somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-১৬

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাহবুবরে চিনতে কষ্ট হওয়াটা অসম্ভব কিছু ছিল না । দৈর্ঘে সে আমার চাইতে বেশি আগেই ছিল । কিন্তু হালকা পাতলা । এখন দৈর্ঘ্য প্রস্থ মিলাইয়া একটা পুরা বেডার মত লাগে । ইশটাইল করে ছাঁটা দাঁড়ি । দোকানের সামনে বন্ধু বৈলা জড়াইয়া ধরলো আমারে । আমার মনে মইধ্যে যদিও ধুকপুকানি, আয়েশার কি হৈল আয়েশার কি হৈল, তারপরও আমি জড়াইয়া ধরি । কতদিন পরের দেখা । ছয় বছর হৈতে চলল পরায় ।

অনেক কথা জমা দুই বন্ধুর । রাইতে খাওনের পরে দুই বন্ধু আর দুই খালত ভাই চাইরজন মিলা রেললাইনে গিয়া বসি । ছৌদির কাহিনী শুনি মাহবুবের কাছ থাইকা । অনবরত কথা কৈয়া চলে মাহবুব । তার তিতা অভিজ্ঞতার কথা । বড় ভাইজানের বর্ণনার লগে কুনো মিল নাই । আরবের লুকজনের বাটপারি, প্রতারণা, ঘৃণার শিকার হৈতে হৈতে পরথম দুইবচ্ছরই চৈলা যায় মাহবুবের ঠিকমত একটা পেশায় সুস্থির হৈতে । বাড়ীতে অত টান নাই বৈলা এইদিকে তেমন কুনো সমস্যা হয় নাই । খালি ট্যাকা পয়সা নিয়া ঝামেলা নিয়া করলে এক কথা ছিল । কিন্তু আইনি কাগজপত্র পাসপোর্ট এইসব নিয়া পইর্যন্ত পদে পদে ঝামেলা । পদে পদে আটকাইয়া দেয় । মিছকিন বৈলা কথায় কথায় গালি দেয় । ভিক্ষা করতে গেছি ঐখানে মনে করে । হোমমেইড হিসাবে যেইসব মাইয়ারা যায় ঐগুলারে বাপপোলা সবাই যৌনদাসির মত ব্যবহার করে । আমার বিশ্বাস হয় না সবকথা । আরবের পাকপবিত্র মানুষ এইকাম করতে পারে না । হয়ত মাহবুব যেইখানে গেছিল সেইখানের এক দুইজন খারাপ আছিল । তাও নিজ চোখে যেহেতু দেখি নাই তর্ক করার কুনো চান্সতো নাই ।

মাহবুব আইছে ওর বিয়ার দাওয়াত দিতে । সামনের শুক্কুরবার বিয়া । এক বাপের এক পুলা । ঝামেলা নাই ঘরে । আর আমার মাথার উপরে আরো তিনজন । মাহবুবরে বিয়ার দাওয়াত দিতে যাওনের সময় হয়ত মাহবুবের পুলা মাইয়ার লাইগা সম্বন্ধ খুজনের টাইম হৈয়া যাইব । মাহবুব রে বলি যাব, অবশ্যই যাব । ওর আব্বা আম্মার শরীর সাস্থ্যের কথা জিগাই । আমার ছাত্রী দুইডার কথা জিগাই । দুইডাই এখন ইশকুলে যায় । ফাইভে একটা আরেকট সিক্সে । আয়েশার কথা জিগানির লাইগা আমার দিল হাঁসফাঁস করে । কিন্তু মাহবুব কুনোদিন আয়েশার সাথে আমার পরিচয় করাইয়া দেয় নাই । আমি যে আয়েশারে চিনি সেইডাও সে জানে না । কেমনে জিগাই । একবার মনে হয় মাহবুব নিজে থাইকা যেহেতু কিছু কয় না তাইলে হয়ত আয়েশার খারাপ কিছু হয় নাই । আছে ভালই । আবার মনে হয় খারাপ স্মৃতি মনে করতে চায় না বৈলা যদি চুপ কৈরা থাকে মাহবুব । সেইডাও তো হৈবার পারে । দোটানায় কিছুক্ষণ থাইকা শেষে জিগাইয়াই ফালাই । আয়েশার বিয়া হৈছে । পুলা আছে দুইডা । একটা হাঁটে । আরেকটা অখনো কুলে । হাঁফ ছাইড়া বাঁচি । অনেক আকাঙ্খিত একটা সুখবর পাইছি এমন একটা অনুভুতি হয় মনে ।

