somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোনতা কফি !!!

২৫ শে মে, ২০১৫ সকাল ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক সেমিনারে ছেলেটির সাথে মেয়েটির দেখা । অসম্ভব এক রূপবতী মেয়ে । ছেলেটি কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছিল না । সেমিনারের সকল সুপুরুষদের মেয়েটির দৃষ্টি আকর্ষণের আপ্রান চেষ্টা । গোবেচারা ছেলেটি এতই সাধারন, যাকে কোনভাবেই চোখে পড়ে না; অসম্ভব লাজুক । ছেলেটি এই রূপবতী মেয়েটির সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে, তাকে সেমিনার শেষে কফি খাওয়ার আমন্ত্রন জানাল । মেয়েটি ছেলেটির সাহস দেখে একটু অবাকই হল । অনিচ্ছা সত্তেও, এই বিনয়ী লাজুক ছেলেটিকে ' না ' বলতে কেমন যেন একটা মায়া হল । সেমিনার শেষে তারা পাশের এক ছিমছাম কফি শপে ঢুকল । ছেলেটি অসম্ভব নার্ভাস । কি দিয়ে কথা শুরু করবে, তাই সে বুঝতে পারছিল না । সুনসান এক অস্বাভাবিক নিরবতা । মেয়েটি নিজের উপর একটু বিরক্তই হল , কি দরকার ছিল রাজী হওয়ার !!!!! হঠাত নিরবতা ভেঙ্গে ছেলেটি ওয়েটার এর উদ্দেশে বলে উঠল " আমাকে একটু লবন দিবেন ? কফিতে দিব !!! "
আশেপাশের সবাই ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকাল ! ছেলেটি লজ্জায় আরও লাল হল । কিন্তু সে স্বাভাবিক একটা ভাব করে কফিতে লবন ঢালল । নোনতা কফি পান করল ।
মেয়েটি কৌতূহল চাপতে না পেরে ছেলেটিকে এই সল্টি কফি খাওয়ার কারন জিজ্জেস করল !!!
ছেলেটি আবেগময় কণ্ঠে বলল " আমার জন্ম সাগর তীরবর্তী এক গ্রামে , সমুদ্র সৈকতের নোনতা বাতাসে আমার বড় হয়ে উঠা । সেখানেই আমার মা বাবা বাস করেন । আমার জীবনের মধুময় সৃতিগুলো নোনতা পানিতে প্রবল ভাবে সিক্ত । তাই নোনতা কফির স্বাদ, আমাকে আমাকে শৈশবে ফিরিয়ে আনে , নিয়ে যায় আমার মা/বাবার খুব কাছাকাছি । "
মেয়েটি ছেলেটির এই সরল ব্যাখ্যায় বিমোহিত হল। তাদের মধ্যে এতক্ষণকার জড়তা যেন নিমিষে কেটে গেল । তারা তাদের শৈশব , পরিবার, ভাল লাগা/ না লাগা বিভিন্ন বিষয়ে মন খুলে কথা বলতে লাগল । নোনতা কফির সুত্র ধরে শুরু হওয়া দীর্ঘ আলাপচারিতায় মেয়েটির ছেলেটিকে অসম্ভব ভাল লেগে গেল ।
তারপরের ঘটনা আর দশটা চিরাচরিত সফল প্রেমের গল্পের মতই রোমান্টিকতায় টুইটম্ভূর । মেয়েটির সাথে ছেলেটির একসময় বিয়ে হল । তাদের দাম্পত্য জীবন হল ভালোবাসা, আর পারস্পরিক সমঝোতার এক রূপকথা । বিয়ের ৪০ বছর পর দুরারোগ্য ব্যাধিতে ছেলেটির মৃত্যু হল । মৃত্যুর কিছুদিন পর ছেলেটির হাতের লেখা একটা চিঠি মেয়েটির কাছে পৌঁছাল ।
" প্রিয়তমা ,
তোমার হাতে যখন এই চিঠি পৌঁছবে, তখন আমি অন্য এক পৃথিবীতে, না ফেরাদের জগতে । একটা প্রচণ্ড অপরাধবোধ থেকে আমার এই চিঠিটি লেখা । আমি তোমাকে সারাজীবন একটা মিথ্যা কথা বলে এসেছি ।
মনে আছে , তোমার সাথে আমার প্রথম দিনের কফি শপের কথা ; আমি প্রচণ্ড নার্ভাস । মুখ ফসকে চিনি চাইতে গিয়ে লবন চেয়ে বসলাম । সবাই আমার দিকে অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে রইল । তুমি আমাকে ঊলাউঠা ভেবে যদি চলে যাও , এই ভয়ে আমি নোনতা স্বাদের শৈশবের গল্প সাজিয়ে নোনতা কফি পান করলাম । বিয়ের পর তোমাকে এই সত্য কথাটি বলতে সাহস হয়নি , পাছে এই মিথ্যে বলার জন্য তুমি যদি আমাকে ভুল বোঝ ???? আর যদি আগের মত ভাল না বাস !!! আমি আসলে নোনতা কফির স্বাদ কখনই পছন্দ করিনি !!
জীবনের এই সায়াহ্নে একটা কথা তোমাকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, যদি দ্বিতীয় কোন জীবন থাকে!!! তবে বিধাতার কাছে তোমাকে আবার চাইব !! সেই জীবনেও তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি খুশী মনে আবার নোনতা কফি খেয়ে যাব । "

স্বামীর চিঠি পড়ে মেয়েটির চোখে জল এসে গেল। ৪০ বছর ধরে সে তার স্বামীকে বিকট স্বাদের নোনতা কফি খাইয়েছে । সে শূন্য দৃষ্টি মেলে অনেকক্ষণ ধরে কাঁদল ।

তারপর অনেক অনেকদিন কেটে গেছে ।
মেয়েটি আর কখনই কফিতে চিনি নেয়নি !!!!

নোনতা কফির স্বাদের কথা কেউ তাকে জিজ্জেস করলে , অশ্রুসিক্ত চোখে স্মিত হেসে মেয়েটি বলত

" সুইট ; ভেরি সুইট !!!!! "

The greatest distance in this World is not that between living and death, it is when I am just before you and you fail to notice !!! It is not death that we wish to avoid, but life that we wish to live.

( পরিমার্জিত আকারে একটি অনুবাদ গল্প )
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×