somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৮

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৭ রুজার পর খুরশিদ এর মাদরাছা ছুটি হৈল । এক সপ্তার জৈন্য । গেরামে এসে সে আমার দোকানে বৈসা থাকে পরায় সারাদিন । অনেক কথা জমা । জীবনের ব্যস্ততায় ঠিকমত কথা বলছি দুইজন অনেকদিন পরে । আমার মন উশখুশ করে কুলসুমার খবর জানার লাইগ্যা । একথায় সেকথায় তারে জিগাইলাম কুলসুমার কি খবর , আছে কেমুন ।খুরশিদ নিজেও অতভাল জানে না । ও নিজেই থাকে দৌড়ের উপর । কৈল চল যাই ঈদের পরদিন । পরে সিনেমা দেখতে যামুন কাননে অথবা দুলালে ।

ঈদের পরদিন খুরশিদ আমি আর ওর ছুড বৈনটা মিলা গেলাম কুলসুমার শ্বশুর বাড়ি । কুলসুমার জামাই এক বাপের এক পুলা । বাপ মারা গেছে । ঘরে কেবল শ্বাশুড়ি । মাঝারি ধরণের গেরস্ত পরিবার । ধানের মওসুম লাইগাই আছে সারা বছর । তাছাড়া বাড়িতে এইকাজ সেইকাজ লাইগাই আছে । শ্বাশুড়ি বুড়া মানুষ । বিপদআপদের ব্যাপার স্যাপার আছে । বিয়ার দুইমাস পরে জামাই চৈলা গ্যাছে উমান । একা বাড়ীতে শ্বাশুড়িরে ফালাইয়া যাইতে পারে না । বউ-শ্বাশুড়ি দুইজন মিলা বাড়ী খালি কৈরাও যাইতে পারে না । তাই বাপের বাড়ীত যাওন আর হয়না । বুড়ী এমনিতে ঝামেলা করে না কিন্তু কোথাও ছাড়তে চায় না এক দিনের লাইগাও । একা বাড়ি খাঁ খাঁ করে ।

দুফরে খেয়েদেয়ে , বেইল পড়লে রওনা দিমু এই ঠিক কৈরা খুরশিদ আর ওর ছুড বৈন ঘুম দেয় । আমার মনের ভিতর কথার পাহাড় জমা । এদিক সেদিক একটু ঘুরাঘুরি কৈরা আমি বৈঠকখানায় গিয়া বসি । কুলসুমার জামাই মাসিক মদীনার নিয়মিত গ্রাহক মনে হয় । বৈঠকখানায় অনেকগুলা সাজানো । উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখতাছি এমন সময় কুলসুমা এসে দরজায় দাঁড়ায় । আবার সেই মায়াময় চোখ । আমি সহ্য করতে পারমু না বৈলা তাকাই না । ভালো আছেন ? এই ছুট্ট একখান কথায় সারা জীবনের ভাগ্যের পুন্দানি যেন চুখের সামনে ভাইসা উঠে আমার । মাথা নিচা করে সোফায় বসে গলায় উঠে আসা কান্নার দমক সামলাচ্ছি । সামনে এসে কুলসুমা বলে মাথার চুলতো অর্ধেকও নাই, ঘাড়ের পিছে ময়লা , পাইন্জাবির উপরে দিয়া পিঠের হাড্ডি গুনা যায়। গোসল করেননা ঠিকমত, খাননা ঠিকমত । মরতে চান নাকি ? আমার লাইগাই বৈলা আমারেও মাইরেন না । আমি আর ধইরা রাখতে পারলাম না । সব এমন হৈল ক্যান বৈলা উইঠা কুলসুমারে আন্জা কৈরা ধরতে যাই । নীল দেয়া পাইন্জাবির উপর চোখের পানির দাগ । ঝট কৈরা কুলসুমা সৈরা দাঁড়ায় । তারপর দরজা দিয়া বাইরে । দরজার সামনে সিঁড়িতে দাঁড়াইয়া বলে , আমি অন্যের বউ । তারে ঠকাইতে পারব না ।

যেই মেয়ে শইল্যের সব অঙ্গ কাইট্যা দিয়া হৈলেও আমারে বাঁচাইতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবো না , সে পরপুরুষের সামান্য ছোঁয়া দিয়াও , নিজপুরুষরে ঠকাইতে চায় না । এই জিনিস কুলসুমারেই মানায় । আয়েশারেও হয়ত মানায় । জানি না । মনে মনে বলি আল্লা আমার ভাইগ্যের সবগুলা পুন্দানি ফুল কৈরা ঝরাও তুমি কুলসুমার জীবনে । আমারে আরও লাত্থিগুতা খাওয়াও । আপত্তি করব না । শুধু কুলসুমারে না । চোখ মুছতে মুছতে ভিতরের ঘরে চইলা যায় মেয়ে ।

বিকালে খুরশিদ এর পিচ্চি বৈনডারে বাড়িতে দিয়া আমি আর খুরশিদ ফেনী যাই সিনেমা দেখতে । কাননে হুমায়ুন আহমেদ এর কি জানি একটা ম্যান্দা মার্কা ছবি চলতাছে । দুলালে যাই মুনমুনের ছবি দেখতে । মাঝখানে দুইজনই আলাদা আলাদা কৈরা এস্তেন্জা ঘুইরা আসি ।

