আজ জিমামের বিয়ে হচ্ছে। পারিবারিক পছন্দে বিয়ে হচ্ছে। জিমামের এখন বিয়েতে আগ্রহ ছিলো না। কিন্তু মা ওয়ার্নিং দেওয়াতে রাজি হয়েছে।
কনে লামিয়া। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী। খুবই সুন্দরী। লামিয়ার পাশে জিমাম দাড়ালে জিমামের নিজেকে কালু মাস্তান মনে হয়।
জিমামের দাদুর বাড়ির পাশেই থাকতো কালু মাস্তান। অতি ডেন্জারাস পাবলিক। একবার ঝগড়ার এক পর্যায়ে কালু মাস্তান তারই এক বন্ধুকে ঘ্যাচ্যাং করে ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সে বর্তমানে জেলে আছে।
মানব মস্তিষ্ক খুবই আজব জিনিস। না হয় বিয়ের দিন বসে বসে কেউ কালু মাস্তানের কথা ভাবে? জিমাম কিছুটা বিরক্ত। বিয়ের এতো ফর্মালিটিজে যে মানুষ বিরক্ত হবে না, সে মহামানব।
সন্ধ্যা সাতটা। অনেক ধকল পেরিয়ে অবশেষে বিয়ে নামক ঝামেলার শেষ পর্যায়ে। একটু পরেই নববধূ লামিয়াকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে। একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার পালা। হঠাত্ একজনকে দেখে জিমাম চমকে উঠল। বুকের বাম পাশে মোচড় দিয়ে উঠল। সাদিয়া!! পাশে তিন-চার বছরের একটা বাচ্চা। কালো শাড়িতে অসাধারণ লাগছে তাকে।
জিমাম এগিয়ে গেলো।
:"কেমন আছো, সাদিয়া? তুমি এখানে?"
::"এইতো আছি, কোনরকম। তোমার সাথেই তাহলে লামিয়ার বিয়ে হচ্ছে। ও আমার কাজিন। ভালো। লামিয়া তাহলে অনেক লাকি।"
:"হুমম। তোমার বর কোথায়? তোমার ছেলে তো অনেক কিউট হয়েছে, নাম কি?"
::"ওর নাম রাইয়ান। ওর আব্বু ঐদিকে কোথাও আছে হয়তো। রাইয়ান বাবু, এটা তোমার মামা। মামাকে সালাম দাওতো আব্বু।"
পিচ্চিটা হাত তুলে সালাম দিলো। আফসোস্! বড়ই আফসোসের বিষয়। জিমাম মনে মনে বলল- 'ওহে সাদিয়া বেগম। আমি যেখানে রাইয়ানের বাবা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেখানে এখন তার মামা হয়ে গেলাম! জটিল দুনিয়া!'
রাত ১২টা। জিমাম এইমাত্র রুমে এসেছে। লামিয়া রুমে গম্ভীর হয়ে বসে আছে। আসার সময় কান্না করায় লামিয়ার চোখ এখনো লাল।
::"তো, মিস লামিয়া কি অবস্থা তোমার? আসার সময় এভাবে কান্না করতে হয়? মানুষে ভাববে তোমাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে।" -জিমাম হেসে বলল।
:"মিস না মিসেস। বিয়ের দিন সব মেয়েরাই এভাবে কান্না করে।"
::"ও। মিসেস লামিয়া। খেয়ালই করিনি। ছেলেদের আবার এইদিক দিয়ে সুবিধা, তারা অলওয়েজ মিস্টারই থাকে।"
:"হুমম, তা ঠিক।" -লামিয়া হেসে বললো।
যাক গম্ভীর পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে।
::"তো বিয়ের পর তোমার অনূভূতি কী? কেমন লাগছে সবকিছু?"
:"খারাপ না। প্রথমবারের মতো বিয়ে করলাম তো, তাই অন্যরকম লাগছে সবকিছু, একটু অস্বস্থিও লাগছে।"
::"হা হা হা হা। তুমি তো অনেক ফানি! অনেক মজা করে কথা বলো। গুড। আই লাইক ইট।"
:"হুমম। আপনিও অনেক মজার মানুষ। আগেই শুনেছি আপনার সম্পর্কে।
আপনি সাদিয়া আপুকে অনেক ভালোবাসতেন তাই না?"
হঠাত্ এই প্রশ্নে জিমাম চমকে উঠল, কিছুটা অস্বস্থির মধ্যে পড়ে গেলো। সাদিয়া, জিমামের প্রথম প্রেম। ভার্সিটিতে একসাথে পড়তো। দু'জনে একে অপরের জন্য প্রচন্ড পাগল ছিলো। পড়ালেখার মাঝপথে সাদিয়ার বিয়ে হয়ে যায় এক ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে। তখন প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিল জিমাম, পাগল হওয়ার অবস্থা হয়েছিলো। আসলে সে সময় দু'জনেরই করার কিছু ছিলো না।
তারমানে আজকে লামিয়ার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে সেটা সাদিয়া জানতো। সন্ধ্যায় তাহলে ভাণ করেছে না জানার।
::"হুম। তুমি কিভাবে জানলে?"
:"সাদিয়া আপু আমাকে সব বলেছে। বলতে গেলে তার উদ্দ্যোগেই আমাদের এই বিয়েটা হয়েছে। তাকে কি এখনো মিস্ করেন?"
::"থাক এসব কথা। বাদ দাও। পরে বলবো। আমি আসলে অনেক টায়ার্ড। কালকেও ঘুমাতে পারিনি। তুমিও নিশ্চয়ই টায়ার্ড। ঘুমিয়ে পড়ো।"
লামিয়া এক গ্লাস পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। জিমামও শুয়ে আছে। কিন্তু ঘুম আসছেনা। বারবার সাদিয়ার কথা মনে পড়ছে। ভার্সিটির সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে। পাশে বউ রেখে প্রাক্তন প্রেমিকার কথা ভাবা মোটেই উচিত হচ্ছে না। ডিম লাইটের নীল আলোয় লামিয়াকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।