু সহজে নিতে পারে না,মানুষের সম্পর্কের মধ্যের যাদুটা,রহস্যটা খুঁজে বের করতে চায় তারা জীবনের অনেক দুঃখ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়’।
মনে হচ্ছিল পাহাড়ে একলা বসে থাকা শীতে কাতর সাইকি,আমি নিজেই।মনে হচ্ছিল অসহনীয় এ রাতটা যদি কাঁটাতে পারি কোনভাবে,সকালে খুঁজে পাব,নিজেকে কোথাও কোন এক সুন্দর প্রাসাদের রানী হিসাবে।একটু সময় দরকার আমার,আমার খুঁজে নিতে হবে নতুন এক আকাশ।

হোটেলের বিছানায় সিগারেট খেতে খেতে জেকব বললো,ঐতিহাসিক দিনটা আসছে যখন জেকব আর মারিয়ানকে স্থানীয় এক টিভি ষ্টেশন থেকে সর্ম্বধনা জানাবে।আমন্ত্রনে না বলতে পারিনি,কেননা আগেই সম্মতি জানিয়ে চিঠির উত্তর দেয়া ছিল।জেকবও না বলতে পারবে না,কেননা তাতে তার রাজনীতির জীবনে বিরাট ক্ষতি হবে।

স্বামীকে সাথে নিয়ে সময়মত টিভি ষ্টেশনে পৌছালাম,অনুষ্ঠানটা হচ্ছে পাঁচতালায়।লাইনে দাঁড়ানোর সময় ফোনটা বেজে উঠলো,সম্পাদকের টেলিফোন।অপেক্ষা করে কথা বলছিলাম আর মাঝে মাঝে হেঁটে যাওয়া পরিচিত লোকদের হাসি মুখে যোগাযোগ করছিলাম।
সম্পাদক বললো,কিউবান ওঝাকে নিয়ে আমার লেখাটার প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ।আর আমাকে ঐ বিষয় আরেকটা লেখা যত শীঘ্রি সম্ভব লেখতে হবে।আমি যখন তাকে জানালাম,
কিউবান লোকটা আর দেখা করতে রাজী হবে না।নিরুৎসাহ না হয়ে সম্পাদক বললো ঐ ধরনের কেউ আরেকজনের সাথে যোগাযোগ করে লেখাটা তৈরী করলেই চলবে।যদিও আমি বললাম, ‘আমার চেনা কেউ নেই’, সম্পাদক আমাকে বুঝিয়ে বললো লেখাটা দরকার,তাই যতদূর সম্ভব কোন একটা কিছু করতে।ফোন রেখে দেব ভেবে কথা দিলাম আমার চেষ্টার কোন ত্রুটি হবে না।

জেকব আর মাদাম কোনিগ তখন পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে সর্ম্বধনা জানালো।সম্পাদক কথা শেষ করে ফোনটা রেখে দিচ্ছিল,আমি তবুও অযথাই কথা টেনে নিয়ে যাচ্ছিলাম,এমন যেন না হয় যেন একই লিফট দিয়ে আমাদের একসাথে উপরে উঠতে না হয়।

‘আচ্ছা এটা কেমন হবে,একজন প্রটেষ্টান্ট বিশপ আর একজন গরুর রাখাল’,আমি বললাম, ‘দুজনের কাছ থেকে যদি জানা যায়,মানসিক টানাপোড়েন থেকে তারা নিজেদের কি ভাবে টেনে বের করে আর দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমিটাই বা কি ভাবে তারা মানিয়ে নেয়,
ওটাও বেশ চাঞ্চল্যকর একটা বিষয়,কি মনে হয়’?সম্পাদক বললো,খুব একটা খারাপ প্রস্তাব না,তবে যারা এ ধরণের সমস্যা নিয়ে নাড়াচাড়া করে তাদের মন্তব্য,সমালোচনা বরং পাঠকদের আরও আর্কষিত করবে।এর মধ্যে লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে উপরে উঠে গেল,আমার আর ভঁয় পাওয়া বা অযথা অস্থির হওয়ার কোন কারণ নাই।

সম্পাদককে বললাম ফোনটা রাখতে হবে,সর্ম্বধনা সভায় শেষ সাংবাদিক হিসাবে দেখা দিলে পত্রিকার জন্যেই সেটা খারাপ,ঢুকে দেখি মিনিট দুয়েক দেরী হয়ে গেছে।সুইজারল্যান্ডে সব কিছুই ঘড়ির কাঁটায় ঘোরে।

গত কমাস ধরে আমার ব্যাবহারটা বেশ অদ্ভুতই বলতে হবে,তবে বেশীর ভাগ সময় আমি সেই পুরোনো,আমি।লোকজনের সাথে আনুষ্ঠানিকতা করে হৈচৈ করা এখনও আমার অপচ্ছন্দ,আমি আজও বুঝে উঠতে পারি না ও ধরণের হৈচৈ এ আনন্দ পাওয়ারই বা কি আছে।

হ্যা,এটা ঠিক অনেকেই ও ধরণের হৈচৈ এ নিঃসন্দেহে আনন্দে মাতাল হয়,তবে সে তো হতেই পারে।আর তা ছাড়া সুন্দর পোষাক পরে মাতাল হয়ে অন্যদের সাথে সহজেই ফষ্টিনষ্টি করার একটা সুযোগ কি আর ছেড়ে দেয়া যায়?

