somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ) ধারাবাহিক

১৪ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ)
ধারাবাহিক
ফেনিত অর্হান পামুক
জন্মঃ জুন,১৯৫২
তুরস্কের খ্যাতনামা এক উপন্যাস লেখক
২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান
খ্যাতনামা লেখার মধ্যে My name is red,Silent house,white castle আরও অন্যান্য অনেক লেখা

(১৭)


হয়তো ভালবাসা,হয়তো এই শরীরের ডাক,ও নিয়ে হাসান আর সিয়াহ দুজনেই যন্ত্রনার স্রোতে ভেসে যাচ্ছে।ভালবাসা,চাওয়া যাই বলা যায়,হতাশায় সিয়াহ বাড়ী ছেড়ে বারোটা বছর কোথায় কোথায় সব ঘোরাঘুরি করলো।আর হাসান তো আমাকে প্রতিদিন চিঠি লিখতো কোনটায় আঁকা ছিল পাখী,কোনটায় হরিন।প্রথম প্রথম বেশ ভঁয় হতো,পরে চিঠিগুলো পড়তে খুব একটা খারাপ লাগতো না।

আমার প্রতিটা চলন,বলা,করা নিয়ে হাসানের চিন্তার শেষ নাই।খুব একটা অবাক হয়নি শুনে,সে জানে স্বপ্নে আমার স্বামীর লাশ দেখার কথাটা।কোন সন্দেহ নাই,এসথার কোন বাছবিচার না করে আমার চিঠি হাসানকে প্রথমে পড়তে দেয়,এ জন্যেই এবারের উত্তরটা এসথারের হাতে দেইনি।
‘তোরা এতক্ষন কোথায় ছিলি,মাকে জ্বালাতে জ্বালাতে মেরে ফেলবি’,ছেলেদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম?
সেভকেতকে কোলে তুলে ওর ঘাড়ে আদর করে চুমু দিচ্ছিলাম,ছেলেরা বুঝতে পারলো মায়ের রাগ কমে গেছে।
‘তোর শরীর তো একেবারে বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেছে,হাত দুটা দে,মা,গরম করে দিবে’।
সেভকেতের হাতে কেমন জানি একটা বিশ্রী গন্ধ ছিল,তবে কোন অভিযোগ ছিল না আমার।হাতদুটো বুকে রেখে সেভকেতকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম,শীতের শরীরটায় আদর পাওয়া বিড়ালের মত সে জড়সড় হয়েছিল,আমার কোলে।
‘তুই তোর মাকে,ভালবাসিস নিশ্চয়,সেভকেত’।
‘উউউউউউ’।
‘কি বললি বুঝলাম না’।
‘হ্যা’।
‘নিশ্চয় অন্য কাঁরও চেয়ে বেশী’।
‘হ্যা’।
‘তাহলে তোকে একটা কথা বলবো,মন দিয়ে শুনবি’,এমন ভাবে ফিসফিস করে বললাম যেন বিরাট একটা রহস্য উদঘাটন করছি, ‘আমিও তোকে অন্য যে কার চেয়ে অনেক বেশী ভালবাসি’।
‘অর্হানের চেয়েও বেশী’?
‘হ্যা,অর্হানের চেয়েও বেশী।অর্হান এখনও বেশ ছোট,ও তো ছোট্ট একটা পাখীর মত।তুই অনেক বেশী চালাক,তোর বোঝার ক্ষমতা আছে’,সেভকেতের মাথায় চুমু দিয়ে চুলের গন্ধ নিতে নিতে বললাম, ‘তোর একটু কষ্ট করতে হবে আমার জন্যে,মনে আছে কি ভাবে গতকাল সিয়াহকে একটা কাগজ দিলি?আজকেও তোকে সেটা করতে হবে’।
‘কিন্ত তুমি কি জান,ওর হাতেই আমার বাবা খুন হয়ে গেছে’।
‘কি সব যা তা বলছিস’!
‘ও আমার বাবাকে খুন করেছে।ও নিজেই বললো,অনেক মানুষ খুন হয়ে গেছে ওর হাতে ঐ লোকটা,ফাঁসি দেয়া ইহুদীর বাসায় গতকালকে তাই বললো’।
‘কি বললো তোকে,সিয়াহ’?
‘বললো তোমার বাবাকে আমি খুন করেছি,অনেক মানুষ খুন করেছি,আমি’।
হঠাৎ কিছু একটা ঘটে গেল,সেভকেত আমার কোলে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কান্না আরম্ভ করলো।কেন কাঁদছে ছেলেটা অযথাই?বেশ বেসামাল হয়ে গেছি তখন আমি,একট থাপ্পড় মারলাম সেভকেতকে,তার মানে এই না যে আমি একটা নির্দয় মানুষ।বুঝিনি কেন সেভাবে সে অপবাদ দিল ঐ মানুষটাকে যাকে আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি-তাদের ভব্যিষৎ তো অনেকটা তার ওপরেই নির্ভর করছে।আমার বাপমরা ছেলেটা তখনও কাদছিল,আমিও নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না,আর কেঁদে ফেললাম।এঁকে অন্যকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা খুঁজছিলাম আমরা,একটা থাপ্পড়ে এত কান্না।সেভকেতের চুলে বিলি কাটছিলাম।

