মাহবুবরে চিনতে কষ্ট হওয়াটা অসম্ভব কিছু ছিল না । দৈর্ঘে সে আমার চাইতে বেশি আগেই ছিল । কিন্তু হালকা পাতলা । এখন দৈর্ঘ্য প্রস্থ মিলাইয়া একটা পুরা বেডার মত লাগে । ইশটাইল করে ছাঁটা দাঁড়ি । দোকানের সামনে বন্ধু বৈলা জড়াইয়া ধরলো আমারে । আমার মনে মইধ্যে যদিও ধুকপুকানি, আয়েশার কি হৈল আয়েশার কি হৈল, তারপরও আমি জড়াইয়া ধরি । কতদিন পরের দেখা । ছয় বছর হৈতে চলল পরায় ।
অনেক কথা জমা দুই বন্ধুর । রাইতে খাওনের পরে দুই বন্ধু আর দুই খালত ভাই চাইরজন মিলা রেললাইনে গিয়া বসি । ছৌদির কাহিনী শুনি মাহবুবের কাছ থাইকা । অনবরত কথা কৈয়া চলে মাহবুব । তার তিতা অভিজ্ঞতার কথা । বড় ভাইজানের বর্ণনার লগে কুনো মিল নাই । আরবের লুকজনের বাটপারি, প্রতারণা, ঘৃণার শিকার হৈতে হৈতে পরথম দুইবচ্ছরই চৈলা যায় মাহবুবের ঠিকমত একটা পেশায় সুস্থির হৈতে । বাড়ীতে অত টান নাই বৈলা এইদিকে তেমন কুনো সমস্যা হয় নাই । খালি ট্যাকা পয়সা নিয়া ঝামেলা নিয়া করলে এক কথা ছিল । কিন্তু আইনি কাগজপত্র পাসপোর্ট এইসব নিয়া পইর্যন্ত পদে পদে ঝামেলা । পদে পদে আটকাইয়া দেয় । মিছকিন বৈলা কথায় কথায় গালি দেয় । ভিক্ষা করতে গেছি ঐখানে মনে করে । হোমমেইড হিসাবে যেইসব মাইয়ারা যায় ঐগুলারে বাপপোলা সবাই যৌনদাসির মত ব্যবহার করে । আমার বিশ্বাস হয় না সবকথা । আরবের পাকপবিত্র মানুষ এইকাম করতে পারে না । হয়ত মাহবুব যেইখানে গেছিল সেইখানের এক দুইজন খারাপ আছিল । তাও নিজ চোখে যেহেতু দেখি নাই তর্ক করার কুনো চান্সতো নাই ।
মাহবুব আইছে ওর বিয়ার দাওয়াত দিতে । সামনের শুক্কুরবার বিয়া । এক বাপের এক পুলা । ঝামেলা নাই ঘরে । আর আমার মাথার উপরে আরো তিনজন । মাহবুবরে বিয়ার দাওয়াত দিতে যাওনের সময় হয়ত মাহবুবের পুলা মাইয়ার লাইগা সম্বন্ধ খুজনের টাইম হৈয়া যাইব । মাহবুব রে বলি যাব, অবশ্যই যাব । ওর আব্বা আম্মার শরীর সাস্থ্যের কথা জিগাই । আমার ছাত্রী দুইডার কথা জিগাই । দুইডাই এখন ইশকুলে যায় । ফাইভে একটা আরেকট সিক্সে । আয়েশার কথা জিগানির লাইগা আমার দিল হাঁসফাঁস করে । কিন্তু মাহবুব কুনোদিন আয়েশার সাথে আমার পরিচয় করাইয়া দেয় নাই । আমি যে আয়েশারে চিনি সেইডাও সে জানে না । কেমনে জিগাই । একবার মনে হয় মাহবুব নিজে থাইকা যেহেতু কিছু কয় না তাইলে হয়ত আয়েশার খারাপ কিছু হয় নাই । আছে ভালই । আবার মনে হয় খারাপ স্মৃতি মনে করতে চায় না বৈলা যদি চুপ কৈরা থাকে মাহবুব । সেইডাও তো হৈবার পারে । দোটানায় কিছুক্ষণ থাইকা শেষে জিগাইয়াই ফালাই । আয়েশার বিয়া হৈছে । পুলা আছে দুইডা । একটা হাঁটে । আরেকটা অখনো কুলে । হাঁফ ছাইড়া বাঁচি । অনেক আকাঙ্খিত একটা সুখবর পাইছি এমন একটা অনুভুতি হয় মনে ।
