somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ll--লুতুপুতুকাল--ll

০২ রা জুলাই, ২০১২ রাত ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ফেসবুকে একটার পর একটা নতুন নতুন ভালোবাসার গল্প কবিতার পেজ গজাচ্ছে। একেকটা ভালোবাসার গল্প পাঠকের কাছে এক এক বেলার খাদ্য। লুতুপুতু গল্প হলে তো কথাই নেই, হামলে পড়ে সবাই খায়। লুতুপুতু ভালোবাসার ছড়াছড়ি দেখে তাই একদিন আমার মনটা আকুপাকু করে উঠলো। পরিচিত এক বড় ভাই আছেন, তিনি অসাধারণ লুতুপুতু গল্প লেখেন। তার লেখা দেখে আমারও শখ হলো একটা লুতুপুতু গল্প লিখবো। যেই ভাবনা, সেই কাজ। একদিন কলম কাগজ নিয়ে হাজির হলাম ভাইয়ার বাসায়।

ভাইয়া আমাকে দেখে বললেন- "কি রে শফিক! অনেকদিন পর দেখলাম তোকে। খবর কি?"
আমি বললাম- “ভালো।”
“আয় আয়, নে, বস। শুনলাম তুইও নাকি আজকাল লেখালেখি করিস?”
“আরে না ভাই। আমরা আর কি লিখবো। আমরা তো চুনোপুঁটি। পারিনা আপনাদের মতো।”
“পাম দিস না। তো হঠাৎ আমার কাছে এলি যে? ঘটনা কি?”

আমি বললাম- “লুতুপুতু গল্প লিখতে মুঞ্চায়। আপনি তো লুতুপুতুর বিরাট বস ভাই। আমাকে একটু হেল্প করেন।”

ভাইয়া অত্যন্ত আনন্দিত গলায় বললেন- “আমার লেখা রিসেন্ট গল্পটা পড়েছিস?”

গল্প পড়িনাই কিন্তু সেটা বললে ভাইয়া বিশাল মাইন্ড খেতে পারে। এই অবস্থায় মাইন্ড খাওয়ানোটা ঠিক না। আমার লুতুপুতু গল্প তাহলে আর লেখা হবেনা।

আমি মাথা নেড়ে বললাম-"জি ভাই। অবশ্যই পড়েছি। আপনার লেখা তো ভাই অসাম লেখা। আপনি গল্প দিবেন আর পড়বো না?"
আহ। ভাইয়া অনেক তৃপ্ত বোধ করলেন বোধহয়। আরামে তার চোখ বুজে আসতেছে। আমার পিঠে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ অবস্থায় তিনি বললেন-

"আসলে ঠিকই বলেছিস। আমার মতো লেখক পাওয়া ভার। আমি সহজে কাউকে টিপস ও দেইনা। তুই আমার খুব কাছের মানুষ, তাই তোকে বলছি। এটা আবার বাইরে কাউকে বলবি না খবরদার। তাইলে কিন্তু সবাই লুতুপুতু গল্প লেখা শিখে যাবে।"

আমি মাথা নাড়লাম। "কক্ষনো না, কক্ষনো না। বললে তো সব্বাই জেনে যাবে।"

ভাইয়া বললেন- "শোন, লুতুপুতু গল্প লেখাটা আসলে কঠিন কিছুনা। রিয়েল লাইফের অঘা মঘা কাহিনীই একটু ঘুরায় প্যাচায় লিখলেই লুতুপুতু হয়ে যায়। সাথে একটু কাকের ঠ্যাং, বকের ঠ্যাং আর ঘরবাড়ি লাগায় দিবি। ও, কিছু ভালোবাসার ডায়ালগ রাখতে হবেই। মাস্ট। নাইলে পাবলিক খাবেনা। আর ভালোবাসা যাতে উথলায় উথলায় পড়ে, এইরকম একটা ভাব রাখতে হবে। বুঝছিস?"

আমি আগ্রহ সহকারে বললাম- "জি ভাইয়া, বুঝেছি। এখন একটু নায়ক নায়িকার চেহারা চরিত্র সম্পর্কে বলেন।"

ভাইয়া বললেন-"মেয়েরা গল্প লিখলে সেই গল্পের নায়ক সুন্দর আর লম্বা হয়। তুই তো ছেলে। তোর নায়ক নিয়ে চিন্তা করার দরকার নাই। তুই নায়িকা নিয়ে চিন্তা কর। তোর গল্পের নায়িকা হবে সেইরকম সুন্দরী। ফর্সা, স্লিম। বুঝছিস?"

