somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকারে জমাট বাধা কিছু পাপ এবং অপরাধবোধ ।।

১৭ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাতের দীর্ঘ রাস্তা। ঠিকরে পড়েছে নিয়নের আলো। বসন্তোৎসব থেমে গেছে চুপিচুপি। দুরের গির্জার ঘণ্টার শব্দটাই এখন একমাত্র শব্দ। বহুক্ষন ধরে বেজে চলেছে সে ছন্দময় মদোন্মত্ততা। বসন্ত মরুৎ এখানে আর আসবে না আজ। আমি নিষেধ করে দিয়েছি।

অতি সন্তর্পণে দৃষ্টি ফেলে সামনে এগোই। যদিও তার প্রয়োজন নেই এখন আর। কিন্তু ভেতরের সরীসৃপের পুরনো অভ্যেস। এখনো সর্পিল সরু জিহ্বাটা বের করে নিঃসংশয় হতে চায়। বিষাক্ত জিহ্বাটার গুনের শেষ নেই। তার বিষ দিয়ে সে কাউকে কয়েক সহস্রবার মেরে ফেলতে পারে। বহু দুরের ক্ষীণ শব্দও এই জিহ্বা এড়াতে পারে না। হঠাৎ ওদের খিলখিলে প্রানবন্ত হাসি আমার কানে এসে লাগে। ঘণ্টার শব্দ চুরমার হয়ে ভেঙে গেছে খিলখিলে হাসির তীক্ষ্ণতায়। তাদের সেই হাসি আমার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। আমার হঠাৎ বিষণ্ণ লাগে।

ভেতরের সরীসৃপটা গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়েছে আবার। সরীসৃপটা বড় আরামপ্রিয়। জিহ্বা তুলে বলল-
"চলো, ফিরে যাই।"
"ফিরে যাবো কেন?"
"আমি জানি, ওদের দেখলে তোমার খারাপ লাগবে।"
"আমার খারাপ লাগবে না।"
"তুমি এখানে কেন এসেছো?"
"হারিয়ে যাওয়া রক্তমাংস, আর চামড়াটুকু খুজতে। শরীরের অর্ধেকটা যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ওখানে। জানো না?"
"মিথ্যে কথা। তুমি এসেছো ওদের দেখতে। বলো, ওদের দেখতে আসো নি?"
"না..........."

আমার ক্ষীণ, দুর্বল অস্বীকৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে বহুদুরে মিলায়। সরীসৃপ জিহ্বা বের করে একটু আনন্দ করলো। আমার হেরে যাওয়া দেখতে তার বোধহয় ভালো লাগে।

"চলো, তারচেয়ে নদীর ধারে যাই। ওখানে যেয়ে কুকুরটাকে ডুবিয়ে মারি।"
"নাহ, ওখানে যেতে ইচ্ছা করছে না।"
"কেন? একটা সময় না খুব ভালো লাগতো তোমার? বসে থাকতে না রাতের পর রাত? কোথায় গেলো তোমার সেই ভালোলাগা?"
"হ্যা, ভালো লাগতো।"
"এখন আর লাগেনা?"

আমি হাসলাম।" আমি নদীর ধারে বসে কি দেখতাম জানো? জীবনে বেচে থাকার স্বপ্ন। ভালোবাসার স্বপ্ন। ছোট্ট নীড়ের স্বপ্ন। রাতের আকাশ দেখতাম। চাদের পাহাড় খুঁজতাম। এখন আমি নদীর পাড়ে বসে কি করবো? এখন আমার স্বপ্ন নেই। ঘুম নেই। জীবন নেই। চাঁদ মরে গেছে বহু আগে। এখন চারপাশে বাস করে শুধু অন্ধকার। এখানেও যেমন, নদীর ধারেও তেমন।"