খালত ভাইডির কুনোটারে রাজী করাইতে পারলাম না । ওরা যার যার জায়গায় চৈলা গেলো । একাই গেলাম মাহবুবের বিয়াতে । মাহবুবের আম্মার সামনে যাইতে বেশ লইজ্জা লাগতেছিল । বেচারির এমন নিঃস্বার্থ স্নেহের বিপরীতে আমি মিথ্যা বৈলা পলাইলাম । আবার মনে হয় খারাপওতো করি নাই । উনাদেরকে লইজ্জার হাত থাইকা বাঁচানির জন্যই না পলাইছি । আয়েশার সাথে দেখা হয় । সন্তান কোলে । অচিন দ্বীপের সুগন্ধ এখন ওর চাইরপাশে ভুরভুর করে না । উল্টা বাচ্চা পুলাপানের মুতের গন্ধ ওর শাড়ীতে । কুলের বাচ্চাডারে কুলে নিই । আয়েশা বলে কেমন আছেন চুরা হুজুর । আমি কই কি চুরি করলাম আবার ? চুরের মত পলাইয়া চৈলা গেলেন , চুরা কমুনা তো কি কমু । আয়েশার মন এখনো আগের মতই বুদ্ধিমতী , চঞ্চল আছে । দেইখা ভালো লাগে আমার । নিঃস্বার্থভাবে কুনোপ্রকার কুচিন্তা ছাড়াই ভালো লাগে ।
জীবনে মনে হয় পুনঃর্মিলনীর স্রোত শুরু হৈল আমার । মাহবুবের বাড়ী থাইকা আসার কয়েকদিন পরে একদিন বিকালে মোন্তাজির আইসা হাজির । হালকা খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে । বোমার ইসপ্লিন্টার নাকি কি জানি একটা ঢুকছিল ডাইন পায় । মোন্তাজিরের সেই কোমল চেহারা নাই । চোখেমুখে একটা রুক্ষতা । গালভরা চাপ দাঁড়ি বুকের প্রায় অর্ধেক পইর্যন্ত । পা আহত হওয়ার পর মোজাহিদরা কৈছে চৈলা যাইতে । মোন্তাজিররে কৈ কয়েকদিন থাইকা যাইতে । কথাবার্তা কমু । থাকেনা । এইদেশে শরিয়তী আইন চালু করার জৈন্য একটা পার্টির সাথে কাম করতাছে । বিভিন্ন জায়গায় যাইতে হয় । লুকজনরে দাওয়াত দিতাছে । আল্লার আইন প্রতিষ্ঠার জৈন্য জানমাল কুরবানী করার জৈন্য লুকজন জোগাড় করতাছে । ওর মোজাহিদী জীবনের কাহিনী শুনতাম চাই । তেমন কিছু কয় না । তাও টুকটাক যা কিছু কয় বেশিরভাগই আমি বুঝি না । আরব বলতে আমি জাইনতাম মক্কা মদিনা তায়েফ এইসব । মহরমের ঘটনা থাইকা কারবালা কুফা আর ছুডকালের উপসাগরীয় যুদ্ধ থাইকা কুয়েত বাগদাদ তেহরান এইসব । ফিলিস্তিন ইসরায়েল জেরুজালেম এইগুলার নাম শুনতাছি মাত্র কয়েক বচ্ছর ধৈরা । গাজা, রিফুজি কেম্প, নহর আল বারেদ এইগুলা নামগুলা জীবনে শুনি নাই । গাজায় নাকি যুদ্ধ হয় লুকজনের ঘর থাইকা । ঘরে থাকলে সুবিধা , ইহুদিরা ইচ্ছামত গুল্লি মারতে পারে না । সাধারণ মাইনষের উপরে পড়লে সারা বিশ্ব থাইকা চাপ পড়ে । মানুষ ঘরের মইধ্যে খাইতাছে দাইতাছে গোসল করতাছে হাগতাছে মুততাছে লাগাইতাছে এর মাইঝখানেই নাকি যুদ্ধ চলে । দ্বীনের রাস্তায় শহিদ হৈয়া যাইতে অগো ডরভয় নাই ।
