somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Paulo Coelho এর adultery (পরকীয়া)

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(২২)

আমার এই মানসিক অধঃপতনের শেষ হওয়া দরকার,শরীরের আনন্দ স্রোতে যদিও আমি নতুন,উচ্ছাসে ভঁরা,তবু শেষ হওয়া দরকার এই যাত্রার।জেকব,আমি সর্ম্পকটা শেষ করতে চাই,তোমার চোখে চোখ রেখে বলতে চাই,বিদায় বন্ধু আমার।কদিনের মানসিক যন্ত্রনায় তছনছ হয়ে গেছি আমি-যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।আমার মন ছিল কান্নায় ভঁরা,চোখে জল না ছিল যদিও,অসহনীয় এই যন্ত্রনা আমাকে ঠেলে নিয়ে গেছে,তোমার কাজের জায়গায়,এই ভাবেই হয়তো কোন একসময় আমাকে ঠেলে নিয়ে যাবে পাগলা গারদে।হেরে গেছি আমি জীবন খেলায়,যদিও কাজে,সংসারে,মা হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে একটুও কার্পন্য করিনি,তবু কোথায় যেন কিছু একটা ফাঁক ছিল,নিজেকে মনে হয় রক্তাত্ত পরাজিত এক সৈনিক।হতাশা আমার দরজায় নাড়া দিচ্ছিল প্রতি মুহুর্তে,ভাবছিলাম-হারানো স্কুল জীবন,কৈশোরের ভালবাসার মাধুর্য,কি হতে পারতো,কি হয়নি?

বুঝতে পারলাম,আমি হতাশার শেষ সীমানায়,আর কোথাও যাওয়ার নেই,সান্তনার একটা হাত আমাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছিলঃআমার স্বামীর হাত।সব কিছু জানা ছিল না তার,তবুও সান্তনার হাতটা এগিয়ে দিতে সে দ্বিধা করেনি।তাকে সব কিছু বলার ইচ্ছা ছিল আমার,কিন্ত প্রয়োজন হয়নি।জানি,ভালবাসার হাত এগিয়ে আসে কি স্রোতে,কি ভাঁটায়।

নিজেকে দোষী করে গেলাম সারা জীবন,হতাশায় ভেসে যাচ্ছি অজানায়,বোঝা বয়ে নেয়া খচ্চরের জীবন এটা আমার।
বার বার মনে মনে বলছিলাম, ‘আমি ঐ মানুষটার যোগ্য নই,ওকে ঠকাচ্ছি।মানুষটা জানে না কি ধরণের শয়তান আমি’।
এমনও হতে পারে হয়তো সবকিছু জানে আমার স্বামী,আর হয়তো সেটাই আমাকে সূযোগ দিল নিজেতে ফিরে যাওয়ার,আত্মসম্মান,আত্মমর্যাদা ফিরে পাওয়ার।বুঝতে পারলাম আমাদের ছাড়াছাড়ি হলেও স্বামীর নতুন একটা সর্ম্পক তৈরী করতে একটুও কষ্ট হবে না,নিশ্চয় আমার মধ্যে কোন বিশেষত্ব আছে,তাই আজও টিকে আছে আমাদের সর্ম্পক।

স্বামীর পাশে শুয়ে থাকতে,নিজেকে নোংরা মনে হয়নি,মনে হয়নি সাময়িক পদস্খলনে অপবিত্র হয়ে গেছি।কাউকে ঠকায়নি আমি,ঠকে গেছি নিজেই,এই চাওয়া,এই ভালবাসার অনুভুতি ছিল আমার শরীরে মনে,এই ভালবাসা আমার প্রাপ্য,কেন নিজেকে অপবিত্র মনে হবে,কেন মনে হবে আমি কাউকে ঠকাচ্ছি?কাপড়চোপড় নিয়ে জেকবের অফিসের বাথরুমে গেলাম,জেকব হয়তো বুঝতে পারছিল শরীর খেলায় তার সাথে এটাই শেষ দেখা।

