somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বদেশী আন্দোলনের ইতিহাসঃ দিনাজপুর পর্ব-হিলি আক্রমনের ছেঁড়া পাতা

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘আমরা স্বাধীন’কথাটায় যেমন আছে আকাশ ছড়ানো উচ্ছাস,তেমনই আছে অনেক ব্যার্থতা,অনেক কান্নার গল্প।কোন ভিক্টোরিয়া,জর্জ বা এডওয়ার্ডের তুষ্টির দরকার নেই স্বাধীন দেশে,আমরাই আমাদের ক্ষমতায়,
অনেক অসফলতার ভাঙ্গা সিড়ি ভেঙ্গে স্বাধীন একটা পৃথিবী।ভুলে গেছি আমরা মুখগুলো যাদের কোন চাওয়া ছিল না,তবে সহ্য হয়নি তাদের নিজের মাকে বিট্রিশ বেনিয়াদের হাতে শেকলে বাঁধা দেখতে।অনেক রক্ত,অনেক ওঠানামার সেই মুখগুলোর সামনে সম্মানে আমরা কি বলতে পারি না, ‘ভুলিনি আমরা’।

ইতিহাসের স্বদেশী পর্বের ছোট্ট একটা অংশ হিলি ষ্টেশনের অভিযান,ব্রিটিশদের কাছে ডাকাতী।বঙ্গভঙ্গ ভারতকে বিপ্লবের জোয়ারে ভাসিয়ে না নিয়ে গেলেও,বাংলার মানুষের চিন্তাধারায় ব্যাপক পরিবর্তন আনে,নতুন চেতনায় বাংলার মানুষ খোঁজা আরম্ভ করে বেনিয়া ব্যাবসায়ী থেকে বিট্রিশ সামাজ্রবাদের কালো মেঘে হারানো স্বাধীনতার সূর্য।জন্ম নিল গুপ্ত রাজনৈতিক দল যুগান্তর,অনুশীলন সমিতির,যুগান্তর কোলকাতায় আর অনুশীলন সমিতির অফিস ছিল ঢাকায়।অরবিন্দ ঘোষ,তার ভাই বারীন ঘোষ সহ প্রায় একুশ জন বিপ্লবীর বিট্রিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সমষ্টিগত বিদ্রোহের যাত্রা।সারা বাংলা জুড়ে আন্দোলনের জোয়ার,কোলকাতা,ঢাকা,চট্টগ্রাম ঐ শহরগুলো স্বদেশী আন্দোলনের উৎস হলেও বাংলার অন্যান্য শহরগুলোও একেবারে পিছিয়ে ছিল না।
উত্তরবঙ্গের ছোটখাট একটা শহর দিনাজপুর,স্বদেশী আন্দোলনের জোয়ার যে দিনাজপুর ছুঁয়ে যায়নি,তা না তবে ফলাও করে বলার মত তেমন কিছু একটা ছিল না।উৎসাহী মুখ ছিল অনেক,তবে তেমন সাংগঠনিক খুব কিছু একটা হয়ে উঠে নি,যা কিছু ছিল উত্তরবঙ্গে সেটা মোটামুটি সীমাবদ্ধ ছিল ছাত্রদের মধ্যেই।

