somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসা

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-"আচ্ছা, আপনি সবসময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন কেনো? শুধু তাকান না, বোকার মতো হাসেনও।"

:"আমি আপনাকে দেখি তা কে বললো? তাহলে আপনিও নিশ্চয়ই তাকান!!"

-"আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, আপনাকে দেখবো। আমি খেয়াল করেছি কয়েকবার, তাছাড়া আমার বন্ধুরাও বলেছে। ক্লাস চলাকালীন সময়েও আপনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।"

:"কারো দিকে তাকানোটা কি অন্যায় কিছু?" -জিমাম রাগত স্বরে বলল।

-"ন্যায়-অন্যায় বুঝিনা। আমি কোন চিড়িয়াখানার জন্তু না যে, আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে এবং বোকার মতো হাসবেন।"

এরপর জিমাম চুপ করে রইল। জিমাম আর সাদিয়ার প্রথম পরিচয় হয়েছে এই তিক্ত কথাবার্তা দিয়ে। দু'জনে একই ইয়ারে, একই ডিপার্টমেন্টে। সাদিয়া ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরীদের একজন, মেধাবীও। জিমামও ব্রিলিয়ান্ট তবে চালচলনে এলোমেলো স্বভাবের। প্রথম দেখাতেই মনে হবে বোকা, কেমন যেন হ্যালাল্যালা টাইপের।

জিমাম যে সাদিয়াকে ভালোবাসে তা না। এমনিতেই মাঝে মাঝে তাকায়, তাও সরাসরি না, বেশিরভাগ সময় লুকিয়ে তাকায়। সাদিয়ার চেহারায় অদ্ভুত একটা স্নিগ্ধতা আছে।
ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে সবার মধ্যে প্রাণ-চান্ঞ্চল্য একটু বেশিই থাকে। অবাধ স্বাধীনতা, নতুন নতুন বন্ধু, সবমিলিয়ে জীবনের নতুন একটা অধ্যায়ের শুরু। বলাবাহুল্য এসময়টাতেই অধিকাংশ ছেলে-মেয়েরা প্রেমে পড়ে আর প্রেম সংক্রান্ত চিন্তাভাবনা ডালপালা গজাতে থাকে।

জিমামের ভার্সিটি লাইফ ভালোই কেটে যাচ্ছে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, গ্রুপ স্টাডি, বিকালে ঘুরতে যাওয়া। লাইফটা অনেক মজার মনে হচ্ছে। তারচেয়ে আনন্দের বিষয়, জিমামের সবচেয়ে ভালো বন্ধু এখন সাদিয়া।

জিমাম দুইটা টিউশনি করে। সবমিলিয়ে ছয় হাজার টাকা পায়। স্টুডেন্টদের একজন মৌরি, ক্লাস টেন-এ পড়ে। খুবই বাচাল। কথা বলতে বলতে মাথা ধরিয়ে দেয়। আজ পড়াতে এসে জিমাম একা একা বসে আছে। মৌরি এখনও পড়তে আসেনি। জিমাম গতকালের কথা ভাবছে। গতকাল সাদিয়ার জন্মদিন ছিলো। দিনটা অনেক আনন্দে কেটেছে সবাইকে নিয়ে।

-"স্যার" -মৌরি ডাকলো।

:"হুম। এতোক্ষণ কি করছিলে? সেই কখন আসলাম। কাল থেকে ঠিক টাইমে পড়তে বসবে।"

-"স্যার, সিরিয়াল দেখছিলাম। 'সাত পাকে বাঁধা'। অনেক সুন্দর একটা সিরিয়াল, আমি কখনও মিস দিইনা।"

মনে মনে জিমাম বলল, তোর মাথা সুন্দর, বেকুবের ডিম। তুই যেমন বেকুব, ঐ সিরিয়ালও বেকুব কিসিমের হবে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। এসব সিরিয়াল জিমাম দু'চোখে দেখতে পারেনা।

:"ঠিক আছে, এখন পড়ো।"

-"স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করি?"

:"বলো"

-"আপনার কী জিএফ আছে?"

:"এই জিএফ আবার কী?"

