somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসল বাবা নিয়ে কাহিনী ইয়াবা নিয়ে নয়

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার আব্বু খুব অদ্ভুত সহজ সরল মানুষ ছিল। স্বামী, মামা, ভাই এবং অন্যান্য রোলগুলো খুব সুন্দর করে পালন করলেও, বাবার রোলে ছিল বেস্ট। আমার প্রথম দিন থেকে তার শেষ দিন পর্যন্ত আমাকে একই ভাবে লালন পালন এবং পেম্পার করে গেসে।

বাসার কোন কাজ তো না, আমার নিজের পার্সোনাল কোন কাজও আমার করা লাগতো না। আমার সব কাজ, সব মানে সব যেমন, আমার রুমাল, ব্রাশ, রেজার কিনে আনা, আমার জন্য প্রতিদিন টক ফল কিনে আনা, আমার জুতা পলিশ করে আনা, আমার কাপড় আয়রন করা, আমার শরীর খারাপের সময় আমাকে নিয়ে আসা যাওয়া করা, আমার ওষুধ কিনে আনা, আমার জন্য নাস্তা কিনে আনা, আম্মু না থাকলে আমার খাবার গরম করে দেয়া, টাকা ভাংতি করে রাখা, মানে এমন কিছু বাকি নাই যে করতোনা। আমি জাস্ট বলে রাখতাম, দেরীতে হইলেও সব রেডিমেড পাইতাম।

তবে খুব আন্ডারঅয়েল্মিং ইকোনমিক্যাল অবস্থার কারনে, সবসময় সব আশা পূর্ণ করতে পারতো না। কিন্তু এই সীমিত ইঙ্কামের ভিতরে যতটুকু বেস্ট সার্ভিস দেয়া যায় তা করে গেসে আমার জন্য। যদিও, সন্তান হিসেবে খুব কম সময়ই আসে যে আমি ইল্লোজিক্যাল জিনিস চাইসি।

সাধ্যের মধ্যে সব দিতে পারলেও, যেটা দিতে পারতো না, সেটা হচ্ছে ‘সময়’। ছোটবেলা থেকে বেশীর সময় বাসায় এসে দেখত যে আমি ঘুমায় গেসি, আর তার উঠার আগেই আমি রেডি হয়ে স্কুলে দৌড়। সো দেখাই হতো না তেমন একটা। কলেজ-ভার্সিটি আমলে আমি আমার হবি, পড়াশোনা, বন্ধু বান্ধব নিয়ে বিজি থাকতাম সো তখনও তেমন আহামরি কথাবার্তা হত না। আমি কি করতেসি, কি প্ল্যান করতেসি আব্বু সব আম্মুর কাছ থেকে শুনে নিত।

২০১২ আমার প্রচণ্ড অসুস্থতার প্রথম বছর। আব্বুও প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে ঘরে, আমিও অসুস্থতার কারণে জব ছেড়ে দিয়ে ঘরে। ভয়ানক অনিশ্চয়তা কাজ করতেসে ফ্যামিলিতে, কারন ৩জন মানুষের দুইজনই ভয়ানক অসুস্থ সাথে ইকোনমিক্যালি একদম ব্রোক। আম্মুও টেনশনে টেনশনে অসুস্থ প্রায়। যেখানে আমার ফ্যামিলিকে দেখার কথা সেখানে আমি জব টব ছেড়ে বাসায়, এই গিল্টের কারনে আমি তেমন একটা কথাবার্তা বলতাম না কারও সাথেই।

তখন খুব কারেন্ট যাইত। এক ঘন্টা, দুই ঘণ্টা কারেন্ট থাকত না। আমার রুম রান্নাঘরের সাথে হওয়ায়, কারেন্ট গেলে প্রচণ্ড গরম হয়ে যেত। তাই, আমি সামনের রুমে চলে আসতাম কারেন্ট গেলে। ওই রুমেই আব্বু আম্মু থাকে। সো কারেন্ট যাওয়ার কারনেই, আমরা পুরা ফ্যামিলি এক সাথে টাইম স্পেন্ড করা শুরু করি। আমরা সবাই সবার কাহিনী শেয়ার করতে থাকি, আব্বু তার ছোটবেলার কাহিনী বলতো, ঢাকায় এসে ফুটবল দেখার কাহিনী, দামী ইম্পরটেড কাপড় চোপড় কেনা, ফ্যান্সি ফ্যান্সি মজার মজার খাবারের কাহিনী আরও অনেক কত কি কাহিনী! আমিও আস্তে আস্তে আমার শরীরে আসলে কি ঘটতেসে বলা শুরু করলাম। নতুন জেনারেশন কি করতেসে কি ভাবতেসে, পলিটিক্স, খেলা এবং হাজারও জিনিসপাতি নিয়ে আলোচনা। প্রথমবারেরমত দুইজন আসলে কি ফিল করতেসি তা কানেক্ট করা শুরু করলাম বিশেষ করে শারীরিক অবস্থার কথা।

২০১৩ সালের এই সেপ্টেম্বরে আব্বু বিদায় জানায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই সুন্দর সৃতিগুলা আর এই টাইম স্পেন্ড আসলে সম্ভব হইসে শুধুমাত্র আমাদের অসুস্থতার কারনে। মোরাল অফ দ্যা স্টোরি হচ্ছে, অসুস্থতারও আসলে একটা পসিটিভ সাইড আসে অন্য সবকিছুর মত। বাবা চলে যাওয়ার ৫ বছর পর এই প্রথম বাবাকে নিয়ে কিছু লেখলাম। অনুভুতি খুব ওভারঅয়েল্মিং হলেও, একদম খারাপও না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২১
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×