করতোয়া পত্রিকায় অনিতা বাগচীর লেখা,ত্রিদিব চৌধুরীর Freedom struggle and anushilon samiti থেকে জানা যায়,বিট্রিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে পঞ্চাশ বছরের স্বদেশী আন্দোলনের ইতিহাসে এমন একটা সময় ছিল না যখন আন্দোলনের জোয়ার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের তটস্থ করেনি,স্বদেশীদের সুপরিকল্পিত আক্রমণে অস্থির হয়ে ছিল বিদেশী আগ্রাসনীরা।গুপ্ত সমিতি যুগান্তর,অনুশীলন সমিতির প্রভাব তখন মোটামুটি সারা বাংলায় ছড়ানো ছিটানো।অনুশীলন সমিতির হেড কোয়ার্টার ছিল ঢাকায় আর সেখান থেকে শহর,গ্রামে গঞ্জে এমন কি সেই উত্তরবক্ষের দূর কোনায়ও ছিল তাদের শিকল ভাঙ্গার উপস্থিতি।১৯০৮ সাল থেকেই উত্তরবঙ্গের অনেক এলাকায় বিপ্লবীদের সগ্রামের ঝড়,বিশেষ করে ছাত্রদের মধ্যেই বেশ জোরেসোরে এগিয়ে যাচ্ছিল।
যদিও ১৯১৭ সালের শেষের দিকে চার্লস টের্গাটের মতে ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিরোধী সন্রাসীরা নির্মুল হয়ে গেছে’,কিন্ত পারতপক্ষে স্বদেশীদের আন্দোলনের জোয়ার কিছুটা স্তিমিত হয়ে গেলেও থেমে যায়নি কোনভাবেই।

১৯৩০ সালের দিকটাকে বলা যায় স্বদেশী আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব,চিন্তাধারায় কিছুটা রদবদল,আর আন্দোলনের জোয়ার সীমাবদ্ধ ছিল না শুধু প্রধান শহরগুলোতে,বরং ঐ অনুভুতি ছড়ানো সারা বাংলায়।শপথ গ্রহন পদ্ধতিতে কিছুটা বদল আর মেয়েদের অহিংসা থেকে সশস্ত্র আন্দোলনে যোগ দেয়াটা নিঃসন্দেহে উল্লোগ যোগ্য ঘটনা।তা ছাড়াও অল্প সংখ্যায় হলেও মুসলমানদের স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেয়াটা একটা উল্লেখ যোগ্য পদক্ষেপ।এটা বলার অপেক্ষা রাখে না মুসলমানরা যে কারণেই হোক স্বদেশী আন্দোলনের বাইরেই ছিল।
আক্রমন করার আগে যথারীতি খোঁজ খবর নেয়া আরম্ভ হলো,বালুরঘাট এলাকার ডাক বিলি হতো হিলির আঞ্চলিক ডাকঘর থেকে।কোলকাতা গামী দার্জিলিং মেল পদ্মা পার হয়ে পাকশী,সান্তাহার,আক্কেলপুর,জয়পুর হাট,
পাঁচবিবি এক এক করে পার হয়ে পৌছাতো হিলি ষ্টেশনে,রাত ১২:১৫ আর আবার দার্জিলিংগামী কোলকাতা মেল পৌছাতো রাত ২:১৫,সাথে ঐ এলাকার ডাক,মনিঅর্ডার সব।পরের দিন বিলি হওয়া পর্যন্ত ডাকগুলো বিশেষ কোন পাহারা ছাড়া ষ্টেশনে মোটামুটি অরক্ষিত ভাবেই পড়ে থাকতো।এটা নিঃসন্দেহে বিরাট একটা সূযোগ মনে হলো স্বদেশীদের কাছে।সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাসী স্বদেশীদের দরকার অস্ত্রশস্ত্র,তাদের বিশ্বাস শুধু অহিংসা,অসহযোগে সম্ভব না বিট্রিশদের তাড়ানো।স্বাধীনতা আন্দোলনের অস্ত্র কেনার জন্যে টাকা পয়সা ডাকাতি করে সংগ্রহ করা হবে এটাই ছিল স্বদেশীদের উদ্দেশ্য।অনুশীলন সমিতি,বাংলার বিদ্রোহের সোচ্চার মুখের হেড কোয়ার্টার তখন আর ঢাকায় নেই,কোলকাতায়।দিনাজপুর জেলার দায়িত্ব ছিল প্রফুল্ল নারায়ণ সান্যালের হাতে আর দিনাজপুর শহরের দায়িত্ব ছিল বালুবাড়ির প্রয়াত আইনজীবী আনন্দমোহন বসুর ছেলে,সরোজ বা কেতু বসুর দায়িত্বে।