-"জিএফ হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড!"

উত্তর না দিয়ে জিমাম রাগী চোখে তাকাল। মৌরি আর কথা না বলে পড়তে লাগলো। গার্লফ্রেন্ডের কথা বলাতে সাদিয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। সাদিয়ার সাথে মিশতে মিশতে কখন তাকে ভালোবেসে ফেলেছে জিমাম নিজেও জানেনা। সাদিয়াও সম্ভবত জিমামকে অনেক পছন্দ করে।

সাদিয়া যে জিমামকে পছন্দ করে সেটা বুঝতে পারলো আরো কিছু দিন পর। একদিন ক্লাস শেষে-

-"জিমাম, কয়েকদিনের মধ্যে আমাকে হয়তো বাড়িতে যেতে হবে।"

:"হঠাত্‍ বাড়িতে কেনো? ক্লাস চলছে, তাছাড়া সামনে এক্সাম।"

-"বাড়িতে যেতে হচ্ছে একটা জরুরী কাজে। এক্সাম হলেও করার কিছু নেই।"

:"তোমার আবার জরুরী কাজ কী?"

-"আমাকে দেখতে আসছে। ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট। বড়মামার বন্ধুর আত্মীয়।"

জিমামের চারপাশ কেমন যেন দুলে উঠল। ভয়ংকরতম দুঃসংবাদ। সাদিয়াকেও ভীষণ মনমরা দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় নিজেকে স্বাভাবিক রাখা অনেক কষ্টের। তারপরও কোনমতে ফান করে বলার চেষ্টা করলো-

:"কনগ্র্যাটস্! নতুন জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছো। ছেলেও অনেক ভালো প্রফেশনের।"

-"প্লীজ জিমাম, ফাজলামো করবেনা। আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। কিন্তু আমার কথা কেউ শুনছেনা। বাড়ীর সবাই বলছে এমন ভালো ছেলে নাকি হাতছাড়া করা যাবেনা। এখন একমাত্র মেঝ চাচাই আমাকে রক্ষা করতে পারে। মেঝ চাচাও বিপক্ষে চলে গেলে আমার লাইফ শেষ।"

মনে মনে জিমাম বললো, শালার ভালো ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট। একবার যদি সামনে পাই সাদিয়াকে বিয়ে করার স্বাদ মিটিয়ে দিতাম। অর্থহীন চিন্তাভাবনা। আসলে জিমামের করার কিছু নেই।

আজ সাদিয়া বাড়িতে যাচ্ছে। জিমামও যাচ্ছে সাথে। না সাদিয়ার বাড়িতে নয়, সাদিয়াকে বাসে তুলে দিতে যাচ্ছে। সিএনজিতে পাশাপাশি চুপচাপ বসে আছে দু'জনে। কারো মুখে কথা নেই। সাদিয়াকে পিংক কালারের ড্রেসে অসাধারণ লাগছে। সামনের কয়েকটা চুল হাওয়াই উড়ছে। জিমাম শিওর ম্যাজিস্ট্রেট ব্যাটা সাদিয়াকে প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে ফেলবে।
কখনও কখনও প্রেমিকার অতি সৌন্দর্য্যও যে প্রেমিকের রাগের কারণ হতে পারে তা এখন জিমাম বুঝতে পারছে।
সাদিয়াও ভাবছে জিমামের কথা। এ পাগলাটে ছেলেটাকে ছাড়া সে আর কিছু ভাবতে পারছেনা। ইচ্ছে করছে জিমামের হাত ধরে কান্না করতে।

সাদিয়াকে বাসে তুলে দিয়ে জিমাম এলোমেলো পায়ে হাঁটছে। দু'জনেই নিশ্চিত গন্তব্যে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা শুরু করেছে। মন অসম্ভব খারাপ। জিমামের চোখ ভিজে যাচ্ছে বারবার। ভান করছে চোখে কিছু পড়েছে এমন। এভাবে কতোক্ষণ আর ভান করা যায়! এসময় বৃষ্টি হলে ভালো হতো, চোখের জল আর বৃষ্টির জল মিশে যেতো।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×