somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিছে মিছি

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজমিস্ত্রি আর লেবারেরা কাজ শেষ করে টিউবওয়েলে হাত পা ধুয়ে টাকার জন্য অপেক্ষা করছে।

উপশহরের লোকজন এখনও অনেকটা মানুষ ই আছে। শহরের লোকজনের মত কৃত্রিম হয়ে যায় নি। তারা হুট করে কাউকে "তুমি" বলতে পারে না এখনও। কারও কথা পুরো না শুনে উত্তর দেয়ার জন্য মুখ খোলে নাহ। থাক সে সব কথা!

মিস্ত্রীদের পাকা কাঁঠাল খেতে দেয়া হয়েছে। তারা কাঁঠাল শেষ করে পান খাচ্ছে আর গল্প করছে। টানা চার মাস ধরে বাড়িটার কাজ করছে তারা। আজ একদম পুরো দমে শেষ। কেমন জানি একটা খারাপ লাগা কাজ করছে সবার মাঝে। অবশ্য এই ই তাদের পেশা। ফাঁকা যায়গায় সুন্দর করে দালান ঘর তুলে দেয় অন্য মানুষকে! কত যত্ন থাকে পুরো কাজটাতে! কিন্তু নিজেরা একটা দিন ও থাকতে পারে নাহ! :(

বাড়ির কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলো রিমি। ছেলে-মেয়েরা সেই কবে থেকে বায়না ধরে আছে নানা বাড়ি যাবে। অনেক দিন বাবার বাসায় যাওয়া হয় নাহ তার। সব কিছুই ঠিক ঠাক, কিন্তু বাড়ির কাজ শেষ না করে কোন ভাবেই আর যাওয়া হয়ে উঠছিল নাহ। আজ থেকে কাজ শেষ। কাল সকালেই রওনা দিবে ইন্সা আল্লাহ।

মিস্ত্রীরা চলে গেছে সেই ১ ঘন্টা হল। এখনই নতুন রুম গুলোতে মালপত্র উঠানো যাবে নাহ। দুই একদিন সময় লাগবে। তাছাড়া সে বাবার বাসায় যেয়ে এবার ১০-১৫ দিন থাকবে। এই কয়দিন রাকিব-মুহিনের বাবাকে রান্না করে দেয়ার জন্য শম্পাকা বলেছে। শম্পাদের বাড়ি রিমিদের ঠিক পাশের বাড়ি। একটা ছোট বাচ্চা আছে শম্পার। স্বামী রেখে ঢাকা পালিয়ে গেছে। এর ওর বাড়িতে কাজ করেই বাচ্চাটাকে নিয়ে চলে।

পরেরদিন একদম ভোর বেলায় রিমি বাচ্চাদের নিয়ে রওনা দিয়ে দিলো। শম্পাকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বলল, তোর ভাইজানের খাওয়া দাওয়া দেখিস। সময়মত রান্না করে দিস। বাসি কিছু খাওয়াবিনা। ওর গ্যাসের সমস্যা।

ওদের বাবা বাসে উঠিয়ে দিয়ে গেলো। কোকাকোলা, চিপস, ঝাল চকলেট আর শ্বশুর বাড়ির জন্য মিষ্টি কিনে দিলো। :) বাচ্চাগুলো যে কি খুশি, বলা যাবে নাহ। ওদের বাবা অফিস থেকে ছুটি নিতে পারে নি, তাই তিনি যেতে পারছেন নাহ। রিমির একটু একটু মন খারাপ লাগছে। মানুষটা একা একা কি খাবে না খাবে! বাসি খাবার একদম খেতে পারে নাহ! :(

..................
..................

কেটে গেলো ১৫ দিন। আর কোন ভাবেই থাকা সম্ভব নাহ। বাচ্চাদের স্কুল খুলেছে। তাছাড়া ওদের বাবাও বার বার ফোন দিচ্ছে। রিমি বাবা-মাকে বুঝিয়ে বাড়ির জন্য রওনা দিলো। বাসে করে আসতে প্রায় ৪ ঘন্টা লাগলো। ওদের বাবা বাস স্ট্যান্ডেই দাঁড়িয়ে ছিলো।

বাসায় এসে ঢুকতে প্রায় রাত ৮ টা বেজে গেলো। বাহ! সুন্দর লাগছে তো বাসাটা। মালপত্র কাকে নিয়ে রুমে তুলেছ?

..............
..............

পরের দিন সকালে শম্পা চলে আসলো। রুটি বানাচ্ছে সে। বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। বাচ্চাদের খেতে দিয়ে শম্পা নতুন রুম গুলোতে কাজে লেগে পড়লো। মেঝে টাইলস করা। ঝকঝকে সাদা মেঝে। ময়লা পড়ে একদম কালো হয়ে গেছে। সে একটা রুম পরিষ্কার করেই হাঁপিয়ে উঠলো। নিজেই নিজেকে বলল, থাক আর দুইটা রুম পরে করা যাবে। শম্পা ফাঁকা হোক আগে।

দুপুরের রান্না শেষ করে শম্পা আর রিমি কাজে লেগে পড়লো। বিকেল চারটা বাজলো পুরো বাড়ি পরিষ্কার করতে। শম্পা গোসলে গেলো। তার পরপর ই রিমিও গেলো। রিমির একটু বেশি ই সময় লাগলো মনে হলো। সে চুল মুছতে মুছতে বের হয়ে দেখে শম্পা ওদের শোয়ার ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে। ওর গা কেমন জানি গুলিয়ে উঠলো। অবশ্য আজ অনেক পরিশ্রম করেছে শম্পা। তারপরও............।। আরো তো অনেক বিছানা আছে! সে এখানে কেন শুয়ে থাকবে?

রিমিকে ঢোকা দেখে শম্পা স্বাভাবিক ভাবেই উঠে বসলো। রিমি চোখ রাগিয়ে বলল, এই তুই এখানে শুয়ে আছিস কেন? শম্পা কিছু বলে না, একটু পরে সে উঠে চলে গেলো। রিমি তো অবাক! কি হয়েছে এর?

পরের দিন সকালে শম্পা রুটি বানাতে বসলো। বাচ্চারা আর ওদের বাবা টেবিলে বসে আছে রুটির জন্য। দেরি হচ্ছে দেখে রিমি উঠে গেলো! সমস্যা কি মেয়েটার?

যেয়ে দেখে শম্পা রুটির খামির করে ধরে বসে কাঁদছে। রিমি এই অবস্থা দেখে জোরে করে একটা ধমক দিলো! সবাই খাবার জন্য বসে আছে আর তুই কি শুরু করেছিস এখানে?

ওর ধমক শুনে বাসার সবাই উঠে আসলো। রিমি জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে তোর বল তো? শম্পা ফ্যা ফ্যা করে কাঁদছে। কিছুই বলে নাহ। সবাই তাকিয়ে আছে শম্পার দিকে। রিমি বলল, এবার কিন্তু তোকে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিবো। বল কি হয়েছে?

আঁচলে চোখ বুজতে বুজতে শম্পা বলল, " মুই ভাইজানোক ভালোবাসি ফেলাইচু, মুই ভাইজানোক ছাড়া বাচিম না "

রিমি তাকিয়ে আছে শম্পার দিকে। সে একবার তাকাচ্ছে শম্পার দিকে আর একবার তাকাচ্ছে তার স্বামীর দিকে, মানে শম্পার ভাইজানের দিকে!

..................... পরের ঘটনা অনেক বিশাল। রিমি এখন তাদের নতুন করা বাড়িতে থাকে বাচ্চাদের নিয়ে, আর শম্পা তার বেড়ার ঘরে তার ভাইজান কে নিয়ে থাকে। -_- :P

বিদ্রঃ ঘটনা সত্য। কাহিনী বানানো। ;) ডায়ালোগটাও সত্য -_-
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×