somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোয়াখাইল্যা (ফেনী-চৌদ্দগ্রাম) ভাষার ব্যাকরণ -২

১৮ ই মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব -১
মেলা দিন আগের কথা । ভাত খাইতে বসছি ছোট বইন মুক্তা আর আমি , দুইজন লেট লতিফ । তরকারির এক পদ আছিলো ডাইল । সামনে পাতিল দেয়া, যে যার মত নিতাছে । আম্মা আরেকটা চেয়ারে বইসা দেখতাছে । মুক্তা ডাইল নিতাছেতো নিতেই আছে । প্লেটের কানায় কানায় অবস্থা । আম্মা হঠাৎ নিরীহের মত বল্লেন, " চঁড , চঁডেচ্চা, চঁডি তারফর ল আর-" (পা দিয়া মাড়া কিছুক্ষণ তারপর আরো নে, (বস্তায় কোন কিছু ভরার সময় যেমন করা হয়))মুক্তা হঠাৎ বুঝলো না ঘটনা কি । ঐদিকে আমিতো হাসতে হাসতে নাকে মুখে উঠার অবস্থা । আম্মাজান এমনে খুব বেশি জোক করেন না । কিন্তু মাঝে মাঝে এমনসব কথা নিরীহের মত মুখ কৈরা বলেন, হাসতে হাসতে কান্দনের অবস্থা । কিছুক্ষণ পরে মুক্তা বুঝলো আসল ঘটনা । বেচারি একটু আবেগপ্রবণ, কাইন্দা কাইটা, তুমি খালি আমগো লগে এরুম কর বৈলা ভাত থুইয়া চৈলা গেলো । আমি তাও হাসি থামাইতেই পারতাছিনা ।

এই চঁডা (মাড়ানো), নোয়াখাইল্যা ভাষার একটা মৌলিক ক্রিয়াপদ ।

যাউগ্গা । নোয়াখাইল্যা ভাষার ব্যাকরণের এই পর্যায়ে আরো অনেকগুলা মৌলিক নোয়াখাইল্যা শব্দের তালিকা দেয়া হৈতাছে । তার আগে উচ্চারণ সংক্রান্ত নিয়মাবলি

কেবলমাত্র আঞ্চলিক শব্দের উচ্চারণের জন্য এই লেখার কমন নিয়ম
১ : সকল একক 'চ' এর উচ্চারণ , সাইকেল শব্দের 'স' এর মত হবে । যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে প্রমাণ বাংলার নিয়মেই অর্থাৎ বাচ্চা কাচ্চা সাচ্চা এসবের উচ্চারণের মতই হবে । বিশেষ ক্ষেত্রে উল্লেখ করে দেয়া হবে ।
২ : বর্ণ বা সিলেবলের পরে হাইফেন (-) এর উচ্চারণ হবে : আগের সিলেবলের , স্বরবর্ণের দীর্ঘায়িত উচ্চারণ, আগের সিলেবলে স্বরবর্ণ না থাকলে দীর্ঘায়িত 'অ' এর উচ্চারণ হবে ।

যেমন "বা-ইলা " (মসুর) শব্দের উচ্চারণ হবে বা+ আ + ইলা (ব এর পরে দীর্ঘ আ)
"ব-লা" (অলক্ষি, বান্দর এইজাতীয় গালি অর্থে) শব্দের উচ্চারণ হবে ব+অ+লা (ব এর পরে দীর্ঘ অ)


