মো. কাউছার মিয়া। মৌলভীবাজার জেলা তথা শ্রীমঙ্গলের জনপ্রিয় নাট্যকর্মী। স্থানীয় বিনোদন থিয়েটারের অন্যতম সদস্য। প্রায় অর্ধ শতাধিক মঞ্চ নাটকে অভিনয় করে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। মাত্র দুই ফুট উচ্চতার বামন মো. কাউছার মিয়া পেশায় পান-সিগারেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। শ্রীমঙ্গল শহরের স্টেশন রোডস্থ শিরিষ গাছের তলায় টং দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ত্রিশটি বসন্ত তার জীবন থেকে পেরিয়ে গেলেও শারীরিক প্রতিবন্ধী হবার কারণে বিয়ের পিড়িতে বসার সাধ তার অপূর্ণই থেকে যাবার উপক্রম হয়। এ জীবনে কারো বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হবেন সে চিন্তাই ছেড়ে দিয়েছিলেন বামন কাউছার মিয়া। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘পাঞ্জেরী যুব সংঘ। তারা খুঁজে বের করে আড়াই ফুট লম্বা কনে শারীরিক প্রতিবন্ধী মাহমুদা আক্তারকে। গত ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কয়েক হাজার অতিথির উপস্থিতিতে জমকালো অনুষ্ঠান ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লক্ষাধিক টাকার গৃহ সামগ্রীসহ তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে সংগঠনটি। ব্যতিক্রমি এ বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে জেলাব্যাপী আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
পাঞ্জেরী যুব সংঘের সভাপতি মানিক মিয়া জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী হবার কারণে কাউছার মিয়ার বিয়ের পিড়িতে বসা ছিলো শুধু স্বপ্ন। একইভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও আর্থিক সংকটের কারণে মাহমুদা আক্তারের পিতা জাকির মিয়া কন্যাকে পাত্রস্থ করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নজরে আসার পর স্থানীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পাঞ্জেরী যুব সংঘের সদস্যরা উভয়ের সম্মতিক্রমে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে। ২৯ ডিসেম্বর বিয়ের দিন ধার্য হলে পক্ষকাল পূর্ব থেকে অতিথিদের আমন্ত্রণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং বিয়ের বাজার করা শুরু হয়। বিয়ের তিনদিন পূর্ব থেকে এলাকায় মাইকিং করে তারা নিমন্ত্রন জানান কয়েক হাজার মানুষকে। নির্ধারিত দিনে ইসলাম ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী ৫০ হাজার দেনমোহর ধার্যে তাদের বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। বাঙ্গালী সংস্কৃতির হাজার বছরের রীতিনীতি অনুযায়ী বিয়েতে পাঞ্জেরী যুব সংঘের সভাপতি মানিক মিয়া, সহসভাপতি কবির আহম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুর রহমানসহ ৫০ জন বরযাত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পাঞ্জেরী যুব সংঘের সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুর রহমান জানান, ব্যাতিক্রমী এ বিয়ের আয়োজন করে তারা আনন্দীত। তিনি জানান, বিয়েতে খাবারের জন্য যে টাকা বরাদ্ধ করা হয় সে টাকা থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে তারা তিন শতাধিক গরীব ও দুস্থ মানুষের মাঝে কম্বল বিতরন করেন। ব্যতিক্রমী এ বিয়েতে উকিল ছিলেন সংঘটনের উপদেষ্টা মেন্দি মিয়া। কাবিননামায় স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন সংগঠনের সদস্য কবির আহম্মদ ও বাপ্পি। প্রায় তিন সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বামন বিয়েতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রী রনধীর কুমার দেব, ভাইস চেয়ারম্যান তোফাজ্জুল হোসেন ফয়েজ, সাতগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপ দত্ত, শ্রীমঙ্গল পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি মো. শাহাদত হোসেন, ৩নং শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বিশিষ্ট সমাজসেবী ভানু লাল রায় ও শ্রীমঙ্গল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বিকুল চক্রবর্ত্তী। বিয়ের কাজ সম্পন্ন হবার পর বর-কনের সম্মানে আয়োজন করা হয় ব্যান্ড শো ও বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সঙ্গীত শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এ বিবাহ অনুষ্টানকে স্মৃতিময় করে রাখতে পাঞ্জেরী যুব সংঘ ৪০জন সম্মানিত অতিথিকে শুভেচ্ছা ক্রেষ্ট প্রদান করে সম্মানিত করে।
বিয়ের পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় বর কাউছার মিয়া বলেন, ‘জীবনে কোনদিন বিয়ে করতে পারবো সে স্বপ্ন পূরণ হবে তা কল্পনায়ও ছিলো না। অবশেষে পাঞ্জেরী যুব সংঘ আমার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’ কনে মাহমুদা আক্তার বলেন, যারা আমাদের বিয়ের আয়োজন করেছে তাদের কাছে আমরা ঋণী। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ সুখী জীবনের জন্য সকলের দোয়া চাই।’
ব্যতিক্রমী এ বিয়ের অতিথি শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রী রণধীর কুমার দেব তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘পাঞ্জেরী যুব সংঘের সদস্যরা এ ধরনের একটি মহতী অনুষ্ঠান আয়োজন করায় আমি তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। এ অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ করায় আমি সত্যিই অভিভূত।’ আমি এ সংগঠনের প্রতিটি সদস্যকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বামন জুটির ব্যতিক্রমী বিয়ে কয়েক হাজার অতিথির উপস্থিতিতে জমকালো অনুষ্ঠান
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা
তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান
উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!
এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।
"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন
কে কাকে বিশ্বাস করবে?
করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।
সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন