somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুবেল আলীর কথা !!!

২৬ শে মে, ২০১৫ সকাল ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

MH 0102 ফ্লাইট এর 22K সিটে রুবেল আলী মলিন মুখে বসে আছে । কেমন অসহায় এক শুন্য ভরা দৃষ্টি তার । আমি এই মালয়েশিয়ান প্রবাসী বং শ্রমিককে পাশে দেখে খুবই বিব্রত । পারলে প্লেন থকে লাফিয়ে পড়ি । এই মদন যে আমার স্ট্যাটাস এর না । আমি তা কারনে অকারনে বিমান বালাকে ভাবময় ঠাস ঠাস ইংরেজি বলে বুঝাতে পেরেশান। সুতরাং তার দিকে লক্ষ্য করার সময় কোথায় ?? রুবেল আলী মাঝে মাঝে ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে এই ব্যাটা দেশী ভাই কিনা ? চেহারা আর বর্ণে আমায় তার শ্রীলংকান কিংবা তামিল বলেই মনে হওয়ার কথা !!!!

একসময় ধৈর্য না রাখতে পেরে উলাউঠার মত বলে উঠল ?? ইউ শ্রীলঙ্কান !!!!
আমি বিরক্ত ভরা কণ্ঠে বললাম , না , আপনার দেশী ??
রুবেল আলীর মুখে ক্ষণিকের জন্য একটা খুশির ঝিলিক দেখা মিলল । সে বলে উঠল ; ভাই মালয়াশিয়াতে কি কাজ করেন ???
আমি মনে মনে বললাম ; বলে কি ব্যাটা ??? আমারে সে তার মত মদন দেশের রাজকুমার মনে করছে ??? হাউ ডিসগাস্টিং !!!!
আমি ইচ্ছে করে ইংরেজিতে বলে উঠলাম " নো , আই এম এ ট্রান্সিট প্যাসেঞ্জার" ।
রুবেল আলী কি বুঝল, কে জানে ?? আর কথা না বলে চুপ মেরে রইল !!!

মালয়েশিয়া টু ঢাকা এই ফ্লাইটে অনেক রুবেল আলী উঠেছে !! সবাই খুব সরব ; অনেক অনেকদিন পরে তারা দেশে ফিরছে। অস্থির চোখেমুখে তাদের প্রবল উচ্ছ্বাস আর প্রচণ্ড উত্তেজনা । তাই নিজেদের প্রেস্টিজ পাঞ্চার আর ফ্লাইটের নিয়ম কানুন পোস্ট মরটেম প্রতিযোগিতায় তারা যথারীতি একে অপরের রেকর্ড ভাঙ্গায় বেস্ত । বিমান বালাদের নির্লিপ্ত ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে তারা চিড়িয়াখানার মহান তদারকিতে আত্ম নিবেদিত ।

আমার পাশের রুবেল আলী বড়ই নির্জীব । ইমিগ্রেশনের ফর্ম পুরন করার সময় যখন এল ; ফর্ম হাতে নিয়ে রুবেল আলী আমার দিকে কাঁচুমাচু করে তাকিয়ে রইল । আমি এই প্রথম যুবকটির জন্য একটা মায়া অনুভব করলাম । নিজের থেকে তার ফর্ম চেয়ে পুরন করে দিলাম । কতদিন পর দেশে যাচ্ছে জিজ্ঞেস করতেই তার জল টলমল চোখ দেখতে পেলাম ।

সাত বছর পর ঝিনাইদহের ৩১ বছর বয়সী রুবেল আলী দেশে ফিরছে ; তার বাবা দুই সপ্তাহ আগে গত হয়েছেন । সে মালয়েশিয়ার পেনাং শহরের এক মাঝারি কাঠের কারখানায় কাজ করত। বাবার অসুখের খবরে বার বার ছুটি চেয়েও পায় নি । আর মৃত্যুর পর দুই মাসের জন্য ছুটি চাইতেই মালিক তাকে স্থায়িভাবে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। । আর দশজন প্রবাসী শ্রমিকের মতই জমি বিক্রি করে আদম বেপারীর হাত ধরে তার মালয়েশিয়ায় আসা। প্রায় তিন লক্ষ টাকা তার খরচ । অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত তার শিক্ষার দৌড় । রুবেল আলী ওভারটাইম মিলিয়ে দিন হিসাবে গড়ে ৪৫/৫০ রিঙ্গিত ( প্রায়১৩০০/ ১৪০০ টাকা ) পেত । ছুটির দিনে কাজ করলেই তবে পয়সা । সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা খাটুনি তার । মাসে সে প্রায় ১০০০/১১০০ রিঙ্গিত পেত । ১৯ জনের সাথে শেয়ার করে ৫ রুমের এক বাসায় তার কঠিন অমানবিকময় জীবন । বাসা ভাড়া , খাওয়া , মোবাইল খরচ আর বাৎসরিক ভিসা স্ট্যাটাস এর মাসিক কিস্তি দিতে তার প্রায় মাসে ৬০০ রিঙ্গিত খরচ হত । বাকি ৪০০/৫০০ রিঙ্গিত ( ১২০০০-১৫০০০ টাকা) তার সঞ্চয়। তাই সে নিয়মিত দেশে পাঠিয়েছে । গ্রামে তার বৃদ্ধ মা আর ছোট দুই ভাই থাকে । কথায় কথায় জানাল তার এই সঞ্চয়ের টাকা নয়ছয় করে তার পরের ভাইটির বখাটেপনার কথা । পড়াশুনা করতে না পারার দুঃখ তাকে প্রচণ্ড ভোগায় । তাই যে কোন মুল্লেই ভাইদের পড়াশুনা করাবে বলে তার পণ । তাই রুবেল আলী ঠিক করেছে দেশে গিয়ে সে বিদেশের মতই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করবে । তার বিশ্বাস বিধাতা তার এই পরিশ্রমের সুফল দিবেনই ।

এদেশে ৪৪ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে রুবেল আলীদের ভুমিকাকে আমরা নিরন্তর ব্যঙ্গ করে চলেছি । বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গার্মেন্টস খাতের পর পরেই তাদের পাঠানো টাকার অবস্থান । অথচ গার্মেন্টস এর বিত্তবান মালিকদের জন্য এ যাবতকালে সরকার যত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছে তার এক আনাও রুবেল আলীদের জন্য করেনি । এদেশের কোনো সমাজতত্ত্ববিদ কিংবা অর্থনীতিবিদ রুবেল আলীদের অমানবিক পরিশ্রম আর কর্ম জীবন নিয়ে কোনো অনুসন্ধানী গবেষণা করেননি। অথচ আমাদের অর্থনীতি কেমন পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে, আগামী দিনে কোন পথে এগবে তা বোঝার জন্য এই অনুসন্ধানী গবেষণাটির বড্ড প্রয়োজন ছিল !!

বিমান থেকে নামার আগ পর্যন্ত আমি আর রুবেল আলী আলাপচারিতায় মেতে রইলাম । যতই আমি তার জীবনের ভিতরে নিমজ্জিত হচ্ছিলাম ততই এই যুবকটির প্রতি আমার শ্রদ্ধা আর মুগ্ধতা বাড়ছিল আর নিজের নাক সিটকানো ভাবটার জন্য নিজেকেই "মানসিক অসুস্থ" মনে হচ্ছিল !!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৫ সকাল ৮:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×