আমাকে খুঁজে নিতে হবে,সামনের সুস্থতার ছুটে যাওয়া পথ,নষ্টামির এই জলোছ্বাসে ভেসে যেতে পারি না।জানি তুমিও একই কথা ভাবছো জেকব,হয়তো মারিয়ানও চায় এই ঝড়ের শেষ,ফিরে যেতে চায় সংসার খেলার ভালবাসার রাজ্যে।‘হয়তো তোমার কথাই ঠিক,তবে মারিয়ান কিছু বলবে না।আমার কোন সন্দেহ নাই,মারিয়ান জানতো আমার কার্যকলাপ,তবু প্রতিবাদ করেনি কখনও,কোন হৈচৈ করেনি,অপেক্ষা করে ছিল সময়ের সমাধানে।মারিয়ান স্নেহ,ভালবাসার, উচ্ছাসে ভেসে যায়নি কখনও,যেন একটা যন্ত্র,শুধু কাজ আর কাজ।শুধু তার চলায় চলতে হবে,তার বলায় বলতে হবে,আমার নিজের কোন অস্তিত্ব নায় তার জগতে’।

স্কার্ট,জুতো পরে,ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে জেকবের টেবিলে রাখলাম।
‘ওটা,কি’?
কোকেন।
‘জানতাম না,তুমি…’।
মনে হয় না জেকবের সব কিছু জানার দরকার আছে,ওর জানার দরকার নাই ভালবাসার মানুষটার জন্যে কতদূর ছুটে যেতে পারি,আমি।সেই আবেগের দাবানল আজও আছে,তবে তাপটা কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে,সেটাও শেষ হবে কোন এক সময়।একটা ভাঙ্গন সেটা যে ধরনের সর্ম্পক হোক,সব সময়,এ ভাবে আমাদের দেখা হবে না,আর।

দেখা হলে,হবে হয়তো সামাজিক অনুষ্ঠানে,ইলেকশনের সাংবাদিক সম্মেলনে,বাস্তবতার রাজ্যে, স্বপ্নের স্বাদ ছাড়া সহজ স্বাভাবিক সুরে।
যৌনতার খেলার আগুনে এই আনন্দ যাত্রা,সেই আগুনের ছটায় হলো শেষ খেলা।
‘কি করবো আমি,ওটা দিয়ে’?
ফেলে দাও,যা ইচ্ছা কর,আর যাই হোক শেষ হবে আমার নেশা।
যদিও জেকবকে বলিনি আমার নেশাটা কিসে,বলিনি আমার নেশার নাম জেকব কোনিগ।
জেকবের চোখে মুখে ছিল অদ্ভুত একটা হাসি,গালে তিনটা চুমু দিয়ে বের হয়ে গেলাম।যাবার সময় জেকবের সেক্রেটারীকে হাত নেড়ে বিদায় নিতেও ভুলিনি।
রাস্তায় স্বামীকে বললাম বছরের প্রথমটায় বাড়ীতেই ছেলেমেয়েদের সাথে কাটানোই ভাল,
যদি কোথাও যেতে হয় ছেলেমেয়েদের নিয়ে সেটা পরে হবে না হয়।
‘রাতের খাবারের আগে একটু হেঁটে আসি’।মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেও,আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম।হোটেলের সামনের পার্ক ছেড়ে দেখা যাচ্ছিল,দূরে বরফে ঢাকা আল্পসের চূড়া জাংফ্রাউ,সূর্যের আলোয় ছড়ানো সোনার মত ঝলমল করছিল।মানুষের মস্তিষ্ক অদ্ভুত ভাবে কাজ করে,যখন পুরোনোতে ছুটে যাই আমরা স্মৃতির পাতা থেকে অনেক কিছুই ঠেলে দেয় আমাদেরকে যন্ত্রণার রাজ্যে।কোন এক কাকতালীয় সুরে হঠাৎ পুরোনো হই আমরা,
হঠাৎ বলা কথা,এমন কি আবেগের বিশেষ কোন চেহারা,ঝড়ো সুরে নিয়ে যায় আমাদেরকে পুরোনোয়।