হিলি ডাকাতীর নেতা প্রানকৃষ্ণ চক্রবর্তীর মন্তব্য থেকে জানা যায়,‘শুধু কজন স্বদেশী দিয়ে দেশ কোনদিন দেশ স্বাধীন হতে পারে না,এ উদ্দীপনা,এ উচ্ছাস ছড়াতে হবে সকলের মাঝে,আমাদের ছেড়ে দিতে হবে সব দলাদলি,ধর্মীয় ভাগাভাগি’।এই চিন্তাধারার ফসল হিসাবেই আমরা দেখি,আবদুল কাদের চৌধুরী একজন মুসলমানকে হিলি ডাকাতীর প্রথম সারির নেতা হিসাবে,স্বদেশী আন্দোলনের ইতিহাসে যা সচরাচর দেখা যায় নি।
প্রানকৃষ্ণ চক্রবর্তীর কথা থেকে এটাও জানা যায়,ডাকাতীর টাকা সংগ্রহ করা হতো স্বদেশী আন্দোলনের সাহায্য করার জন্যে,অস্ত্রশস্ত্র গোলাগুলি কেনার জন্যে।দিনাজপুরের স্বদেশী দল ছিল অনুশীলন সমিতির একটা অংশ,অনুশীলন সমিতির হেড কোয়ার্টার তখন আর ঢাকায় ১৯৩৩ সালের ২৮ শে অক্টোবর প্রানকৃষ্ণ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে হিলি অভিযান চালানো হয়,সহকারী নেতা হিসাবে ছিলেন হ্রিষীকেশ ভট্টাচার্য।দলের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন সত্যব্রত চক্রবর্তী,সরোক কুমার বসু,হরিপদ বসু,প্রফুল্লকুমার সান্যাল,কালিপদ সরকার,আবদুল কাদের চৌধুরী,কিরণচন্দ্র দে,রামকৃষ্ণ সরকার,অশোক রঞ্জন ঘোষ,শশধর সরকার,লালা পান্ডে,বিজয় কৃষ্ণ চক্রবর্তী আর অনিল।কিরণ আর আবদুল কাদের অভিযানে সরাসরি ভাবে অংশ নিতে সক্ষম হয় নি।

অভিযানের দায়িত্ব ভাগ করা হলোঃ
১) শশধর আর অশোকের দায়িত্ব ছিল ডাকের বাক্স খোলার পরে ব্যাগ খুলে চিঠিপত্র,পার্সেল,ইন্সিওর করা জিনিষপত্র দেখে মুল্যবান সবকিছু যোগাড় করা,প্রফুল্ল আর কালিপদ থাকবে তাদের সাহায্যকারী হিসাবে।
২) বিজয়,লালু আর অনিলের দায়িত্ব ছিল ষ্টেশনে ঢুকে বাক্স ভেঙ্গে রেল ষ্টেশনের টাকাপয়সা জোগাড় করা।
৩) সত্যব্রত,সরোজ বন্দুক নিয়ে আর হরিপদ সত্যব্রতের,রামকৃষ্ণ সরোজকে টর্চ লাইট দিয়ে সাহায্য করবে প্রয়োজনে।
বন্দুকধারীদের গায়ে ছিল হাফ প্যান্ট,হাফ হাতা সার্ট,অন্যান্য সকলের গায়ে ছিল খাকী পোষাক।পুলিশের রেকর্ডে বলা হয় ডাকের পিওন কালীচরণ মাহালী স্বদেশীদের সাথে বেশ ধ্বস্তাধ্বস্তি করে চিঠিপত্র রক্ষার জন্যে তবে স্বদেশীদের গুলিতে গুরুতর ভাবে আহত হয়ে তার পক্ষে বেশী কিছু করা সম্ভব হয়নি,তাকে চিকিৎসার জন্যে কোলকাতায় নেয়া হলে,সেখানেই সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

