রামাদানে কি কি করবেন আর কি কি করবেন না (একদম পার্সোনাল এক্সপিরিয়েন্স থেকে)
১। রমযান ক্যামনে রামাদান হয়ে গেল, সেহরি ক্যামনে সুহুর, সালাত ক্যামনে সালাহ হয়ে গেল এইগুলা নিয়ে আসলে ত্যানা প্যাঁচায়ে লাভ নাই। সহজ উত্তর হচ্ছে, ইন্টারনেটের কারনে ইসলাম চর্চা অনেক বাড়সে এবং ব্যাপক হইসে তাই সহীহ উচ্চারণের দিক দিয়ে লোকজন একটু সতর্ক হইসে এই যা। এমন না যে আগের উচ্চারণ বললে সব শেষ হয়ে যাবে। যারা সহীহ উচ্চারণ করতেসে তাদেরকে উৎসাহিত করুন। পারলে নিজেও শিখে নিন।
২। আল্লাহর ওয়াস্তে, অন্য মানুষকে আস্ক করা বন্ধ করুন যে “আপনি কি রোযা?” । দরকার কি আসলে? আপনি যদি রোযা থাকেন ধরে নিবেন যে আপনার আশেপাশের সবাই রোযা আসে। সিম্পল।
৩। মেয়েদের পিরিয়ড হয়। জি পিরিয়ড। যতই সোশ্যাল ট্যাব্যু হোক না ক্যান, তাদের হয়। তারা ওই সময় রোযা রাখতে পারে না । তাই কোন মেয়েকে রোযা রাখসে নাকি রাখে নাই এইটা জিজ্ঞেস করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। সব জায়গায় পাকনামি করার দরকার নাই।
৪। কাওকে ইসলাম-শেইম করতে যাবেন না। ইসলামের নামে কাওকে লজ্জা দিলে তার ইসলামের পথে ফেরা তো দূরে থাক উল্টা হেইট্রেড জন্মান্তে পারে সেলফ-গিল্ট থেকে। অফিসে কাওকে খেতে দেখলে, তার সাথে যদি চোখাচোখি হয়ে যায় তাহলে মিষ্টি একটা ফ্রেন্ডলি হাসি দিয়ে দিবেন। তাকে বিব্রত করতে যাবেন না। ভার্সিটির ক্যান্টিনের ক্ষেত্রেও সেইম ট্রিটমেন্ট প্রযোজ্য।
৫। একটা জিনিস মনে রাখবেন যে, অনেক ঈমানদার মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে যায়, অনেক পথভ্রষ্ট লোক ঈমানদার অবস্থায় মৃত্যুবরন করে সো কাওকে জাজ করতে যাবেন না। জাজ করলে চাকরি থাকবে না।
৬। ধর্ম নিয়ে তর্ক থেকে দূরে দূরে থাকবেন। তর্ক দেখলেই উসাইন বোল্টের মত দৌড় দিবেন। একটু সেলফিস হবেন এই মাসে। অনেক ঘি-ওয়ালা মাস এইটা, সো নিজের চরকায় যত পারবেন ঘি ঢালতে থাকবেন। তর্ক করার জন্য বাকী ১১ মাস আসে মনে রাখবেন।
৭। আপাত দৃষ্টিতে আমরা ৩ বেলা খাই বললেও আমরা আসলে খাই ৫ বেলা। সকালের নাস্তা, দুপুর সোয়া এগারোটার সিঙ্গারা, দুপুরের খাবার, বিকালের নাস্তা, রাতের খাবার। আর রামাদানে খাওয়ার সুযোগ থাকবে ২ বেলা। এই ২ বেলায় ৫ বেলার খাবার ঠুসানোর চেষ্টা করবে না। শরীর অনেক প্যারা দিয়ে দিবে। হুদাই ক্লান্ত হয়ে যাবেন।
৮। কোন মেয়ে হিজাব পড়ল, কোন মেয়ে ওড়না বুকে দিল এইগুলা একদম বাদ দিয়ে যাবেন। লাভ নাই এইসব আলোচনার। যার দেয়ার সে দিবে, যার দেয়ার না সে দিবে না। মাঝখান দিয়ে আপনার সালমান খান সাঁজার কোন দরকারই নাই। তবে বোনদের উদ্দেশ্যে অনুরোধ থাকবে, যতটুকু মডেস্ট থাকা যায় চেষ্টা করবেন। এক মাসই তো! কুল সাজার জন্য বাকী ১১ মাস তো আসেই তাইনা? হইলেন একটু বিগার পারসন এই এক মাসের জন্য কি আর আসে লাইফে!