"আরও একটা জিনিস আছে তোমার।"
"কি?"
"স্মৃতি। তোমার যে জিনিসটাকে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। তবু তুমি ওটা আঁকড়ে ধরে বসে আছো। তাও পুরোটা নয়। সবচেয়ে নিষ্ঠুর অংশটুকু। স্মৃতির একই নির্দিষ্ট পরাবৃত্ত এর মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছো তুমি বারবার।"
"আমি আসলে পরাবৃত্তের মাঝে আটকা পড়ে গেছি।"
"সে তো রক্তমাংস থাকতেই আটকা পড়েছিলে।"
"হু, তা ঠিক।"

"এখন তো আর রক্তমাংস নেই। এখনো কেন বৃত্তে তোমার বসবাস?আসলেই বের হতে পারছো না? নাকি চাইছো না?"
"আজকাল দেখি সরীসৃপও ব্যাঙ্গ করে!!"

"করবো না কেন? তুমি নির্বোধ একজন। তোমার মতো মানুষের বেচে থাকা উচিৎ ছিলোনা। ভালো হয়েছে, জগত থেকে বিদায় নিয়েছো। এখন আমার মনে হচ্ছে, তুমি এখানেও অনাকাঙ্খিত। তোমার জায়গা হওয়া উচিৎ তৃতীয় বা চতুর্থ স্তরে। আমি তোমার শরীরে ঘেন্না নিয়ে আছি। তুমি কি এটা জানো?"
" হ্যা, জানি। আমি নিজেও নিজেকে ঘেন্না করি।"
" তোমার কোন পাপটা সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘতর?
" একজনকে ক্ষমা না করতে পারা।"
"ভুল। তোমার সবচেয়ে বড় পাপ, সেই মানুষটির কাছে নিজের সত্ত্বা বিক্রি করে দেওয়া।"
"বাদ দাও। অপরাধবোধ ঘিরে ধরা শুরু করেছে আমাকে আবারো। প্রতি রাতে ধরে। অনুশোচনা ঘিরে ধরলে আমার অস্বস্তি হয় অনেক। কোনভাবে বৃত্তের এই অংশটাকে দ্রুত পার করার প্রক্রিয়া জানা আছে তোমার?"

সরীসৃপ এবার চুপচাপ।

"চলো, কামনার কাছে যাই।"
"কামনার কাছে যেয়ে কি হবে?"
"কামনার মাঝে তৃপ্তি আছে। বাস্তবের জগতে কামনার মাঝে তৃপ্তি নেই। তোমরা যেটাকে তৃপ্তি ভেবে ভুল করো, তা আসলে এক ধরনের বিভ্রম। মস্তিস্কের একটা স্টিমুলেশন। প্রকৃত কামনাকে তোমরা দেখোনি। প্রকৃত কামনার তৃপ্তির কোন শেষ নেই। কামনার কোন ঠাই থাকে না। কামনা অতল। দেখতে চাও?
"নাহ।"
"কেন চাও না?"
"কাজ পড়ে আছে অনেক। চামড়া খুজতে হবে যে আমার।"
"ওহ। বুঝেছি। আবারো সেই মিথ্যে অজুহাতে প্রেয়সীকে দেখার চেষ্টা। হা হা। ভালো। পরাবৃত্ত থেকে কখনোই বের হতে পারবে না তুমি। আমি জানি।"
"চেষ্টা করছি।"
"তোমার পরাবৃত্তের শুরু এর বিন্দুটা কি? তোমার জীবনে তার প্রথম অভিবাসন?"
"নাহ।"
"তাহলে?"
"যেদিন ও আমার বিশ্বাসটাকে নিজ হাতে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।"
"গড়িয়ে পড়া যন্ত্রণারা কাঁদেনি?"
"কেঁদেছে।"
"সেই থেকে তুমি একে গেছো বৃত্ত!! বৃত্তের শেষ কোথায়? কোন বিন্দুতে এসে মিলেছে আবারো?"