অমৃতবাজার পত্রিকায় স্বদেশীদের হিলি ডাকাতী পর্ব বেশ ফলাও করে লেখা হয়,তা ছাড়া দিনাজপুর পত্রিকায়ও ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ ছিল।পুলিশের জবানীতে আরও জানা যায় স্বদেশীরা ঐ ডাকাতী করে সবকিছু মিলিয়ে প্রায় ৪৬২৪ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।অভিযানের শেষে সর্ম্পূন দল পরিকল্পনা মত তিন ভাগে ভাগ হয়ে একেক দল একেক দিকে চলে যায়।প্রথম দলে ছিল লালু,বিজয়,রামকৃষ্ণ,শশধর,দ্বিতীয় দলে কালীপদ,
অনিল,আর শেষ দলে ছিল প্রানকৃষ্ণ,সত্যব্রত,সরোজ,প্রফুল্ল,হ্রিষীকেশ,হরিপদ,অশোক।

তৃতীয় দল বিরামপুরের ফেরী ঘাটে আত্রাই নদী পার হওয়ার জন্যে,চিন্তামনির কাচারী পার হয়ে সমজিয়া গ্রামের দিকে রওয়ানা দেয়।একজন কনেষ্টবল রামসিংহাসন সিং পাটের ব্যাবসায়ীর ছদ্মবেশে ওদের পেছন পেছন ধাওয়া করে।সমজিয়ায় পৌছে রামসিংহাসন সিং ঐ এলাকার জমিদার বাবু ক্ষীতিশচন্দ্র রায়ের কাছে সাহায্য দ্বদেশীদের ঘটনার কথা বলে সাহায্য চায়।রামসিংহাসন সিং জমিদার ক্ষীতিশ বাবুর সাথে পরিকল্পনা করে ঘোষনা করলো সাতজনের সশস্ত্র ডাকাত দল লুটপাট করে ঐ এলাকা দিয়ে পালাচ্ছে,সবাই মিলে তাদের গ্রেপ্তার করা দরকার।প্রানকৃষ্ণের দল কুতুবপুর পৌছানোর পর এক গরুর গাড়ীওয়ালার কাছে ঘাটে যাওয়ার ঠিকানা জানতে চাইলে,গরুর গাড়ীওয়ালাদের স্বদেশীদের ডাকাত ভেবে যে নদীর ঘাটটায় যেতে বলে,যেখানে ঘাটের নৌকা ছিল ওপারে যাতে তারা পালাতে না পারে।জমিদার ক্ষীতিশ লোকজন নিয়ে ঘাটে পৌছে,
ফেরী ঘাটে নৌকা পৌছানোর পর নৌকায় উঠার সময় স্বদেশীদের ঘেরাও করলে মারামারি আরম্ভ হয়,তবে শেষ পর্যন্ত ঐ দলের সবাই ধরা পড়লো,আহত স্বদেশীদের ক্ষীতিশ বাবু কাচারীতে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

