somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-১৭

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খারেজি মাদরাছার পুলাপানরে আমরা বেদ্বীন বৈলাই জানতাম । আমাদের কওমি মাদরাছার হুজুররা বিধর্মীদের চাইতে খুব বেশি আলাদা করে কখনো দেখতেন না ওদের । আমার বাইড়া উঠাও কওমি পরিবেশেই । তাই খারেজি মাদরাছার পুলাপান যে দলে আছে তার জৈন্য কাজ করার কথায় আমার পরথমে একটু জড়তা ছিল । এমনিতে জামাতে ইছলামি দলটার উপর আমাদের একটা দুর্বলতা ছিল । ইছলামি শাসন কায়েমের জন্য যে যেইভাবে কাজ কৈরা যাইতাছে তাদের সবার জৈন্যই একটা গোপন সমর্থন আছিল । তবে খারেজি মাদরাছার পুলাপানরে দলে ঢুকানি নিয়া কমবেশি দ্বিমত সব হুজুরেরই । কারো তীব্র কারো একটু নরম । খারেজি মাদরাছার পুলাপান সুন্নতি পোশাক ছাইড়া গোল পাইন্জাবি না পইরা কাটা পাইন্জাবি পরে । মাথায় রঙচঙা টুপি দেয় । দাড়ি ছাঁইটা রাখে । এইসব ব্যাপার নিয়া কিছু কিছু হুজুর মারাত্নক খ্যাপা । আর এমনিতে আমি যদ্দুর দেখছি খারেজিদের স্বভাব চরিত্রও খুবেকটা ভালা না । অরা সিনেমা দেখে , কতডিরে দেখছি বিড়িও ফুঁকে । আমাগো কওমি কালচারে এইগুলা চোখের বিষ ।

মোন্তাজির বলে দ্বীন কায়েমের বড় কামে এইসব ছুডখাড বিরোধ ভুইলা যাইতে হৈব । অন্তত দ্বীন পুরাপুরি কায়েম হওন পইর্যন্ত । একবার আল্লার আইন চালু হৈলে তারপর মজলিসে শুরার মাইধ্যমে এইসব টুকিটাকি সমস্যার সমাধান বাইর করা যাইব । তখন যারা শুরার স্বিদ্ধান্ত মানব না তাগো বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওন যাইব । এখন তো জাহেলি সরকারের বেদাতি বেশরিয়তি আইনের লাইগা এইসব ব্যাপার তো দুরের কথা কাদিয়ানি আহমদিগোরেও কিছু কওন যায় না । আল্লার আইন একবার প্রতিষ্ঠিত হৈলে কাদিয়ানিয়া পলানির জায়গা পাইব না । ইছলামে মাইয়ালুকের শাসনের বিরুদ্ধে কড়া মানা আছে ঠিক কথা । কিন্তু একটা বড় উদ্দেশ্য সামনে নিয়া ছুটখাট উল্টা কাম করতে নবিরই অনুমতি আছে । সাহাবারা এইরকম করছেন তার অনেক উদাহরণ আছে । দ্বীন কায়েমের বৃহত্তর উদ্দেশ্য মিছা কওনও জায়েয আছে । তয় নিয়ত ঠিক থাকন লাগবো । অন্তর পরিষ্কার থাকন লাগবো । একই উদ্দেশ্য নিয়া অনেক ভাগে অনেকে কাজ করতাছে । অরা সব আমাগো ভাই । একই পথের মোজাহিদ ।