প্রথম যখন ইন্টারলেকেনে আসি,সস্তাদরের একটা হোটেলে ছিলাম সেবার,হেঁটে হেঁটে এক লেক থেকে আরেক লেকে নতুন নতুন রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম।আমার স্বামীর পাগলামি ইচ্ছা হলো পাহাড়ের ম্যারাথন দৌড়ানোর জন্যে।যদিও সে জেতার ধারে কাছে যায়নি,তবে তার জন্যে আমার গর্বের শেষ ছিলনা,তার নিজেকে খোঁজার উৎসাহ দেখে।

এমন না যে আমার স্বামীই ছিল,একমাত্র পাগল,পৃথিবীর নানান দেশ থেকে লোকজনকে দেখা যায় হোটেলে ঐ ম্যারাথন প্রতিযোগীতার জন্যে।শীতের ইন্টারলেকেন সমন্ধে আমার মোটামুটি জানা ছিল,তবে জানালার বাইরের পৃথিবীটা ফাঁকা,কিছুই নেই সেখানে।এবার আমরা বেশ দামী একটা হোটেলে ছিলাম,বিরাট সুইট।হোটেলের তরফ থেকে দেয়া ফলের বাস্কেট,শ্যাম্পেনের বোতল রাখা টেবিলে,বোতল অবশ্য ইতিমধ্যে খালি হয়ে গেছে তখন।

কয়েকবার স্বামীর ডাক শোনার পর,ভাবনার সমুদ্র ছেড়ে ফিরলাম বাস্তবতার তীরে,হাত ধরে দুজনে হেঁটে যাচ্ছিলাম রাস্তায়।হঠাৎ ও আমাকে দেখে যদি বলে,মানসিক হতাশায় অস্থির মনে হচ্ছে আমাকে,মিথ্যা বলতেই হবে,স্বামীর মানসিক সুখ কেঁড়ে নেয়ার কোন অধিকার নাই আমার।মনের লুকোনো ক্ষতটা এখনও জ্বালাচ্ছে আমাকে,উদ্ধার পাইনি-নিজের তৈরী করা ঐ যন্ত্রণার রাজ্য থেকে।ভিখারী খুব একটা দেখা যায় না জেনেভায়,পার্কে বেঞ্চিতে বসা বিদেশী হিপ্পিদের দেখে সমালোচনা করছিল আমার স্বামী,ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছিল ওরা চারপাশে,।চার্চের সামনে দিয়ে যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম,হঠাৎ ঘন্টা বেজে উঠলো,স্বামী জড়িয়ে ধরে চুমু খেল,
আমিও যোগ দিলাম চুমুর আনন্দে,হয়তো ও ভাবেই লুকাতে পারবো আমার মনের হতাশার ঝড়টা।

আমাদের দুজনের হাতেই গ্লাভস ছিল না,হাতধরা হাতে ঠান্ডায় একটু উষ্ণতা খুঁজছিলাম একে অন্যের কাছে।মদে একটু চুমু দিয়ে আমরা গেলাম ট্রেন ষ্টেশনের দিকে,স্বামী এই এলাকার ছবির কার্ডের সাথে আরও কয়েকটা souvenir (স্মরনীয় জিনিষ )কিনলো,সিগারেট লাইটার,এটা ওটা।একটু অবাক হলাম,এখন আমার স্বামী আর সিগারেট খায় না,আগে সিগারেটও খেত আর ঐ পাহাড়ী এলাকায় ম্যারাথনও দৌড়াতো।

তবে সিগারেট না খেলেও আজকাল অভিযোগ করে খুব সহজেই আজকাল হাপিয়ে পড়ার,
লুকানোর চেষ্টা করলেও,তবে আমার চোখ এড়ায় না।নিয়ন লেকের ধারে দৌড়ানোর সময়,
বেশ বোঝা যাচ্ছিল তখন।ফোনটা vibration এ দেয়া ছিল,কেউ ফোন করছিল,দেখি আমার বন্ধু যে মানসিক হতাশায় ভুগছিল,তার ফোন।