ঘটনার দিন ছিল ১৯৩৩ সালের ২৯শে অক্টোবর,পুলিশের সাথে ছিল Associated press এর প্রতিনিধি হিসাবে মন্মথ কুমার রায়,স্বাধীনতা উত্তরের বালুরঘাটের এক খ্যাতনামা উকিল এবং নাট্যকার।বিচারের জন্য
দিনাজপুরে special tribunal গঠন করা হয়,E.S.Simpsonকে সভাপতি করে মৌলানা এমদাদ আলী,বিপিন বিহারী মুর্খাজী সহ তিনজনের এক বিচার বিভাগ.২ জন পলাতক আর ১৩ জন উপস্থিত আসামীর বিরুদ্ধে হিলি ডাকাতীর মামলা আরম্ভ হয়।
tribunal এর রায় বের হলো ২৭ শে ফেব্রুয়ারী ১৯৩৪ এ,
রায়ে অপরাধীর শাস্তি হয় এ ভাবেঃ
১) প্রাণকৃষ্ণ চক্রবর্তী-মৃত্যুদন্ড
২) সরোজকুমার বসু-মৃত্যুদন্ড
৩) সত্যব্রত চক্রবর্তী-মৃত্যুদন্ড
৪) হ্রীষিকেশ মুর্খাজী-মৃত্যুদন্ড
৫) প্রফুল্ল নারায়ন সান্যাল-যাবৎজীবন কারাদন্ড
৬) হরিপদ বসু-১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড
৭) কালীচরণ সরকার-১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড
৮) আবদুল কাদের চৌধুরী-যাবৎজীবন দ্বীপান্তর
৯) কিরণ চন্দ্র দে-যাবতজীবন দ্বীপান্তর
১০) রামকৃষ্ণ মন্ডল-১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড
১১,১২,১৩) অশোক,লালু,শশধর দোষ স্বীকার করে পায় ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড
Tribunal হাইকোর্টে আপীল করার জন্যে আসামী পক্ষের জন্যে ছিল মাত্র ৭ দিন সময়।
হাইকোর্টে আপীলে শুনানিতে ছিলেন তিন বিচারক জাষ্টিশ প্যাটারসন,জাষ্টিশ সুরেন্দ্র.এন,গুহ আর প্রধান
বিচারপতি হিসাবে মন্মথ এন মুর্খাজী।
শুনানীর পরে রায়ের রদবদল হলোঃ
প্রানকৃষ্ণ-দ্বীপান্তর আর যাবৎজীবন সশ্রম কারাদন্ড
হ্রীষিকেশ-দ্বীপান্তর আর যাবৎজীবন সশ্রম কারাদন্ড
সত্যব্রত-দ্বীপান্তর আর ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড
সরোজ-দ্বীপান্তর আর ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড
প্রফুল্ল-দ্বীপান্তর আর ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড
হরিপদ-দ্বীপান্তর আর ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড
আবদুল কাদের-দ্বীপান্তর আর ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড
কিরণ-দ্বীপান্তর আর ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড
কালীপদ-খালাস

ঐ রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের বিশেষ বিচার বিভাগের কাছে আপীল ১৯৩৫ সালের ১৬ এপ্রিল নাকচ হয়.১৯৩৪ সালের রায়ের ভিত্তিতে চারজন যাদের বিরুদ্ধে রায় স্থগিত ছিল ছাড়া সবাইকে আন্দামানে পাঠানো হয়।বাকী চারজন আসামীকেও পরে ‘মহারাজা’নামের জাহাজে দ্বীপান্তরে পাঠানো হয়।

মামলার আসামীদের ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন হিলি ডাকাতীর সুবাদে গ্রেপ্তার হয়,
অমৃতকৃষ্ণ ভট্টাচার্য,বরদাভূষন চক্রবর্তী,সত্যরঞ্জন রায়চৌধুরী,রবীন্দ্র চৌধুরী মিত্র(ফাল্গুনী),সুশীল কুমার আচার্য,গৌর মোহন পাল,বিদ্যুৎ কুমার রায় যাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা দাখিল করা হয়নি।বিজয় কৃষ্ণ চক্রবর্তী নামে একজন পলাতক আসামী জুন ১৯৩৪ এ ধরা পড়ে,তাকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়।সুবোধ দত্ত চৌধুরী নামে আরেকজন পলাতক আসামী ফেব্রুয়ারী ১৯৩৫ সালে ধরা পড়ে,যে অনিল নামে হিলি ডাকাতী পর্বে জড়িত ছিল।যুগান্তর দলের পলাতক আসামী এবং চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের সাথে জড়িত চারুবাবু(কালীরোধ ব্যানার্জী) নামেও পরিচিত ১৯৩৫ সালে তাকেও হিলি ডাকাতী সুবাদে ধরা হয়,তার ছয় বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়।