এভাবেই সব কিছু আরম্ভ হলোঃ
গতকাল বাবাকে বললাম স্বপ্নে আমার মৃত স্বামীকে দেখার কথা থেকেই সবকিছু বদলে গেল।আসলে সেটা কিন্ত প্রথমবারের মত না,আমার স্বামীর পারস্যের যুদ্ধ থেকে ফিরে না আসার চার বছরে অনেকবারই স্বপ্নে তার সাথে দেখা আমার।আমি তাকে দেখেছি পালানোর চেহারায়,একটা লাশও ছিল সেখানে,লাশটা কি আমার স্বামীর,মনে পড়ছে না?আজও আমার কাছে সেটা রহস্য।

স্বপ্ন নাকি ওপারের সাথে ওপারের যোগাযোগের একটা পথ,আসলে কি তাই?
এসথারের দাদী মা পর্তুগাল থেকে প্রথমে ইস্তাম্বুলে আসে,সেখানে স্বপ্ন দেখা মানুষ থেকে শয়তান বের করে দেয়ার নামে চলতো নানান ধরণের কীর্তিকলাপ।এসথারের পূর্বপুরুষরা যদিও বলতো তারা ইহুদী থেকে ক্যাথলিক হয়ে গেছে,তবুও পর্তুগীজ গীর্জার পুরোহিতরা তাদের ওপর অত্যাচার করে স্বপ্নের জিন পরীদের সমন্ধে জানার চেষ্টা করতো।এ ভাবে সেখানে স্বপ্নকে ধর্মের অস্ত্র ব্যাবহার করা হতো পর্তুগীজ পুরোহিতরা,মানুষেরা শয়তানের সাথে সঙ্গম করছে,ইহুদীদের দমন করার নতুন আরেক উপায়।

স্বপ্ন তো একটা সুখ,না পাওয়া আনন্দের কাছে পৌছানোর যোগাযোগ

আলিফঃ
ধর তুমি কোন কিছু একটা চাও,কিন্ত সেটাতো সোজাসুজি পাওয়া সম্ভব না।তখন তুমি বলবে স্বপ্নে সবকিছু পেলে।এ ভাবে তুমি যে অনেক কিছু পেতে পার,না চাওয়ার ভান করে।
বেঃ
তুমি কারও ক্ষতি চাও।ধর তুমি কোন মহিলার নামে গুজব কিছু রটাতে চাও।তুমি বলবে ঐ মহিলা কত লোকের সাথে বেশ্যার মত শুয়ে বেড়াচ্ছে,না হয় বলবে অমুক মাতাল পাশার স্বপ্নের কথা।এ ভাবে কেউ যদি তোমাকে বিশ্বাস নাও করে,মুখরোচক গল্পটা কেউ ভুলে যাবে না।
মিমঃ
তুমি কিছু একটা চাও,তবে জান না সেটা কি।তুমি এমন একটা স্বপ্নের কথা বলবে যা একেবারেই অবোধগম্য।তোমার আত্মীয়স্বজন,বন্ধুবান্ধব সেটা বিশ্লেষণ করে বলবে,
তোমার কি করা দরকার।তারা বলবে,তোমার স্বামী,ছেলে বা বাড়ী বা অন্য কিছু একটা দরকার।

