প্রতিবারের মত এবারের শীতেও প্রায় প্রতি ঘরে ঘরে শিশুরা ডায়রিয়া ও শ্বাস-কাশের অসুখে ভুগছে । এবং এর প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে কারণে অকারণে বহু ঔষধ বিশেষত এন্টিবায়টিক তাদের উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে ।
বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে অন্যতম অনিয়ম হচ্ছে যুক্তি ও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এন্টিবায়টিক প্রয়োগ করা । এতে সরাসরি রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে । অবিবেচকের মত এন্টিবায়টিক প্রয়োগের অন্যতম কুফল হচ্ছে এর অকার্য্যকারীতাকে অনিবার্য্যভাবে ডেকে আনা। ফলে একটি স্বল্পমূল্যের কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পন্ন ঔষধে যেখানে রোগ সাড়তো তা অকার্য্যকর হবার ফলে রোগ সারাবার জন্য অধিক মূল্যের অধিক মতাসম্পন্ন ও প্রায়শ অধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ঔষধ প্রয়োগ করতে হয়। এতে পুরো সমাজের তি হয়। অপ্রতিরোধ্য জীবানুর উদ্ভব হয়। দেহের নিয়মতান্ত্রিক রোগ প্রতিরোধ মতা বিপর্যস্ত হয় , বাড়তি যোজক হিসাবে অনেক রোগের উদ্ভব হয়। গরীব মানুষের পে সাধারণ রোগের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা মতার বাইরে চলে যায় । সার্বিক ভাবে চিকিৎসা খাতে ব্যয়ভার বেড়ে যায়।
সাধারণ সর্দ্দি কাশি এবং ডায়রিয়া হলেই এন্টিবায়টিক দেয়া বিধি সম্মত নয় । স্বাস্থ্য বিভাগ ও আইসিডিডিআর,বি কর্তৃক এসব রোগের চিকিৎসার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নির্ধারিত রয়েছে । অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ নিয়ম মোটেও মেনে চলা হয়না ।জ্বর হলেই এন্টিবায়টিক এবং ডায়রিয়া হলেই তথাকথিত এন্টিডায়রিয়েল , বমি নিরোধক ও এন্টিবায়টিক প্রয়োগ করার প্রবনতা বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে চলমান সমস্যা। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ রোগগুলো ভাইরাস সংক্রান্ত এবং ভাইরাসের বিরূদ্ধে এন্টিবায়টিকের কোনই কার্যমতা নাই । অনিবার্য কারনে এদেশে এখনো অনিবন্ধিত চিকিৎসক , হাতুড়ে চিকিৎসক ,ফার্মাসিষ্ট ,ঔষধের দোকানদারদের কাছেই মানুষ প্রথমত ও প্রধানত চিকিৎসা নিতে যায় । দারিদ্রতা ও রেজিষ্টার্ড ডাক্তারদের অপ্রাপ্তিই এর অন্যতম কারন বলে বিবেচনা করা যায়। অজ্ঞতা, ভয়াবহ পরিনাম সম্পর্কে উদাসিনতা অথবা ব্যবসার লোভে এইসব চিকিৎসক নাম ধারি অচিকিৎসকগন যত্র তত্র এন্টিবায়টিক ধরিয়ে দেন । কতক স্নাতক এমনকি স্নাতকোত্তর চিকিৎসকও এন্টিবায়টিক নির্বাচনে নিজেকে অটল রাখেন না কিংবা অটল রাখতে পারেন না । অভিবাবকের অধর্য্য জনিত আচরন কখনো কখনো চিকিৎসককে বিশেষত নবীনদেরকে বিভ্রান্ত করে ফেলে ।
কারন যা ই হোক দেশের মানুষের সুচিকিৎসার স্বার্থে এন্টিবায়টিক অনাচার থেকে আমাদের মুক্তি পেতেই হবে । দেশে কয়েক স্তরের চিকিৎসক থাকবে , এবং যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেকের কর্ম পরিধি নির্ধারিত থাকবে , যতদুর জানি তা আছেও ,তবে মানা হচ্ছে না , এটাই হল সমস্যা । এখন সময় এসেছে এ বিষয়ে সময় উপযুগি আইন প্রয়োগের । বিনা প্রেসক্রিপসনে কি কি ঔষধ দোকান থেকে নেয়া যাবে তার একটা নিয়ম থাকা দরকার , যা হবে আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত । এন্টিবায়টিক প্রয়োগের নীতিমালা মেনে চলার ক্ষেত্রে সংস্লিষ্টদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে । সর্বোপরি এ মুহুর্তে সবচেয়ে বেশী দরকার জনসচেতনতা গড়ে তোলার ।