মনসুর আলির জন্ম কবে তা তার জানা নাই। তয় বয়স ষাইট হবে না। ষাইটের ইকটু কম হইবো। এটা তার ভাষ্য। বয়স আন্দাজের আরও একটা হিন্টস অবশ্য দিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বড় ছেলের জন্ম........
সন্ধ্যা নেমেছে বেশ কিছুক্ষন হল। মংলার ঘাট থেকে বেসের দিকে যাব। ভ্যানের লম্বা সিরিয়াল। এখন এক নাম্বারে আছেন মনসুর আলি। আমরা মাত্র দুই জন। এত দুরের পথ তারওপর আর কোন যাত্রী নিতে হবে না দেখে বলা মাত্র রাজি হয়ে গেলেন। যাত্রা শুরু হল। মনসুর আলির পেশিবহুল শরীর ছাড়িয়েও বয়সের ছাপ অন্ধকারে বেশ পরিষ্কার। যাত্রা শুরুর কিছুক্ষনের মধ্যেই গল্প শুরু করে দিলেন...
বাড়ি পিরোজপুর। আগের ঘরের তিন ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে, যার জন্ম মুক্তিযুদ্ধের সময় এখন ঢাকায় থাকে। বাকিরা দেশের বাড়ি। ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগে। আগের স্ত্রী মারা গেছেন তাও অনেক দিন। স্বভাবতই একটু কৌতুহল জাগল পরের ঘরের সংসার নিয়ে। একটা মেয়ে আছে পরের ঘরে। বেশ তৃপ্তি নিয়েই বললেন।মেয়েডা এহনও ছোড।কি করে জানতে চাইলে এরকমই বললেন।কত ছোট? পাঁচ বছর বয়স।ছোটখাট একটু ধাক্কা খেতে হল। তার এই বয়েসের সাথে ব্যাপারটা ঠিক যায় না। কেন বিয়ে করলেন এই বয়েসে? একটা দীর্ঘশ্বাস, পরমহুর্তেই সেটা ছাপিয়ে বিজয়ীরর হাসি। সে বিরাট কতা। ছেলে পুলেরা সংসার করছে নিজের মত করে।ওদের সব দিয়ে টিয়ে আমি বের হয়ে গেসি।কোথায় বের হয়ে গেসেন? অনেক যায়গায়। চট্রগ্রামে ছিলাম। এয়ারপোর্ট এর কাছে।সমুদ্রে মাছ ধরতাম। ঐখান থেইকা ঢাকায়।সেখান থিকা মেঘনা ব্রীজ বানানুর কাম করতাম। কিছু টেকা পইসা জমাই। কিন্তু ঐ যে একটা বেডা আছিল....!! তার লগে আমার গেনজাম। ও আমার সব চুরি কইরা নিয়া যায়..
এরকম আরও অনেক অগোছালো উত্তর। কিন্তু কিভাবে এই বয়েসে বউ পেলেন সেটাতে আসা যাচ্ছিল না। রুপসা বিরিজে যখন কাম করি... আবার শুরু হল। ঐ যে আর্মি,নেবি, ফুলিষ একলগে রাস্তায় নামল(অপারেশন ক্লীনহার্ট) । তহন সুদে ২০০০ টেকা নিচি।নিয়া এই ভ্যান কিনলাম। তয় আমি এখানে আসছি ৭/৮ বছর। আল্লাহর রহমতে আমারতুন বেশি সম্পদ কারোর নাই। তো কি আছে আপনার? দুই খান গরু কিনচি। একটা গাভি।একটা বকরা ১২০০০ টেকা দিয়া।সব মিলা্য়া না হইলেও ৩০/৩৫ হাজার টেকার সম্পদ আছে। বলার মধ্যে এমন একটা অহংকার ছিল যে হঠাৎ করেই স্তব্দ হয়ে গেলাম। সাথে আমার এক কলিগ। দু'জন দৃষ্টি বিনিময় করলাম। চারিদিক অন্ধকার। থেকে থেকে কোথাও কোথাও ব্যাঙ ডেকে উঠছে। একটানা চেইন এর শব্দ আর রোডে ঘষা খেয়ে চাকার আর্তনাদ.....।,
অন্ধকারে ভ্যান চলছিলো। একটানা চুপচাপ বসে আছি। কেউই আর কথা বলছিলাম না। আমাদের উৎসাহের ঘাটতি দেখে ভ্যান চালকও চুপ....।
ভাবছিলাম আমি কি চাই? কত টাকার সম্পদ আমাকে অতটুকু তৃপ্ত করবে? আদৈা কি করবে? আমার ভাবনা থামে না। দিক বেদিক খুঁজে কোন উত্তর পাই না। খুব অসহায় লাগে। রিকশা গিয়ে গন্তব্যে থামে। কলিগ ভাড়া দিতে চায়। দিলাম না। ভাড়া ত্রিশ টাকা। একশ টাকা দিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবো ভেবেছিলাম । একশ টাকা দিলাম ঠিকই । কিন্তু মুখের দিকে তাকানোর আর সাহস হল না । অনেকটা পালিয়ে গেলাম ওখান থেকে। পালালাম মনসুর আলির কাছ থেকে । কিন্তু ভাবনাটা থেকেই গেলো ? আমি কি চাই ? কত টাকার সম্পদ আসলে আমার মুখে তৃপ্তির হাসি ফোটাতে পারে ? উত্তর আজও খুঁজে পাই না...............
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৯ রাত ১০:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