আর আজকের অনুষ্ঠানে দেখতে সুন্দর,বুদ্ধিমান,বির্তকিত রাজীনীতিবিদ ডারিয়ুস রোচেবিন এর স্মৃতিচারণ,খ্যাতনামা সাংবাদিক,সামাজিক ব্যাক্তিত্ব কেউই সূযোগ ছাড়বে না এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্যে,নানান কাগজ,পত্রিকা টিভি ষ্টেশন চেহারা দেখানোর সূযোগ,সাথে খাওয়া দাওয়া প্রাচুর্যতাও বেশ জমজমাট।তাছাড়া এ ধরণের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন পাওয়ায় একটা গর্ব তো আছেই।সব সময় না হলেও প্রায়ই আমাদের পত্রিকার লোকজন থাকে এ ধরণের অনুষ্ঠানে,অনুষ্ঠানের পরের দিন নামকরা লোকজনদের সাঙ্গপাঙ্গরা আবার টেলিফোন করে জানান দিতে ভোলেনা,অনুষ্ঠানের ছবিগুলো ঠিকমত যাতে ছাপা হয়,সেটা বলে দেয়াটাও বিরাট একটা দায়িত্ব।অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সাথে সাথে এ ধরণের প্রাধান্য পাওয়াটাও কম না।

লিফটের দরজা খোলার পর দেখলাম,দু তিনজন ফটোগ্রাফ্রার লবিতে দাঁড়ানো।অনুষ্ঠানের হলঘরটা থেকে সারা শহরের চেহারাটা চোখে ধরা পড়ে,কিছুক্ষন আগের ঘুমোট ভাবে সরে সূর্যের আলোটা বেশ ভালই চোখে আসছে।স্বামীকে বলে দিলাম খুব একটা বেশী সময় ওখানে কাটানোর ইচ্ছা নাই।
‘যখন তোমার ভাল লাগে,আমার তো তোমাকে শুধু সঙ্গ দিতে আসা’।কিছুক্ষন পরেই লোকজনের সাথে কথাবার্তায় ব্যাস্ত হয়ে গেলাম,স্বামীকে ডেকে তাদের সাথে পরিচয় করানো পর্ব যোগ দিয়ে,আলাপ পর্বটা অযথাই লম্বা হয়ে যাচ্ছিল।তা ছাড়া দেখলাম একসময় ঐ
আলাপ আলোচনায় আমি বাইরের একজন হয়ে গেছি।মাঝে মাঝে যদিও আমার স্বামী প্রশ্ন করছিল, ‘মনে আছে না তোমার…ঐ যে আমরা সে বার গেলাম্…’।
একেবারেই অযথার পাগলামি!
একপাশে গিয়ে কেন যে মানুষ জিজ্ঞাসা করে তাদেরকে মনে আছে কি না?ও ভাবে কাউকে অপ্রস্তত করার কোন মানে আছে কি?সকলের মনে কি একটা ধারণা যে তারা এতই বিশেষ মানুষ একজন,তাদের মনের খাতায় ধরে না রাখাটা বিরাট একটা অপরাধ,
প্রতিদিনই তো নতুন নতুন মানুষের সাথে আমার দেখা হচ্ছে।
‘আরে একটু শান্ত হও,লোকজন এমনই বলছে’।
আমার স্বামী জানেনা সে কি বলছে,মানুষজনের কাছে ওগুলো শুধু বলার বলা,সবাই খুঁজছে একটু প্রাধান্য,এ বলে, ‘আমাকে দেখ’, আর ও বলে, ‘আমাকে দেখ’, আর এর ফাঁকে যদি একটু কাজ গোছানো যায়।ঐ সব নামীদামী মানুষ যারা লাল গালিচা দিয়ে হেটে যাচ্ছেতাদের ভাগ্যটা নির্ভর কটা অল্প পয়সার সাংবাদিকদের হাতে।পত্রিকার কম্পোজারের কাছে ছবিগুলো পাঠানো হয় ই-মেইলে আর এটা তার দায়িত্বের মধ্যে এ সব অনুষ্ঠান,আনন্দমেলার কোন ছবিটা কোথায় যাবে।নামী দামী লোকজনদের ছবি দেয়ার পর হয়তো অনুষ্ঠানের দু একটা ছবি এক কোনে পড়ে থাকবে।আর যারা একটু আর্কষন জোগাড় করার চেষ্টা করছে,কপাল ভাল থাকলে তারা খুঁজে পাবে নিজেদের মুখটা ঐ ছবিতে।
দারিয়ুস মঞ্চে উঠে গত দশ বছরের দেখা বিখ্যাত লোকজনদের গল্প আরম্ভ করলো,আমি স্বামীকে সাথে নিয়ে এক পাশের একটা জানালার দিকে চলে গেলাম।আমার মনের দূরবীন জেকব আর মাদাম কোনিগের দিকে ঠিকই পৌছালো।
‘কি ব্যাপার,তোমার কি কোন অসুবিধা হচ্ছে’?
আমি জানি।তুমি কি আজকে ডঃজেকাইল না হাইড সাহেব?ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনষ্টাইন না তার দানবটা?
০০০০০০০

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×