‘যদি কল করতে চাও,অসুবিধা নাই’।বললাম দরকার নাই,আমার সঙ্গটা কি অতই অসহনীয় মনে হচ্ছে,তার?সে কি চায় ঘন্টার পর ঘন্টা অযথার কথা নিয়ে ব্যাস্ত থাকি,আমি?
আমার কথা শুনে বেশ একটু বিরক্তি হলো আমার স্বামী,হতে পারে শ্যাম্পেনের আমেজের সাথে দু গ্লাস আকুয়াভিটের(আলু থেকে তৈরী করা মদ) প্রভাব।স্বামীর বিরক্তির ভাষাটা ভালই লাগলো,একটা মানুষের পাশে হাঁটছি,যন্ত্র না,আবেগ-হাসি কান্নায় ভঁরা মানুষটা।
ইন্টারলেকেন,ম্যারাথন ছাড়া কেমন জানি অন্যরকম,একটা ভুতুড়ে শহর,অনেক কিছুই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
‘স্কি করার মত জায়গা নাই এখানে’।
হয়তো হবেও না কোনদিন,একটা উপত্যকা,দু পাশে উঁচু পাহাড়,দুটো লেক দু পাশে।আমার স্বামী দু গ্লাস জিনের অর্ডার দিল,অন্য একটা বারে যাওয়ার জন্যে বললাম,কিন্ত জিনের আমেজে শীত কাঁটাতে ব্যাস্ত ছিল,সে।এ ভাবে অনেকদিন সময় কাটায়নি আমরা।

‘খুব বেশী হলে বছর দশেক হবে,তার বেশী না,অথচ তখন যৌবনের উচ্ছাসে ভঁরা ছিল আমাদের শরীর।আকাঙ্খা ছিল আকাশ ছোঁয়া,কোন দেয়াল ছিল না সেই উচ্ছাস আঁটকে রাখার মত।কত বদলে গেছি এখন,কোথায় আমার সেই পুরোনো’?

তোমার বয়সটা তেমন কিছু না,চল্লিশ ছুঁই ছুঁই করছে,তাতেই এত বুড়িয়ে গেলে,?কোন উত্তর দিল না সে,এক ঢোকে মদটা খেয়ে,বাইরের শূন্যতাকে অবাক হয়ে দেখছিল।আমার পুরোনো আর্দশ স্বামী কোথায় যেন হারিয়ে গেছে,একটুও বিব্রত,বিচলিত হয়নি,আমি বরং আনন্দে ছিল মনটা ভঁরা।

