যতদিন হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন, ততদিন কি মনে হয়েছে যে আমরা হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ঈদ উদ্যাপন করছি? হয়তো না, কেন না তিনি মিশে ছিলেন ঈদ অণুসঙ্গে, যেন স্বাভাবিক একটা কিছু। উপহার হিসেবে আমাদের জন্য যেমন রয়েছে রোজার ঈদে নজরুলের ‘ও মন রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি। চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে গানটি শোনা মাত্রই আমাদের দেহ-মনে ঈদের পবিত্র সুখানুভুতি বইতে শুরু করে।
প্রতিটি ঈদেই যতগুলো ঈদ সংখ্যা বের হতো তার প্রায় সবগুলোতেই হুমায়ূন আহমেদের লেখা ছিল অপরিহার্য। ঈদে তার বিশেষ ধরণের মনোরঞ্জনে ভরা টেলিভিশনের নাটক আমরা দেখতাম বেশ আয়োজন করে। ঝিমিয়ে পড়া ঈদ আয়োজনে তা যেন হতো এক নিয়ামক। হয়তো ঈদের দিনেই আমরা বসে পরতাম তার লেখা গল্প, উপন্যাস পড়তে। এভাবে আমরা ভুলেই যেতাম যে হুমায়ূন আছেন বলেই আমরা আলাদা আনন্দের স্বাদ পাচ্ছি।
আজ হুমায়ূন নেই। আমরা এবারের ঈদে তার অনুপস্থিতি টের পাব প্রকট ভাবে। তার লেখা ছাড়া কাগজ গুলো বের হবে, মনে হবে যেন কি নেই তাতে, যা ছিল অতি প্রয়োজন। গরিব গরিব লাগবে কাগজগুলোকে। টেলিভিশনে হয়তো নাটক থাকবে, কিন্তু মনে হবে তা একদম নিরস, হুমড়ি খেয়ে পড়ার কোন তাগিদ থাকবে না তাতে।
কয়েকটা ঈদ সংখ্যা আমি ইতোমধ্যে দেখলাম, সুনীল-শীর্ষেন্দু আছেন যথারীতি। অবশ্য তারা আগেও ছিলেন। ওপার বাংলা আমাদের লেখকদের সঠিক স্থান না দিলেও আমরা কিন্তু তাদের সম্মান দিতে ভুলিনা। সে দিন টেলিভিশনের টক শো -তে শুনলাম, কলকাতার হেভি ওয়েট লেখকরা তাদের পুরানো, আগে ছাপানো কিংবা যেন-তেন ভাবে লেখা কিছু একটা অনুরোধের তাগিদে পাঠিয়ে দেন, আমরা সে সব লেখাকে বিশেষ মর্যাদার স্থান দেই। এবার ব্যাতিক্রম দেখলাম, সুনীল-শীর্ষেন্দুর লেখা গল্প,উপন্যাস ফাঁকা মাঠে গোল দিচ্ছে যেন। বাংলাদেশ যদি হয় বাংলা ভাষার রাজধানী, হুমায়ূন হলেন সে দেশের রাজা। আজ রাজা নেই, তার বিকল্প নেই বলে সেই সিংহাসনও খালি।
দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মতই এবারের ঈদ পোশাকে দেখা যাচ্ছে , তরুণ-তরুণীরা বেছে নিয়েছে হলুদ রং। হলুদ রঙ্গের পাঞ্জাবী , কামিজ, শাড়ী এগুলো পড়েই হুমায়ূনকে স্মরণ করতে চায় তারা। হলুদ মানে হিমুর পোশাক। হিমু হয়ে হুমায়ূনকে খোঁজার এ হলো এক অনুপম প্রয়াস। অনেকে আবার পড়বে হুমায়ূনের মুখচ্ছবি ছাপা টি- সার্ট, গেঞ্জি। এ ভাবেই হুমায়ূন হারা ঈদ উদ্যাপিত হবে এবার বাংলাদেশে।