বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব ও অহংকার। আমাদের মহার মুক্তিযুদ্ধেও এ বাহিনীর অবদান কোন অংশেই কম নয়।
অথচ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে সূক্ষ্ণ অপপ্রচার চালিয়ে সেনাবাহিনীকে জনগনের মুখোমুখি করার অপচেষ্টা লক্ষনীয়।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচএসসি প্রোগ্রামে পৌরনীতি বইয়ের পাঠ-১ বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা অংশে বলা হয়েছে-
এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিশাল সামরিক শক্তির মোকাবিলা করে টিকে থাকা প্রায়
অসম্ভব।
শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বইয়ে এ ধরনের তথ্যের সংযোগ জাতি হিসেবে হীনম্মন্যতা এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সরকারের আস্থাহীনতার প্রকাশ নয় কি?
একই বইয়ের বিভিন্ন অংশে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু
বক্তব্য সামগ্রিকভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে নিয়ে এবং কিছু সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই প্রধানত
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে ইঙ্গিত করে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে।
এখানে নেতিবাচক উপস্থাপনের কিছু নমুনা তুলে ধরা হলো-
সেনা সদস্যরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ, নতুন সামরিক শক্তির উদ্ভাবন বা সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ রাষ্ট্র দখলের কৃতিত্ব
দেখাতে না পারলেও নিজেরাই নিজেদের রাষ্ট্র দখল করেছে দারুণ পারঙ্গমতায়।
সুপ্রতিষ্ঠিত সাংগঠনিক ভিত্তির কারণে সামরিক বাহিনী উন্নয়নশীল বিশ্বে নিজেদের রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে বেশি যোগ্য মনে
করে।
সামরিক বাহিনীর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উপদল, করপোরেট স্বার্থ, উচ্চপদস্থ জেনারেলদের অভিলাষ, কোনো বিশেষ সেনাকর্মকর্তার মানসিক গড়ন সেনা অভ্যুত্থানের কারণ।
সেনাবাহিনী নিজেদের যথেষ্ট জনপ্রিয় মনে করে। তাদের ধারণা, সিভিল রাজনীতিকরা দেশ চালাতে ব্যর্থ হলে জনগণ তাদের বিকল্প হিসেবে
বেছে নেয়।
বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সামরিক কর্মকর্তারা বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে।
সামরিক বাহিনী বেসামরিক আমলাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি মোটেও সহ্য করতে পারে না।
সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত করার পাশাপাশি দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রক্রিয়া শুরু করে। বিকশিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করে ফেলে।
তাদের সমালোচনা করলে গণমাধ্যমের উপর তারা হস্তক্ষেপ করে।
বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রশাসন দখল করে গুটিকয়েক জেনারেল সামরিক শাসন জারি করে দেশ পরিচালনা করেন।
নতুন করে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামরিক শাসক বেসামরিক লেবাস পরে।
বইটিতে এই জাতীয় অনেক বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে, যা একজন শিক্ষার্থীর মনে সামরিক বাহিনী সম্পর্কে শুধু নেতিবাচক ধারণারই জন্ম দেবে না, বরং তাদের প্রতি এক ধরনের ক্ষোভ ও ঘৃণারও উদ্রেক করবে।
এ কথা সত্য যে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য সত্তরের দশক এবং আশির দশকের শুরুতে সেনা-অভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিল। সে বিষয়ে উল্লেখ করে বারবার বহু আলোচিত বিষয়কে তুলে ধরে সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রয়াস বলে প্রতীয়মান হতে পারে। এ জন্য পুরো সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীকে হেয়প্রতিপন্ন করে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক এ বাহিনীর সব ভালো কাজকে অবমূল্যায়ন করা ও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের পেছনে কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে কি!!
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ, ২৭ মার্চ ২০১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