বার থেকে হোটেলে ফিরে যাওয়ার সময় দেখলাম চমৎকার নতুন একটা রেস্তোরা,
তবে আমাদের রাতের খাবারের জন্যে রির্জাভেশন করা ছিল আরেক জায়গায়,ডিনার আরম্ভ হয় সন্ধ্যা সাতটায়-এখন তো বিকেল।
‘চল আরেকটা জিন হোক,কি বলো’?
আমার পাশের এই নতুন মানুষটা কে?ইন্টারলেকেনে পুরোনো স্মৃতিকে নাড়াচাড়া দিয়ে নতুন আরেকজন কেউ যেন?কিছু বলিনি আমি,তবে অবাক হচ্ছিলাম সাথে অযথার একটু ভঁয়। জিজ্ঞাসা করলাম,ইটালিয়ান রেস্তোরার রির্জাভেশন ক্যান্সেল করে ঐ নতুন রেস্তোরায় রাতের খাবারটা সারলে কেমন হয়?
‘কেন,কি যায়,আসে’?
কিছু আসে,যায় না?আমার স্বামীও কি আমার মতই কি মানসিক হতাশায় ভুগছে?
ইটালিয়ান রেস্তোরায় যাওয়ার প্রস্তাবটা ছিল আমার,আমাদের প্রথম ভালবাসার আলাপের জায়গা।
‘কেন জানি,মনে হচ্ছে,এখানে আসাটা ভুল হয়ে গেছে,কালই বরং ফিরে যাই আমরা।আমি পুরোনো দিনগুলো খুঁজছিলামঃখুঁজছিলাম ভালবাসার পুরোনো উচ্ছাস,কিন্ত সে কি আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব?পুরোনো খোঁজা যায়,ঐ টুকুই,তার চেয়ে বেশী আর কিছু না,যা খুঁজে পাই আমরা শুধু হতাশা আর যন্ত্রনা।সময়ে সব কিছু বদলে যায়,আর ওটাই তো স্বাভাবিক।বদলে গেছে আমাদের জীবনটাও,যৌবনের স্বপ্ন,আকাঙ্খার আকাশে ছুটে যাওয়া সেই দুজনকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না,সময় পারিপার্শিকতার চাপে আমরা এখন নতুন কেউ।খাওয়া দাওয়া,বাড়ী,গাড়ী-সংসার,সন্তান,তাদের শিক্ষা,স্বাস্থ্য ছাড়া আমাদের জীবনে আর কি আছে?
আনন্দ যা আছে সেটা সাজানো সপ্তাহ শেষে,আর যখন সেটাও হয় না,একটা অসুস্থতা খুঁজে নেই আমরা,বেঁচে থাকার জন্যে’।
আমি তো সেটা চাই না,নাই বা পুরোনো হলাম আমরা।
‘আমি ও তাই চাই।কিন্ত আমাদের ছেলেমেয়ে?ওরা হয়তো অন্য কিছু চায়।আমরা তো ওদেরকে কম্পিউটারের রাজ্যে আঁটকে রাখতে পারি না।আমাদের আনন্দের জন্যে আমরা ঠেলে
দিচ্ছি,ওদেরকে ওদের না চাওয়ার রাজ্যে,অনেকটা আমাদের বাবা মা এর মতই।সাধারণ জীবন হলে ক্ষতি কি,সামনের চারপাশটাকে মেনে বেঁচে থাকা,একজনের দরকার হলে আরেকজন ছুটে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক’।

বুঝতে পারছি,স্মৃতির দেশের ঝড়ে আমরা ছুটে যাই পুরোনোকে খুঁজতে,কিন্ত তা কি আর হয়?আরেক গ্লাস জিন,কিছুক্ষন চুপচাপ ছিলাম আমরা,তারপর আমার স্বামী বললো, ‘ঠিক,কিন্ত পুরোনোর জায়গাটা নতুনে কোথায়?ঐ পুরোনো আমাকে দমবন্ধ করে মারছে।এখন বুঝতে পারছি,পুরোনো সে তো হারানো,আমার এই নতুনে তার জায়গা কোথায়?এখানে আসার আগে,শ্যাম্পেনে চুমুক দেয়ার আগে সবকিছ ঠিকই ছিল।এখন জানি ইন্টারলেকে প্রথমবার যে স্বপ্ন নিয়ে ফিরে গেছি আমরা,সেটা আজও শুধু স্বপ্নই’।
কি ছিল,তোমার স্বপ্ন?
‘বলা যায় কিছু সময়ের নির্বুদ্ধিতা।তবুও ওটা ছিল আমার স্বপ্ন।আমি ভাবতাম সব কিছু ছেড়ে আমরা নৌকায় সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াবো।আমার বাবা হয়তো ক্ষেপে যেত,রাগারাগি করতো,তবুও স্বপ্নের দেশে পৌঁছানোর আনন্দে হারিয়ে যেতাম,আমি।মাঝে মাঝে এখানে ওখানে থামতাম,টাকাপয়সার দরকারটা তো থাকবেই,একটু কাজ করে আবার আমরা ছুটতাম নতুন কোথাও।খুঁজে নিতাম অজানা মুখ,অবাক হওয়া নতুন শহর,তবে স্বপ্নটা তোমার সাথের পৃথিবীর’।
আরেক গ্লাস জিন,আমি অবশ্য থেমে গেছি,তখন বমি বমি ভাব আমার,কোন কিছু খাওয়া হয়নি।বলার ইচ্ছা ছিল,আমার চেয়ে সুখী কি হতো আর,কিন্ত কিছুই বলিনি,বলা হয়নি।
‘আমার স্বপ্ন দেখার ফাঁকে,আমাদের প্রথম সন্তান হলো’।
মানেটা কি?হয়তো লক্ষ লক্ষ লোক আছে যারা হারায়নি স্বপ্ন কোন একটা অজুহাত দিয়ে।কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে আমার স্বামী বললো, ‘লক্ষ লক্ষ বললে ভুল হবে,হয়তো হাজার হাজার’।
আমার স্বামীর তখন চেহারা বেশ বদলে গেছে,চোখে মুখে কেমন জানি একটা দুঃখী দুঃখী
ভাব।

