রিকশাওয়ালা হতভম্ব অবস্থায় আছে। একটা মেয়ে তাকে চড় মারতে পারে সে এটা ভাবতেও পারেনি।
-এবার বলো, ভাড়া কত হয়েছে?
-আপা, তিরিশ টাকা।
-এতক্ষণ পঞ্চাশ পঞ্চাশ করছিলে কেন?
-আপা ভুলে হয়ে গেছে।
-ঠিক আছে, এই পঞ্চাশ টাকা রাখো। ত্রিশ টাকা তোমার ভাড়া আর বিশ টাকা চড়ের জন্য।
আমি অনেকক্ষণ ধরেই ব্যাপারটা দেখছিলাম। এবার নাক গলালাম।
-বর্তমান বাজারে একটা চড়ের জন্য বিশ টাকা, ভাবাই যায়না।
-আপনি এখানে নাক গলাচ্ছেন কেন?
-গ্রীণ হাউসের প্রভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব নাকের উপর পড়েছে বোধ হয়।
-নাকের গলনাংকটা একটু বাড়ান। কোন ইয়ারে পড়েন?
-অর্ণব, সেকেন্ড ইয়ার।
-আমি নীতু , ফোর্থ ইয়ার। আপনার চেয়ে দুই বছরের সিনিয়র।
-আপনি আমাকে হতাশ করলেন।
নীতু আপার সাথে পরিচয়টা এভাবেই হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতিনিয়ত তার জ্ঞানগর্ভ কথা শুনতে শুনতে এখন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। সেদিন ক্যান্টিনে নীতু আপার সাথে বসে আছি। এইসময় নীতু আপা বললো,
-বুঝলি, কেউ কষ্ট পায় না, কষ্টটা সে নিজেই তৈরি করে নেয়।
-হুম।
-হুম, হুম করছিস কেন? তোর নিজের কি মত?
আমি ক্যান্টিনের বয় রফিককে ডাকলাম।
-রফিক, তুমি কতদিন বাড়িতে যাওনা।
-গত ঈদে গিয়েছিলাম। ভাড়ার টাকা জোগাড় হয়না। যা বেতন পাই বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হয়।
-তোমার খারাপ লাগেনা?
-খারাপ লাগার চিন্তা করলে হবে। আমাদের তো পেট চালাতে হবে।
আমি নীতু আপার দিকে তাকালাম। বুঝেছেন, মানুষ কষ্ট পায়, না কষ্ট তৈরী করে। নীতু আপা কিছু না বলে চুপ করে থাকলো।
-তোর কাছে এখন এক হাজার টাকা হবে?
-হ্যা, হবে।
নীতু আপা রফিককে ডেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে বললো।
নীতু আপার নিজস্ব কিছু দুঃখ আছে। তার গায়ের রং কালো। যে মাত্রায় কালো হলে মেয়ের মা মেয়েকে শ্যামলা বলেন, নীতু আপা সেই মাত্রাও অতিক্রম করেছেন। এই দুঃখটা প্রকাশ না করলেও মাঝে মাঝে প্রকাশিত হয়ে যায়।
আমি মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে থাকিয়ে আছি। এইমাত্র যে ফোনটি এসেছিলো, তাতে জানতে পারলাম নীতু আপা গতরাতে আত্মহত্যা করেছে। গতকাল বিকেলে তার সাথে কথা হয়েছিল। এবারও পাত্রপক্ষ নাকি তার গায়ের রংয়ের জন্য পিছিয়ে গেছে। আমি নীতু আপাদের বাসায় যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালাম। পাশের ঘর থেকে টিভির আওয়াজ ভেসে আসছে। ফেয়ার এন্ড লাভলীর বিজ্ঞাপন চলছে, সৌন্দর্য্য হলো শক্তি। আসলেই তো তাই।