-"আচ্ছা, আপনি সবসময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন কেনো? শুধু তাকান না, বোকার মতো হাসেনও।"
:"আমি আপনাকে দেখি তা কে বললো? তাহলে আপনিও নিশ্চয়ই তাকান!!"
-"আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, আপনাকে দেখবো। আমি খেয়াল করেছি কয়েকবার, তাছাড়া আমার বন্ধুরাও বলেছে। ক্লাস চলাকালীন সময়েও আপনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।"
:"কারো দিকে তাকানোটা কি অন্যায় কিছু?" -জিমাম রাগত স্বরে বলল।
-"ন্যায়-অন্যায় বুঝিনা। আমি কোন চিড়িয়াখানার জন্তু না যে, আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে এবং বোকার মতো হাসবেন।"
এরপর জিমাম চুপ করে রইল। জিমাম আর সাদিয়ার প্রথম পরিচয় হয়েছে এই তিক্ত কথাবার্তা দিয়ে। দু'জনে একই ইয়ারে, একই ডিপার্টমেন্টে। সাদিয়া ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরীদের একজন, মেধাবীও। জিমামও ব্রিলিয়ান্ট তবে চালচলনে এলোমেলো স্বভাবের। প্রথম দেখাতেই মনে হবে বোকা, কেমন যেন হ্যালাল্যালা টাইপের।
জিমাম যে সাদিয়াকে ভালোবাসে তা না। এমনিতেই মাঝে মাঝে তাকায়, তাও সরাসরি না, বেশিরভাগ সময় লুকিয়ে তাকায়। সাদিয়ার চেহারায় অদ্ভুত একটা স্নিগ্ধতা আছে।
ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে সবার মধ্যে প্রাণ-চান্ঞ্চল্য একটু বেশিই থাকে। অবাধ স্বাধীনতা, নতুন নতুন বন্ধু, সবমিলিয়ে জীবনের নতুন একটা অধ্যায়ের শুরু। বলাবাহুল্য এসময়টাতেই অধিকাংশ ছেলে-মেয়েরা প্রেমে পড়ে আর প্রেম সংক্রান্ত চিন্তাভাবনা ডালপালা গজাতে থাকে।
জিমামের ভার্সিটি লাইফ ভালোই কেটে যাচ্ছে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, গ্রুপ স্টাডি, বিকালে ঘুরতে যাওয়া। লাইফটা অনেক মজার মনে হচ্ছে। তারচেয়ে আনন্দের বিষয়, জিমামের সবচেয়ে ভালো বন্ধু এখন সাদিয়া।
জিমাম দুইটা টিউশনি করে। সবমিলিয়ে ছয় হাজার টাকা পায়। স্টুডেন্টদের একজন মৌরি, ক্লাস টেন-এ পড়ে। খুবই বাচাল। কথা বলতে বলতে মাথা ধরিয়ে দেয়। আজ পড়াতে এসে জিমাম একা একা বসে আছে। মৌরি এখনও পড়তে আসেনি। জিমাম গতকালের কথা ভাবছে। গতকাল সাদিয়ার জন্মদিন ছিলো। দিনটা অনেক আনন্দে কেটেছে সবাইকে নিয়ে।
-"স্যার" -মৌরি ডাকলো।
:"হুম। এতোক্ষণ কি করছিলে? সেই কখন আসলাম। কাল থেকে ঠিক টাইমে পড়তে বসবে।"
-"স্যার, সিরিয়াল দেখছিলাম। 'সাত পাকে বাঁধা'। অনেক সুন্দর একটা সিরিয়াল, আমি কখনও মিস দিইনা।"
মনে মনে জিমাম বলল, তোর মাথা সুন্দর, বেকুবের ডিম। তুই যেমন বেকুব, ঐ সিরিয়ালও বেকুব কিসিমের হবে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। এসব সিরিয়াল জিমাম দু'চোখে দেখতে পারেনা।
:"ঠিক আছে, এখন পড়ো।"
-"স্যার একটা কথা জিজ্ঞেস করি?"
:"বলো"
-"আপনার কী জিএফ আছে?"