"কেন ভাইয়া মুটকি মেয়ে নায়িকা দিলে প্রবলেম কি?"

ভাইয়া বিরক্ত গলায় বললেন- "আবুলের মতো কথা বলবি না। মুটকি মেয়ে নায়িকা দিলে তোর গল্প কেউ পড়বে? পাবলিক খাবেনা। আমাদের মুল লক্ষ্য হচ্ছে পাবলিক খাওয়ানো। গট ইট?"
"ইয়েস স্যার!"
"আর হ্যাঁ, নায়ক একটা মগা ছগা দিলেই হবে। তবে বিরাট একটা প্রেমিক মন থাকতে হবে, নাইলে নায়িকা ইম্প্রেসড হবেনা।"

"দাঁড়ান ভাই। এমন লেখা লিখবো, যে নায়িকার সাথে সাথে পাঠিকারাও নায়কের প্রেম এ হাবুডুবু খাবে। কিন্তু গল্প কিভাবে শুরু করবো ভাইয়া?"

ভাইয়া একগাল হাসলেন।" হু হু, স্টার্টিং টাই আসল। আগের জমানায় সবার সাথে পার্কে, দাওয়াতে, এখানে ওখানে দেখা হতো। এখন ট্রেডিশন চেঞ্জড। এখন নায়ক নায়িকার দেখা হয় ইয়াহু, ফেসবুক, মেসেঞ্জার চ্যাট এ। এগুলো হচ্ছে স্মার্ট প্রেম গল্প। ওইসব গাছতলা, বাগান এর দিন নাই এখন আর।"
"হম, তা ঠিক।"

"ভালো কথা,নায়কের কিন্তু স্ট্রং পারসোনালিটি থাকতে হবে।"

"কিন্তু ভাইয়া, স্ট্রং পারসোনালিটি থাকলে নায়ক যে ছ্যাবলা এর মতো মেয়েকে ফেসবুকে নক করবে, অথবা মেসেঞ্জারে কথা বলবে, তাতে পাঠক পাঠিকারা নায়ককে লুইচ্চা ভাববেনা?"

ভাইয়া অসম্ভব বিরক্ত হলেন।
“তুই বেশি প্রশ্ন করিস। না, এরকম করা এই সব গল্পের ক্ষেত্রে জায়েজ। পাঠক পাঠিকারা লুইচ্চা ভাবে না। অথবা খেয়াল করে না। চারিদিকে ভালোবাসা ভালোবাসা ভাব থাকে তো। তাই।"

"ও আচ্ছা! তাই বুঝি লুতুপুতু গল্পে নায়িকারাও পটাং করে আননোন নাম্বার রিসিভ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বললে কেউ কিছু মনে করেনা, তাইনা?"

"হ্যাঁ। ঠিক ধরেছিস।"
"তারপর কি? কথা বলতে বলতে ভালোবাসা হবে?"

"হ্যাঁ। কথা বলার পর দেখা হবে। দেখা হওয়ার পর দুইজনের মনে কিছু ধুকপুক হবে। ধুকপুক ধুকপুক হতে হতে একসময় পটাশ করে ভালোবাসার ফুল ফুটবে।"

"আচ্ছা, ঠিক আছে। ফাটায় দিবো। এখন বলেন, শেষ করবো কেমনে? ট্র্যাজিক এন্ডিং দিবো? নাকি হ্যাপি এন্ডিং?"

ভাইয়া বললেন- "স্যাড এন্ডিং দিলে পাবলিক তেমন একটা পছন্দ করবেনা। লাইক এরও আকাল যাইতে পারে। পেজ এ লুতুপুতু গল্পের মুল আকর্ষণ লাইক আর কমেন্ট। সেটাই যদি না পাস, গল্প লিখে কি করবি?"

আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। তাও কথা। লাইক না পাইলে গল্প লিখে লাভ আছে?

