খারেজি মাদরাছার পুলাপানরে আমরা বেদ্বীন বৈলাই জানতাম । আমাদের কওমি মাদরাছার হুজুররা বিধর্মীদের চাইতে খুব বেশি আলাদা করে কখনো দেখতেন না ওদের । আমার বাইড়া উঠাও কওমি পরিবেশেই । তাই খারেজি মাদরাছার পুলাপান যে দলে আছে তার জৈন্য কাজ করার কথায় আমার পরথমে একটু জড়তা ছিল । এমনিতে জামাতে ইছলামি দলটার উপর আমাদের একটা দুর্বলতা ছিল । ইছলামি শাসন কায়েমের জন্য যে যেইভাবে কাজ কৈরা যাইতাছে তাদের সবার জৈন্যই একটা গোপন সমর্থন আছিল । তবে খারেজি মাদরাছার পুলাপানরে দলে ঢুকানি নিয়া কমবেশি দ্বিমত সব হুজুরেরই । কারো তীব্র কারো একটু নরম । খারেজি মাদরাছার পুলাপান সুন্নতি পোশাক ছাইড়া গোল পাইন্জাবি না পইরা কাটা পাইন্জাবি পরে । মাথায় রঙচঙা টুপি দেয় । দাড়ি ছাঁইটা রাখে । এইসব ব্যাপার নিয়া কিছু কিছু হুজুর মারাত্নক খ্যাপা । আর এমনিতে আমি যদ্দুর দেখছি খারেজিদের স্বভাব চরিত্রও খুবেকটা ভালা না । অরা সিনেমা দেখে , কতডিরে দেখছি বিড়িও ফুঁকে । আমাগো কওমি কালচারে এইগুলা চোখের বিষ ।
মোন্তাজির বলে দ্বীন কায়েমের বড় কামে এইসব ছুডখাড বিরোধ ভুইলা যাইতে হৈব । অন্তত দ্বীন পুরাপুরি কায়েম হওন পইর্যন্ত । একবার আল্লার আইন চালু হৈলে তারপর মজলিসে শুরার মাইধ্যমে এইসব টুকিটাকি সমস্যার সমাধান বাইর করা যাইব । তখন যারা শুরার স্বিদ্ধান্ত মানব না তাগো বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওন যাইব । এখন তো জাহেলি সরকারের বেদাতি বেশরিয়তি আইনের লাইগা এইসব ব্যাপার তো দুরের কথা কাদিয়ানি আহমদিগোরেও কিছু কওন যায় না । আল্লার আইন একবার প্রতিষ্ঠিত হৈলে কাদিয়ানিয়া পলানির জায়গা পাইব না । ইছলামে মাইয়ালুকের শাসনের বিরুদ্ধে কড়া মানা আছে ঠিক কথা । কিন্তু একটা বড় উদ্দেশ্য সামনে নিয়া ছুটখাট উল্টা কাম করতে নবিরই অনুমতি আছে । সাহাবারা এইরকম করছেন তার অনেক উদাহরণ আছে । দ্বীন কায়েমের বৃহত্তর উদ্দেশ্য মিছা কওনও জায়েয আছে । তয় নিয়ত ঠিক থাকন লাগবো । অন্তর পরিষ্কার থাকন লাগবো । একই উদ্দেশ্য নিয়া অনেক ভাগে অনেকে কাজ করতাছে । অরা সব আমাগো ভাই । একই পথের মোজাহিদ ।
আশেপাশের গেরামে আমার পরিচিতি হৈয়া যায় বিএমপি হুজুর বৈলা । আমাগো অঞ্চল থাইকা নমিনেশন বিএনপির লুক পায় বৈলা আমার কাজ করন লাগে ধানের শীষের পক্ষে । তাই এই পরিচয় জুটে । আমি তেমন একটা পাত্তা দিই না । কেউ কেউ খ্যাপায় বেডির দলের জৈন্য আমি ভুট চাই কিল্লাইগা বৈলা । তাগোরে বলি দুইডা রাস্তা যখন খালি, একটাতে গু আরেকটাতে মুত । কুনডাতে যাবা