:"এই জিএফ আবার কী?"
-"জিএফ হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড!"
উত্তর না দিয়ে জিমাম রাগী চোখে তাকাল। মৌরি আর কথা না বলে পড়তে লাগলো। গার্লফ্রেন্ডের কথা বলাতে সাদিয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। সাদিয়ার সাথে মিশতে মিশতে কখন তাকে ভালোবেসে ফেলেছে জিমাম নিজেও জানেনা। সাদিয়াও সম্ভবত জিমামকে অনেক পছন্দ করে।
সাদিয়া যে জিমামকে পছন্দ করে সেটা বুঝতে পারলো আরো কিছু দিন পর। একদিন ক্লাস শেষে-
-"জিমাম, কয়েকদিনের মধ্যে আমাকে হয়তো বাড়িতে যেতে হবে।"
:"হঠাত্ বাড়িতে কেনো? ক্লাস চলছে, তাছাড়া সামনে এক্সাম।"
-"বাড়িতে যেতে হচ্ছে একটা জরুরী কাজে। এক্সাম হলেও করার কিছু নেই।"
:"তোমার আবার জরুরী কাজ কী?"
-"আমাকে দেখতে আসছে। ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট। বড়মামার বন্ধুর আত্মীয়।"
জিমামের চারপাশ কেমন যেন দুলে উঠল। ভয়ংকরতম দুঃসংবাদ। সাদিয়াকেও ভীষণ মনমরা দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় নিজেকে স্বাভাবিক রাখা অনেক কষ্টের। তারপরও কোনমতে ফান করে বলার চেষ্টা করলো-
:"কনগ্র্যাটস্! নতুন জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছো। ছেলেও অনেক ভালো প্রফেশনের।"
-"প্লীজ জিমাম, ফাজলামো করবেনা। আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। কিন্তু আমার কথা কেউ শুনছেনা। বাড়ীর সবাই বলছে এমন ভালো ছেলে নাকি হাতছাড়া করা যাবেনা। এখন একমাত্র মেঝ চাচাই আমাকে রক্ষা করতে পারে। মেঝ চাচাও বিপক্ষে চলে গেলে আমার লাইফ শেষ।"
মনে মনে জিমাম বললো, শালার ভালো ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট। একবার যদি সামনে পাই সাদিয়াকে বিয়ে করার স্বাদ মিটিয়ে দিতাম। অর্থহীন চিন্তাভাবনা। আসলে জিমামের করার কিছু নেই।
আজ সাদিয়া বাড়িতে যাচ্ছে। জিমামও যাচ্ছে সাথে। না সাদিয়ার বাড়িতে নয়, সাদিয়াকে বাসে তুলে দিতে যাচ্ছে। সিএনজিতে পাশাপাশি চুপচাপ বসে আছে দু'জনে। কারো মুখে কথা নেই। সাদিয়াকে পিংক কালারের ড্রেসে অসাধারণ লাগছে। সামনের কয়েকটা চুল হাওয়াই উড়ছে। জিমাম শিওর ম্যাজিস্ট্রেট ব্যাটা সাদিয়াকে প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে ফেলবে।
কখনও কখনও প্রেমিকার অতি সৌন্দর্য্যও যে প্রেমিকের রাগের কারণ হতে পারে তা এখন জিমাম বুঝতে পারছে।
সাদিয়াও ভাবছে জিমামের কথা। এ পাগলাটে ছেলেটাকে ছাড়া সে আর কিছু ভাবতে পারছেনা। ইচ্ছে করছে জিমামের হাত ধরে কান্না করতে।
সাদিয়াকে বাসে তুলে দিয়ে জিমাম এলোমেলো পায়ে হাঁটছে। দু'জনেই নিশ্চিত গন্তব্যে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা শুরু করেছে। মন অসম্ভব খারাপ। জিমামের চোখ ভিজে যাচ্ছে বারবার। ভান করছে চোখে কিছু পড়েছে এমন। এভাবে কতোক্ষণ আর ভান করা যায়! এসময় বৃষ্টি হলে ভালো হতো, চোখের জল আর বৃষ্টির জল মিশে যেতো।