somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুর কোষ্টকাঠিন্য

১৭ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিশুদের ক্ষেত্রে কোষ্টকাঠিন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অসুখ। সাধারণ অসুখ ভেবে একে অবহেলা করলে দীর্ঘস্থায়ী শারিরীক ও মানসিক পরিণতি হতে পারে। শিশুদের পক্ষে শক্ত মল পেট চেপে বেড় করা কষ্টকর। দিনের পর দিন মল শক্ত হয়ে তলপেটের মলাধারে জমতে থাকলে এ কষ্ট আরো বেড়ে যায়। ফলে অনেক সময় মলত্যাগের ব্যাথা প্রসব বেদনার মত অসহ্য হয়। তাই পায়খানার বেগ হলেই কষ্টের কথা ভেবে শিশু আতংকগ্রস্থ হয়ে পরে, এমন কি ভয়ে কাঁদতে থাকে। এভাবে মল জমে জমে মলাধার স্ফীত হয়, এতে নানান জটিলতার সূত্রপাত হয়।

সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ ত্যাগ করা অথবা এত শক্ত মল যে তা বেড় করাই কষ্টকর- একে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। কোন রকম অসুবিধা ছাড়াই দুই তিন দিন পর পর স্বাভাবিক মলত্যাগ কোষ্ঠকাঠিন্য নয়। যে সব শিশুরা কেবলমাত্র মায়ের দুধে পালিত হয় তাদের ক্ষেত্রে - যতবার দুধ খায় ততবারই পায়খানা হওয়া কিংবা দুই তিন দিন বাদে একদিন পায়খানা হওয়া, এ উভয় রকমই হতে পারে।