"বৃত্তের শেষও ছুরি দিয়ে। ছুরিতে মিলেছে।"

সরীসৃপ চুপ করে থাকে কিছুক্ষন। নিস্তব্ধতা ক্রমশ বাড়ছে। আরেকটু বেশি হলেই জমাট বাধা শুরু করবে।

"ও তোমাকে শেষ করে দিলো। তারপরও তুমি রয়ে গেছো বৃত্তের মাঝে। তোমার জন্য আমার করুনা হয়।"

আমি একটু হাসলাম।" চলো, দেরি হয়ে যাচ্ছে।"






ক্লান্ত এবং ধীর পায়ে সে এগিয়ে চলে। ভেতরে সরীসৃপটা গুটিসুটি মেরে বসে আছে। নব্য বিবাহিত দম্পতি তখন প্রেমকাননে মাতাল হয়ে চুর হয়ে আছে। বিছানায় ছেটানো রক্ত মাখা পাপড়িতে প্রতিদিনই তাদের বাসর। বেডরুমের পাশে লাগোয়া স্টোররুম। ওখানে পড়ে আছে তার চামড়া। চামড়াটা আনতে হবে। সেই সাথে খুজতে হবে তার রক্তমাংসগুলিও। তার প্রিয় শরীরটার অংশবিশেষ যে হারিয়ে গেছে। কোথায় যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লুকিয়ে আছে, কে জানে।

বাড়ির সামনে এসে সে একটু দাঁড়ালো। সরীসৃপ কে জাগানো দরকার। ঘুমিয়ে গেছে বেচারা।

সরীসৃপের ঘুম ভেঙে গেছে যদিও। মাথাটা একটু তুললো।

"তুমি একাই যেতে চাও?"
"হ্যা।"
"আমি আসি তোমার সাথে?"
" না, তুমি এখানে থাকো। আমি কিছুক্ষনের মাঝেই ফিরে আসবো। কথা দিচ্ছি।"
"তুমি কেন আমাকে নিতে চাওনা? আমি বিষাক্ত, তাই?"
সে একটু হাসলো।

"আচ্ছা, যাও।"

বুকে ভর দিয়ে ঘষটে ঘষটে অর্ধশরীর এর একটি পা বেয়ে মাটিতে নামলো সরীসৃপটা। বড় বড় চোখ করে তার দিকে একবার চাইলো।

"কিছু বলবে?"
"নাহ।" সরীসৃপ একটু চুপ করে থেকে বললো "তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে একবারের জন্য হলেও আমার দেখতে ইচ্ছা হয়।"
"হুম।"
"আচ্ছা, যাও।"

সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ধীর পায়ে তিন তালায় পৌঁছে সে। বেডরুম তখনো নন্দনকানন। প্রেমের গন্ধে ঘরটা ভরপুর। রাতের অন্ধকার, মনের অন্ধকার আর দুই দেহের অন্ধকার মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে।

সে দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকে। অন্ধকারের মাঝেও সে তার প্রেয়সীর মুখখানা দেখতে পায় ঠিক ঠাক। মেয়েটার শুদ্ধ প্রেমমাখা বিশ্বস্ত মুখটা দেখতে তার বড় মায়া লাগে।


ভেতর থেকে অজান্তেই বের হয়ে আসে একটা দীর্ঘশ্বাস। প্রতিদিনই আসে। তবে দীর্ঘশ্বাসটা বোধহয় একটু বেশিই জোরে পড়ে গেছে আজ। ঝামেলা হয়ে গেলো।

খুট করে বিছানা ছেড়ে নামলো মেয়েটা। দীর্ঘশ্বাস এর উৎস খুজছে হয়তো। লাস্যময়ী ভঙ্গিতে সে এদিকেই আসছে। একই রকম ভাবে, ঠিক যেভাবে ভালোবাসার দিনগুলিতে মেয়েটা তার কাছে আসতো। আজ মেয়েটাকে তার খুব বলতে ইচ্ছা করছে-" ভয় পেওনা। আমাকে একটু ভালোবাসো। আমি তোমার সেই পুরনো ভালোবাসার মানুষ।"


স্টোররুমের দরজার পাশে কিছু একটা দেখে মেয়েটা একটা ভয়ংকর একটা আর্তচিৎকার দিলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৩:১৮
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×