somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।।--- থটলেস---।।

২৫ শে জুন, ২০১১ রাত ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি এখানে বসে আছি, একা। এই ঘরে। আমি এবং শূন্যতা। বদ্ধ রুম। খোলা জানালা। আমি ও বিষণ্ণতা। ফ্লাওয়ার ভেস এর ফুল গুলো বিবর্ণ, মরচে পড়া। আমি বসে আছি, একা। খোলা এবং বদ্ধ জানালা।

জগত পরিবর্তিত। আমি বসে আছি এখানে, একা। শক্ত পাথুরে জায়গা। সূর্য নেই, হয়তো সন্ধ্যা। অথবা অতিপ্রাকৃত আলোর খেলা। দূরে সমুদ্রের গর্জন। ঝড়ো হাওয়া। একই সাথে শুষ্ক এবং আর্দ্র। আমি বসে আছি, একা। শক্ত পাথর, ছেড়া খড়কুটো, জলে ভাসা। দিন নেই, রাত্রি নেই। নির্জন প্রান্তরে থেমে যাওয়া শুধু সন্ধ্যা।

কেউ একজন আসে। অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্খিত। আমার বিরক্ত লাগে। আমি এখানে একা থাকতে চেয়েছিলাম।

-কে তুমি?
সে একটু হাসল। তুমি নিজে জানো না, আমি কে?
-আমি তবুও তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।

সে আবারো হাসল। নিকষ, কালো হাসি। তার অক্ষিবিহীন দৃষ্টি আমাকে ভেদ করে চলে অযুত, লক্ষ বার। মনে হল অনন্ত কাল ধরেই আমরা মুখোমুখি হয়ে আছি।

ধীরে ধীরে আমার ভেতরটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠে। প্রবল আক্রোশে সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে দিতে ইচ্ছা হয়। লাল টকটকে লাভা বুক বেয়ে নামে, গড়িয়ে গড়িয়ে। পুড়ে যাওয়া মাংসের তীব্র গন্ধ আমাকে মনে করিয়ে দেয়, আমি এখনো বেঁচে আছি।

আমি তার দিকে মনোনিবেশ করি। সে আর কতকাল অভিনয় করে কাটাবে?

-কেন তুমি আলাদা সত্ত্বা হচ্ছো না? কেন তুমি নিজের আসল রূপে পরিবর্তিত হতে চাও না? তুমি আলাদা হও। তোমার নিজের মতো করে আমাকে উত্তর দিতে শিখো। কোথায় তোমার স্বকীয়তা?

সে এবার আর হাসেনা। তাকেও ভর করে বিষণ্ণতা। কি আশ্চর্য!! দীর্ঘশ্বাস এর শব্দ হিসহিস করে সাপের মতো ফনা তুলে দূর থেকে বহুদুরে মিলায়।

বিষণ্ণ কণ্ঠ আমাকে শুধু জিজ্ঞাসা করে- তুমি কেন এখানে এসেছ?
-আমি তোমাকে চিনতে চাই। আমি জানতে চাই তুমি কে?
-আমি যদি এখানে তোমাকে আসতে না দিতাম?
-তোমার সেই ক্ষমতা নেই। তুমি কিভাবে আমাকে আটকাবে? আমি চাইলেই উপস্থিত হতে পারি এখানে। আমি চাইলে তুমি আসতে বাধ্য। বল তুমি!!! তুমি বাধ্য না?

ঠা ঠা করে হেসে উঠে সে। তার তীব্র ক্রুর অট্টহাসি প্রতিধ্বনিত হয় পাথরে পাথরে, সৃষ্টি করে এক বিচিত্র কম্পন। সেই কম্পন ছড়িয়ে পড়ে রক্তের প্রতিটা কনা থেকে কনায়,শিরা থেকে ধমনীতে।

-চুপ করো!!! তোমার এতো আস্পর্ধা হয় কি করে? তুমি তো আমারই সত্ত্বা।

-তুমি এখনো তোমার ছোট্ট গণ্ডিটার বাইরে বের হতে পারো নি -শ্লেষ মাখানো কণ্ঠস্বর যেন আমার বুকে তীক্ষ্ণ ফলার মতো বিঁধে।

-ওটা সমুদ্রের শব্দ নাকি? এতো ফুসে উঠেছে কেন ওটা? ঠিক যেন জীবন্ত কিছু!!
-এমনি। তুমি নামতে চাও সমুদ্রে? দেখতে চাও সমুদ্রের তল?
-না।

-তুমি চাইলে আমি সমুদ্রকে শান্ত করে দিতে পারি, ঝড়ো হাওয়া কমিয়ে নিয়ে আসতে পারি মৃদুমন্দ ঝিরি ঝিরি বাতাস। আনবো?
-না, তার প্রয়োজন নেই। এটাও সুন্দর। আমি এই সৌন্দর্যটাকে বুঝতে চাই।

-সৌন্দর্য কি?
-সৌন্দর্য হল আলো আর ছায়ার খেলা। রঙের সাথে রঙের মিল।
-এখানে কোনটা আলো? কোনটা ছায়া?
-আমি জানি না।

-কেন জানো না? অবজ্ঞাভরা কণ্ঠে সে আমাকে জিজ্ঞাসা করে। এসব কিছুই না তোমার কল্পনা? তোমার সৃষ্টি?