ভাইয়া বললেন- "আরও একটা সমস্যা আছে। তোর পোস্ট কান্নার স্রোতে ভাইস্যা যাইতে পারে। স্রোত সামলাইতে পারবি?"

আমি বললাম- "স্রোত সামলাইতে কষ্ট হবে। মেয়েদের কষ্ট আমার আবার সহ্য হয়না।"

"হম। একারনেই গল্প হ্যাপি এন্ডিং দিয়া শেষ করতে হবে। বুঝছিস?"

"জি ভাই বুঝছি।"
"নে, এখন লেখা শুরু কর।"

আমি লেখা শুরু করলাম।


“আকাশের সাথে প্রীতির পরিচয় ইয়াহু মেসেঞ্জারে।
প্রীতি প্রতি রাতেই মেসেঞ্জারে বসে। ওর ইউনি এর ফ্রেন্ডরা মিলে প্রতিদিন আলোচনা করে, কোথায় শপিং করলো, কার বিএফ আজ কাকে কি গিফট দিলো, ক্লাসের কোন মেয়েটা নতুন হেয়ার স্টাইল নিয়েছে, এই সব। ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে একমাত্র প্রীতিরই এফেয়ার নেই। যদিও সে অসাম সুন্দরী। কিন্তু মনমতো কোন ছেলে পাচ্ছে না প্রীতি। সবই টাঊট আর বাটপার কিসিমের।

এক রাতে প্রীতি বসে চ্যাট করছে মেসেঞ্জারে, এমন সময় একটা আইডি তাকে নক করলো। আইডি এর নামটাও সুন্দর, আকাশ আহমেদ। প্রীতির ভালো লাগে নামটা। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে কথা হতে থাকে। নামের মতো, মানুষটাও অনেক সুন্দর। এতো সুন্দর করে কথা বলে! প্রীতি মুগ্ধ হয়ে ওর সাথে চ্যাট করে।

আকাশের আসল নাম আকাশ না, আক্কাস। কিন্তু নামটা খ্যাত। এই নাম দেখলে কোন মেয়ে তার সাথে কথা বলবে না। তাই নামটা একটুখানি মডিফাইড। ব্যাপার না। ইংরেজিতে উচ্চারণ করলে এমনিতেও কেউ আক্কাস বলবে না। অ্যাকাস বলবে। আর আকাশ এর বাবা মা আদিকালের হলেও আকাশ মডার্ন ছেলে। প্রাইভেট একটা ইউনিতে পড়ে। সবই আছে তার-গাড়ি, বাড়ি। নেই শুধু একটা নারী। এটা নিয়ে তার দুঃখের শেষ নেই। সে তাই তার স্বপ্নের রাজকন্যাকে খুঁজে চলে। রাজকন্যাকে খুঁজতে খুঁজতে তার অবস্থা খারাপ। খুব দ্রুত তার একটা জিএফ দরকার। বন্ধু বান্ধবদের কাছে তার প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। একটা জিএফ ও জুটাতে পারছে না সে। ইদানীং একটা মেয়ের সাথে ইয়াহুতে কথা হয় তার। নাম প্রীতি। মেয়েটা ভালোই। অতো ভাবিস্ট না। চেহারা কেমন কে জানে। ভালো হলেই লাইন মারা শুরু করতে হবে। আকাশ ভাবে, মেয়েটার কাছে তার ফেসবুক আইডি চাইবে। মেয়েটাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে তার।“


এই পর্যন্ত লিখেছি, এমন সময় ভাইয়া চটাস করে আমার ঘাড়ে একটা থাপ্পড় মারলেন।

"ওই ব্যাটা। কি লিখতেছিস তুই? বলছিলাম না পোলার স্ট্রং পারসোনালিটি থাকতে হবে? তুই তো পুরা পোলার ইজ্জতের ফালুদা বানাই ফেলছিস।"

আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম- "তাইলে কি ভাইয়া, এইটা কাটবো?"

