ঘটনা এক.
আমাদের বুয়া মমতার মা'কে আমার মা মজা করে ১৫/১৬ দিন আগে জিজ্ঞেস করেছিলেন সে গাজীপুর সি.ক. মেয়র পদে কাকে ভোটে দিবে। তখন নাম না বলে সে একটি মার্কার কথা বলল, "ঐ মার্কায় দিমু।" আমার মা জানতে চাইলেন কেন সে কি খুব ভাল লোক। বুয়া উত্তরে বলল, " বালা / মন্দ বুঝি না, আমাগর বাড়িওয়ালি [বস্তি বাড়ির মালকিন] আমাদের সবাইরে [ঐ বস্তিতে মোট ভোটারের সংখ্যা ২২] ঐ মার্কায় ভোট দিতে কইছে।" শেষে ভোটের দিন বুয়া ভোট দিয়ে আসার পর আম্মা আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন কি কোন মার্কায় দিলা। সে বিপরিত মার্কার কথা বলল। আম্মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন "কেন?" বুয়া উত্তর দিল, "আইজ সকালে বাড়িওয়ালী সবাইরে ডাইকা চা-নাস্তা করাইয়া কইল - আগে যা কইছি সব ভুইলা যাও; আইজকা এই মার্কারে ভোট দিবা। তখন কয়েকজন কইতে চাইল আপনে এতদিন কইলেন এইটা, এখন কন অন্যটা। বাড়িওয়ালী ধমকাইয়া কইল এত কথা কও ক্যান, যা কইছি ঐভাবে ভোট দিবা, রিকসা ঠিক করা আছে, ভোট দিয়া আমার লগে দেখা করবা। বুঝছ?" আম্মা বলল যে কেন্দ্রের ভিতর তো কেউ তোমাকে দেখত না, তুমি তোমার মত ভোট দিতে। বুয়া কইল আমরা তো বাড়িওয়ালির লগে হাত ধইরা কথা দিছি। আম্মা আর কিছু বললেন না।
ঘটনা দুই.
আমার অফিসের গাড়ি চালক হোসেন [৫০] নিজ বাড়িতে থাকে। তার বাড়িতে এক ভাড়াটিয়াও আছে। তিনি মহল্লার একটা ছোট স্কুলের এইচ.এস.সি পাস শিক্ষিকা। এই শিক্ষিকা হোসেনকে মুরুব্বি হিসাবে শ্রদ্ধা করে। ভোট দিতে যাবার সময় এই শিক্ষিকা হোসেনের ঘরে এসে জিজ্ঞেস করে -
- ভাইজান কারে ভোট দিব, বলেন।
- না, তোমার যারে ভাল লাগে তারে ভোট দিও।
- না ভাইজান, আমি তো আপনার পরামর্শ ছাড়া কোন কাজ করি না।আপনি যেই মার্কায় বলবেন, সেটাতেই দিব।
- তাইলে এই মার্কায় ভোট দিও।
- ঠিক আছে, ভাইজান।
আমি বুয়া বা্ শিক্ষিকাকে পয়েন্ট করছি না, বুয়া ও শিক্ষিকার অসচেতনাকে পয়েন্ট করিছ।
একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ভোট, একজন চিকিৎসকের ভোট, একজন প্রকৌশলীর ভোট, একজন সরকারী কর্মকর্তার ভোট, একজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজিবির ভোট, একজন ব্যাংক এম.ডি'র ভোট, একজন মেজর জেনারেলের ভোট, একজন বৈঙ্গানিকের ভোট, একজন জাতীয় দৈনিকের প্রধান সম্পাদকের ভোট, একজন সংসদ সদস্যের ভোট, একজন মন্ত্রির ভোট
আর এই বুয়া / শিক্ষিকার ভোট-ক্ষমতার মাঝে কোন পার্থক্য আছে ?
সবার ভোট ক্ষমতা - ১।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:২৪