আশেপাশের গেরামে আমার পরিচিতি হৈয়া যায় বিএমপি হুজুর বৈলা । আমাগো অঞ্চল থাইকা নমিনেশন বিএনপির লুক পায় বৈলা আমার কাজ করন লাগে ধানের শীষের পক্ষে । তাই এই পরিচয় জুটে । আমি তেমন একটা পাত্তা দিই না । কেউ কেউ খ্যাপায় বেডির দলের জৈন্য আমি ভুট চাই কিল্লাইগা বৈলা । তাগোরে বলি দুইডা রাস্তা যখন খালি, একটাতে গু আরেকটাতে মুত । কুনডাতে যাবা মিয়া । সবাই কয় মুতেরডাতে । আমি কই তাইলে বুঝ এইবার আমি কিল্লাইগা বেডির পক্ষে ভুট চাই । দোকানে লুকজন সদাইপাতির লাইগা আইলে আমি তাগোরে বুঝাই । বিগতদিনে আল্লাওয়ালা লুকের বিরুদ্ধে দাড়িটুপিওয়ালা লুকের বিরুদ্ধে কি অইত্যাচার নির্যাতন চলছে তার ছবি দেখাই , পেপার কাটিং দেখাই । যদিও আমি নিজে কিছু দেখিনাই তাও মোন্তাজিরের কাছ থাইকা সেইসব কথা শুইনা আমার গায়ের লোম খাড়া হৈয়া গেছিল । আমার গলায় তাই দরদের ঘাটতি থাকেনা লুকজনরে বুঝানির সময় । বুড়া লুকজনরে বুঝানি যায় । যেইগুলি মসজিদে গিয়া পইড়া থাকেন নামাযের এক ঘন্টা আগে থাইকা সেইগুলিরে । জুয়ান পুলাপাইন খালি ফাইজলামি করে । কথার মাইঝখানে উল্টাপাল্টা কথা শুরু কৈরা দেয় । একদিন সকালে গিয়া দেখি দোকানের পিছনের বেড়াতে দা দিয়া কোপ দেয়ার দাগ । চুরি সাধারণত হয় না আমাগো এইখানে । কেউ ইচ্ছা কৈরা করছে । দোকানে ঘুমানির ব্যবস্থা করি । পরদিন থাইকা দোকানেই ঘুমাই ।

ইলেকশনের দিন দোকান চালু রাখলেও ছুড ভাইডিরে বসাইয়া দিয়া আমি ঘুরি পুরা গেরামে ঘুরি । মহিলাগো লগে আমার চেনাজানা অনেকদিন থাইকাই । বাকীর ট্যাকার জৈন্য যাইতে হয় নাই এমন ঘর খুব কম । সবার কাছে দ্বীনের পক্ষ থাইকা ভুট চাই । সন্ধ্যা থাইকা শুরু হয় রেজাল্ট শুননের পালা । পাশের চা দোকানে টিভি চালাইন্যা । দোকানে থাইকাই বুঝা যায় কুনডাতে কেডা জিততাছে । পরথম দিকে দুরুদুরু বুক নিয়া দেখলেও আস্তে আস্তে খালি আমার দলেরই জিতার খবর আসা শুরু করে । সারারাইত চায়ের দোকান খুলা থাকে । আমিও খুলা রাখি আমার দোকান । দুইতিন সপ্তাহ পইর্যন্ত ইলেকশনের দিনরে আমরা ঈদের দিন বৈলা ডাকি ।

মোন্তাজির আসে ইলেকশনের কয়েক সপ্তাহ পর । ইলেকশন নিয়া ওর দেখি তেমন উৎসাহ নাই । আমি অনেক উৎসাহ নিয়া কথা কৈলেও কয়েক কথার পর কথা আগায় না । মোন্তাজিররে আমি বলে শরিয়ত পার্টির পরের কামের কথা । মোন্তাজির কয় শরিয়ত পার্টি তার নিজের উদ্দেশ্য নিয়া কাম কৈরা যাইব । ইলেকশনের কাম ভালোভাবে গেছে । কিন্তু এইটা শরিয়ত পার্টিন মুল এজেন্ডা না । কাম হৈয়া গ্যাছে বৈলা বৈসা থাকলে চলব না । নিয়মিত পার্টি মেম্বারগো থাইকা চাঁদা নেয়া হৈতাছে কিনা, রসিদে সই নেয়া হৈতাছে কিনা জিগায় । ইলেকশনের কামে পুরা মনোযোগ দিয়া দেয়াতে সেইদিকে আমার খেয়ালই ছিল না । ঠিক করি কয়েকদিনের মইধ্যেই আবার কাম শুরু করতে হৈব । কিন্তু পার্টির পেলানের কিছু কয় না মোন্তাজির । আমারে আমার কাম ঠিকমত কৈরা যাইতে বলে । সে নিজেও নাকি তেমন ভালোমত কিছু জানে না । ফিলিস্তিনে একসাথে যুদ্ধ করা মোজাহিদগো অনেকেই ফিরা আইসা দলে যুগ দিতাছে । উপরের কমিটি ঠিক করব কখন কি করন যায় । নিচের দিকে খবর আইতে আরো অনেক সময় লাগবো ।