স্বপ্ন নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি,সেটা আমাদের দেখা স্বপ্ন না,সাজানো কিছু একটা।মানুষ যা বলে তা তাদের দিনে দেখা, ‘স্বপ্ন’,আর সেখানে সবসময়ই কোন না কোন উদ্দেশ্য আছে।একটা গাধা ছাড়া আর কেউ তাদের দেখা সত্যিকারের স্বপ্নটা কোনদিনই কাউকে বলবে না।আর কেউ যদি বলে তা হলে সবাই সেটা নিয়ে হাসাহাসি করে,আর বলবে ওটা নিঃসন্দেহে একটা খারাপ লক্ষন।স্বপ্নের সততায় কেউ কোনদিন অত গুরুত্ব দেয় না,এমন কি যাদের স্বপ্ন দেখা।তুমি কি ঘুমানোর আগে দোয়া কর?

একটা স্বপ্ন যার কিছুটা মনে ছিল,সেটার ইঙ্গিতে আমি বললাম আমার স্বামী হয়তো আর বেচে নেই।যদিও প্রথমে বাবা সেটা বিশ্বাস করতে চায়নি,তবে জানাজার থেকে ফিরে আসার পরে,বাবার সন্দেহ ছিল না আমার স্বামী আর নেই।এই চার বছর ধরে যে মানুষটা অমর হয়ে ছিল,একটা স্বপ্নে তার মৃত্যু হলো,কারও অবিশ্বাস ছিল না আর,
ছেলেরাও বাবা হারা হয়ে দুঃখ কান্নায় হারিয়ে গেল।

‘তুই কি কখনও স্বপ্ন দেখিস’?আমি সেভকেতকে জিজ্ঞাসা করলাম।
‘হ্যা,বাবা আর বাড়ী ফিরে আসছে না,আর আমি তোমাকে বিয়ে করলাম’,সেভকেত মুচকি হেসে বললো।
তার টিকোলো নাক,চওড়া কাঁধ দেখতে অনেকটা আমার মত,ওর বাবার সাথে কোন মিল নাই।আমার কিছুটা অনুশোচনা ওদের বাবার চওড়া কপাল ওরা কেউ পায় নি।
‘যা বাইরে গিয়ে তোর ভায়ের সাথে তলোয়ার খেলা কর’।
‘বাবার পুরোনো তলোয়ারটা কি নিব,মা’?
‘হ্যা’।
ছেলেদের তলোয়ারের শব্দ আমার কাঙে ভেসে আসছিল,তবে অজানা একটা ভঁয় আমাকে তটস্থ করছিল,একটা বিপদের কালো মেঘ ছুটে আসছে,গ্রাস করে ফেলবে আমাদেরকে।
রান্নাঘরে হাইরিয়েকে বললাম, ‘বাবা অনেকদিন ধরে মাছের সুপ খেতে চাচ্ছে,যাও গালিওনের বন্দর থেকে কিছু মাছ কিনে আন।আর কিছু শুকনো ফল যা সেভকেতের খুবই পচ্ছন্দ,ওদের জন্যে আনতে ভুলবে না’।
সেভকেত বসে বসে খাচ্ছিল,আর অর্হানকে কোলে নিয়ে আদর করছিলাম।
‘কি ব্যাপার এত ঘেমে গেলি,কেন?কি করছিলি তুই’?আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
‘সেভকেত আমাকে চাচার লাল তলোয়ারটা দিয়ে মারলো,যে’।
‘ঠিকই তো,একদম লাল হয়ে আছে’,আমি দাগটা ছুঁয়ে বললাম, ‘ব্যাথা লাগছে?সেভকেতের একেবারেই মায়াদয়া নাই।শোন তুই তো বেশ চালাক,আর সব কিছু বেশ ভাল ভাবেই বুঝিস,তোকে একটা গোপন কাজ দিচ্ছি,আর কাউকে বলবি না’।
‘কি ব্যাপার,কি কাজ’?
‘এই যে কাগজটা,দাদুর ঘরে সিয়াহ এফেন্দীকে দিবি,কিন্ত দাদু যেন দেখতে না পায়।বুঝতে পারলি’?
‘হ্যা,বুঝতে পারলাম’।
‘তোকে যা বললাম,করবি’?
‘কিন্ত বুঝলাম না,গোপন কথাটা কি’?
‘শুধু কাগজটা নিয়ে যাবি,আর কিছু না’,বলে আমি অর্হানের কাধে আদর করে চুমু দিলাম,একটা বিটকেলে গন্ধ ভেসে আসছিল অর্হানের গা থেকে।গন্ধের কথা যখন বলা হচ্ছে,হাইরিয়ে বেশ কটা দিন ওদের হাম্মামে নিয়ে যায় নি।সেই যখন সেভকেতের লিঙ্গ হঠাৎ দাঁড়ালো হাম্মামের মেয়েদের শরীর দেখে,তারপর আর হাইরিয়ে যায়নি।ঐ গোপন কাহিনী আমি পরেই বলবো।অর্হানকে আব্র আদর করে চুমু দিলাম,আবার।
‘তুই বেশ চালাক আর দেখতে সুন্দর।সেভকেত একটা শয়তান হয়ে গেছে।ওর এত সাহস যে ও মার ওপর হাত তুলতে দ্বিধা করেনি’।
‘ঠিক আছে,আমি এটা দিয়ে আসবো’,সে বললো, ‘কিন্ত তুমি কি জান সিয়াহ এফেন্দী আমাদের বাবাকে খুন করেছে’?
‘কে বললো,ঐ বদমায়েস সেভকেত,তাই না?যা নীচে গিয়ে সেভকেতকে ডেকে আনবি’।
আমার চোখে মুখে রাগের আগুন জ্বলজ্বল করছে তখন,অর্হান তাড়াতাড়ি কোল থেকে নেমে বের হয়ে গেল।হ্য়তো অর্হান মনে মনে কিছুটা খুশী ভেবে যে সেভকেত বিপদে আছে।কিছুক্ষন পর দেখি দুজনই ফিরে এলো,চোখ মুখ লাল,সেভকেতের এক হাতে শুকনা ফল আরেক হাতে তলোয়ার।
জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তোর ভাইকে কি সব যা তা বলছিস,সিয়াহ তোর বাবাকে খুন করেছে?এই বাড়ীতে এ ধরণের কথা শুনতে চাই না,তোদের দুই ভায়েরই সিয়াহকে সম্মান করে কথা বলা উচিত।বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না নিশ্চয়,তোদের?আমি চাই না সারাটা জীবন তোরা বাবা ছাড়া জীবন কাটাবি’।
