মুক্তমনা বা বুদ্ধিজীবীদের কাছে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙ্গালীর হাজার বছরের সংস্কৃতি বলে জিগির তুলতে শোনা যায়। বাস্তবে কি তাই? পোস্টটির মধ্যে কেউ আবার ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক গন্ধ খুঁজতে পারেন। তবে আমি তেমন কোন উদ্দেশ্যে পোস্টটি করছি না। সঠিকটা জানার জন্যই পোস্টটি করছি। আমার জানায় ভুল থাকলে কেউ সংশোধন করে দিলে খুশি হব।
ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতেহত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রুপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে।
বর্তমানে দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে বিভিন্ন মুর্তি বানিয়ে যেটা করা হয় বাস্তবে নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখের কোন সংস্কৃতি হওয়ার কোন যৌক্তিকতা নাই। বাংলা নববর্ষের বয়স পাঁচশ বছরও নয়। সেখানে হাজার বছরের ঐতিহ্য হয় কিভাবে? বড়জোর বাঙলি সংস্কৃতির বয়স হাজার বছরের হতে পারে। তবে সেটা বাংলা নববর্ষের নয়। যেহেতু খাজনা আদায়ের পুর্বের সেই পদ্ধতির অস্তিত্ব আর নাই তাই নববর্ষের ঐতিহ্য হতে পারে হালখাতা বা দোকানপাটের হিসাবের হালনাগাদ করা। পান্তা ইলিশ খাওয়া অধুনা আবিস্কৃত বিষয়। আবার মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে কোন অনুষ্ঠান সার্বজনীন কোন অনুষ্ঠান হতে পারে না। এটা কোন ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হতে পারে। আর এই আধুনিক যুগে এসে পেঁচা, হাতি, কাকপক্ষী বা জীবজন্তুর প্রতিমূর্তি বানিয়ে সেগুলো মঙ্গল এনে দেবে বলে মঙ্গল শোভাযাত্রার অভিনব উদ্ভাবন সত্যিই হাস্যকর।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:০০