আব্বার দোকানরে বেলেন্সে আনতে যাইয়া শইল্যের উপর আসলেই অনেক খাটনি গেছে । কুলসুমার মত কৈরা কেউ বলে নাই বৈলা হয়ত এদ্দিন খেয়াল করি নাই । রাইতে ঘুমানোর আগে দোকান থাইকা একটা কাঁচা ডিম খালি একটু নুন দিয়া খাইয়া নেই সেদিন । কে জানি কৈছিল কাঁচা ডিমে ভিটামিন বেশি । সিদ্ধ করেল ডিমের ভিটামিনের বেশিরভাগই আগুনে নষ্ট হৈয়া যায় । আইজকা আবার সিনেমা হলে একবার ফিরা আইসা সন্ধ্যায় আরেকবার এস্তেন্জায় গেছি ।

মাসগুলা কাটতে থাকে নিরানন্দ । এইভাবে ধুঁকে ধুঁকে রক্ত ফানি কইরা আর কত টানমু এই দোকানরে । ১১ জনের ঘর । দোকানের যেই লাভ তাতে ঘরের খরচ চালাইতেই অবস্থা কাহিল । বড় ভাই ভোদাই । সাইঝা ভাই উড়নচন্ডী । আমার উপরের টা দরবেশ । মসজিদের কিছু লাগলে নিজের বেতনের ট্যাকাডা আগে বাড়াইয়া দেয় । একমাত্র মাইঝা ভাই কিছু কাজে লাগার মাত সাহাইয্য করে । উপায় ভাবতে থাকি আমি কয়েকদিন ।

উপায় একখান মোটামুটি পাই । তয় যেই ধকল , সেইটা সামলাইতে পারমু কিনা সেইটা নিয়া কয়েকদিন ভাবি । তারপর ঐটাই ফাইনাল কৈরা ফেলি । নয় মাস থাইকা ফরিদ ভাই আবার চৈলা গেলেন । থাকার কথা ছিল ছয় মাস । ঘুরতে ঘুরতে বিভিন্ন ছুতানাতায় আরো তিনমাস থাইকা গেলেন । খালেদারে ফালাইয়া যাওনের যন্ত্রণা আমিও বিলক্ষণ বুঝি । যাওয়ার আগে ফরিদ ভাই একখান বুদ্ধি দিয়া গেছিলেন । রমজানের সিজনে বিভিন্ন মাদরাছা থাইকা মইধ্যপ্রাচ্যে লুক পাঠানো হয় । মাদরাছার ফান্ড কালেকশনের জৈন্য । যাওয়া আসা থাকা খাওয়ার খরচ বাদ দিয়া যেটা থাকবো তার ৪০ ভাগ নিজের । ৬০ ভাগ মাদরাছারে দিতে হৈব । যেনতেন মাদরাছা দিয়া অবশ্য হৈব না । মোটামুটি পরিচয় আছে এমন কোনো মাদরাছা হওন লাগবো । খুরশিদ কৈছে অর মাদরাছার থাইকা কাগজপত্তর ব্যবস্থা কৈরা দিতে পারব । তয় যাওয়া আসা থাকা খাওয়ার খরচ আগে থাইকা দিতে পারব না । ঐগুলা নিজে ব্যবস্থা কৈরা যাইতে হৈব ।পরে মোট কালেকশন থাইকা সেইগুলা আমরা কাইটা নিমু । লাখখানেক ট্যাকার কারবার ।

তয় আইজকাইল অনিশ্চয়তারে ডরাই না আমি । অতি লুভের কারণে আছাড় খাওনের সম্ভাবনা আছে । সেইটারেও ডর লাগে না । এমনিতে যেইভাবে আছি, আর কত খারাপ হৈব আর । খারাপ এখন আর গায়ে লাগে না । বড় ভাইরে পাঠাইমু বৈলা ঠিক কৈরা ফেলাই । দোকানে ঢুকার পর থাইকা আস্তে আস্তে আমিই এখন ঘরের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী । হাসন আসে যদিও এইরকম শব্দ একা একা মনে করলে । তারপরও কাউয়া কি পাখি না ? বড় ভাই এখন আমার কাছ থাইকা পরামর্শ নেয় মাঝে মইধ্যে । আব্বা তাবলীগ নিয়া আছেন । আমি দোকানে ঢুকাতে পাওয়ার চৈলা যাওয়া নিয়া উনার তেমন বিকার নাই । বরং অনেকটা খুশিই ।

বড় ভাই একটু গাঁইগুই নয় ছয় করেন । তারপর বুঝ মেনে যান । সমস্যা শেষতক লাখখানেক ট্যাকা জোগাড় করা নিয়া । নিজের সাহসে নিজেরই একটু আচাইর্য লাগে । হাতে ১০ ট্যাকার ১০ টা নুট নিয়া আমি এক লাখের পেলান কৈরা ফেলাই ।

গেরামের মাদরাছার মোহতারাম ছাবের কাছে যাইতে হৈব । ছাত্রথাকাকালে মাদরাছার ফান্ড নিয়া একটু ঘাটাঘাটি করনের অভিজ্ঞতা আছে ।
------------------------------------------------
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-৭ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×