নিউমোনিয়া কি?
এটা হল শিশুর কাশ ও তার সংগে শ্বাসকষ্টের অসুখ।যাতে ফুসফুসের বায়ূ কুঠুরি আক্রান্ত হয়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও পরজীবীর সংক্রমনে নিউমোনিয়া হতে পারে। আমাদের মত দেশে এর প্রধান কারণ হল ব্যাকটেরিয়া। মারাক্তক আকার ধারন করলে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ঠিক মত চিকিৎসা না হলে জঠিলতা সহ শিশু মৃত্যুর আশংকা রয়েছে।
নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া কাকে বলে?
‘স্ট্রেপটকক্কাস নিউমোনি’ নামের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংঘটিত নিউমোনিয়ার নাম ‘নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া’। দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয়। বাহক অথবা আক্রান্ত ব্যাক্তির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। বাহক হল সেই শিশু বা ব্যাক্তি যে নিজে রোগাক্রান্ত না হয়েও তার দেহে ঐ রোগের জীবানু থাকার কারনে রোগ ছড়াতে পারে। আর বলা বাহুল্য, আক্রান্ত ব্যাক্তি বা শিশুর দেহে তো ঐ রোগের জীবানু রয়েছেই। নিউমোকক্কেল নিউমোনিয়া রোগের বাহকের শ্বাস নালীর উর্র্ধ্বভাগে এ রোগের জীবানু বাসা বেঁধে থাকে। সুতরাং বাহক অথবা আক্রান্ত ব্যাক্তির হাঁচি কাশি এমনকি শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে কাছে অবস্থানরত মানুষেরা সহজেই আক্রান্ত হতে পারে।
লক্ষণ
সব নিউমোনিয়ার সাধারন লনই এক। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিশেষ কিছু দিক ও পরিা থেকে তা আলাদা করে বুঝতে পারেন। সাধারন লন হলো, সর্দি কাশি, ঘন ঘন শ্বাস নেয়া, বুকের ছাটনা শ্বাস- প্রশ্বাসের সময় ডেবে যাওয়া। এ ছাড়া বুকে-মাথায়-পেশিতে ব্যাথা, ক্ষুধা মন্দা, বমি হতে পারে। ব্যাথর কথা শিশুরা বলে বুঝাতে নাও পারে।
ব্যাপকতা ও জটিলতা
বাংলাদেশে নিউমোনিয়ার প্রধান কারণ হল ‘স্ট্রেপটকক্কাস নিউমোনি’ জীবানুর সংক্রমন । শুধু নিউমোনিয়া নয় এটি এদেশে ব্যাকটেরিয়া জনিত মেনিনজাইটিস ও সেপটিসেমিয়া’রও প্রধান কারণ।
বাংলাদেশ পৃথিবির দশটি দেশের মধ্যে অন্যতম যেখানে ‘স্ট্রেপটকক্কাস নিউমোনি’ জনীত মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। প্রতি বছর এখানে প্রতি এক লক্ষ শিশুর মধ্যে একুশ হাজার শিশু এই সংক্রমনে মারা যায়।
যতন জীবানুটি শ্বাস যন্ত্রে থেকে রোগ ঘটাচ্ছে ততন তাকে বলি‘ নিউমোক্কাল নিউমোনিয়া’। তবে জীবানু যে কেবল সেখানেই বসে থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই। সুযোগ পেলেই তা রক্তে ছড়িয়ে পরতে পারে, তাকে বলে ‘বেকটেরিমিয়া’। সেখান থেকে যখন তা অন্যান্য অংগে আক্রমন করে তখন তাকে বলা হয় ‘সেপটিসেমিয়া’। প্রধানত মস্তিস্কে আক্রমন করে ‘ম্যানিনজাইটিস’ রোগ ঘটাতে পারে, যা বড় জটিল , যাতে শিশুর খিচুনি হয়। রক্ত থেকে মধ্য কর্নে রোগ ছড়াতে পারে, এটার সম্ভাবনা খুব বেশী। এছাড়াও রোগটি হৃদপিন্ডেও ছড়াতে পারে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে এ রোগের জটিলতা সাড়া দেহ জুড়ে ও এতে মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রচুর।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
সাধারনত এন্টিবায়টিক দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়, রোগ মারাক্তক হলে হাসপাতালে ভর্তি করে শিরায় এন্টিবায়টিক, অক্সিজেন, স্যালাইন দিতে হয়। ঘন ঘন শ্বাস ফেলা, নিঃশ্বাসের সময় বুকের ছাটনা ডেবে যাওয়া, এ গুলো হল মারাক্তক অবস্থার অন্যতম লক্ষন। প্রয়োজনে নিবিড় পরিচর্যা কে ব্রিদিং মেশিনের সাহায্য নিতে হয়। রোগ বুঝার সংগে সংগে প্রচুর পানি ও পানিয় দিতে হয়।
হাচি-কাশি ও কাশের মাধ্যমে যাতে রোগ ছড়াতে না পারে তার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শিশুকে রাখতে হবে। হাচি-কাশির সময় রুমাল বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা, খাবারের আগে হাত ধোয়ার অভ্যাস শিখাতে হবে। হাচি-কাশির রোগী থেকে শিশুকে বাচিঁয়ে রাখতে হবে।
নিউমোকক্কেল টিকা দিয়ে নিউমোকক্কেল নিউমোনিয়া রোগের পাশাপাশি নিউমোকক্কেল রোগগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ টিকা বেসরকারি টিকা কেন্দ্রে পাওয়া যাবে, সরকারী ভাবে এখনও তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। হয়তো ভবিস্যতে তা সম্ভব হবে। টিকা মাংসপেশিতে দিতে হয়। দেড় মাস থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের জন্য এই টিকার ডোজ হলো চারটি, সাত থেকে এগারো মাস বয়সে তিন ডোজ, বার মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সে দুই ডোজ দিতে হবে।