আমি মাথা আঁকড়ে বসে থাকি। সমুদ্রের গর্জন আর বিক্ষুব্ধ বাতাস আমাকে ছিঁড়ে ফেলতে চায়। আমার উপস্থিতি তাদের কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছে।

ও চলে যাচ্ছে। ধীর পায়ে। খুড়িয়ে, খুড়িয়ে।

আমি উঠে বসি। এখন অনেক রাত। জানালার পর্দার ফাক থেকে অল্প একটু নিয়নের আলো এসে পড়েছে দেয়ালের উপর। ছায়া বেয়ে হেটে চলে-ছোট একটা ইঁদুর। হ্যা, ওটা ইঁদুরই তো।

সারা ঘর জুড়ে অন্ধকার। বাতাসের ঘরঘর শব্দ ভালো লাগে। পুরো বাসাটা হেটে বেড়াতে ইচ্ছা করছে। নিঃশব্দে হেটে বেড়াই এঘর থেকে ওঘরে। ঠিক যেন ইঁদুর। হয়তো কেউ আমাকে তেমনি ভাবেই দেখছে যেভাবে আমি ইদুরকে দেখছি। হা হা হা। কেউ ভয় পাবে না তো আবার?

ও চলে গেছে।

আমি আমার রুমে ফিরে আসলাম। রুমের ঠিক মধ্যিখানে দাড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে। এখন রাত কটা বাজে? আড়াইটা? অথবা তিনটা? আমি অপেক্ষা করে আছি। ও চলে গেলো আমাকে ছেড়ে। আমার বুকটা ভেঙে আসে। আমি তাকে খুজে পাচ্ছি না।

-তুমি কি ভয় পাচ্ছো?
-না তো!!! আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছি।

তার ধাতব হাসি রাত্রির সব নিরবতা যেন ফালি ফালি করে কেটে ফেলে।
তুমি তো আমাকে আর আনতে পারবে না। সে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। মৃত্যুর সাথে সাথে তুমি আর তোমার কল্পনার অবলুপ্তি ঘটবে।

আমি বিভ্রান্ত হলাম। মৃত্যুর পর আমি আর চিন্তা করতে পারবো না?
-না।
-এটাই কি শূন্যতা?
-হয়তো। আমি জানি না তোমরা এটাকে কি বল।
-সেটা কেমন? তুমি দেখেছো? তুমি অনুভব করতে পারো?
-পারি।
-সেখানে আমার অস্তিত্ব নেই?
-না, তুমি শুধু ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন তুচ্ছ কিছু নিউরনের সমষ্টি। তুমি পার্থিব। তোমার শেষ আছে। তুমি কিভাবে পরিপূর্ণ ভাবে অপার্থিব জগতে থাকবে?
তার বিদ্রূপাত্মক কণ্ঠ দেয়ালে বাধা পেয়ে ফিরে ফিরে আসে।

-আমি না থাকলে তোমার অস্তিত্ব থাকে কি করে?
-আমি জানি না।
-তুমি বছরের পর বছর এভাবে থাকতে পারো? চিন্তা না করে?
-পারি।
-আমি চিন্তা করতে ভালোবাসি।
-তোমার ভালোবাসার অপমৃত্যু ঘটবে। আমি কথা দিচ্ছি।

সে দুলে দুলে হাসে।

-কি নিষ্ঠুর তুমি!!! তুমি কে?
-আমিই তুমি। তুমি আমার ছোট্ট ক্ষুদ্র একটা অংশ।
-তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি পরাধীন। তুমি শুধু আমার কল্পনার তৈরি। তোমার কোন অস্তিত্ব নেই। আমি চাইলেই তোমাকে শেষ করে দিতে পারি।

-আমি থাকবো। আমি নিরাকার হয়েই থাকবো।

সে থামল। দেয়াল ঘড়িটা টিক টিক আওয়াজ করেই চলেছে। ওটাকে খুলে ছুড়ে ফেলে দিলে কেমন হয়? আওয়াজ ধীরে ধীরে বাড়ছে। ছোট থেকে বড়। বড় থেকে ছোট। আবার বড়। তীব্র এবং ভোঁতা। উফ, অসহ্য।

আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম- তুমি আমাকে মুক্ত করতে পারো?

-তুমি আমার উপর পরাশ্রয়ী। আমার উপর আশ্রিত থেকে তুমি চিন্তা করো। একটা সময় তুমি ই আমাকে ছেড়ে যাবে। আমি এখানেই থাকবো, যুগ যুগ ধরে। মহাকালের বিস্তীর্ণ সময় ধরে আমার অস্তিত্ব ছিল, আছে,থাকবে। আমার সৃষ্টি নেই, আমার ধংস নেই।




আমি বসে আছি, একা। এক টুকরো আকাশ। খোলা জানালা। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি আর আমার চিন্তার অবলুপ্তি ঘটবে। মৃত্যু প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ও চলে গেছে। এখানে প্রচুর বাতাস। বাতাস শুস্ক এবং আর্দ্র।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১১ রাত ১১:১০
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×