"পুরা কাটার দরকার নাই। আকাশের প্যারাতে ঘষামাজা কর।"
"আচ্ছা ঠিকাছে।"

“আকাশ আহমেদ এর আরেকটা ডাক নাম আছে। ধ্রুব। ছেলেটা একটা প্রাইভেট ইউনিতে পড়ে। অসম্ভব ব্রিলিয়ান্ট। সবসময় সব টিচাররা ইউনি এর অন্যান্য ছেলেমেয়েদের কাছে আকাশের উদাহরণ টানেন। ছেলেটা অতিশয় ভদ্র। তবে ভদ্র হলেই তো কেউ নপুংশক হয়না। ইদানীং একজন প্রেয়সীর জন্য তার মনটা আকুপাকু করছে। প্রীতি নামের একটা মেয়ের সাথে তার ইয়াহু তে চ্যাট হয়। মেয়েটার কথাবার্তা খুবই সুন্দর। আকাশ ভাবছে মেয়েটার কাছে তার ফেসবুক আইডি চাইবে। মেয়েটাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে তার।"

এই প্যারা পড়ে ভাইয়ার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো।
"সাব্বাশ, বেটা বাঘের বাচ্চা। আকাশের ইজ্জত আবার আকাশে তুইল্যা দিছস। ক্যারি অন।"

আমি আবারো লিখতে শুরু করলাম।

“প্রীতি আজ অনেকক্ষণ আকাশের জন্য অপেক্ষা করে আছে নেট এ। ছেলেটাকে তার অনেক ব্যাক্তিত্ববান মনে হয়েছে এই কয়দিনে। আজ কেন আসছে না?

আকাশ অনলাইন এলো একটু পরে।

“এতো দেরী করলে যে?”
“টিউশনি করাই তো একটা। আসতে আসতে দেরী হয়ে গেলো। শোন প্রীতি, তোমার ফেসবুক আইডিটা দেওয়া যাবে?”
প্রীতি মনে মনে খুশি হলো। সেও চাইছিলো ছেলেটাকে একনজর দেখতে। খুশী মনে প্রীতি আইডিটা আকাশকে দিয়ে দেয়।"
“শোন প্রীতি, আজকে একটু পড়াশুনা করতে হবে। কাল পরীক্ষা আছে। আমি তোমাকে ফেসবুকে এড করবো নে। একসেপ্ট করো।"
"আচ্ছা।"
"বাই। গুড নাইট।"

রাতের বেলা পড়া শেষে আকাশ এফবি তে ঢুকে। প্রীতিকে খুঁজে বের করে। প্রীতি এর ফেসবুক প্রোফাইল পিক দেখে তো আকাশের চক্ষু চড়কগাছ। একটা মেয়ে এতো সুন্দর হয় কি করে! আকাশ ছটফট করতে থাকে। অপেক্ষা করে কখন প্রীতি ওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবে। কালকে পরীক্ষা, অথচ মাথা হ্যাং হয়ে গেছে। পরীক্ষা গোল্লায় গেছে। মাথায় ঘুরছে শুধু দুটো লাইন-

“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।“

ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম-“নায়িকার বর্ণনা ঠিক আছে? হইছে?”

“চুপ! কথা বলিস না। লিখতে থাক।“

“পরদিন সকালে প্রীতি ফেসবুকে ঢুকে দেখলো আকাশ রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। কিন্তু প্রীতি হতাশ হলো। ছেলেটার কোন ছবি ফেসবুক প্রোফাইল এ দেওয়া নেই। ও ভেবেছিলো, ও বুঝি আকাশকে দেখতে পাবে।“

রাতে ফেসবুকে অনলাইন হলো আকাশ।
“হাই প্রিন্সেস।“
“হাই! প্রিন্সেস কেন?“
“আপনি কি জানেন আপনি কতো সুন্দর?”
“ইশ! খুব তেল মারা হচ্ছে, না?”
“মোটেই না। আমি কাউকে তেল মারিনা। যা বলি, সত্যি বলি।"

আহ্লাদে গদগদ হয়ে যায় প্রীতি। সে যদিও জানে সে সুন্দর। তবু কেউ তার রূপের প্রশংসা করলে তার ভালো লাগে। আর আকাশের মুখ থেকে সেটা শুনতে তার আজকে আরও অনেক বেশি ভালো লাগছে। কিন্তু পরক্ষনেই একটা কথা মনে পরে মুখ কালো হয়ে যায় প্রীতির।

“তুমি কেন প্রোফাইল এ তোমার ছবি দাওনি, আকাশ?”
“বা রে। আমি ছবি দিলে তো তুমি আমাকে চিনে ফেলবে।‘
“আমি চিনলে সমস্যা কি?”
“এতো সুন্দর মেয়ে কি আমাকে দেখলে আমার সাথে কথা বলতে চাইবে?”
“অবশ্যই বলতে চাইবো। তুমি জানো তুমি কতো সুন্দর করে কথা বলো?”
“জানতাম না। মাত্র জানলাম।“
“খেয়েছো রাতে?”
“হম। তুমি?”
“হম। জানো আজকে কি হয়েছে.........”