খালত ভাইডির কুনোটারে রাজী করাইতে পারলাম না । ওরা যার যার জায়গায় চৈলা গেলো । একাই গেলাম মাহবুবের বিয়াতে । মাহবুবের আম্মার সামনে যাইতে বেশ লইজ্জা লাগতেছিল । বেচারির এমন নিঃস্বার্থ স্নেহের বিপরীতে আমি মিথ্যা বৈলা পলাইলাম । আবার মনে হয় খারাপওতো করি নাই । উনাদেরকে লইজ্জার হাত থাইকা বাঁচানির জন্যই না পলাইছি । আয়েশার সাথে দেখা হয় । সন্তান কোলে । অচিন দ্বীপের সুগন্ধ এখন ওর চাইরপাশে ভুরভুর করে না । উল্টা বাচ্চা পুলাপানের মুতের গন্ধ ওর শাড়ীতে । কুলের বাচ্চাডারে কুলে নিই । আয়েশা বলে কেমন আছেন চুরা হুজুর । আমি কই কি চুরি করলাম আবার ? চুরের মত পলাইয়া চৈলা গেলেন , চুরা কমুনা তো কি কমু । আয়েশার মন এখনো আগের মতই বুদ্ধিমতী , চঞ্চল আছে । দেইখা ভালো লাগে আমার । নিঃস্বার্থভাবে কুনোপ্রকার কুচিন্তা ছাড়াই ভালো লাগে ।

জীবনে মনে হয় পুনঃর্মিলনীর স্রোত শুরু হৈল আমার । মাহবুবের বাড়ী থাইকা আসার কয়েকদিন পরে একদিন বিকালে মোন্তাজির আইসা হাজির । হালকা খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে । বোমার ইসপ্লিন্টার নাকি কি জানি একটা ঢুকছিল ডাইন পায় । মোন্তাজিরের সেই কোমল চেহারা নাই । চোখেমুখে একটা রুক্ষতা । গালভরা চাপ দাঁড়ি বুকের প্রায় অর্ধেক পইর্যন্ত । পা আহত হওয়ার পর মোজাহিদরা কৈছে চৈলা যাইতে । মোন্তাজিররে কৈ কয়েকদিন থাইকা যাইতে । কথাবার্তা কমু । থাকেনা । এইদেশে শরিয়তী আইন চালু করার জৈন্য একটা পার্টির সাথে কাম করতাছে । বিভিন্ন জায়গায় যাইতে হয় । লুকজনরে দাওয়াত দিতাছে । আল্লার আইন প্রতিষ্ঠার জৈন্য জানমাল কুরবানী করার জৈন্য লুকজন জোগাড় করতাছে । ওর মোজাহিদী জীবনের কাহিনী শুনতাম চাই । তেমন কিছু কয় না । তাও টুকটাক যা কিছু কয় বেশিরভাগই আমি বুঝি না । আরব বলতে আমি জাইনতাম মক্কা মদিনা তায়েফ এইসব । মহরমের ঘটনা থাইকা কারবালা কুফা আর ছুডকালের উপসাগরীয় যুদ্ধ থাইকা কুয়েত বাগদাদ তেহরান এইসব । ফিলিস্তিন ইসরায়েল জেরুজালেম এইগুলার নাম শুনতাছি মাত্র কয়েক বচ্ছর ধৈরা । গাজা, রিফুজি কেম্প, নহর আল বারেদ এইগুলা নামগুলা জীবনে শুনি নাই । গাজায় নাকি যুদ্ধ হয় লুকজনের ঘর থাইকা । ঘরে থাকলে সুবিধা , ইহুদিরা ইচ্ছামত গুল্লি মারতে পারে না । সাধারণ মাইনষের উপরে পড়লে সারা বিশ্ব থাইকা চাপ পড়ে । মানুষ ঘরের মইধ্যে খাইতাছে দাইতাছে গোসল করতাছে হাগতাছে মুততাছে লাগাইতাছে এর মাইঝখানেই নাকি যুদ্ধ চলে । দ্বীনের রাস্তায় শহিদ হৈয়া যাইতে অগো ডরভয় নাই ।

