প্রেমের বিভিন্ন মাত্রা, ধাপ বা প্রকার নিয়ে অনেকেরই অনেক ধরনের তত্ব, তথ্য, বিশ্লেষন রয়েছে। এর ভেতর "ফ্রয়েডিয়-প্রেম" ও "প্লেটনিক-প্রেম" একটা মোটা দাগের পার্থক্য। এই দর্শনের উপর অনেক আগে যাযাদি'তে মাহবুব কামাল নামে এক কলামিস্ট এ দুই প্রেমকে সঙ্গায়িত করেছেন এভাবে -
- দেশ ও সমাজের প্রতি মানুষের যে প্রেম সেটাই শতকরা একশত ভাগ প্লেটনিক প্রেম; কারন এতে শরীরের সামান্যতম কোন অংশ নাই, পুরোটাই মানসিক প্রেম।
- বেশ্যার প্রতি একজন কামুক পুরুষের প্রেম হচ্ছে শতকরা একশত ভাগ ফ্রয়েডিয় প্রেম; কারন এতে মনের সামান্যতম অংশ নাই, পুরোটাই শারীরিক প্রেম।
এই দুই প্রেমের বাহিরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আরেক ধরনের প্রেমের শ্রেণী বিন্যাস করেছেন। "প্রাচ্যের প্রেম" ও "পাশ্চাত্যের প্রেম"।
- প্রাচ্যের প্রেম হচ্ছে বিড়ালের প্রেমের মত - সখা, সখিকে ভোগ করার জন্য কত কায়দা, কত ভুলিয়ে-ভালিয়ে, আড়ালে নিয়ে গিয়ে একাকী রমনে লিপ্ত হওয়া।
- পাশ্চাত্যের প্রেম হচ্ছে কুকুরের প্রেমের মত - যখন যাকে যেভাবে পাওয়া যায়, প্রবেশের দ্বার অবারিত হলেই একক বা সবে মিলে, গলি কি চৌরাস্তায় কোন মাত্রা জ্ঞান না করেই অপার আনন্দে দিশেহারা হওয়া।
[রবীন্দ্রনাথের কথাগুলো হুবহু মুখস্ত নেই, তবে ভাবটা এরকম]
কয়েকদিন ধরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "প্রথম আলো" উপন্যাসটি পড়ছিলাম। অনেক ঐতিহাসিক চরিত্রে পূর্ণ এই উপন্যাসটি। ইহারই এক পাতায় রবীন্দ্রনাথ তার বৌদি নতুন বউঠান কাদম্বিরি'র শোক ভূলতে তাঁর স্ত্রী মৃনালিনী'র কাছে এলেন এবং তাদের প্রথম মিলনটির ঘটনা এভাবেই বর্নিত -
" . . . . . দ্রুত বিছানার কাছে চলে এল রবি। এ ঘরে একটি মৃদু গাসের বাতি সারা রাত জ্বলে। স্বচ্ছ মশারি দিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটা পাশ বালিশ জড়িয়ে এক পাশে ফিরে ঘুমিয়ে আছে মৃণালিনী, গোলাপি ডুরে শাড়ি পরা, খানিকটা চুল এসে পড়েছে মুখের ওপর, তার ফাঁক দিয়ে ঝিকমিক করছে কানের হীরের দুল।
মশারি তুলে ভেতরে ঢুকল রবি, অন্যদিন যাতে মৃনালিনীর ঘুম না ভাঙ্গে তাই সে সন্তর্পণে অনেকটা দুরত্ব রেখে শোয়, আজ সে পাশে আঙুল দিয়ে সরিয়ে দিল ওর মুখের চুল। সেই সামান্য স্পর্শেই চোখ মেলে তাকাল মৃনালিনী, চমকে উঠল না, উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রইল। রবি তার ঠোটে আঙুল বুলিয়ে দিল, তারপর তার নাক ও চোখের পাশে পাশে আঙুল দিয়ে যেন আঁকতে লাগল ছবি। মৃনালিনী তার আঙুলটা এক সময় চেপে ধরতেই রবি তাকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করতে লাগল।
ছায়া থেকে শরীর অনেক বেশি আপন হতে পারে। শরীর অনেক কিছু ভুলিয়ে দেয়, এমনকি শোকও ভুলিয়ে দেয়।"
[ঘটনার সত্যি-মিথ্যা হয়ত প্রমাণিত কিছু নয়, কারন এটা সুনীলের উপন্যাসের অংশ।]
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৫৪