আকাশ আর প্রীতির গল্প চলতে থাকে। চলতে চলতে রাত শেষ হয়ে যায়, গল্প শেষ হয়না। সকালে মাঝে মাঝে দুজনারই ক্লাস মিস হয়। তাদের রাতের গল্প ফেসবুক থেকে মোবাইলে শিফট হয়। প্রীতির গলা শুনলেই আকাশের কেমন একটা ভালো লাগা ভাব আসে বুকের মাঝে। প্রীতিও খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে আকাশের সাথে কথা বলতে।"



আমি লেখা থামিয়ে বললাম-“এখানে একটা আইটেম সং দেয়া গেলে ভালো হত।”

ভাইয়া মেঘস্বরে বললেন-
“খালি আকাশ-প্রীতি, প্রীতি-আকাশ করতেছিস কেন? কাকের ঠ্যাং,বকের ঠ্যাং ঘরবাড়ি কই গেলো?”

“দিবো তো। এতো অস্থির কেন হইতেছেন? এই দেখেন।”

“প্রীতির বাসা ধানমণ্ডিতে। বিশাল চারতলা বাড়ি। প্রীতিরা থাকে দোতালায়। বাবার নাম জামিল ইসলাম। তিনি একজন বড় শিল্পপতি। সপ্তাহের ছয়দিন তার দেখা পাওয়া মুশকিল। শুধুমাত্র শুক্রবারে তিনি সারাটা দিন বাসায় থাকেন। সকালবেলা বারান্দায় বসে বসে পেপার পড়েন। পেপার পড়া শেষ হলে তিনি তার লাইব্রেরিতে যান পড়াশোনা করতে। মানুষটা একটু খেয়ালী গোছের। মেয়ে হয়েছে উল্টা।

আজ শুক্রবার। জামিল সাহেব যথারীতি বারান্দায় বসে পেপার পড়ছেন। প্রীতি এসে জামিল সাহেবের হাত থেকে পেপার টা টেনে নিলো।

“ওহ ড্যাড! হোয়াই আর ইউ সো বোরিং?”
“ওহ মাই লেডি! বিকজ আই অ্যাম অ্যান ওল্ড ম্যান।“
“উফ ড্যাড!! তোমার রং ঢঙের কথা শুনলে বিরক্ত লাগে! এই হলিডে কেউ এভাবে নষ্ট করে? এনিওয়ে, আমাকে হাজার বিশেক টাকা দিতে পারবে?”
“হম পারবো। কেন কি করবি?”
প্রীতি মুখ কালো করে বললো- “চুল ঠিক করতে হবে।”
“ও আচ্ছা। ড্রয়ারে আছে, নিয়ে যা।”
“লাভ ইউ ড্যাড!”
“পাগলী।”


এই পর্যন্ত লিখে আমি থামলাম। ভাইয়া কটমট দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে- আমাকে কাঁচা গিলে খেতে পারবেন।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম- "কি হলো? অমন করে আছেন কেন?"

“এই তোর কাকের বকের ঠ্যাং? তুই কি উপন্যাস লিখতে বসেছিস না গল্প?”

আমি গম্ভীর হয়ে বললাম- “সব ঘটনার পিছেই একটা কারন থাকে। এইযে প্রীতি টাকা নিয়েছে, তারও একটা কারন আছে। কারন যথাসময়ে উপস্থিত হবে।”

ভাইয়া দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বললেন-“ কি কারন? এই টাকা দিয়ে আকাশকে গিফট দিবে?”

“ছোহ! মেয়েরা আগে গিফট দিবে আপনি এটা ভাবলেন কি করে? গিফট দিলে দিবে আকাশ। প্রীতি দিবে কেন?”

