আওয়ামী-রাজনীতি বানিজ্যের এক বড় পণ্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা।
বহু দিন ধরে . . .
বহুজনে মিলে . . .
বহু ব্যয় করে . . .
করিতে আসিয়াছি একাত্তরের যুদ্ধপরাধের বিচার।
বাহবা, বাহবা, বা - হা।
মহামান্য বিচারকগণ এখন সাক্ষী-সংগ্রহ, আলামত-বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত-সংগ্রহসহ নানা গবেষণা কাজে মহাব্যস্ত। আমি বুঝি না সেই সময়কার পরাজিতদের বিচারকার্য পরিচালনা করার জন্য এত খাতির-যত্ন কেন। খুব সহজেই তো এদের শাস্তিতর ব্যবস্থা করা যায় -
১. একাত্তরের যুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ স্পষ্ট। সেই যুদ্ধের বিরাধিতা যারা করেছে তারাই অপরাধী।
২. যুদ্ধে পরাজিত শক্তি অপরাধি না হলে জয়ি শক্তির সঠিক অবস্থানটাই প্রশ্ন বিদ্ধ হয়ে পড়ে। তাই গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ, সাইদি যদি অপরাধী না হয় তবে শেখ মুজিব, তাজউদ্দিন সহ সকল মুক্তিযোদ্ধা্রাই অপরাধী। যুদ্ধে কখনোই দুই পক্ষ সঠিক হতে পারে না।
৩. সেই সময়কার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ পত্রিকাগুলো যে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে, দেখা দরকার সেগুলোর প্রতিবাদ যুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি করেছিল কি না; যদি না করে থাকে তো সেই সংবাদগুলোর ভিত্তিতেই যুদ্ধ-বিপক্ষ শক্তিকে অপরাধী করা যায়। জামাতের নিজস্ব পত্রিকা "দৈনিক সংগ্রাম" এর ১৯৭১ সনের সংবাদগুলোই যথেষ্ট জামাত-নেতাদের অপরাধী বানানোর জন্য।
৪. বি্এনপি'র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত "বাংলাদেশের স্বাধিনতা যুদ্ধের দলিলপত্র" তথ্য-ভান্ডারে যে তথ্য আছে সেটা দিয়েই গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ, সাইদী সহ অনেক মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের অপরাধ নিশ্চিত করা যায়। আর ঐ তথ্য-ভান্ডারের বিরোধীতা সয়ং বিএনপি'রও সাধ্য নাই।
৫. গোলাম আজম নিজেই নিজের অপরাধের স্বাক্ষী। ১৯৭৪ সন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে তার কুটনৈতিক তৎপরতার রেকর্ডই যথেষ্ট তাকে অপরাধী প্রমাণের জন্য।
৬. শেখ মুজিব এবং তার সহযোগীদের একটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল - পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধিন করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য যা যা করা হয়েছে [শত্রু নিধন, পাকিস্তানের স্থাপনা ধ্বংস, ব্রীজ উড়িয়ে দেয়া, ইত্যাদি] তা যত বড় থেকে বড় বা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতরই হোক না কেন সেই সমস্ত কাজের দায়িত্ব এবং জয়ি হওয়ার পর প্রশংসিত ও পুরষ্কৃত হওয়ার ভাগীদার শেখ মুজিব ও তার সহযোগীরা।
সেই একই ভাবে গোলাম আজম এবং তার সহযোগীদের একটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল - মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্নক উপায়ে ধ্বংস ও মনোবল নষ্ট করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য যা যা করা হয়েছে [বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়া, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, বাঙালি নারী ধর্ষন করা, ইত্যাদি] তা যত বড় থেকে বড় বা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতরই হোক না কেন সেই সমস্ত কাজের দায়িত্ব ও হেরে যাওয়ার পর তিরষ্কৃত ও শাস্তির ভাগিদার গেলাম আজম ও তার সহযোগীরা।
৭. আজ পর্যন্ত কোন জামাত নেতা, পাতি নেতা কেহই অস্বিকার করে নাই যে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। সুতরাং অন্য কোন সাক্ষীর কি কোন প্রোয়াজন আছে তাদের অপরাধ প্রামাণিত হওয়ার।
সুতরাং আওয়ামী সরকার যেন এই রাজনীতি বানিজ্যে "যুদ্ধাপরাধ" কে আর পণ্য হিসাবে ব্যাবহার না করে বিচার টা সেরে ফেলে - আমাদের আরো অনেকদুর যেতে হবে, নাকি?
তা না হলে উন্নয়নের যাত্রার এই এক ষ্টেশনেই আটকে থাকতে হবে আমাদের বছরের পর বছর।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৬