পক্ষে বিপক্ষে অনেক তর্ক বিতর্কই আছে। যারা শুধু বিপক্ষের বিষয়টা জানতে চান তারা শেষের একটি প্যারা পড়বেন। যদি অর্থনীতি ও ব্যাবসায়িক প্রসাশন সম্পর্কে ধারণা না থাকে, পুরোটা পড়লে ক্রিটিক্যাল বা পেচানো মনে হতে পারে। অনুগ্রহ করে আপনার সুচিন্তিত মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না।
কয়েকটা বিষয়ে আমরা সবাই একমতঃ
এক- গ্রামীন ব্যাংক যাদেরকে ঋন দিয়েছে তার অন্য কোথাও এই ঋন পেত না।
দুই - এই ঋনের সুদ বা মুনাফার হার বেশি।
এবার এই দুটার পোস্ট ইফেক্ট আলোচনা করি-
এক - (সাধারণ ব্যংকে অযোগ্যদের ঋন)
অনেক ক্ষুদ্র ব্যাবসা আছে যেখানে লাভের হার ১০০ থেকে ৫০০ ভাগ বা তার বেশিও হয়। আর এই বিষয়টা সম্ভবত ইউনুস সাহেবের মাথায় ক্লিক করেছিল তখনই। এদেরকে যদি এই ঋন না দেয়া যেত, তবে তারা এই ৫০০ বা ১০০ পার্সেন্ট লাভ কোন ভাবেই করতে পারত না কারণ এরা প্রচলিত ব্যাঙ্ক থেকে ঋন পাওয়ার যগ্যতা রাখে না।
যেমন - একজন টুপি তৈরিতে পারদর্শী লোকের টুপি বানাতে খরচ হয় ধরি ৫০ টাকা। ঐ টুপিটা মিডেল ইস্টের জন্য বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। এখন ৫০ টাকা লোন নিয়ে তার ৫০ টাকা সুদ দিলেও ক্ষতি হবে না বরং ৩০০ থেকে ৪০০ লাভ হবে।
সুতরাং নিঃ সন্দেহে বলা যায় গ্রামীন ব্যাংক এমন কিছু দরিদ্র লোকের উপকারে এসেছে বা সফল ব্যাবসায়ী হতে সহায়তা করেছে যারা প্রায় নিঃস্ব ছিল।
দুই - (উচ্চ সুদ)
যেহেতু এর ঋন গ্রহীতা অত্যন্ত নিঃস্ব এবং তাদের ব্যাবসাতেও কোন স্থাবর সম্পত্তি নাই সেহেতু ব্যাবসায় লস করলে তাদের রিকভারীর তেমন কোন আইনী ব্যাবস্থা নাই বা অনিশ্চয়তার মদ্ধ্যে পরে যায়। আর এই কারনেই তারা প্রচলিত ব্যাংকে লোন পায় নাই। এবং রিস্কের জন্য অতিরক্ত সুদ নিতে হয়। যেন একজন টাকা ফেরত দিতে না পারলেও অন্য ৫জনের কাছে লাভ করে প্রতিষ্ঠান টিকতে পারে।
মতনৈক্যঃ
এক - (সাধারণ ব্যংকে অযোগ্যদের ঋন)
অনেকে সময় বাস্তবে দেখা যায়, অনেক পরিবার ঐ টুপিওয়ালার মত ব্যাবসায় সফল হতে পারে নাই। তারা প্রায় নিঃস্ব থেকে পুরো পুরি নিঃস্ব বা পলাতক হয়েছে। যদিও এটা ডাঃ ইউনুসের ইচ্ছা বা উদ্দ্যেশ্য নয়। এটা অনেক সময়, লোনের সেলস ম্যানদের অতিরিক্ত চাপ প্রদানের ফলে উদ্যাক্তার জোরপূর্বক বা লাভে উদ্ভুদ্য করে লোন দেয়ার কারণে হয়েছে।
তাই এই লোনটা সবার জন্য না। এই লোন কেবল দরীদ্র এবং যাদের ব্যাবসা পুরোপুরি নিশ্চিত শুধু তারাই নিতে পারবে। পূজি বিহিন লোনের উদ্দ্যেশ্যটাই এখানে।
অবশ্যই এই ভাবে অনেক দারীদ্র বিমোচন হয়েছে। এটা একটা সহজ সুত্রে প্রমাণ করা যায়। (সুত্রটা এরকম - "কোন ব্যাবসায় উদ্যাক্তার ২০০ টাকা লাভ হোলে আমার যদি ৫০ টাকা লাভ হয় তবে সব শেষে আমার যদি ১০০০ টাকা লাভ থাকে তবে উদ্যাক্তার লাভ ৪০০০ টাকা। এখন গ্রামীন ব্যাংকের মোট সম্পদের সাথে লাভের অনুপাতকে গুন দিলেই বুঝা যায় এতে অর্থনীতিতে এর ইফেক্ট কত!") লাভের অনুপাত নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু উদ্যাক্ত ও ব্যংকের উভয়ের লাভের বিষয়ে আমি নিশ্চত।
সেটা না হলে এই প্রডাক্ট*(লোন) মার্কেটে পপুলার হত না বা মানুষ ব্যবহার করত না।
*মার্কেটিং এর ভাষায় লোনও একটা প্রডাক্ট।
দুই - (উচ্চ সুদ)
যখন রিস্ক বেশি লাভ/সুদ সেখানে বেশি হবেই। অর্থনীতি সুত্রে সেটাই স্বাভাবিক। ডাঃ ইউনুস একজন বিচিক্ষন ও প্রতিভাবান মানুষ বিধায় তিনি এখানে একটা রিকভারী অপশন তৈরী করেছে যেটা প্রায় নিশ্চিত। (নাহলে যতই সুদ নেয়া হোক গ্রামীন ব্যাংক টীকত না।) আমার কাছে কোন পরিসংখ্যান নাই তবে আমি প্রায় নিশ্চিত তাদের লোন রিকভারি অনেক হাই অর্থাৎ লস নাই বললেই চলে। এখন প্রশ্ন ওঠে তার উদভুত ব্যবস্থায় যদি লস কম হবে তবে এত উচ্চ সুদ কেন? কারণ খুব স্বাভাবিক, এই মার্কেটে যেহেতু কোন প্রতিদ্বন্দী নাই সেহেতু ইচ্ছা মত সুদ নেয়া যায়। এটাকে মার্কেটিং এর ভাষায় বলে প্রমিয়াম প্রাইসিং। একজন ইনোভেটর বা ফার্স্ট এন্টার্নারসরা এই লাভ করে। এই দিক থেকে একজন কাবুলিওয়ালার সাথে ডাঃ ইউনুসের পার্থক্য কেবল কাবুলিওয়ালাদের কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। বিষয়টা অনৈতিক ও অমানবিক তবে সম্পূর্ন ব্যাবসা সম্মত। তাই ডাঃ ইউনুস একজন কঠিন ব্যাবসায়ী হতে পারেন, কিন্তু দরীদ্র দরদী বা সামাজিক উন্নয়নের কারীগর নয়। তিনি দরীদ্রদের নিয়ে চিন্তা করেছেন এবং তাদের সমস্যা সমাধান করে অনৈতিকভাবে বড়লোক হয়েছেন।