মিয়া । সবাই কয় মুতেরডাতে । আমি কই তাইলে বুঝ এইবার আমি কিল্লাইগা বেডির পক্ষে ভুট চাই । দোকানে লুকজন সদাইপাতির লাইগা আইলে আমি তাগোরে বুঝাই । বিগতদিনে আল্লাওয়ালা লুকের বিরুদ্ধে দাড়িটুপিওয়ালা লুকের বিরুদ্ধে কি অইত্যাচার নির্যাতন চলছে তার ছবি দেখাই , পেপার কাটিং দেখাই । যদিও আমি নিজে কিছু দেখিনাই তাও মোন্তাজিরের কাছ থাইকা সেইসব কথা শুইনা আমার গায়ের লোম খাড়া হৈয়া গেছিল । আমার গলায় তাই দরদের ঘাটতি থাকেনা লুকজনরে বুঝানির সময় । বুড়া লুকজনরে বুঝানি যায় । যেইগুলি মসজিদে গিয়া পইড়া থাকেন নামাযের এক ঘন্টা আগে থাইকা সেইগুলিরে । জুয়ান পুলাপাইন খালি ফাইজলামি করে । কথার মাইঝখানে উল্টাপাল্টা কথা শুরু কৈরা দেয় । একদিন সকালে গিয়া দেখি দোকানের পিছনের বেড়াতে দা দিয়া কোপ দেয়ার দাগ । চুরি সাধারণত হয় না আমাগো এইখানে । কেউ ইচ্ছা কৈরা করছে । দোকানে ঘুমানির ব্যবস্থা করি । পরদিন থাইকা দোকানেই ঘুমাই ।
ইলেকশনের দিন দোকান চালু রাখলেও ছুড ভাইডিরে বসাইয়া দিয়া আমি ঘুরি পুরা গেরামে ঘুরি । মহিলাগো লগে আমার চেনাজানা অনেকদিন থাইকাই । বাকীর ট্যাকার জৈন্য যাইতে হয় নাই এমন ঘর খুব কম । সবার কাছে দ্বীনের পক্ষ থাইকা ভুট চাই । সন্ধ্যা থাইকা শুরু হয় রেজাল্ট শুননের পালা । পাশের চা দোকানে টিভি চালাইন্যা । দোকানে থাইকাই বুঝা যায় কুনডাতে কেডা জিততাছে । পরথম দিকে দুরুদুরু বুক নিয়া দেখলেও আস্তে আস্তে খালি আমার দলেরই জিতার খবর আসা শুরু করে । সারারাইত চায়ের দোকান খুলা থাকে । আমিও খুলা রাখি আমার দোকান । দুইতিন সপ্তাহ পইর্যন্ত ইলেকশনের দিনরে আমরা ঈদের দিন বৈলা ডাকি ।
মোন্তাজির আসে ইলেকশনের কয়েক সপ্তাহ পর । ইলেকশন নিয়া ওর দেখি তেমন উৎসাহ নাই । আমি অনেক উৎসাহ নিয়া কথা কৈলেও কয়েক কথার পর কথা আগায় না । মোন্তাজিররে আমি বলে শরিয়ত পার্টির পরের কামের কথা । মোন্তাজির কয় শরিয়ত পার্টি তার নিজের উদ্দেশ্য নিয়া কাম কৈরা যাইব । ইলেকশনের কাম ভালোভাবে গেছে । কিন্তু এইটা শরিয়ত পার্টিন মুল এজেন্ডা না । কাম হৈয়া গ্যাছে বৈলা বৈসা থাকলে চলব না । নিয়মিত পার্টি মেম্বারগো থাইকা চাঁদা নেয়া হৈতাছে কিনা, রসিদে সই নেয়া হৈতাছে কিনা জিগায় । ইলেকশনের কামে পুরা মনোযোগ দিয়া দেয়াতে সেইদিকে আমার খেয়ালই ছিল না । ঠিক করি কয়েকদিনের মইধ্যেই আবার কাম শুরু করতে হৈব । কিন্তু পার্টির পেলানের কিছু কয় না মোন্তাজির । আমারে আমার কাম ঠিকমত কৈরা যাইতে বলে । সে নিজেও নাকি তেমন ভালোমত কিছু জানে না । ফিলিস্তিনে একসাথে যুদ্ধ করা মোজাহিদগো অনেকেই ফিরা আইসা দলে যুগ দিতাছে । উপরের কমিটি ঠিক করব কখন কি করন যায় । নিচের দিকে খবর আইতে আরো অনেক সময় লাগবো ।