আসামী পক্ষে যোগীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী,নিশিথনাথ কুন্ডু দিনাজপুরে দুজন উকিলের স্বদেশীদের জন্য সাহায্য ছিল অভাবনীয়।স্বাধীনতা উত্তরে দুজনেই কংগ্রেস রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।এ ছাড়াও অন্যান্য উকিল আরও যারা ছিলেন জে সি দত্ত,ডি সি ভট্টাচার্য,কে কে স্বরস্বতী,এন সি দাসগুপ্ত,ডি ডি কুন্ডু,এস কে সেন,এস সি গুহ,এস সি রায়,এ সি ব্যানার্জী,এস কে সেন,আর সি মুর্খাজী,ব্যারিষ্টার টি পি দাস।

এইচ ডি শর্মার সাথে প্রানকৃষ্ণ চক্রবর্তীর সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়ঃ
হিলি এলাকার মানুষজনের কাছে স্বদেশী আন্দোলনের আর্দশ,দেশ স্বাধীনতার স্বপ্ন প্রচার করার সময় এটা স্পষ্ট ছিল যে চিন্তাধারায় হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে বিরাট একটা পার্থক্য আছে।প্রানকৃষ্ণ চক্রবর্তীর মতে স্বাধীনতার
কথায় হিন্দু মুসলমান,ধর্ম জাতি না,দেশটাই প্রধান।তাই মুসলমানদের অনুশীলন সমিতির অভিযানে আনার জন্যে যা কিছু করা সম্ভব সেটাতে তার কোন কার্পন্য ছিল না।ডাঃআবদুল চৌধুরীর হিলি অভিযানে যোগ দেয়া সে দিক থেকে একটা বিরাট পদক্ষেপ।পেশায় ডাক্তার,দিনাজপুর জেলার তপন থানার আনতাসিমুল গ্রামের রহিমউদ্দীনের মাধ্যমে অনুশীলন সমিতিতে তার আসা।তপন থানার মানাহালি গ্রামের ডাঃডি এন ব্যানার্জী ছিলেন অনুশীলন সমিতির অস্ত্রশস্ত্রের দায়িত্বে,রহিমউদ্দীন পেশায় হাতীর মাহুতের সাথে তার ব্যাক্তিগত ভাবে যোগাযোগ ছিল।অনুশীলন সমিতির লোকজন প্রায়ই বিরামপুরে জমায়েত হতো,গ্রামের লোকজনের সাথে পরিচিত হওয়া,কাছাকাছি যাওয়ার একটা পদক্ষেপ।

কোর্টের রায়েও বেশ স্পষ্ট ভাবেই বলা আছেহ্রীষিকেশ,প্রানকৃষ্ণ,সরোজ,প্রফুল্ল,সত্যব্রত,কিরণ,শশধর,অনিল প্রায়ই বিরামপুরে যাতায়াত করতো আর মাঝে মাঝে ঐ এলাকার বন্ধুদের বাড়ীতে খাওয়াদাওয়া রাতকাটানোটাও
বাদ পড়েনি,বিরামপুরের সাহাদের বাড়ী ছিল তাদের একত্রিত হওয়ার একটা বিশেষ জায়গা।
হিলি ডাকে হামলা করার আগে ঠিক হলো,আস্থানা হবে দুই জায়গায়,বিরামপুর আর পাঁচবিবি।পাঁচবিবিতে ডাঃআবদুল কাদের চৌধুরী একটা বাসা ভাড়া করলেন তখন,প্রানকৃষ্ণ চক্রবর্তীর সাক্কাৎকারে জানা যায় আক্রমনের দিনে সবাই ডাঃচৌধুরীর বাসায় জমায়েত হয়ে হিলির দিকে রওয়ানা দেয়।দূর্ভাগ্যবশতঃ আমাশয়ের কারণে ডাঃ চৌধুরীর শেষ পর্বে যোগ দেয়া সম্ভব হয়নি।স্বদেশীদের হিলি ডাক অভিযান পর্বকে সফল বলা না গেলেও প্রানকৃষ্ণ চক্রবর্তীর মতে ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে এ ঘটনার অবস্থান নিঃসন্দেহে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের ঘটনার পাশাপাশিই।