আমার জীবনে কুনো রাজনৈতিক ডাইমেনশন আছিল না । ভাত কাপড় জুগাইতেই শইল শেষ, আবার দেশ দুইন্যার কথা ভাবমু কখন । আল্লার আইন শ্রেষ্ঠ আইন সেইটা জানি । আল্লার আইন মাইনা চললে অভাব অভিযোগ , দাঙা হাঙাম, চুরি চামারি এইসব কিছুই থাকবনা জানি । তয় আল্লার নবির সাহাবিগো মত ইমানের জোর আমগো নাই যে তার জৈন্য জানমাল কুরবানি কৈরা লড়াই করমু । তয় মোন্তাজির কয় যুদ্ধক্ষেত্রে জানমাল কুরবানি কৈরা যে সবাইরে লড়তে হৈব এমুন কুনো কথা নাই । যুদ্ধ গঠন করার একটা ব্যাপার আছে । এখন দুইন্যাতে অনেক প্যাঁচ । নবি-সাহাবিগো জমানা এখন নাই । মোজেজার আশা করন যায় , তয় খালি ঐটার আশায় বৈসা থাকলে চলব না । নিজেগো সামর্থ্যের মইধ্যে যা আছে করন লাগবো । নিয়ত দিয়া শুরু । নিয়ত কৈরা ফালাই আমি ।
সপ্তাহখানেক পরে বেশকিছু চাঁদার রসিদ নিয়া মোন্তাজির আসে । এর মইধ্যে অনেকের লগে কথা বৈলা রাখছি আমি । মাদরাছার পুরানা বন্ধুবান্ধব আশেপাশে যারা আছে তারা, মোহতারাম ছাব , সাধারণ মানুষ কয়েকজনের লগেও কথা হৈছে । লগে থাকব বৈলা আওয়াজও দিছে অনেকে । মোন্তাজির কয় খালি মুখের আওয়াজে তো হৈব না । সদস্য চাঁদা নেওন লাগবো মাসে মাসে । বেশি না তিরিশ ট্যাকা । গেরামের মানুষজন কিপটা, দিতে চাইব না আমি কই । মোন্তাজির কয় ট্যাকা দেওনডা বড় কথা না । রসিদ এ সই থাকলেই হৈব । ট্যাকা নিয়া আসলে তেমন চিন্তা নাই । ট্যাকা বাইরে থেকে যেগুলা আইতাছে ঐগুলাতেই অনেক । সই লইয়া যা পারে দিতে কইবি । তিরিশ ট্যাকা লিখলেই হৈব । এক্কেরে না দিলেও জোরাজুরি করনের দরকার নাই । রসিদগুলা থাকলেই হৈব । তাইলেতো কাম অনেক সোজা হৈয়া যায় আমার । ঘরের চৌদ্দ জনের নামে চৌদ্দডা রসিদ লেইখা ফালাই আমি । ট্যাকা দিইনা ।
গেরামে, পাশের গেরামে বিকালে বিকালে ঘুইরা পরিচিত লুকজনরে বুঝাইয়া কই আমি শরিয়ত কমিটির নিয়তও বাস্তবায়ন পদ্ধতির কথা । কুরান হাদিস থাইকা বুঝাই আল্লার জমিনে আল্লার আইন ছাড়া যে কুনো শান্তি নাই হেই কথা । পন্চাইশটার উপরে রসিদ লেখা হৈয়া যায় । ট্যাকা যদিও দেড় দুইশর বেশি না । দুই সপ্তাহ পর মোন্তাজির আবার আইলে রসিদগুলা ওরে দিই । সামনে নির্বাচন । শরিয়ত দলের পেলান বর্ণনা করে মোন্তাজির ।
কামে আমারেও নাকি নামতে হৈব ।
--------------------------------------------------
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-১৫
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