আমার জীবনে কুনো রাজনৈতিক ডাইমেনশন আছিল না । ভাত কাপড় জুগাইতেই শইল শেষ, আবার দেশ দুইন্যার কথা ভাবমু কখন । আল্লার আইন শ্রেষ্ঠ আইন সেইটা জানি । আল্লার আইন মাইনা চললে অভাব অভিযোগ , দাঙা হাঙাম, চুরি চামারি এইসব কিছুই থাকবনা জানি । তয় আল্লার নবির সাহাবিগো মত ইমানের জোর আমগো নাই যে তার জৈন্য জানমাল কুরবানি কৈরা লড়াই করমু । তয় মোন্তাজির কয় যুদ্ধক্ষেত্রে জানমাল কুরবানি কৈরা যে সবাইরে লড়তে হৈব এমুন কুনো কথা নাই । যুদ্ধ গঠন করার একটা ব্যাপার আছে । এখন দুইন্যাতে অনেক প্যাঁচ । নবি-সাহাবিগো জমানা এখন নাই । মোজেজার আশা করন যায় , তয় খালি ঐটার আশায় বৈসা থাকলে চলব না । নিজেগো সামর্থ্যের মইধ্যে যা আছে করন লাগবো । নিয়ত দিয়া শুরু । নিয়ত কৈরা ফালাই আমি ।

সপ্তাহখানেক পরে বেশকিছু চাঁদার রসিদ নিয়া মোন্তাজির আসে । এর মইধ্যে অনেকের লগে কথা বৈলা রাখছি আমি । মাদরাছার পুরানা বন্ধুবান্ধব আশেপাশে যারা আছে তারা, মোহতারাম ছাব , সাধারণ মানুষ কয়েকজনের লগেও কথা হৈছে । লগে থাকব বৈলা আওয়াজও দিছে অনেকে । মোন্তাজির কয় খালি মুখের আওয়াজে তো হৈব না । সদস্য চাঁদা নেওন লাগবো মাসে মাসে । বেশি না তিরিশ ট্যাকা । গেরামের মানুষজন কিপটা, দিতে চাইব না আমি কই । মোন্তাজির কয় ট্যাকা দেওনডা বড় কথা না । রসিদ এ সই থাকলেই হৈব । ট্যাকা নিয়া আসলে তেমন চিন্তা নাই । ট্যাকা বাইরে থেকে যেগুলা আইতাছে ঐগুলাতেই অনেক । সই লইয়া যা পারে দিতে কইবি । তিরিশ ট্যাকা লিখলেই হৈব । এক্কেরে না দিলেও জোরাজুরি করনের দরকার নাই । রসিদগুলা থাকলেই হৈব । তাইলেতো কাম অনেক সোজা হৈয়া যায় আমার । ঘরের চৌদ্দ জনের নামে চৌদ্দডা রসিদ লেইখা ফালাই আমি । ট্যাকা দিইনা ।

গেরামে, পাশের গেরামে বিকালে বিকালে ঘুইরা পরিচিত লুকজনরে বুঝাইয়া কই আমি শরিয়ত কমিটির নিয়তও বাস্তবায়ন পদ্ধতির কথা । কুরান হাদিস থাইকা বুঝাই আল্লার জমিনে আল্লার আইন ছাড়া যে কুনো শান্তি নাই হেই কথা । পন্চাইশটার উপরে রসিদ লেখা হৈয়া যায় । ট্যাকা যদিও দেড় দুইশর বেশি না । দুই সপ্তাহ পর মোন্তাজির আবার আইলে রসিদগুলা ওরে দিই । সামনে নির্বাচন । শরিয়ত দলের পেলান বর্ণনা করে মোন্তাজির ।

কামে আমারেও নাকি নামতে হৈব ।
--------------------------------------------------
কওমি হুজুরের এক হাত ঘুরা আত্নকাহিনী-১৫
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:১৫
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×