মানসিক থেকে শুরু করে শারীরিক নানান কারণেই পায়খানা কষে যেতে পারে। তবে শিশুকে সময়মত মলত্যাগের অভ্যাস ও আচরণ সম্বন্ধে না শেখানোর অভাবে এমনটি যে হতে পারে তা প্রথমেই উল্লেখ করা উচিত। একটা নির্দিষ্ট বয়সে শিশুকে নিয়মমাফিক মলত্যাগের জন্য পটি বা টয়লেটে বসা সম্বন্ধে শিখাতে হবে, এ আচরনটির সঙ্গে তাকে পরিচিত করতে এবং উৎসাহ বাড়াতে ছোট খাট উপহার দেওয়া, প্রসংশা করা মায়ের কর্তব্য, দৈনিক দাঁত ব্রাশ কিংবা স্নান করার মতই মলত্যাগেকে অভ্যাসে পরিণত করাতে হবে (টয়লেট ট্রেনিং)। সময় মত টয়লেট ট্রেনিং না পেলে শিশুর ভাগ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য জুটতে পারে। হতাশা, ক্ষুধামন্দা, অশান্তি, খাদ্যভ্যাসজনিত সমস্যা যেমন কম আঁশ যুক্ত খাবার গ্রহণ, বাজারের ফাষ্ট ফুডে অভস্থ্য হওয়া, গরুর দুধের এলার্জি জনিত কোষ্ঠকাঠিন্য, পানি কম পান করা, পানি শুন্যতা দেখা দেয়- এমন অসুখে ভোগা, অপুষ্টির শিকার হওয়া, এগুলি কোষ্টকাঠিন্যের প্রধান কারণ।
অন্ত্রের এবং শিরদাঁড়ার জন্মসূত্রে পাওয়া বা অর্জিত কিছু কাঠামোগত ত্রুটি কতক সময় এর জন্যে দায়ী- ‘হার্সপ্রাং ডিজিজ’ এগুলোর অন্যতম। কিছু ঔষধ সেবনের ফলেও (যেমন- এন্টিহিসটামিন, নারকটিকস) কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কিছু পরিপাকতন্ত্রিয়, স্নায়ূতন্ত্রিয়, বিপাকতন্ত্রিয় কারনও রয়েছে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে পেটে এবং মলদ্বারে ব্যাথা, অবসাদ- অশান্তি- আতংক, নিঃসাড়ে পায়খানা বা প্রশ্রাব হয়ে যাওয়া, প্রশ্রাবতান্ত্রিক ইনফেকশন, মলদ্বার চিড়ে যাওয়া, পেটে জিবানুর সংক্রমণ, বদ হজম (শর্করা, চর্বি ও আমিষ হজমে অসুবিধা) সহ নানান দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের
চিকিৎসার তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপে মলদ্বারে জমা শক্ত মল ‘এনেমা’র সাহায্যে বেড় করতে হবে। এ পর্বটি দুই থেকে পাঁচদিন চলবে। এর জন্য কখনো কখনো হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।
দ্বিতীয় পর্বের চিকিৎসার লক্ষ্য হবে কোষ্ঠ তরল রাখার ব্যবস্থা করা। যাদের অনেকদিন কোষ্ঠকাঠিন্য- এ পর্বের চিকিৎসার জন্য অনেক সময় তাদের ক্ষেত্রে তিন থেকে বার মাস এমনকি আরো বেশী সময় লাগতে পারে। কোষ্ঠ তরল করার নানান ঔষধ রয়েছে। তাৎক্ষনিক চিকিৎসায় এনেমা, গ্লিসারিন সাপজিটরী এবং ধারাবাহিক চিকিৎসায় লেকটলুজ, মিল্ক অব ম্যাগনেশিয়া, বিসাকরডিল, মিনারেল অয়েল, লেকটিটল ইত্যাদি ঔষধ বয়স ওজন ও প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসক প্রেসিক্রাইব করবেন। সব ঔষধ সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। তবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার চেষ্টা যেমন বেশী পানি, তরল খাদ্য খাওয়া, ভুষি ও আঁশযুক্ত খাবার (যেমনঃ- কম মিহি কম সাদা রুটি, শাকসবজি, তরিতরকারী) বেশী খাওয়া, পাকা বেল, পাকা পেঁপে, ইসুবগুলের ভূষির শরবত (না ভিজিয়ে রেখে পানিতে গুলে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া) ইত্যাদি খাওয়ার বিষয়ে উৎসাহ দেয়া জরুরী। এ সময় শিশুকে ভরসা ও ছোট ছোট উপহার প্রদান জরুরী, তাকে দিনে দুই বার টয়লেটে বসাতে হবে, লক্ষ্য থাকবে যেন অন্তত একদিন অন্তর অন্তর একবার পায়খানা হয়। তৃতীয় ধাপের চিকিৎসা হল- পায়খানা ঠিক হয়ে আসলে আস্তে আস্তে ঔষধের নির্ভরতা কমিয়ে আনা। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী রোগীদের ক্ষেত্রে ছয়-সাত মাস সময় লেগে যেতে পারে। এ পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে ঔষধ কমিয়ে আনা হয়।

শিশুর কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে মা- বাবার সমান দায়িত্ব রয়েছে। এর জন্য ধৈর্য্য ধারন প্রয়োজন, বকাঝকা নয় বরং ভরসা, প্রশংসা, পুরস্কার ইত্যাদিতে শিশুর উপকার হয়। শিশু এর জন্য দায়ী নয়। ভুল পদ্ধতির লালন পালন, পারিবারিক খাবারের পরিবর্তে কৌটাজাত খাবারে অভ্যস্ত করা, সময়মত শিশুকে টয়লেট ট্রেনিং দিতে না পারাই মূলত এর জন্য দায়ী। চিকিৎসার পক্ষে উৎসাহ ব্যাঞ্জক দিক হচ্ছে শিশুর অন্ত্রের মাংসপেশীর জোড় বড়দের চেয়ে বেশী, তাই একবার ভীতি কাটিয়ে উঠলে অরোগ্য লাভ দ্রুততর হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১১:৪৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×