পুরান কামে আমার আবার নতুন কৈরা লাগতে হয় । চাঁদা উঠানিটা তেমন কিছু না । কারে কাছে আমি একবারে বেশি দুইবার চাই না । ট্যাকা নিয়া সমস্যা নাই সেইটা মোন্তাজির এইবারও বৈলা গেছে । খালি দরকার হৈল সমর্থন আর রসিদে সই । বাকীর ট্যাকা উঠানির লাইগাতো আমি গেরামে গেরামে এমনিতেই ঘুরি । মোন্তাজির বৈলা গ্যাছে মহিলাগোরেও কৈতে শরিয়ত পার্টির কথা । আমি তেমন বেশি কাউরে কই না । সবার কাছে কৈয়া বেইল পাওন যাইব না । মোন্তাজিরতো আর সব খবর জানে না । বিকালে মাঝে মইধ্যে গেরামে বা গেরামের বাইরে গেলে লুকজনের কাছে বলি । তাও নামায পড়া বা মাথায় টুপি নাই এইরকম লুকজনের কাছে দাওয়াত দেওনের সাহস করি না । গেরামের মাদরাছার উসিলায় যাগো লগে টুকটাক পরিচয় আছে তাগো সাথেই বেশি আলুচনা করি এইগুলা নিয়া ।
প্রায় বচ্ছরখানেক চৈলা যায় এমন কাজে । এর মইধ্যে খুরশিদ এর মাদরাছা থাইকা মাঝখানের এক বচ্ছর না পাওনের পর আবার বড় ভাইরে পাঠানির ব্যবস্থা করন যায় । সেইবারে অবশ্য ট্যাকা পয়সা নিয়া হিসাবে আমি মনে হয় একটু বেশিই গোলমাল কৈরা ফেলি । মাদরাছারে শেষ পইর্যন্ত কিছু দেওন যায় না । মাটির ঘর ভাইঙা ইটের ঘর করনের কামে অনেক ট্যাকার এদিক সেদিক হৈয়া যায় । মোহতারাম ছাবের সেই পন্চইশ হাজার এখনো শুধ করা হৈল না । তাও কিছু বড় বড় কাম করা গেছে দেইখা আমার একটু নিঃশ্চিন্ত লাগে ।
এর মইধ্যে মাইঝা ভাইর এক পুরান দুস্তের সাথে খাতির হৈয়া যায় আমার । মাইঝা ভাই কুনো এক কারণে এক বচ্ছর খারেজি মাদরাছায় পড়ছিলেন । সেই সময়ের দুস্ত । আমি তখন গেরামের মাদরাছায় । বাল গজাইছে মাত্র । অত বেশি মনে নাই সেইসব কথা । হাফিয ভাইর বাড়িও গেরামের অন্য দিকে । বেশ কয়েক বচ্ছর ছৌদিতে থাইকা আইসা এখন ফেনীতে ফার্নিচারের দোকান করেন বড় ভাইয়ের লগে । বিয়াও করছেন দেড় বচ্ছরখানেক আগে । আমাগো সাথে তেমন পরিচয় নাই বৈলা জানি নাই । খারেজি মাদরাছায় থাকনের সময় শিবিরের সাথে যুক্ত আছিলেন । এখন পুরাতন কানেকশন গুলা আস্তে আস্তে আবার খুইজা বাইর করতাছেন । উনার বাড়িতেও আসা যাওয়া শুরু হয় মাসখানেকের মইধ্যেই ।
ভাবীর সাথে আমার খাতির হৈয়া যায় কয়েকদিনেই ।
--------------------------------------------------
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-১৬
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