আইতনা/আইন্না = বসার ঘর / সামনের ঘর / ড্রয়িং রুম
আদ-নি হাতা = থানকুনি পাতা (হাতা > পাতা শব্দের বিবর্তিত রুপ)
ইচা মাছ = চিংড়ি
উতুইচ্চা = হুতুম পেঁচা
উদিলা = খোলা, নাঙ্গা
উড়ুম = মুড়ি
ওজলা = ভুড়ি (পাকস্থলী)
ওঁয়া = টুকরি
কোঁয়া = অন্ডকোষ
খন্তা = শাবল
খাডাল = ভিতরের ঘর
খোয়া = কুয়াশা, শিশির
খাঁ-জিলিক = বিদ্যুৎ চমকানো
খাঁডা বাইয়ুন = টমেটো (বাইয়ুন > বাইগন > বেগুন শব্দের বিবর্তিত রুপ)
গাবাল = সাপুড়ে
গিদ্দা দেয়া = ডিগবাজি খাওয়া
গোয়াইল্লা = ফড়িং
চঁই = শিম
ছলা = কাঠবিড়ালি
জলই = পেরেক
জিলইন = ঝিনুক
জো-রা = ছোট নালা
টগবা = নারিকেলের মালা দিয়া বানানো ডাল বাড়ার জন্য ব্যবহৃত চামচ বিশেষ
ঠাডা = বজ্রপাত
ডগি = জমি
ডেঙা = বাগান, বাড়ির পিছনের ঝোপজঙ্গল
ডেঁয়া = বাছুর
তরই = ধুন্দুল
তয়া = টুপি
তাগারি/হিবা = গরুর খাবার দেয়ার জন্য ব্যবহৃত বিশাল গামলা
তুরুল্লা/তুরুইল্লা = ঝিঁঝি পোকা
দাগা = কালো মোটা সুতা (তাবিজ বাঁধার জন্য)
দস্ত হওয়া= বমি হওয়া (নোট : বমি করা > বমি করা ই ব্যবহৃত)
দাস্ত = ডায়েরিয়া
ধজি = হাতা ,খুন্তি
নাইচ্যা হাগ = পাটশাক (হাগ > শাক থেকে বিবর্তিত)
ফেলন/অরল = অড়হর
বইর = পা, ঠ্যাঙ (সাধারণত পায়ের পাতা)
বা-ইলা = খেসারি (ডাল)
বালা তেল = সরিষার তেল
বাবাল = বনবিড়াল, খাটাশ
মাইড্ডাল = মাটি কাটার শ্রমিক
মাত্তুল = হাতুড়ি
মুআহাইন্জুইয়াঁ = গোধূলিবেলা
মেচাঙ্গ/দমদমা = ফলস সিলিং
মেড-লি = মাকড়শা
লাই = গামলা
শ-ইন্দা/শশিন্দা = চিচিঙ্গা
শাবুরি = তৃপ্তি, সন্তুষ্টি
হবরে = তাড়াতাড়ি
হ-ন = মক্তব
হারল = মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত টুল বিশেষ
হাইব = চাপকল (ইংরেজি পাইপ থেকে বিবর্তিত)
হালনী ভাত = পান্তাভাত
হাঁটফা = মই
হুয়ার = ব্যবহার
হেঁন্জা = জলজ আগাছা
হোঁয়াইর = ঘরের উপরের দিকের পাটাতন
হৈতকাল = আদ্দিকাল, অনেক আগে
হৈর করা = মেরামত করা
হৈর অইছে = ফ্রি হৈছে, মুক্ত হৈছে

---------------------------------------------------------------------------
মৌলিক শব্দের জন্য আর কোন নতুন চ্যাপ্টার এড করা হবে না । এরপরে পাওয়া মৌলিক শব্দগুলা , প্রথম এবং দ্বিতীয় চ্যাপ্টারে এডিট করে যোগ করা হবে । পরের পর্বে, মূল বুঝা যায় কিন্তু বিবর্তনের ধারা ধরা যায় না এমন শব্দ এবং উচ্চারণ বিবর্তনের কিছু কমন রুলস প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থাকবে ।

বিভিন্ন তথ্য দিয়ে যারা সাহায্য করতাছেন ,এবং নোয়াখাইল্যা না হৈয়াও গভীর আগ্রহ-উৎসাহ-উদ্দীপনা সহ মন্তব্য দিয়া যারা ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ঋণ শুধুমাত্র ধন্যবাদ দিয়া শোধ হবার নয় । তাও দিলাম ধন্যবাদ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৮
৫০টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×