‘আমি ওকে পচ্ছন্দ করি না।তার চেয়ে এটাই ভাল আমরা হাসান চাচার বাড়ীতে ফিরে যাই আর বাবার জন্যে অপেক্ষা করবো’,সেভকেত রাগের সাথেই উত্তর দিল।
কথাটা শুনে আমার এত রাগ হলো যে,উঠে আমি একটা থাপ্পড় মারলাম,তলোয়ারটা তার হাত থেকে পড়ে গেল।
‘আমি বাবাকে চাই’, কাঁদতে কাঁদতে বললো সেভকেত।
আমি কাঁদছি তখন তার চেয়েও অনেক বেশী,রাগে দুঃখে,যন্ত্রনায়।
‘তোর বাবা আর নাই,আর ফিরে আসবে না’, কাঁদতে কাঁদতে বললাম।
‘তোদের কোন বাবা নাই আর,বুঝতে পারছিস না জারজ ছেলে’,এত জোরে আমি কাঁদছি তখন যেন বাইরের কারও কানে যেতে খুব একটা কষ্ট হবে না।
‘আমরা জারজ না’, কাঁদতে কাঁদতে বললো সেভকেত।
বেশ কিছুক্ষন কান্না থামেনি আমাদের।কান্নায় মনটা তখন বেশ কিছুটা হাল্কা হয়ে গেছে,আমি যেন নতুন এক মানুষ।সেভকেতকে জড়িয়ে তার মাথাটা বুকে টেনে আনলাম,আমরা দুজনে শান্ত হয়ে গেছি,আমি হয়তো একটুঁ তন্দ্রায়,কিন্ত আমার মনটা পড়ে আছে কি হচ্ছে নীচতলায়।কমলালেবু সিদ্ধ করার গন্ধ পাচ্ছিলাম,ছেলেদেরকে বললাম,
‘নীচে যা আর হাইরিয়েকে তোদের কিছু খাওয়া দিতে বল’।
ঘরটায় একা আমি,বাইরে বরফ পড়ছে,আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া আরম্ভ করলাম।তারপর পবিত্র কোরানের,ইমরানের পরিবারের অধ্যায় থেকে পড়া আরম্ভ করলাম,সেখানে পরিষ্কার বলা আছে,যারা আল্লাহর পথ যুদ্ধে শহীদ হবে,বেহেশতের দরজা খোলা দরজা তাদের জন্য।আমার কথা ভেবে শান্তিতে মনটা ভরে গেল আমার।বাবা কি সিয়াহকে সুলতানের পোট্রেট দেখালো?বাবার বিশ্বাস ছবিটা এত বেশী প্রানবন্ত এ ছবিটা
দেখা আর সুলতানের চোখের দিকে তাকানো একই ব্যাপার।
অর্হানকে ডেকে গালে চুমু দিয়ে বললাম, ‘শোন তা হলে,ভয় না পেয়ে,দাদু যেন না দেখে এ ভাবে কাগজটা সিয়াহকে দিয়ে আসবি,বুঝলি’।
‘আমার একটা দাঁত নড়ছে’।
‘তুই ঘুরে আয়,তখন তোর দাঁতটা তুলে দিব’,আমি বললাম, ‘শোন সিয়াহর গা ঘেষে দাড়াবি,আর ও যখন তোকে জড়িয়ে ধরবে,রখন ওর হাতে কাগজটা দিবি।বুঝলি’?
‘আমার ভঁয় লাগছে’।
‘ভঁয় করার কিছু নাই,সিয়াহ না হলে কে তোর বাবা হতে চাচ্ছে জানিস?তোর চাচা হাসান।
তুই কি চাস হাসান তোর বাবা হউক’।
‘না’।
‘তাহলে যা,এই যে আমার সুপুরুষ আর চালাক ছেলে অর্হান,না হলে আমি সত্যিই রেগে যাব।খুবই রেগে যাব...আর তুই যদি কাদিস,তাহলে আমি আরও বেশী রাগব’,আমি বললাম।
আমি চিঠিটা অনেক কবার ভাঁজ করে অর্হানের ছোট্ট হাতে তুলে দিলাম,হতাশা আর দুঃখে বাড়ানো একটা হাত।আল্লাহ আমাকে একটু সাহায্য কর,যাতে বাবা হারানো ছেলে দুটার রক্ষার জন্যে নিজেদের ওপর নির্ভর না করতে হয়।
দেয়ালের গর্তটা দিয়ে দেখছিলাম,অর্হান কিছুটা অনিচ্ছায় বাবা,সিয়াহর কাছের সোফায় গিয়ে কি করবে বুঝতে না পেরে দেয়ালের গর্তে তাকাচ্ছিলাম বারে বারে।এক সময় অর্হান কেঁদে সিয়াহর কোলে গিয়ে বসলো।সিয়াহ তো আর অত বোকা না,আমার ছেলেদের বাবা হওয়ার যথাযথ যোগ্যতা আছে তার,সে অর্হানকে কোলে নিয়ে তার হাত খুঁজছিল।
অর্হান বাবার শ্যেন চোখ এড়িয়ে ঘর থেকে বার হয়ে এলো,দৌড়ে তাকে কোলে নিয়ে আদর করে একটা চুমু দিলাম,তারপর নীচে গিয়ে কিছু কিসমিস এনে দিলাম।

