মাছের আঁশ থেকে মুক্তা
প্রাকৃতিক মুক্তা ও কৃত্রিম মুক্তা :
ঝিনুকের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে মুক্ত জন্মালে তাকে প্রাকৃতিক মুক্তা বলে। আর কৃত্রিমভাবে যে মুক্তা উৎপাদন করা হয় তাকে বলা হয় কৃত্রিম মুক্তা। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উপায়ে তৈরি মুক্তার মধ্যে কোন তফাৎ নেই।
কৃত্রিম মুক্তা তৈরির নির্যাস :
মাছের আঁশের উপরের ত্বক থেকে বেরোনো উজ্জ্বল নির্যাসকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃত্রিম মুক্তা তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে ধরা হয়। এই নির্যাসের দীপ্তিকারক উজ্জ্বলতা মাছের উপরের ত্বকের প্রধান জৈব উপাদন গুয়ানিন (২-এ্যামিনো, ৬ অকিইপউরিন রয়েছে) সমৃদ্ধ। মাছের আঁশের উপরের ত্বকে গুয়ানিন থাকার কারণে এটি কলাজেন এবং ক্যালসিয়াম ফসফেটের বিক্রিয়ার ফলে সাদা রূপালি বর্ণ ধারণ করে। এই দীপ্তিকারক রূপালি উজ্জ্বল নির্যাস সাধারণত সামুদ্রিক হোয়াইটিং, সারডিন, হেরিং, রিবন ফিশ এবং মিঠা পানির কিছু কার্প জাতীয় মাছের আঁশে থাকে। সাধারণত এই উজ্জ্বল নির্যাস সারডিন এবং রিবন মাছে বেশি পাওয়া যায়।
শিল্পপ্রধান দেশে এই নির্যাস মুক্তা তৈরিতে ব্যাপক হারে ব্যবহার হয়ে থাকে। উন্নত পরিশোধন পদ্ধতিতে মাছের আঁশ থেকে নির্যাস বের করার পর এতে একরিলিক রাসায়নিক উপাদান মিশ্রিত করে কৃত্রিম মুক্তা তৈরির জন্য ছোট ছোট গ্লাসের গুটিকার প্রয়োজন হয়। নিুমানের কৃত্রিম মুক্তা প্লাস্টিক গুটিকা দিয়ে তৈরি করা। গুয়ানিন হল চতুষ্কাণ আকৃত্রির প্লেইটলেটস, স্ফটিক সমৃদ্ধ এবং ¯-র থেকে ¯-রে আলো সঞ্চারিত করে উজ্জ্বল কৃত্রিম মুক্তা তৈরি করা হয়। উচ্চমানসম্পন্ন গুয়ানিন তৈরির জন্য নির্যাস স্বচ্ছ পদার্থে ইথাইল এলকোহল প্রয়োগ করা হয়। এরপর পরিশোধিত গুয়ানিনে এসিটোন অথবা এমাইল এসিটেইট, অথবা সেলুলয়েড কিংবা নাইট্রোসেলুলোজ বা এলবুমিনের সাথে মিশ্রণ করে উন্নতমানের কৃত্রিম মুক্তা তৈরি করা হয়। যদিও এলবুমিন জাতীয় প্রোটিন মুক্তার উজ্জ্বলতা তৈরিতে অপরিহার্য তা সত্ত্বেও রাসায়নিক উপাদান মুক্তা তৈরির নির্যাস উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা রাখে। মুক্তা তৈরির প্রধান রাসায়নিক পার্ল নির্যাস গুয়ানিন পানি, এলকোহল, ইথার, ক্লোরোফরম, ইথাইল এসিটেইট, এসিটিক এসিড এবং বেশির ভাগ জৈব এসিডে দ্রবীভূত হয় না। তবে, মিনারেল এসিড এবং এলকালিতেও এটি দ্রবীভূত হয়।
১৬৫৬ সালে ফ্রান্সের জপমালা (ধর্মীয় জপে ব্যবহৃত) প্রস্তুতকারক এক ব্যক্তি ফ্রনকয়েস জাকুইন প্রথমবারের মত মুক্তা তৈরির নির্যাস মাছের আঁশ থেকে উদ্ভাবন করেন। আজ বিশ্বে বিশেষ পরিশোধন পদ্ধতিতে কৃত্রিম মুক্তা উৎপাদিত হচ্ছে। ফ্রান্সে প্রথম আবিষ্কার হয় বলে ফ্রান্সের ভাষায় একে ‘বংবহপব ফ’ড়ৎরবহঃ’ বলা হয়ে থাকে।
পেসিফিক বৃটিশ কলোম্বিয়া হেরিং ফিসারী কর্তৃক আহরিত হেরিং মাছের স্কেইল থেকে মুক্তা উৎপাদনের নির্যাস ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়ে থাকে। ১০০ টন হেরিং মাছের ১ টন স্কেইল হতে এক পাউন্ড মুক্তা তৈরির নির্যাস উৎপন্ন হয়।