ঘটনার ইতিহাস থেকে এ টুকু বোঝা স্বদেশীদের হিলি আক্রমণের পরিকল্পনায় বেশ ফাঁক ছিল,তা ছাড়া রেল ষ্টেশনের মত গুরুত্বপূর্ন জায়গায় ও ধরণের চাঞ্চল্যকর হামলার পর সরকার পক্ষ থেকে আক্রমনকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য কোন কার্পন্য হবে না সেটা তো জানাই।তবে অবাক ঘটনা যে শুধু এক কনেষ্টবল রামসিংহ
জমিদারের সাহায্য নিয়ে সবাইকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।গ্রামের লোকজনের সাথে স্বদেশীদের দূরত্ব ছিল অনেক,জমিদার খুব সহজেই গ্রামের লোকজনকে ডাকাত বলে সকলের সাহায্য নিতে সক্ষম হয়।দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ঐ তরুনরা ব্যার্থ হয় আমাদের দেশের আরও অন্যান্য চাতুরী বিশ্বাসঘাতকদের জন্যে এখানেও।ট্রাইবুনাল কোর্ট জমিদার ক্ষীতিশ,রামসিংহ অন্যান্যদের ব্রিটিশ সামাজ্রের বীর যোদ্ধা হিসেবে বলতে ভুলে যায়নি,এমন কি ভারতীয় ব্রিট্রিশ সর্মথকরা আরেক দফা এগিয়ে বলে,ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জন্য তাদের সাহায্যের কথা ইতিহাসে অন্যন্য হয়ে থাকবে।



০০০০০০০০০০০

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৩৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ইরানের পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করা অসম্ভব: ইসরায়েল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১:২০




ইসরায়েলের পক্ষে ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করা অসম্ভব। এটি করতে পারে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই এটি করা সম্ভব- এমনটা জানালেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লিটার।

সোমবার ( ১৬ জুন) মেরিট... ...বাকিটুকু পড়ুন

somewherein blog টিম এর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:৫৪


ব্লগ ব্যবহারের শর্তাবলী ২খ. যেকোন ধরণের মন্তব্য, যার মর্মার্থ আমাদের কাছে গঠনমূলক না হয়ে সংঘাতপ্রয়াসী / উস্কানীমূলক অথবা সমালোচনামূলক না হয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ মনে হলে তা নীতিমালা অনুযায়ী সরিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্যাবলেট খেলেই নির্মূল হবে রক্তের ক্যানসার? নতুন ওষুধ আসছে দেশে, দাম কত?

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৬





ট্যাবলেট খেলেই আর ক্যানসার ছড়াবে না? রক্তের ক্যানসার নির্মূল করতে নতুন ওষুধ আসতে চলেছে দেশে। গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল ওষুধটি বানিয়েছে। আমেরিকার এই ওষুধ নির্মাতা সংস্থার ওয়ার্কশপ রয়েছে ভারতেও।... ...বাকিটুকু পড়ুন

খোমেনীর স্বৈরশাসনের সূচনা: ধর্মীয় বিপ্লব থেকে রক্তাক্ত দমন

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ১৭ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮

খোমেনীর স্বৈরসাশন ও ইরানের কালো ইতিহাস:
============================

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইরানে যে 'ধর্মনির্ভর রাষ্ট্রশাসন' প্রতিষ্ঠিত হয়, তার মূল স্থপতি ছিলেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নামে তিনি দেশটিকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংরক্ষিত নারী আসন: সংস্কারের নামে চাপিয়ে দেওয়া, না কি গোপন এজেন্ডার বাস্তবায়ন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ৯:৪৭


বাংলাদেশে সংস্কারের নামে আজ যে কাণ্ড চলছে, তা দেখে পুরনো প্রবাদটি মনে পড়ে—"অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।" একটি ইন্টেরিম সরকার, যাদের চেয়ারে বসা একটি জটিল ক্ষমতার সমীকরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×