“তাহলে টাকা নিছে কেন?”
“চুল ঠিক করার জন্য।”
“ বিশ হাজার টাকা নিছে চুল ঠিক করার জন্য। ইয়ার্কি করিস?”

“আরে না!” আমি মুখ গোমড়া করে বললাম-“আমি কি আপনার সাথে ইয়ার্কি করতে পারি? বলেন?”
“আচ্ছা লিখ তারপরে, কি লিখবি।”

"আকাশ আর প্রীতির অন্তরঙ্গতা দিন দিন বাড়তে থাকে। আগে কথা হতো শুধু রাতে, এখন বলতে গেলে সারাদিনই তাদের কথা হয়। আকাশ শুয়ে শুয়ে প্রীতির কথা ভাবে। প্রীতিও আকাশের কথা ভাবে। এভাবে কেটে যায় আরও ৬ মাস। আকাশ বুঝতে পারে প্রীতি তার মনের ভেতরে সুস্পষ্ট একটা ছাপ ফেলে দিয়েছে। এই ছাপ কোনোদিন মুছে যাবার নয়। হয়তো তাদের দেখা করার সময় এসেছে। কিন্তু প্রীতি তার একটা কথা জানেনা। মেয়েটাকে কি সেটা জানানো দরকার?

প্রীতিও ভাবে, আকাশের সাথে দেখা করবে। মানুষটাকে এখনো তার দেখা হয়নি। ছেলেটার কণ্ঠে অদ্ভুত ধরনের এক মোহ আছে। যার কণ্ঠে এতো মায়া, সে দেখতে কিরকম হবে বসে বসে ভাবে প্রীতি। আকাশের চিন্তায় মাঝে মাঝে তার ঘুম আসেনা।
অবশেষে একদিন সব জড়তা ভেঙে ফেলে প্রীতি আকাশকে বললো-“ চলো, দেখা করি।”
আকাশ কিছু সময় চুপচাপ। তারপর প্রীতিকে বললো- “সত্যি দেখা করতে চাও?”
“সত্যি না তো মিথ্যা?”
“আচ্ছা ঠিক আছে। করবো দেখা। কিন্তু তার আগে বলো, আমাকে দেখে যদি তোমার আশাভঙ্গ হয়, তাহলে?”
“তোমাকে দেখে আমার আশাভঙ্গ হবেনা, আকাশ।”
“ধরো যদি কোন কারনে হয়?”
“হবেনা বলেছি না?”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”

তারা দুইজনে ঠিক করে ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে দেখা করবে। আকাশ পরে আসবে একটা আকাশী রঙের শার্ট আর প্রীতি একটা গোলাপি শাড়ি। এই প্রথম প্রীতি আকাশকে দেখতে যাচ্ছে। মানুষটাকে দেখার জন্য সে অনেক বেশি উদগ্রীব হয়ে আছে।


দেখলাম ভাইয়াও উদগ্রীব হয়ে আছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করলো- “তারপর?”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিখতে শুরু করলাম।

“৬ টার অনেক আগেই প্রীতি পৌঁছে গেছে লেকের পাড়ে। আকাশ এখনো আসেনি। মানুষটার জন্য অপেক্ষা করতে তার কেন জানি ভালো লাগছে। বোধ হয় এটাকেই ভালোবাসা বলে। দুর দৃষ্টি মেলে সে অপেক্ষা করে আছে তার জন্য।

“প্রীতি।”
প্রীতি চোখ মেলে তার পাশে তাকালো। খেয়ালই করেনি কখন তার পাশে এসে একজন দাঁড়িয়েছে।
যে মানুষটা এসে দাঁড়িয়েছে, তার পরনে নীল শার্ট। ফর্সা, চশমা পড়া। কিন্তু মাথায় বিশাল বড় একটা টাক।
“তু-তুমি আকাশ?”
আকাশ তার টাকু মাথা নাড়লো।
প্রীতি নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। এরকম টাক মাথার একজনের নাম আকাশ হবে সে কল্পনাও করেনি। সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।

আকাশের চোখও বিষণ্ণ। সে জানতো, প্রীতি তাকে দেখলে পছন্দ করবেনা। তবুও সে অনেক আশা নিয়ে এসেছিলো।