পুরান কামে আমার আবার নতুন কৈরা লাগতে হয় । চাঁদা উঠানিটা তেমন কিছু না । কারে কাছে আমি একবারে বেশি দুইবার চাই না । ট্যাকা নিয়া সমস্যা নাই সেইটা মোন্তাজির এইবারও বৈলা গেছে । খালি দরকার হৈল সমর্থন আর রসিদে সই । বাকীর ট্যাকা উঠানির লাইগাতো আমি গেরামে গেরামে এমনিতেই ঘুরি । মোন্তাজির বৈলা গ্যাছে মহিলাগোরেও কৈতে শরিয়ত পার্টির কথা । আমি তেমন বেশি কাউরে কই না । সবার কাছে কৈয়া বেইল পাওন যাইব না । মোন্তাজিরতো আর সব খবর জানে না । বিকালে মাঝে মইধ্যে গেরামে বা গেরামের বাইরে গেলে লুকজনের কাছে বলি । তাও নামায পড়া বা মাথায় টুপি নাই এইরকম লুকজনের কাছে দাওয়াত দেওনের সাহস করি না । গেরামের মাদরাছার উসিলায় যাগো লগে টুকটাক পরিচয় আছে তাগো সাথেই বেশি আলুচনা করি এইগুলা নিয়া ।

প্রায় বচ্ছরখানেক চৈলা যায় এমন কাজে । এর মইধ্যে খুরশিদ এর মাদরাছা থাইকা মাঝখানের এক বচ্ছর না পাওনের পর আবার বড় ভাইরে পাঠানির ব্যবস্থা করন যায় । সেইবারে অবশ্য ট্যাকা পয়সা নিয়া হিসাবে আমি মনে হয় একটু বেশিই গোলমাল কৈরা ফেলি । মাদরাছারে শেষ পইর্যন্ত কিছু দেওন যায় না । মাটির ঘর ভাইঙা ইটের ঘর করনের কামে অনেক ট্যাকার এদিক সেদিক হৈয়া যায় । মোহতারাম ছাবের সেই পন্চইশ হাজার এখনো শুধ করা হৈল না । তাও কিছু বড় বড় কাম করা গেছে দেইখা আমার একটু নিঃশ্চিন্ত লাগে ।

এর মইধ্যে মাইঝা ভাইর এক পুরান দুস্তের সাথে খাতির হৈয়া যায় আমার । মাইঝা ভাই কুনো এক কারণে এক বচ্ছর খারেজি মাদরাছায় পড়ছিলেন । সেই সময়ের দুস্ত । আমি তখন গেরামের মাদরাছায় । বাল গজাইছে মাত্র । অত বেশি মনে নাই সেইসব কথা । হাফিয ভাইর বাড়িও গেরামের অন্য দিকে । বেশ কয়েক বচ্ছর ছৌদিতে থাইকা আইসা এখন ফেনীতে ফার্নিচারের দোকান করেন বড় ভাইয়ের লগে । বিয়াও করছেন দেড় বচ্ছরখানেক আগে । আমাগো সাথে তেমন পরিচয় নাই বৈলা জানি নাই । খারেজি মাদরাছায় থাকনের সময় শিবিরের সাথে যুক্ত আছিলেন । এখন পুরাতন কানেকশন গুলা আস্তে আস্তে আবার খুইজা বাইর করতাছেন । উনার বাড়িতেও আসা যাওয়া শুরু হয় মাসখানেকের মইধ্যেই ।

ভাবীর সাথে আমার খাতির হৈয়া যায় কয়েকদিনেই ।
--------------------------------------------------
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-১৬
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:১৫
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার সন্ধান, যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫



কেউ একজন জানতে চেয়েছেন ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়? বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম বাংলাদেশে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×