‘অনেক সময় আমাদের সরে যাওয়া উচিত ঐ কি পেলাম,কি হারালাম হিসাব থেকে?ভুলে যাওয়া উচিত কি ভুল হলো,কি ভুল হয়নি চলার পথ থেকে?আমি সবসময় নিজেকে সান্তনা দিয়ে গেছি,পাওয়ার জন্যে ঐ উৎসর্গটা ওটা আর কি’।

ওর চোখের নেশার ভাব দেখে,বাইরে কিছুক্ষন হাঁটতে যাওয়াত কথা বললাম,উত্তর না দিয়ে আমার স্বামী তখন টেবিল চাপড়াচ্ছিল।ওয়েটার বেশ ভঁয় পেয়ে গেছে,আমি জিনের অর্ডার দিলেও,আর দিতে চাইলো না,সে,রাতের খাবারের পর্ব শুরু হবে,অজুহাতে বিলটা দিয়ে গেল টেবিলে।
ভাবছিলাম আমার স্বামী হয়তো ক্ষেপে যাবে,তবে কিছু না বলে সে টাকা টেবিলে রেখে আমার হাতধরে বের হয়ে গেল।
‘জান,এই সব কি হতো,কি হওয়া উচিত ছিল,কি হয়নি,এগুলো নিয়ে বেশী ভাবতে গেলে একটা চোরাবালিতে ডুবে যাব আমি…’।
ঐ অনুভুতিটা তো আমার একেবারেই যে অজানা,তা না,গত সপ্তাহে রেষ্টুরেন্টে খাওয়ার সময় আমরা তো সেদিনই আলাপ করলাম।তবে আমার কোন কথাই যেন তার কানে যাচ্ছিল না,তখন।
‘…দূর থেকে কেউ যেন অনেক কিছু বলে যাচ্ছে আমাদেরকেঃতবে তার কোন কিছুই আমার বোধগম্য না।এই পৃথিবীর বয়স কয়েক লক্ষ বছর,পৃথিবী থাকবে হয়তো আরও লক্ষ লক্ষ বছর,কে জানে?পৃথিবীর বিশাল রহস্যের অনেক কিছুই আমাদের অজানা থেকে যায়,ছোট বেলার কত প্রশ্ন শুধু প্রশ্ন হয়েই থেকে গেল।বিধাতা যার হাতে সব ক্ষমতা,কেন অযথা এত দুঃখ যন্ত্রনা দেয় মানুষকে?আরও দূঃখের কথা,সময় তো থেমে থাকছে না,ছুটে যাচ্ছে আমাদের নিয়ে।
হতাশায়,শূন্যতায় ছেয়ে আছে আমার মন।যখন গাড়ীতে বসে থাকি,বাচ্চাদের বিছানায়
শোয়াতে নিয়ে যাই,প্রশ্ন করি নিজের কাছে,কি আছে ওদের ভবিষ্যতে?এ দেশটায় এখন না হয় আছে,নিরাপত্তা,শান্তি-তবে ভবিষ্যতে কি হবে,সেটা কে জানে’?
জানি তুমি কি বলছো,তবে ওটা তো শুধু আমাদের একার চিন্তা না।

০০০০০০০০০০

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২২ ভোর ৪:৪৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×