somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নানা আমার জন্য বারান্দায় অপেক্ষা করতেন। ক্লাস নাইন টেইনের ঘটনা। (স্মৃতিচারণমূলক প্রতিযোগিতার লেখা)

১৩ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি ক্লাস নাইনে ভর্তি হই, ভবেরচর ওয়াজীর আলী উচ্চ বিদ্যালয়, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ।

জীবনের সেরা কিছু মুহুত্ত্ব (বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন) এই খানে কাটিয়েছি।

সকাল সকাল ওঠে গনিত ও একাউন্টিং প্রাইবেট পড়তাম। ১০ থেকে ৪ টা ক্লাস করতাম। ছুটির পর আবুল হোসেন স্যারের কাছে ইংরেজি প্রাইবেট পড়তাম। পরে বাসায় আসতাম। এটাই ছিলো রেগুলার রুটিন।

প্রথম ক্লাসে গড়ে ৮০ বা ৯০ জন ছাত্র থাকতো। ক্লাশ রুমে বসার জায়গা হতো না। শেষ ক্লাসে গড়ে ১০ থেকে ১২ জন ছাত্র অবশিষ্ট থাকতো। বাকিরা কই যে পলাইতো....... কে জানে!

ও ভালো কথা। নাইন থেকে স্নাতক পযর্ন্ত আমি নানীর বাড়িতে অবস্থান করেছিলাম। আমার নানা সোনালী ব্যাংক, ভবেরচর শাখা, মুন্সীগঞ্জ এর কর্মকর্তা ছিলেন। আমার নানা আব্দুল মালেক ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মারা যান ১০ ডিসেম্বর ২০১০। তিনি আমার এসএসসি পরীক্ষা দেখে যেতে পরেন নি। আমি প্রায় সময় নানার ব্যাংকে যেতাম। ও ২০ টাকা নিয়ে আসতাম। সিঙ্গারা খাওয়ার জন্য। মাজে মাজে টাইগার এনার্জি ড্রিংস খেতাম। টাকা বেশী দিলে সকালে নাস্তাও খেতাম। সে সময় ২০ টাকা দিয়ে পেট ভরে রুটি, ডাইল-ভাজি খাওয়া যেতো।

সম্ভবত নভেম্বর। আবুল হোসেন স্যারের প্রাইবেট পড়ে বাসায় আসলাম। আসতে আসতে মাগরিব এর আযান হয়ে গিয়েছিলো। দেখলাম আমার নানা শৈল মাছ দিয়ে ফুল কপি রান্না করেছিলেন। খুব মজা লেগেছিলো।

ভবেরচর ওয়াজীর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে যে সব সহপাঠী পেয়েছি তাদের নিয়ে আমি গর্ব করি। যদিও তারা কেউ ডাক্তার, ইজ্ঞিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডার নহে। আমরা একে অপর কে যে ভাবে ভালোবাসতাম, যে রকম আন্তরিকতা দেখাতাম তা ছিলো বলার বাহিরে।
একদিন আমি সাইকেল চালিয়ে আবুল হোসেন স্যারের বাসায় যাচ্ছিলাম। আমার সাইকেল এর ধাক্কায় একটি মটর সাইকেল পড়ে যায়। পরে মটর সাইকেল ওয়ালা লজ্জায় চলে যায়।

আমাদের সময় অপসনাল সাবজেক্ট ছিলো উচ্চতর গনিত, বায়োলজি, কৃষি শিক্ষা, গারস্থ অর্থনীতি ও কম্পিউটার। আমার অপসনাল সাবজেক্ট ছিলো কম্পিউটার। এর জন্য আমি অনেক বাহাবা ও পেয়েছি।

আমার এক বন্ধু আছে। সে এখন বিজিবি তে চাকরি করে। সে একদিন কি করেছে জানেন? আমরা দুইজন হোটেলে সিঙ্গারা খেতে গিয়েছিলাম। সে দুটি সিঙ্গারা দিয়ে একটি সস এর বোতল শেষ করে দিয়েছিলো।



যথারীতি নিয়মে আমাদের প্রি টেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আমি সব বিষয়ে পাশ করি। তারপর আমাদের “বিদায়” এর দিন আসে। সেদিন আমরা খুব খুসি ছিলাম। এসএসসি পরীক্ষা, আমরা বড় হয়ে গেছি, কলেজে উঠবো। আর কত কি, অনুভূতি ছিলো। কে জানতো... এই দিনকে আমি মিস করবো?

আমি আজও নাইন টেইনের শেষের ক্লাস মিস করি। আমি মিস করি বন্ধুদের ভালোবাসা। শিক্ষকদের আন্তরিকতা। আমি আরো মিস করি আবুল হোসেন স্যারের প্রাইবেট। আবুল হোসেন স্যারের প্রাইবেট শেষে; শেষ বিকেলে ক্লান্ত শরীলে বাড়ি ফিরা। আমার নানা আমার জন্য বারান্দায় অপেক্ষা করতেন। আমি মিস করি “আমার নানার অপেক্ষা।” এমন আবেগ নিয়ে অপেক্ষা করা; আমার মা আমার জন্য করতেন না।


০৭ মার্চ ২০২২ সাল। ততদিনে আমার বউ আমার সাথে পুরাপুরি যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমার বউ আমাকে তালাক দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে সেটা আমি টের পেয়ে যাই।

এই ০৭ মার্চ ২০২২ তারিখে আমার এক বন্ধুর বৌ ভাত ছিলো। আমি বাসায় বসে বসে ভাবছিলাম “ঘরে বসে থেকে মন খারপ করে লাভ নাই। বন্ধুর বিয়ে তে যাই।” বন্ধুর বিয়ে আমার আরো বন্ধু উপস্থিত ছিলো।

তখন আবহাওয়া কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন মনে হচ্ছিলো যেন আমরা এখন ক্লাস নাইন বা টেইনে পড়ি। কোন কষ্ট নাই। কোন দুঃখ নাই। এইটা ছিলো এক স্বর্গীয় অনুভূতি।

আমি আমার স্কুল নিয়ে গর্বিত।



স্কুল এর গুগল ম্যাপ পজিশন:view this link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৫:৫২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×