প্রীতি চুপ করে আছে। আকাশ বললো- “কি হলো, কোন কথা বলবে না?”
প্রীতি অনেকক্ষণ চুপ করে বললো- “তুমি আমাকে এটা আগে বলো নি কেন?”
“তোমাকে হারানোর ভয়ে। তোমাকে হারাতে চাইনি, তাই।”
“তাহলে আজ যে ধরা দিলে?”
“দিলাম। একদিন না একদিন তো ধরা দিতে হতোই।”

প্রীতির চোখ টলটল করছে। আকাশেরও খুব খারাপ লাগছে।

“যাই,প্রীতি।”
প্রীতি চোখ মুছে বললো- “কই যাচ্ছো?”
“চলে যাচ্ছি। তোমার চোখের পানি দেখতে ভালো লাগছে না। ভালো থেকো তুমি।”
“দাড়াও।”
প্রীতি হাত ধরলো আকাশের।
“আমার চোখের দিকে তাকাও।”
আকাশ চোখ তুলে প্রীতির দিকে তাকালো।
“আমিও তোমার কাছ থেকে একটা কথা লুকিয়েছিলাম, আকাশ।”
“কি কথা?”
“আমিও তোমার মতোই টাকু।”
“মানে?”
“মানে ১৬ বছর বয়সেই আমার সব চুল পড়ে যায়। এইযে এতো সুন্দর চুল দেখছো আমার, এটা আর কিছুই না, একটা আর্টিফিশিয়াল চুল। মাসে মাসে এটা চেঞ্জ করতে হয়।”

আকাশের চোখ মুখ জুড়ে এখন বিস্ময়। স্রষ্টার কি অদ্ভুত খেয়াল। তিনি মিলিয়ে দিয়েছেন চুলহীন দুই নর-নারীকে। জগত সত্যিই বড় বিচিত্র।

টাকলু যুগল এখন একে অন্যের হাত ধরে লেকের পাড়ে বসে আছে। তারা খিলখিল করে হাসছে। তাদের লুতুপুতুকাল শুরু হয়েছিলো আগেই, আজ তা পূর্ণতা পেলো।”


লেখা শেষ করে পাশে তাকিয়েই দেখি, ভাইয়া নেই। পাশের রুম থেকে ধুমধাম শব্দ শোনা যাচ্ছে। খুব সম্ভবত তিনি লাঠি খুঁজছেন একটা। টাকু কাহিনী তাকে বাকরুদ্ধ করলেও অসাড় করতে পারেনি। পাশের রুম থেকে আওয়াজ শুনছি- “ওরে শফিক্, আজ তোর একদিন কি আমার একদিন!!!”

ভাইয়া খাটের নিচ থেকে মোটা একটা লাঠি খুঁজে পেয়েছেন। লাঠি খুঁজে পেয়ে তিনি ভাইয়া থেকে লাঠি মানব হয়ে গেছেন। ঝড়ের গতিতে তিনি এই ঘরেও চলে এসেছেন। ওরে মা!!

আমি একটা ছোট লাফ দিলাম। সাথে সাথে ঠাস করে একটা বাড়ি পড়লো আমার দুই হাত পাশে। ভাইয়ার টার্গেট মিস।

আমি লাফাতে লাফাতে বললাম- “খেপছেন কেন ভাই? আপনার কথা মতোই তো হ্যাপি এন্ডিং দিছি।”

“ওরে হারামজাদা!! এই তোর হ্যাপি এন্ডিং? টাকলু যুগল? তুই ইয়ার্কি মারার আর জায়গা পাস না?” ভাইয়া আবারো লাঠি দিয়ে সপাং করে একটা বাড়ি দিলেন! আবার মিস!

বাপরে!! এই রইলো খাতা, কাগজ, কলম। লাগবে না আমার গল্প! আমি এক লাফে দরজার কাছে পৌছুলাম। জীবন বাঁচানো অবশ্য কর্তব্য। দরজা খোলাই আছে। এক দৌড়ে বাসার পাশের আমগাছটা পার হয়ে গেলাম। এখন দুর থেকে ভাইয়ার গর্জন শুনতে পাচ্ছি। গর্জাক গে, সে তো জানেনা, দৌড়ে এককালে আমি ৫০০ মিটার চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। হু হু।



সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১২ রাত ৮:১০
৫০টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×