৯। ফুডব্যাংকের ইফতারের এলবাম দেখবেন, গবেষণা করবেন, খাবার দেখে কাঁদবেন, কোন বাধা নাই। কিন্তু যতখানি সম্ভব বাসায় নিজের ফ্যামিলিকে সময় দিবেন, একসাথে খাবেন। খুব্বি প্রেসাস মোমেন্টস এইগুলা।
১০। সুযোগ পাইলেই ইফতারের জন্য লোকজনকে ইনভাইট করবেন। কে রোযা রাখসে নাকি রাখে নাই, অমুসলিম নাকি এইসব দেখার কোন দরকারই নাই।
১১। যত বেশি বেশি পারবেন দান করবেন। দরকার হলে নিজের লাইফস্টাইলকে একটু কম্প্রমাইজ করবেন। যদি ২৫০০ টাকা দিয়ে পাঞ্জাবী কেনার প্ল্যান থাকে তাইলে ২০০০ টাকা দিয়ে কেনে বাকী ৫০০ দান করে দিলেন। তবে যাই দান করবেন তা নিয়ে ঢাকঢোল ফাটায়ে নিজেকে কাবিল হুসেন প্রমাণ করতে যাবে না ভুলেও।
১২। নামাযগুলো নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করবেন। মিস চলে গেলে আফসোস না করে, পরের নামাযটা ধরে ফেলবেন। নিজেকে একটু পুশ করবেন তবে শুরুতেই দাঁত দিয়ে ট্রাক টানার দরকার নাই।
১৩। কুর’আন পড়তে পারলে বেশি বেশি পড়বেন। না পারলে শেখার চেষ্টা করতে পারেন। তাও যদি না হয় তাইলে ইউটিউবে কুর’আন শুনতে পারেন। যাই করবেন অর্থসহ পড়বেন। তাও ভালো না লাগলে, চমৎকার চমৎকার ইসলামিক লেকচার আছে সেইগুলা শুনতে পারেন। মুফতি মেঙ্ক, বিলাল ফিলিপ্স, নোওমান আলি খান, জাকির নায়েক আমার অনেক পছন্দের। নবীদের রাসুলদের অনেক স্টোরিজও পাওয়া যায়। শুনতেও পারেন, পড়তেও পারেন। মজার আসে অনেক। আর একটা সুরা মুখস্ত করার ট্রাই নিবেন। হইলে হইল, না হইলে নাই। বাট এক সপ্তাহ এটলিস্ট মন থেকে ট্রাই নিয়েন। হাদিথ পড়ারও নিয়ত রাখবেন। আপনার পক্ষে যতটুকু করা পসিবল তার থেকে ২০% এক্সট্রা এফোর্ট দিবেন আর কি।
১৪। পেটে খাবার থাকবেনা। ঢাকার ওয়েদার, রাস্তা ও যানবাহন খুব্বি প্যারা দিবে। পানির পিপাসায়ও কষ্ট পাওয়ার অনেক চান্স আসে এই ওয়েদারের কারনে। সো ক্রেঙ্কি হয়ে পড়ার চান্স আসে। তার উপর কাজের প্রেশার থাকবে তাই মেজাজ গরম থাকার চান্স অনেক বেশি থাকবে। মনেপ্রানে চেষ্টা করবেন নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে। যেসব জিনিস প্যারা দেয় ,তা থেকে দূরে থাকতে।
১৫। দুইবেলা দাঁতব্রাশ করবেন। পরিষ্কার পরিপাটি থাকার ট্রাই করবেন। আপনার কারনে যাতে আরেকজনের কষ্ট না হয় এইটা খেয়াল রাখবেন।
১৬। বিড়ি সিগারেট ছাড়ার উত্তম সময় এইটা। তাই এটলিস্ট এক সপ্তাহ ট্রাই মেরে দেখতে পারেন। যদি না পারেন তাইলে মরার সময় কাওকে এক প্যাকেট সিগারেট দিয়ে দিতে বইলেন আর জাহান্নামে তো আগুন আসেই সো ধরাইতে ঝামেলা হবে না।
রামাদান নিয়ে এই লেখাটা গত দুই বছর ধরে লেখবো ভাবতেসিলাম কিন্তু কোন মতেই লেখাটাকে ছোট বানানো যাচ্ছিলো না তাই লেখা হচ্ছিল না। এইবার বসে গেলাম। ভালো লাগলে শেয়ার দিয়ে পারেন, না ভালো লাগলে গালি দেয়ার অপশনও আসে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:২২