‘হাইরিয়ে ছেলেদের নিয়ে গালিওনের মাছের বাজার যাও,মাছ কিনবি সুপ বানানোর জন্যে।আর হ্যা শোন,খুচরা পয়সা দিয়ে অর্হানকে শুকনা চেরী আর আতা কিনে দিবে,সেভকেতকে মাংসের শুটকি,বুটভাজা কিনে দিও।মাগরেবের নামাজের আগে পর্যন্ত ওরা যেখানে যেখানে যেতে চায় নিয়ে যাও,ঠান্ডা না লাগায় যেন’।

বেশ কাপড়চোপড় পরে মোটাসোটা হয়ে বের হয়ে গেল সবাই,চুপচাপ বাড়ীর শান্তিটা ভালই লাগছিল।উপরতলায় বালিশের লুকানো স্বামীর দেয়া আয়না দেয়ালে দিয়ে নিজেকে বারে বারে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।শরীর দুলছিল ছন্দে ছন্দে,সারা শরীরটা দেখা যচ্ছিল দূর থেকে।লাল কার্ডিগানটা এমনিতেই আমাকে মানায় ভাল,তার সাথে মায়ের বেগুনী রং এর ব্লাঊজ,যা মায়ের সালোয়ারের সাথে মেলানো পরলে চোখ সরাতে পারবে না কেউ।নানীর গোলাপী কাজ করা শালটা গায়ে দিয়ে আমি যখন পচ্ছন্দের বেগুনী ব্লাউজটা পরছিলাম,
হাল্কা একটু বাতাস শরীরে এসে ধাক্কা দিল,কেঁপে উঠলো মোমবাতির আলোটাও।মায়ের উলের পোষাকটা গায়ে দিয়ে দেখলাম,খারাপ না,স্তনের কাছে যদিও একটুঁ কষা,তবু খারাপ না।হাল্কা একটা নেকাবও ছিল মুখে।
সিয়াহ এফেন্দী এখনও যায় নি,আমার উদ্ধেগ আমাকে বোকা বানালো,এখন বের হয়ে গেলে
বাবাকে বলতে পারবো যে মাছের বাজার থেকে ঘুরে এলাম।
ভুতের মত কোন শব্দ না করে দরজাটা বন্দ করলাম,চুপচাপ আঙ্গিনা দিয়ে হেঁটে চলে গেলাম রাস্তায়।নেকাবের ফাঁক দিয়ে বাড়ীর দিকে ঘুরে মনে হলো ওটা যেন আমাদের বাড়ী
না।
ফাঁকা রাস্তা,একটা কুকুর বিড়ালও নাই কোথাও,হাল্কা বাতাস বরফের সাথে লুকোচুরি খেলা করছে।পোড়ো বাগানটাতে ঢুকলাম,পচা গাছের পাতা,শ্যাওলা আর মৃত্যুর গন্ধে ভঁরা বাতাস,তবু ঐ ফাঁসি দেয়া ইহুদীর ঘরে ঢুকে মনে হলো,যেন আমারই বাড়ী।লোকে বলে জিন পরীরা রাতে চুলার পাশে সবাই একসাথে ইচ্ছামত আনন্দে মত্ত হয়ে থাকে।নিজের পায়ের শব্দে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম,আমি।বাগানে একটা পায়ের শব্দ শুনলাম,তারপর সবকিছু চুপচাপ।একটা কুকুর ঘেউঘেউ করছিল,অচেনা সুরটা এ এলাকার সব কুকুরই তো আমার চেনা।
মনে হলো আমি ছাড়া আরও কেউ আছে বাড়ীটাতে,একটা লাশের মত দাঁড়িয়ে ছিলাম,কোন শব্দে যেন কেউ জেগে না ওঠে।রাস্তার লোকজনের গলা শোনা যাচ্ছিল,
হাইরিয়ে আর ছেলেদের কথা ভাবছিলাম।আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলাম ওদের যেন আবার ঠান্ডা না লেগে যায়।চারপাশটা চুপচাপ,আর কতক্ষন অপেক্ষা করা যায়,সিয়াহ বোধকরি আর আসছে না।বড় ভুল করে যাচ্ছি,আমার সব গর্ব তখন মাটিতে মিশে গেছে,আরও ভঁয় হল,হাসান তো আমাকে চোখে চোখে রাখে,কোথাও লুকিয়ে আছে নাকি,কে জানে?বাগান থেকে পায়ের শব্দ ভেসে আসছিল,এক সময় ঘরের দরজাটা খুলে গেল,
তাড়াতাড়ি দৌড়ে এক কোনায় সরে গেলাম।কেন করলাম জানি না,তবে ভয়,হয়তো লজ্জাও কিছুটা,জানালার যেখান দিয়ে হাল্কা একটুঁ দেখা যাচ্ছিল,তার বামদিকে দাঁড়িয়েছিলাম।জানি সিয়াহ আমাকে দেখতে পাবে,মুখটা ঢেকে আমি অপেক্ষা করছিলাম।

দরজা দিয়ে ঢুকে সিয়াহ আমাকে দেখলো,কয়েক পা এগিয়ে থেমে গেল।কয়েক গজ দূরে আমরা,একে অন্যকে চোখে চোখে পরখ করছিলাম।বাড়ীর দেয়ালের গর্ত দেখা চোখের চেয়ে তাকে অনেক বেশী স্বাস্থ্যবান মনে হচ্ছিল।একটুঁ চুপচাপ।
‘তোমার নেকাবটা সরাও’,ফিসফিস করে বললো সিয়াহ, ‘দোহাই তোমার’।
‘আমি তো বিবাহিতা,স্বামীর জন্যে অপেক্ষা করছি,ওটা মানানসই হবে না’।
‘নেকাবটা সরাও’,একই ভাবে বললো সিয়াহ, ‘তুমি জান,তোমার স্বামী আর ফিরে আসছে না’।
নেকাব খুলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম,সিয়াহ যেন চোখ বড় করে আমাকে গিলে খাচ্ছিল।
‘বিয়ে আর বাচ্চা হওয়ার পরে তুমি আগের চেয়ে অনেক বেশী সুন্দরী হয়ে গেছ।তোমার মুখটা আমার মনে আঁকা মুখটার চেয়ে অনেক আলাদা’।
‘কি ভাবে মনে আছে আমাকে,তোমার’?
‘যন্ত্রনায়,কেননা যখন তোমাকে নিয়ে ভাবতাম,সেটা ছিল আমার স্বপ্ন।মনে আছে ছোটবেলায় আমরা হুসরেভ আর শিরিনের কথা বলতাম,তারা তো এঁকে অন্যের ছবি দেখেই প্রেমে পাগল ছিল।কিন্ত শিরিন হুসরেভের গাছ থেকে দেখে প্রথমবার প্রেমে পড়েনি,কেন ছবিটা তিনবার দেখতে হতো তাকে?মনে আছে তুমি বলতে রুপকথায় সবকিছু ঘটে তিনবার।আমি প্রতিবাদ করবো কেউ যদি বলে প্রথম দেখায় ছিল প্রেম সেখানে।কিন্ত কাঁর পক্ষে হুসরেভের একটা প্রতিচ্ছবি আঁকা সম্ভব যাতে ফুটে উঠবে তার প্রতিফলন,শুধু বাইরের রুপটা না,হুসরেভের মন কেড়ে নেওয়া অজানা ভাবটাও।আমরা ও কথা নিয়ে কোনদিন কিছু বলিনি।গত বার বছরে তোমার রুপের একটা সত্যিকারের প্রতিফলন থাকতো আমার কাছে,এই যন্ত্রনায় ভুগতে হতো না আমাকে’।

০০০০


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৫৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×