নির্যাস সংগ্রহ পদ্ধতি :
সামুদ্রিক রিবন ফিশ কিংবা বেল্ট ফিশের আঁশ ধারলো ছুরি দিয়ে ভালভাবে চেঁচে এই রূপালি উজ্জ্বল নির্যাস সংগ্রহ করতে হয়। এই উজ্জ্বল রূপালি নির্যাস পানিতে বারবার নাড়াচাড়া কিংবা ঝাঁকিয়ে উজ্জ্বল গুয়ানিন স্ফটিক সমৃদ্ধ নির্যাস সংগ্রহ করতে হয়। এরপর তলানীতে পড়ে থাকা গাড় তরল পদার্থে অল্প পরিমাণ এসিটিক এসিড এবং ০.২৫ পেপসিন মিশিয়ে ৪৮ ঘন্টা ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দিতে হয়। এতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আত্মস্থ করে নেয়া হয় এবং নির্যাসে যে আমিষ কলা রয়েছে তা বের হয়ে আসে। এসিডিফিকেশনের জন্য এসিটিক এসিডও ব্যবহৃত হয়। আবার মেটালিক এসিড প্রয়োগ করলে গুয়ানিন আত্মস্থ করে ফেলে। এরপর ডি- প্রোপিনাইজড গুয়ানিন সমৃদ্ধ স্ফটিক পদার্থ বের করা হয় এবং ইথার দ্রবণ কিংবা গগসোলিন দ্রবণে মিশ্রিত করা হয়। পরে গুয়ানিন সমৃদ্ধ ¯ফটিক পদার্থ ভালভাবে জৈব শক্তিসম্পন্ন দ্রাবক ¯-র সৃষ্টি হতে পারে। পানিতে মিশ্রিত ময়লা ও কোন বহিরাগত বস্তু পানির ¯-রের নিচে ভাসতে থাকে। অল্প সংখ্যক চর্বিজাতীয় পদার্থ ইথার ¯-রে অবস্থান নেয়। তখন ইথার ¯-র সতর্কতার সাথে পৃথক করা হয়। গুয়ানিন সমৃদ্ধ স্ফটিক পদার্থ শুষ্ক ইথার দ্বারা সাথে সাথে ২ থেকে ৩ বার ধুতে হয় যাতে চর্বি রেরোতে পারে এবং এর পরবর্তী পর্যায়ে ইথার এবং ইথাইল এসিটেডে সংরক্ষণ করা হয়। রিবন ফিশের দেহের ওজন কমপক্ষে ০.৩% স্কেইল হতে মুক্তার নির্যাস পাওয়া যায়। উৎকৃষ্ট মুক্তার নির্যাস লম্বায় ৩০ মাইক্রোন এবং চওড়ায় ৩ মাইক্রোন ও আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.৬ হয়ে থাকে। ফাঁকা গ্লাসের গুটিকায় মুক্তা নির্যাস যান্ত্রিক পদ্ধতিতে আবদ্ধ করে কৃত্রিম মুক্তা তৈরি করার পর গলিত মোম দ্বারা আবৃত করে রাখা হয় কিন্তু এ ধরনের ফাঁকা গ্লাসের গুটিকা দ্বারা সৃষ্ট মুক্তা সহজেই ভেঙ্গে যেতে পারে। উন্নতমানের মুক্তা তৈরির জন্য অপেল গ্লাস বা এলবাসটার ব্যবহার করা হয়।
রিবন ফিশ ছাড়াও অন্যান্য আঁশযুক্ত রূপালি মাছের আঁশ হতেও মুক্তার নির্যাস প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু হেরিং ও রিবন ফিশের স্কেইল হতে যতটুকু নির্যাস পাওয়া যায় তা অন্যান্য মাছ হতে পাওয়া যায় না। রিবন ফিশ আমাদের বঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রচুর পাওয়া যায়। যার কারণে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের কৃত্রিম মুক্তা চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে।
।। ইত্তেফাক - ২৩.১১.২০০৮ ।।
সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো
রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে
ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদ না কী মার্কেট!
চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷
আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন